ভূমিকম্প
জিম করবেটে সেবার পারমিট না পেয়ে মনোক্ষুণ্ণ।
একটা কটেজে ঠাঁই হলো চারজনের। শালা
প্রদীপ, তার বৌ, ছেলে আর আমি দুটো ঘরে। একটা ভাড়া গাড়িতে বেরোলাম করবেট ন্যাশনাল
পার্কের চৌহদ্দিটা ঘোরার জন্য। মন ভালো নেই
বলে কিছুই লক্ষ্য করছিলাম না প্রায়। হাতি হরিণ কুমীর পাখি নীলগাই হনুমান
গাছ ফুল বল্মীকস্তুপ এসব দেখার জন্য কেউ জিম করবেটে আসে নাকি? জিম করবেটের বই পড়া
কোন্কালে, রুদ্রপ্রয়াগের চিতা, কোথায় সে সব, যা দেখে কেঁপে উঠব? ধুস! বাচ্চাদের
জন্য এই ট্যুর। রাগ হলো ছেলের ওপর। অনেকবার বলাতেও তার সময় নেই বলে কেয়ার করল না। লাস্ট মোমেন্টে আমি
রাগ দেখাতে কোনো রকমে একটা ঠেক জোগাড় করে দিল। ফিরে গিয়ে দেব ব্যাটাকে! আমার রাগ
পড়ছে না।
ফেরার পথে একটা ছোট গঞ্জ মতো জায়গায় চা খেতে নেমে
রাজা, শালার ছেলে, বলল, ‘পিসাই, বিয়ার খাবে নাকি?’ আমি ওর দিকে তাকাতে ওর চোখে
প্রশ্ন আর মিনতি দেখলাম। খুশি হলাম। টাকা
দিয়ে বললাম, ‘যা গোটা তিনেক বিয়ার আর এক পাঁইট টিচার্স নিয়ে আয়!’ মালপত্র কিনে
মনটা ঠান্ডা হতে খুশি হয়ে কটেজে ফিরে
এলাম।
রাজা পাশের ঘরে বিয়ার নিয়ে টিভির সামনে। আমি
হুইস্কি খেতে খেতে ভাবতে থাকলাম পান্নায় হাতির হাওদায় বসে পুকুরে বাঘের স্নানের দৃশ্য।
রণথম্ভোরে ক্যান্টারে দাঁড়িয়ে দশ হাত দূর দিয়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের পায়চারি।
সুন্দরবনে সজনেখালিতে বাঘের সাঁতার। স্বপ্নে বাঘের গলায় কুকুরের মতো হাত বোলানো।
উত্তেজিত হয়ে আমার কাঁপুনি শুরু হলো। ভা্লো লাগল। কাঁপুনি বাড়তে লাগল। খাটে টিভির
সামনে বসেছিলাম। কিছুই দেখছিলাম না। শুধু
মনে মনে।
পাশে ড্রেসিং টেবিলের ওপরে রাখা হুইস্কির গ্লাসটা
কাঁপছে। লক্ষ্য করে দেখলাম, আমিই নড়ছি। আরে? গ্লাস হাতে উঠে গিয়ে ইজিচেয়ারে বসেও
কাঁপলাম খুব। কাঁপতে ভালো লাগল। কোনো রকমে আর একটা পেগ নিয়ে আবার বাঘটাকে দেখতে
পেলাম। এবার করবেটের বাঘ। প্রায় দুলছি। কী
মজা...
পাশের ঘর থেকে প্রদীপরা মানে প্রদীপ, শর্মিলা আর
রাজা এসে বলল, ‘বারীনদা, টের পাচ্ছ না?’
কাঁপতে কাঁপতে বললাম, ‘কী হে?’
প্রদীপ বলল, ‘ভূমিকম্প হচ্ছে’।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন