কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৩ জুন, ২০২২

অমলেন্দু চক্রবর্তী

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৮


এ্যাওরানেস

সব‌ই অভ্যেস হয়ে যায়। বিয়াল্লিশ বছর ধরে সাতটা তিনটে দৈনিক ডিউটি চাকরি টাটাস্টিল্-এর ঝরিয়া গ্রুপে। শীতের দিনেই যা একটু কষ্ট। ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসে কখনো কুয়াশাচ্ছন্ন, আবার শেষ সময়ে প্রায় দিনই লেট ডিউটি।  খারাপ লাগলেও কিচ্ছু করার নেই, স্যালারি থেকে ডিডাক্সান। কত বাজনার সুর মেসিনের শব্দে! যেন ভোরবেলায় রাগ ভৈরবী। শীত। কড়কে্ রোদ  বেরোনোর আগেই। বেলা দশটা প্রভাতফেরি সব জুটান হতে সময় লাগে। টাটাবন্দনা, কারেন্ট নিউজ যার যতটুকু সম্বল প্রাত্যহিক। তারপর কাজের সুবিধে অসুবিধে। হ্যাজাড্'স। সেক্রিকেটিং। ইনসিডেন্ট ফাইন্ডা আউট্, এ্যাভয়েড এ্যাক্সিডেন্ট।  ডেইলি রুটিং জব বিফোর মেইনটেনেন্স। এখানে মেইনটেনেন্সই হয়। তাই সাত-সাতটা কোলিয়ারির সেন্ট্রাল ওয়ার্কশপ। হাতির মতো বড় বড় মেসিন, মোটর, পাম্প, সুইচ, স্টাটার। মোল্ডিংশপ্, কার্পেন্টারি, ব্ল্যাকস্মিতি, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স। সাবস্টেশন, রিসিভিংসেকশন। তিন শিফ্টের   দক্ষযজ্ঞ। আগে তিন জায়গায় তিনটি 'পাওয়ারহাউস' ছিল। কিন্ত যখন থেকে টাইম-ম্যান-মানির কস্ট-এর হিসেব কিতেব শুরু হল, ডাইরেক্ট  ইন্ডাইরেক্ট  ভ্যালিউ আঁকড়া দেখতে পাওয়া যেতে লাগলো, পাওয়ার ফ্যাক্টর টু-মাচ বলে মনে হলো, পাওয়ার প্রডাক্সশন ওনারশিপ রদ্, পাওয়ার হাউস' বন্ধ। ডিভিসি জিন্দাবাদ। ডিফারেন্স? ফিফটি সেভেন রুপিস পার ইউনিট কা ফর্ক। কে বরদাস্ত করবে ভাই? সত্যমিথ্যা জানি না। শোনা কথা। হয়তো উনিশ বিশ হতে পারে, আমার সঠিক জানা নেই।  

আজ বা কাল বলেও কিচ্ছুটি নেই, রাত্রির অন্ধকার রাত জাগাতেও না। নেশাড়ু দিনের আলোতও না। মূহূর্তের মর্জিমাফিক সময় বলে তো একটা কথা আছে না! উঠল বাই তো কটক যাই! এখন আবার কোম্পানিই বলো আর সরকারিই বলো,  একটা গালভরা বেশ সুন্দর কথা শোনা যায়, আউটসোর্সিং। অর্থাৎ কন্ট্রাকটরির কাজ। যতবার কাজের টেন্ডার হবে, সবচেয়ে কম বাজেটিয়া কন্ট্রাক্টারকে বরাত দেওয়া হয়। সাহেব সুবোদের খুশ রাখতে সক্ষম, এমন সোর্সওয়ালা  আউটসোর্সিং। ঠিকাদারি লেবার হলো, সেই শোষিত-পীড়িত জামানা-রাজ কায়েম।

হঠাৎ একদিন কারখানায় হাজির হয়েছিলাম। দেখি, সব আউট সোর্সিংয়ের ওয়ার্কার। ওদের দু চারজনাকে চিনতে পারছি। লকডাউনের শুরুতেই মহারাষ্ট্র  থেকে চলে এসে জয়েন করেছিল। রাম-সেলাম সেরে শপফ্লোরে সোজা হেঁটে  যেতে গিয়ে, বৃদ্ধ মেশিনগুলোর, সেই বাপ্পী লাহিড়ীর মিউজিক কিম্বা রাহুল দেব বর্মন-এর মিউজিক মনে হলো না, বরং মনে হল বেহালার দুখী দুখী ধুন বেজে চলেছে। আমার চোখ জোড়া সামান্য ঝাপসা লেগেছিল বোধহয়, বিয়াল্লিশ বছর  কম  তো নয়! সখ্যতা! ইস্ স্ স্, কেমন যেন পালাই পালাই লাগছিল!  


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন