কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৩ জুন, ২০২২

অচিন্ত্য দাশ

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৮


জল

বিহারের এই আধা-শহুরে অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে স্টেশন রোড নামের রাস্তাটা স্টেশন ছাড়িয়ে অনেকটা দূরে বড়া তালাও মানে বড় দিঘি অবধি চলে গেছে। এই জলাশয় কেউ কাটায়নি, এটা একটা প্রাকৃতিক হ্রদ। বহুদিন আগে এখানকার রাজা একটা ঘাট বানিয়ে দিয়েছিলেন – পাথরের সিঁড়ি, শুরুতে পাথরে খোদাই করা দুটো বাঘ দুপাশে। তিনি বিশ্বাস করতেন মাতা শেরাওয়ালি তাঁর বাহন দুটিকে ঘাটে অপেক্ষা করতে বলে জলে নেমেছেন স্নান করতে।

বেলা চারটে নাগাদ মোটর সাইকেল চালিয়ে ঘাটে এলো সুদেব ভাইয়া। বছর কুড়ি বয়স। আজ হোলি ছিল। সুদেবকে আজ চেনা মুশকিল, এত রকম রঙের প্রলেপ তার গায়ে-মাথায়-মুখে যে তাকে ভূতের মত দেখাচ্ছে। কোমরজলে নেমে সে রঙ ধুতে লাগল। যখন লাল আবির মাথার চুল থেকে জলে চলমান আলপনা এঁকে মিলিয়ে যাচ্ছিল তখন দারুণ ভালো লাগছিল সুদেবের। লাল আবির তার মাথায় দিয়েছে চৈতিভাবী। খুড়তুতো দাদার বৌ। চৈতির সঙ্গে মৃদু পরকীয়া চলছে সুদেবের। আজ গায়ে গা ঠেকিয়ে ঘন হয়ে আবির মাখাবার বহর দেখে সুদেব বুঝে নিয়েছে, ওদিক থেকেও আকর্ষণ বাড়ছে। দু-এক পল চোখ মেলে  ভালোবাসার রং দেখে সুদেব, সে রং ধীরে ধীরে মিশে যায় মিলিয়ে যায়। জল কিছু মনে রাখে না। মানুষ রাখে।

সন্ধে শেষ হয়ে রাত নামে। আকাশের ছায়া গায়ে জড়িয়ে জল চুপ করে শুয়ে থাকে ফুটফুটে চাঁদের আলোয়। আজ পূর্ণিমা। এমন সময় বিচ্ছিরি আওয়াজ করে অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে একটা কালো এস-উ-ভি ক্যাচচচ করে ব্রেক কষে এসে দাঁড়াল দিঘির পাড়ে। নামল ভোলা দোসাদ। এ এলাকার নামকরা গুণ্ডা। হাতে একটা ভোজালি, তোয়ালে মোড়া। রক্তে সপসপ করছে। তোয়ালেটা কাচল, ছোরাটা পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলল। ওটা হাতে নিয়ে নিজের হাতের প্রশংসা করছিল নিজেই। হাতের কাজ দেখলি ভিকি? তুই পিস্তল বার করার আগেই কেমন পেট চিরে দিলাম… বাঁচবি না তুই! আমারই এলাকায় তোলাবাজির ভাগ   চাই তোর? কার সঙ্গে পাঙ্গা নিচ্ছিস জানিস? তাও এতটা করতাম না ভিকি, তুই কিনা আমার রাখা-মেয়ে সুরতিয়ার দিকে হাত বাড়ালি… এতো সাহস পেলি  কোথা থেকে… তোর আর বাঁচার দরকার ছিল না রে…

বিকেলের আবিরের মতোই লালরক্ত জলে ক্ষণিকের দাগ কেটে মিশে গেল, মিলিয়ে গেল। আবার সব চুপচাপ। জল যেমন শুয়েছিল তেমনি শুয়ে থাকল। জল কোনো চিহ্ন ধরে রাখে না।

সারাদিন সারাবেলা কত মানুষ আসে জলের কাছে। কত রকমের দাগ, কত রকমের সুখ, কত রকমের দুঃখ নিয়ে। জল কিছু মনে রাখে না।

জল অনেকটা ভগবানের মত। দেখে সব কিন্তু কিছু করে না।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন