কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৩ জুন, ২০২২

অপরাহ্ণ সুসমিতো

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৮


গল্পের গল্প -

ঢাকায় আমি কখনোই ছিলাম না কথাটা ঠিক না। ঢাকায় কখনো থাকিনি এটা বলে একধরনের আনন্দ পাই। রাজধানীতে যাপিত জীবন আমার এক দেড়বছর।

লালমনিরহাট ডিসি অফিস থেকে বদলি হয়ে ঢাকায় ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত ত্রাণ অধিদপ্তরে। নিজের বসার কোন জায়গা নেই, কোন কাজ নেই। শ্যামলী থেকে অফিসের গাড়ি করে বায়তুল মোকাররম আসি। ত্রাণ অধিদপ্তরের অফিস বায়তুল মোকাররমের উল্টোদিকে। বাসায় বলা যাচ্ছে না যে অফিসে আমার মতো সহকারী পরিচালকের কোন কাজ নেই। তবুও সকালবেলা সুদর্শন একটা ব্যাগ নিয়ে বাসা  থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠি। বাসায় সবাই ভাবে আমি গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা।

ব্যাগের ভিতর দুনিয়ার হাবিজাবি জিনিষ দিয়ে বোঝাই। অল্প কিছু বইপত্র। শ্যামলী সিনেমা হলের মোড় থেকে প্রতিদিনের ‘ভোরের কাগজ’ কিনি। অফিসে এসে আরেকজন কর্মকর্তার রুমে (তিনি তখন একটা ট্রেনিংয়ে মাস তিনেকের জন্য) ঢুকে দরজা চাপ দিয়ে ভোরের কাগজ পড়তে থাকি।

একটু পর চা খাবার ইচ্ছা হলে ভয়ে পিওনকে বলি, যদি না বলে দেয় মুখের ওপর? তখন অবশ্য পিওনদের আর এই নামে ডাকা যায় না। তাদেরকে বলা হতো এমএলএসএস।

মফস্বলে হয়তো ম্যাজিস্ট্রেসি একটা আলগা ঠাঁট, ঢাকায় এসব সহকারী সচিব দূর অস্ত।

হাউজবিল্ডিং ভবনে কোন কড়াকড়ি নেই। যে কেউ যে কোন সময় ঢুকতে পারে, বেরুতে পারে। গরমের দিন তরমুজওয়ালা তো পারলে একদম বারান্দায় বসে!

মাঝে মাঝে কাজ থেকে পালাই। পাশেই স্টেডিয়াম। ক্রিকেট খেলা থাকলে আমাকে আর পায় কে! আমার বস নন-ক্যাডার থেকে প্রমোশন পেতে পেতে বস। তাকে দিনে দু’বার স্যার ডাকলেই হলো।

: স্যার শ্রীলঙ্কার সাথে আজ খেলা। খুবই জরুরি… বাংলাদেশকে জিততেই হবে। যাই।।

স্যার মুখে তেল তেল হাসিতে বলতেন: যান!

তো খলিল নামে এক ভাই, আমার বড় ভাইয়ের সহপাঠী, ঢাকায় আমেরিকান লাইফ ইন্সিওরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করতেন। মানুষের কাছে ঘুরে ঘুরে জীবন বীমার পলিসি বিক্রি করতেন। একদিন দুপুরে এসে হাজির। আমার যেহেতু তেমন কাজকর্ম নেই, খলিল ভাইয়ের সাথে গল্প হতো। ওনার মলিন মুখ, পলিসি বিক্রি করবার আকুলতা আমাকে দুর্বল করে দিলো।

কত আগের সেই ঘটনা। একবার তুষারপাতের সন্ধ্যায় রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে আছাড় খেয়ে ধরাশায়ী। জবে যেতে পারছি না। রাতে ঘুম নেই। পায়ে ব্যথা… পুরানো বইপত্র ঘাঁটতে গিয়ে হঠাৎ খলিল ভাইয়ের সাথে আমার বড় ভাইয়ের একটা ছবি আবিষ্কার করলাম।

খলিল ভাই, সেই নতমুখী ভদ্র মানুষটা। ছবিটার দিকে তাকিয়ে আমি যেন খলিলে রূপান্তরিত হতে থাকি। বিসিএস ভাইভা দিতে আমি একবার ঢাকায় এসে কাঁঠালবাগান দারোগার মেসে আমার বন্ধু ফুজু’র ওখানে উঠি (বন্ধুটার নাম মাহফুজ, সবাই সংক্ষেপে ওকে ফুজু ডাকতাম)।

খলিল ভাই, সেই কাঁঠালবাগান মেস আর আমি সামন্তরালে হাঁটতে থাকি তুষার খলবল মন্ট্রিয়লে। ও হ্যাঁ আমি সাঁতার জানি বলেই ডুব দিতে জানি দিলাম ডুব। লিখে ফেলি ‘একলা চাতক’ গল্প।

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন