সাহিত্য ও নাটকে অ্যাবসার্ডইজম
স্যামুয়েল বেকেট ও 'ওয়েটিং ফর গডো'
‘The end is in the
beginning and yet you go on.’
― Samuel Beckett, Endgame
১৯০৬ সালের ১৩ এপ্রিল। আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ‘ডাবলিন’ শহরে জন্মগ্রহণ করেন অনন্য এক নাট্যকার স্যামুয়েল বার্কলে বেকেট (Samuel Barclay Beckett) ...বিংশ শতকের সাহিত্যিকদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ হিসেবে তাঁর নাম আজও অমর। বেকেটের বাবা উইলিয়াম ফ্রাঙ্ক বেকেট ছিলেন একজন স্বখ্যাত মানুষ। বাবা'র প্রভাব বেকেটের জীবন এবং সৃষ্টিতে বেশ স্পষ্টমান।
১৯২৩-১৯২৭ সাল এই পাঁচ বছরে বেকেট তাঁর শিক্ষা সম্পূর্ণ করেন বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ট্রিনিটি কলেজ থেকে। স্বাভাবিক ভাবেই বেকেটের প্রতিটি সৃষ্টিতে শিক্ষার গভীরতা লক্ষণীয়।
১৯২৯ সালে প্রকাশের আলো দেখে তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনা। ‘দান্তে... ব্রুনো... ভয়েজ জেমস জয়েস’; অগ্রজ লেখক জেমস জয়েসের লেখার দুর্বোধ্যতা নিয়ে সে সময়ে সমালোচনায় তোলপাড় সাহিত্যমহল। বেকেটের উদ্দেশ্য ছিল, জয়েসকে সহজবোধ্য করে আপামর সমালোচকদের সামনে হাজির করা এবং সে প্রয়াসে সার্থক ছিলেন তিনি।
১৯৩৮ সাল। প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘মুরফি’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ন্যাৎসিদের চূড়ান্ত বর্বরতা এবং অমানুষিকতায় বীতশ্রদ্ধ হয়ে বেকেট যোগ দেন ফ্রান্সের সামরিক বাহিনীতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মমতা, অনৈতিকতা, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের সুস্পষ্ট চিত্র ফুটিয়ে তোলেন বেকেট তাঁর উপন্যাসে।
বেকেটের শ্রেষ্ঠ নাট্যকর্ম ‘ওয়েটিং ফর গডো’ প্রকাশিত হয় ১৯৫২ সালে। ১৯৫৩ সালে প্যারিসের থিয়েটার ডে ব্যাবিলনে মঞ্চস্থ হয় ‘ওয়েটিং ফর গডো’। প্যারিসের নাট্যপ্রেমীদের জন্য নাটকটির ফরাসি নাম রাখা হয় ‘এন অ্যাটেনডেন্ট গডো’ অর্থাৎ গডো’র জন্য প্রতীক্ষা।
(আয়ারল্যান্ডের গলওয়ে’র Druid থিয়েটারে Garry Hynesএর পরিচালনায় সম্প্রতি মঞ্চস্থ হওয়া ‘ওয়েটিং ফর গডো’র পোস্টার)
বেকেটের অন্যতম প্রিয় বন্ধু জেমস নেলসনের কথায়, নাটকটির শো ছিল হাউসফুল। প্রিয় বন্ধুর রচিত নাটকটির বিখ্যাত হবার অন্যতম কারণ হিসেবে নেলসন জানান, নাটকটি'র ভিন্ন ভিন্ন অর্থ করেছেন ভিন্ন ভিন্ন নাট্যপ্রেমী মানুষ, আর এই কারণেই বিশেষ কোনো কালের গণ্ডীতে আবদ্ধ না থেকে এ নাটক হয়ে উঠেছে কালোত্তীর্ণ, সার্বজনীন।
১৯৫৪ সালে নিউইয়র্কে প্রকাশিত হয় ‘ওয়েটিং ফর গডো’র ইংরেজি অনুবাদ। তারপর থেকে সম্ভবত ২৩টিরও বেশি দেশে মঞ্চস্থ হয়েছে এ নাটক এবং ৩২-৩৩টি ভাষায় অনূদিতও হয়েছে। এই কালক্রমিক ধারাবাহিকতা প্রমাণ করে’ওয়েটিং ফর গডো’র অনন্যতা।
১৯৫৫ সালে লন্ডনের আর্ট থিয়েটারে চব্বিশ বছরের তরুণ পরিচালক পিটার হল-এর পরিচালনায় মঞ্চস্থ হয় ‘ওয়েটিং ফর গডো’। নাট্য সমালোচক কিনিথ টাইনানের কথায়, “Waiting for Godot frankly jettisons everything by which we recognise theatre. It arrives at the custom house, as it were, with no luggage, no passport and nothing to declare: yet it gets through as might a pilgrim from Mars. It does this, I believe, by appealing to a definition of drama much more fundamental than any in the books. A play, it asserts and proves, is basically a means of spending two hours in the dark without being bored.”(August 7, 1955)
রূপকাশ্রয়ী এবং প্রতীকী এ নাটকটিকে বহুমাত্রিক ভাবে ব্যাখ্যা করাই শ্রেয়। রূপক নাটকগুলির এটিই সার্বজনীনতা। দুটি অ্যাক্টে পরিবেশিত এ নাটকটিকে ‘ট্র্যাজিক কমেডি’ হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়।
১৯৫৪ সালে নিউইয়র্কে প্রকাশিত হয় ‘ওয়েটিং ফর গডো’র ইংরেজি অনুবাদ। তারপর থেকে সম্ভবত ২৩টিরও বেশি দেশে মঞ্চস্থ হয়েছে এ নাটক এবং ৩২-৩৩টি ভাষায় অনূদিতও হয়েছে। এই কালক্রমিক ধারাবাহিকতা প্রমাণ করে’ওয়েটিং ফর গডো’র অনন্যতা।
১৯৫৫ সালে লন্ডনের আর্ট থিয়েটারে চব্বিশ বছরের তরুণ পরিচালক পিটার হল-এর পরিচালনায় মঞ্চস্থ হয় ‘ওয়েটিং ফর গডো’। নাট্য সমালোচক কিনিথ টাইনানের কথায়, “Waiting for Godot frankly jettisons everything by which we recognise theatre. It arrives at the custom house, as it were, with no luggage, no passport and nothing to declare: yet it gets through as might a pilgrim from Mars. It does this, I believe, by appealing to a definition of drama much more fundamental than any in the books. A play, it asserts and proves, is basically a means of spending two hours in the dark without being bored.”(August 7, 1955)
রূপকাশ্রয়ী এবং প্রতীকী এ নাটকটিকে বহুমাত্রিক ভাবে ব্যাখ্যা করাই শ্রেয়। রূপক নাটকগুলির এটিই সার্বজনীনতা। দুটি অ্যাক্টে পরিবেশিত এ নাটকটিকে ‘ট্র্যাজিক কমেডি’ হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়।
ESTRAGON এবং VLADIMIRএর চরিত্র দুটি আসলে সমকালীন বিধ্বস্ত মানুষের দুঃখের প্রতীক হিসেবেই খ্যাত। নাটকের শুরুতে দেখা যায়, ভবঘুরে ছন্নছাড়া দুটি লোক ভলাডিমির ও এস্ট্রাগন, তেমনি এক ছন্নছাড়া ধূসর এক প্রান্তরে কোনো এক মি. গডোর জন্য অপেক্ষা করছে। নাটকের শেষেও তারা প্রতীক্ষাই করে; কিন্তু মনে হয় যেন তারা অনন্তকাল ধরে প্রতীক্ষা করছে। অর্থহীন এই প্রতীক্ষা, কারণ গডো আসেন না, কোনোদিন আসবেন সে নিশ্চয়তাও নেই, তবু মুক্তি নেই তাদের... প্রকারান্তরে আমাদেরও। যাবতীয় ধর্মবিশ্বাসের বিসর্জনে, মানুষের বিপর্যস্ত অবস্থায় একটি সামগ্রিক শূন্যতার মধ্যে এই নাটক আসলে মানব সত্তাকে তার চূড়ান্ত বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে চায়। দেখিয়ে দিতে চায়, ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত সবকিছুই অবলুপ্ত... আঁকড়ে ধরার মতো কিছুই অবশিষ্ট নেই।
১৯১৩ সালে ‘ওয়েটিং ফর গডো’র ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান আবারও মনে করিয়ে দেয়, কাল্পনিক চরিত্র নয়, এ নাটক আসলে কালজয়ী চরিত্র সৃষ্টিতে চূড়ান্ত ভাবে সার্থক।
আয়ারল্যান্ডের গলওয়ে’র Druid থিয়েটারে Garry Hynesএর পরিচালনায় সম্প্রতি মঞ্চস্থ হয় ‘ওয়েটিং ফর গডো’। Druid থিয়েটারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত ব্রশিওরে জানানো হয়, “On a bare road in
the middle of nowhere, two world-weary friends await the arrival of the mysterious
Godot. While waiting, they speculate, bicker, joke and ponder life’s greater
questions. As dusk begins to fall, two figures appear on the horizon.”
অ্যাবসার্ড নাটক হিসেবে আজও উজ্জ্বল ভাবে উল্লেখ্য ‘ওয়েটিং ফর গডো’র নাম। গোটা নাটক জুড়ে শুধুমাত্র কিছু ঘটে না, নেই কোনো সংঘাত অথবা দ্বন্দ্ব, প্রধান দুই Protagonist চরিত্র শুধু একটি কাজই করে, আর তা হলো অপেক্ষা। তারা অপেক্ষা করে গডোর জন্য। তারা বিশ্বাস করে, গডো এলে তাদের সব সমস্যার সমাধান হবে, তারা মুক্তি পাবে এই প্রাত্যহিক অভিশপ্ত জীবন থেকে। আমরা যে ভীষণ নিঃসঙ্গ অসহায়, তারই এক একটি জ্বলন্ত উদাহরণ থিয়েটার অব দ্য অ্যাবসার্ডের নাটকগুলি। সার্থক অ্যাবসার্ড নাটক হিসেবে আজীবন আমাদের মনের মণিকোঠায় সযত্নে বাস করবে ‘ওয়েটিং ফর গডো’।
“We are all born mad. Some remain so”
― Samuel Beckett
মানুষ হিসেবে বেকেট ছিলেন স্পর্শকাতর, অনুভূতিপ্রবণ এবং প্রচারবিমুখ। নিজের মধ্যেই ডুবে থাকতে স্বচ্ছন্দ ছিলেন তিনি। অনেকে বেকেটকে ‘দুঃখবাদী’ বলে অভিহিত করেন। দুঃখবিলাসিতা অবশ্যই তাঁর জীবন যাপনে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে ছিল, তবুও বেকেট আশাবাদী মানুষ হিসেবেই চিহ্নিত। “Ever tried. Ever failed. No matter. Try Again. Fail again. Fail better.” তাঁর এই প্রখ্যাত উক্তি প্রমাণ করে, শৈল্পিকতা বিরাজ করত তাঁর মনের অলিন্দে।
“Nothing matters, but the writing. There has been nothing else worthwhile... a stain upon the silence.”
― Samuel Beckett
অ্যাবসার্ড নাটক হিসেবে আজও উজ্জ্বল ভাবে উল্লেখ্য ‘ওয়েটিং ফর গডো’র নাম। গোটা নাটক জুড়ে শুধুমাত্র কিছু ঘটে না, নেই কোনো সংঘাত অথবা দ্বন্দ্ব, প্রধান দুই Protagonist চরিত্র শুধু একটি কাজই করে, আর তা হলো অপেক্ষা। তারা অপেক্ষা করে গডোর জন্য। তারা বিশ্বাস করে, গডো এলে তাদের সব সমস্যার সমাধান হবে, তারা মুক্তি পাবে এই প্রাত্যহিক অভিশপ্ত জীবন থেকে। আমরা যে ভীষণ নিঃসঙ্গ অসহায়, তারই এক একটি জ্বলন্ত উদাহরণ থিয়েটার অব দ্য অ্যাবসার্ডের নাটকগুলি। সার্থক অ্যাবসার্ড নাটক হিসেবে আজীবন আমাদের মনের মণিকোঠায় সযত্নে বাস করবে ‘ওয়েটিং ফর গডো’।
“We are all born mad. Some remain so”
― Samuel Beckett
মানুষ হিসেবে বেকেট ছিলেন স্পর্শকাতর, অনুভূতিপ্রবণ এবং প্রচারবিমুখ। নিজের মধ্যেই ডুবে থাকতে স্বচ্ছন্দ ছিলেন তিনি। অনেকে বেকেটকে ‘দুঃখবাদী’ বলে অভিহিত করেন। দুঃখবিলাসিতা অবশ্যই তাঁর জীবন যাপনে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে ছিল, তবুও বেকেট আশাবাদী মানুষ হিসেবেই চিহ্নিত। “Ever tried. Ever failed. No matter. Try Again. Fail again. Fail better.” তাঁর এই প্রখ্যাত উক্তি প্রমাণ করে, শৈল্পিকতা বিরাজ করত তাঁর মনের অলিন্দে।
“Nothing matters, but the writing. There has been nothing else worthwhile... a stain upon the silence.”
― Samuel Beckett
১৯৮৯ সালের ২২ শে ডিসেম্বর। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন, নাটকে উত্তর আধুনিকতার ধারক, স্যামুয়েল বার্কলে বেকেট।
"Nothing matters but the writing. There has been nothing else worthwhile... a stain upon the silence."
উত্তরমুছুনWish to know your previous publications. Thank you.
উত্তরমুছুন