কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

ফারহানা রহমান

বিদ্যুতের এক উড়ন্ত বল্লম শহীদ কাদরী 




সমকালীন বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি শহীদ কাদরী। এদেশের কবিতার ভূমিতল যাঁদের মননে-বৈদগ্ধ্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল, শহীদ কাদরী তাঁদের অন্যতমপঞ্চাশ উত্তর বাংলা কবিতা ধারায় আধুনিক মানসিকতার জীবনবোধ, বিশ্বনাগরিকবোধ ও জীবনের সুখদুঃখ, তির্যকতা, প্রকরণগত উদ্ভাবনা, শ্লেষ, দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রকাশ এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের কূটকৌশল এসব কিছুর সংমিশ্রণ এবং এক বিশিষ্ট  শিল্পবোধ ও কাব্যভঙ্গি তাঁর কবিতাকে অনন্য করে তুলেছে কাব্যরসিক পাঠকের কাছে।   

পঞ্চাশের দশকে তিরিশের উত্তরাধিকার এবং সমাজমনস্কতার মিশেলে এ ভূখণ্ডের কবিতায় এক ভিন্নমাত্রার অথচ স্বতন্ত্র চরিত্র দেখা দিয়েছিলএসব কবিতার মধ্যে নাগরিক অভিরুচির যে লক্ষণগুলো ফুটে উঠেছিল সেখানে জীবনের বাস্তব প্রচ্ছদ সমগ্র অবয়বে ধরা পড়েনি। কলোনিয়াল সমাজের অপুষ্ট মধ্যবিত্তের চারপাশের বিবর্ণ গতিহীন ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং এক স্বপ্নাচ্ছন্ন অনুভূতিলোক সৃষ্টি করাই ছিল সে সময়কার কবিতার এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

কবি শহীদ কাদরীর অত্যন্ত আধুনিক ও ভিন্নমাত্রার কবিতাগুলো পড়তে গিয়ে আমি বারবার অভিভূত হয়েছি সমুহ বিস্ময়ে। তাঁর কবিতার আধুনিকতা, কাব্যশক্তি, উম্মুল  ভাবনা, বাকভঙ্গির বিশিষ্টতা, গভীর জীবনবোধ, অন্তর্গত বিষাদ ও বৈরাগ্য আমাকে বারবার তার কবিতার কাছে টেনে নিয়ে গেছে আর ভাবতে বাধ্য করেছে তাঁ কবিতার বিষয়ের নতুনত্ব নিয়ে। শহীদ কাদরীর কবিতা পড়ে তৃপ্ত হওয়া কঠিনএকটি কবিতা পড়লেই অন্য কবিতা সম্পর্কে আরও আগ্রহী হয়ে ওঠে চোখ ও মন। শহীদ কাদরীর কবিতা মানেই সতত আধুনিক ও সর্বদা অনন্যই বটে।

বাংলা সাহিত্যের কাব্য আকাশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, আড্ডা অন্তপ্রা কবি শহীদ  কাদরী ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট কলকাতার দিল্কুশা, পার্কসার্কাস এলাকায় জন্মগ্রহণ করেনবাবা খালেদ ইবনে কাদরী ছিলেন দ্য স্টার অফ ইন্ডিয়া পত্রিকার সম্পাদক।   পরবর্তীতে পত্রিকার চাকরি ছেড়ে তিনি যোগ দেন ব্রিটিশ সরকারের অধীনে ইন্ডিয়ান  সেন্ট্রাল জুট কমিটির ডাইরেক্টর হিসেবে। নিজের জীবনের সাথে তিনি পরবর্তীতে  বাবার জীবনের তুলনা করে ‘একটি উত্থান পতনের গল্প শীর্ষক কবিতা লেখেন-
  
“আমার বাবা প্রথমে ছিলেন একজন
শিক্ষিত সংস্কৃতিবান সম্পাদক
তারপর হলেন এক
জাঁদরেল অফিসার;
তিনি স্বপনের ভিতর
টাকা নিয়ে লুফালুফি খেলতেন
টাকা নিয়ে,
আমি তার ছেলে প্রথমে হলাম বেকার,
তারপর বেল্লিক
তারপর বেকুব
এখন লিখি কবিতা
আমি স্বপনের ভেতর
নক্ষত্র নিয়ে লুফালুফি করি নক্ষত্র নিয়ে”

[একটি উত্থান-পতনের গল্পকোথাও কোনো ক্রন্দন নেই]

তাঁর মা ছিলেন বর্ধমান জেলার  মানুষ। বড় ভাই শাহেদ কাদরী ছিলেন একজন বিদ্বান, বিচক্ষ ও সাহিত্যপাগল মানুষ। একমাত্র বোনের নাম নাফিসা। কবি শহীদ কাদরীর পরিবারের উপর ১৯৫০ সালে পিতার আকস্মিক মৃত্যুর ফলে নেমে আসে এক  নিদারুণ বিপর্যয়। একদিকে ভয়াবহ দাঙ্গা, জীবনের ঝুঁকি, ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা;  অন্যদিকে বাবার মৃত্যু এই পরিবারটিকে কলকাতা ছাড়তে বাধ্য করে। ১৯৫২ সালে কাদরী পরিবার স্থায়ীভাবে চলে আসেন ঢাকায়। কবি শহীদ কাদরীর কাছে তখন ঢাকা এক অজানা শহর। প্রিয় জন্মস্থান কলকাতার স্মৃতি হিসেবে সাথে আছে কার্লটন সিগারেটের টিনের প্যাকেট ভর্তি কিছু পাথর। অচেনা এই শহরেও কিছুদিনের মধ্যেই জুটে গেল বেশ কিছু বন্ধু। বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়ান এই শহরের অলিতে গলিতে আর কিনতে থাকেন নানা ধরনের বইপত্র। তিনি সে সময় ভক্ত হয়ে ওঠেন কবি শেলি, স্পেন্ডার, বাইরনের কবিতার। এরই মাঝে ইংরেজি সাহিত্যের পাশাপাশি পরিচয় হতে থাকে বাংলা সাহিত্যের অফুরন্ত ভাণ্ডারের সাথেও। পড়তে শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ, মাইকেল, বঙ্কিম, বিষ্ণু দে, জীবনানন্দ দাশ, বুদ্ধদেব বসু, সুধীন দত্ত, সুকান্ত প্রভৃতি কবি সাহিত্যিকদের রচনাবলী। একইসাথে চলতে থাকে কবিতা লেখাও। ১৯৫৫ সালে তাঁর প্রথম কবিতা ‘জলকন্যার জন্য’ ছাপা হয় চতুরঙ্গ পত্রিকায়। একই বছর পূর্বাশা পত্রিকায় ছাপা হয় গোধূলির গান কবিতাটি। ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৬৩  সাল পর্যন্ত এই ছবছর সম্পূর্ণভাবে কবিতা  থেকে বিযুক্ত হন কবি শহীদ কাদরী অন্য   এক জগতের শিল্পীত কারিগর হিসেবে। ১৯৬৩ সালে ঢাকার এক অবিরাম বর্ষণমুখর দিনে তিনি লিখে ফেললেন তাঁর বিখ্যাত কবিতা বৃষ্টি বৃষ্টি১৯৬৭ সালে বইঘর থেকে প্রকাশিত হলো তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘উত্তরাধিকার’


সহসা সন্ত্রাস ছুঁলঘর-ফেরা রঙিন সন্ধ্যার ভীড়ে
যারা তন্দ্রালস দিগ্বিদিক ছুটল, চৌদিকে
ঝাঁকে ঝাঁকে লাল আরশোলার
মতো যেন বা মড়কে
শহর উজাড় হবে,
বলে গেল কেউ শহরের
পরিচিত ঘণ্টা নেড়ে খুব ঠাণ্ডা এক ভয়াল গলায়
এবং হঠাৎ
সুগোল তিমির মতো আকাশের পেটে
বিদ্ধ হলো বিদ্যুতের উড়ন্ত বল্লম!

[বৃষ্টি বৃষ্টি উত্তরাধিকার]  

বৃষ্টি নিয়ে কবিতা লেখেননি এমন কবি কি একজনও খুঁজে পাওয়া যাবে আমাদের বাংলা কাব্য-সাহিত্যের জগতে? কিন্তু বৃষ্টিবন্দনার এই আশ্চর্য এবং অভূতপূর্ব রূপ এর আগে কিন্তু আমরা আমাদের কবিতায় দেখতে পাইনি। বৃষ্টির সাথে নিসর্গ নস্টালজিয়ার যে সম্পর্ক আমরা প্রতিনিয়ত অনুভব করি, কবি শহীদ কাদরী শুধু তার মধ্যেই অর্থাৎ শুধু নিসর্গতার মাঝেই প্রকৃতিকে আবদ্ধ করে রাখেননিতিনি প্রত্যক্ষ করেছেন নগর বাস্তবতার এক ভিন্ন রূপওবজ্র-শিলাসহ বৃষ্টিকে তিনি উপলব্ধি করেছেন এক ভিন্নমাত্রায়, যেখানে তিনি আকস্মিক বজ্রপাতকে, তুমুল বৃষ্টিপাতকে সন্ত্রাসের সাথে তুলনা করেছেন তিনি উপলব্ধি করেছেন নগর জীবনের কিছু  মানুষকে, যারা হয়তো সারাদিনের পরিশ্রমের পর তন্দ্রালস হয়ে ধীরে ধীরে ঘরের  দিকে ফিরছিল, আর ঠিক সে সময় বজ্রপাতসহ বৃষ্টিপাত শুরু হলো, যা তাদের  কাছে রোম্যান্টিকতার চেয়ে সন্ত্রাসের সাথে বেশি তুলনীয় মনে হলো। এই দৃশ্যকে তিনি  তুলনা করেছেন এক বিচিত্র চিত্রকল্পের সাথে ‘সুগোল তিমির মতো আকাশের পেটে  বিদ্ধ হলো বিদ্যুতের উড়ন্ত বল্লম’আকাশের সাথে নানা জিনিসের তুলনা করেছেন কবিরা, কিন্তু সুগোল তিমির পেটের মতো আকাশ! বিদ্যুতের উড়ন্ত বল্লম যেখানে গিয়ে বিদ্ধ হচ্ছে। এমন এক ভীষণ চিত্রকল্প! এ তো সত্যি সন্ত্রাস ছাড়া আর কিছুই নয়!   

“বৃষ্টি পড়ে মোটরের বনেটে টেরচা  
ভেতরে নিস্তব্ধ যাত্রী, মাথা নিচু
ত্রাস আর উৎকণ্ঠায় হঠাৎ চমকে
দ্যাখে, জল,
অবিরল
জল, জল, জল
তীব্র হিংস্র
খল,
আর ইচ্ছায় অনিচ্ছায় শোনে  
ক্রন্দন, ক্রন্দন
নিজস্ব হৃপিন্ডে আর অদ্ভুত উড়নচণ্ডী এই  
বর্ষার ঊষর বন্দনায়

[বৃষ্টি, বৃষ্টি]  

শহীদ কাদরীর কবিমন মেধাবী, তীক্ষ্ণমুখ, মনননির্ভর  অনুসন্ধিৎস্যুতাঁর নাগরিক  চোখ দেখতে পায় মোটর গাড়ির ভিতর বৃষ্টিতে আবদ্ধ হয়ে থাকা নাগরিকের ভীষণ উৎকণ্ঠা। হঠাৎ বজ্রপাত ও বৃষ্টি গাড়িতে বন্দী হয়ে থাকা নাগরিককে করে দারুণ  আতঙ্কিত ত্রাস তার হৃৎপিণ্ডের ভিতরে বিমর্ষতা ও ক্রন্দন এনে দেয়। শহীদ কাদরীর বিশিষ্টতা, তার মুন্সিয়ানা এখানেইতিনি রোম্যান্টিক কবিদের মতো শুধু সৌন্দর্য মণ্ডিত প্রকৃতিই দেখেন নাতিনি প্রকৃতিকে নানাদিক থেকে বিবেচনায় এনেছেন

সমাজ, সময় ও ইতিহাসপ্রবাহ কখনো কখনো বস্তুনিষ্ঠ অনিবার্যতায় একটি জীবন বলয়ের সামগ্রিক গতিবিধিকে করে দিতে পারে আমূল পরিবর্তিত। জাতীয় জীবনে সংগঠিত ঘটনাপুঞ্জ সমাজ ও জীবননিহিত প্রাসঙ্গিকতা চৈতন্যে সঞ্চার করে উজ্জীবনের প্রাণময় গতিবেগ। জীবনের অভিঘাত, আন্দোলন, প্রতিবাদ, রক্তক্ষরণ ও প্রতিরোধের প্রচণ্ডতায় নিতান্ত আত্মমগ্ন ব্যক্তিকেও করে তোলে সচকিত, উদ্দীপ্ত। ১৯৪৭-১৯৭০ সাল, এই সময়কাল অব্দি বাঙালি জাতির আর্থসামাজিক রাজনৈতিক জীবনে যে  আলোছায়ার দোদুল্যমানতা পরিব্যাপ্ত ছিল, তার প্রত্যক্ষ প্রভাব আমরা দেখত পাই  আমাদের কাব্যজীবনে। ১৯৭০ সালের পর যুদ্ধোত্তর সময়ের ট্র্যাজিক জীবনচৈতন্যের অঙ্গীকার ফুটে ওঠে এ সময় শহীদ কাদরীর কবিতায়।

“সে ছিল রক্তের গাঢ় লাল ছদ্মবেশ পরে
হন্তারক হাতের তালু থেকে গড়িয়ে পড়েছে বহুবার
ট্রেঞ্জের কাদায়, সৈনিকের
শাদা করোটিতে। অনেক দীর্ঘশ্বাস, জ্বলে যাওয়া গ্রাম,
অনেক মৃত বালকের কলরোল সঙ্গে নিয়ে এসেছে এ গোলাপ
একে আমি কোথায় রাখি? কোন হিরণ্ময় পাত্রে তাকে ঢাকি?

[প্রত্যহের কালো রণাঙ্গনে কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই]

একইভাবে, কবি শহীদ কাদরীর কবিতায় স্বাধীনতা কেবল একটি আবেগ মাত্রই নয় বরং জীবনের অন্যতম অভিব্যক্তি হিসেবে এসেছে। আত্মকেন্দ্রিকতা, নৈঃসঙ্গ্যতা, বিচ্ছিন্নতাবোধ, অবক্ষয়চেতনা, প্রেমারতি, রিরংসা, ঘৃণা, আত্মরতি, বিকার প্রভৃতি  নগরচেতনার লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময় থেকে ফলে শহীদ  কাদরীর নাগরিক চোখ একান্তভাবেই হয়ে উঠেছিল এ সময়ের কাব্য রচনার ব্যাপারে স্বনির্ভর এবং অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র। তাঁর আবেগবিরলতা, মননশীল অভিরুচি এবং  যুদ্ধোত্তর ইউরোপীয় কবিতার অঙ্গীকার তাঁকে ষাটের দশকীয় কবি মেজাজের পুরোধা  হিসেবে চিহ্নিত করে আমাদের কাছে

“ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করব
স্টেটব্যাঙ্কে গিয়ে
গোলাপ কিম্বা চন্দ্রমল্লিকা ভাঙালে অন্তত চার লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে
একটি বেলফুল দিলে চারটি কার্ডিগান।
ভয় নেই, ভয় নেই  
ভয় নেই
আমি এমন ব্যবস্থা করব
নৌ, বিমান আর পদাতিক বাহিনী
কেব তোমাকেই চতুর্দিক থেকে ঘিরে-ঘিরে  
নিশিদিন অভিবাদন করবে, প্রিয়তমা

[তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা]

শহীদ কাদরীর কবিতা আমাদের মোহাবিষ্ট করে রাখে তার ব্যাপকতায় ও গভীরতায় তার কবিতার মহিমা আমাদের চিত্তকে করে আবিষ্ট ও আশ্লিষ্টক্লিশে ও অতিরঞ্জিত শব্দপুঞ্জ, উপমা-উৎপ্রেক্ষাকে স্বদিচ্ছায় এড়িয়ে তিনি ভাষাভঙ্গি ও অনুভবের জাল বিস্তার করেছেন আমাদের মনোজগতে, তাতে আমরা খুঁজে পাই আধুনিক বিশ্বভাবনার  সাথে স্বাদেশিকতার এক অপূর্ব মিশেল। তাঁর প্রতিটি কবিতাই নিত্যনতুন, যাতে রয়েছে  শিল্পময় কাব্যভঙ্গির অনায়াস চর্চা। 

“মধ্য-দুপুরে ধ্বংসস্তুপের মধ্যে, একটা তন্ময় বালক  
কাচ, লোহা, টুকরো ইট, বিদীর্ণ কড়ি-কাঠ, একফালি টিন
ছেঁড়া চট, জং ধরা পেরেক জড়ো করল এক নিপু 
ঐন্দ্রজালিকের মতো যত্নে
এবং অসতর্ক হাতে কারফিউ শুরু করার আগেই
প্রায় অন্যমনস্কভাবে তৈরি করল কয়েকটা অক্ষরঃ ‘স্বা-ধী-ন-তা

[নিষিদ্ধ জার্নাল থেকেতোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা]

এই হলো শহীদ কাদরী যিনি বাংলা কাব্যের অপার জগতের এক অভিনব ব্রক্ষ্মাতাঁর তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ, শব্দ, শব্দানুষঙ্গ, রূপক, প্রতীক ও চিত্রকল্পের সতর্ক মনোযোগিতা তাঁর কবিতাকে করেছে অনন্য, বিচিত্র ও সংবেদনশীলকবিতার রূপ নির্মাণের ক্ষেত্রে তিনি সন্দেহাতীতভাবে ভীষণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন বাংলা কবিতায়তাই তিনি যেন হয়ে উঠেছেন এই কাব্য-আকাশে বিদ্যুতের এক উন্ত বল্লম। যিনি হঠাৎ বিদ্যুৎ  চমকের মতো ঝলসে উঠে যখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করছেন, ঠিক তখনই   সিদ্ধান্ত নিলেন সব কিছু ছেড়েছুড়ে ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমানোর। এবং করলেনও তাই। শহীদ কাদরী মানেই বিউটি বোডিং আর রেক্সে অফুরান্ত আড্ডায় বুঁদ হয়ে থাকা এমন এক কবি, যিনি দেশভাগ ও হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গার স্মৃতি আজীবন   বুকের মাঝে বয়ে বেড়িয়েছেন। তিনি এমনই এক আলো, যিনি মানুষ ও প্রকৃতিকে  এক সুত্রে গেঁথেছেন তার তারুণ্যময় ব্যক্তিত্বের ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে। তিনি লিখেছেন অল্প, ভেবেছেন বেশি, পড়েছেন আরও অনেক অনেক বেশি। মাত্র ৪টি  কবিতার, বই যাতে কবিতার সংখ্যা ১২৬টি। তাঁর অফুরন্ত জ্ঞানের ভাণ্ডার, আড্ডার  রসবোধ, কৌতুক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক যে আলোক বিচ্ছুরণ ঘটত, তা সাহিত্য রসবোদ্ধা   ও সংস্কৃতিপ্রেমিদের তাঁর প্রতি চিরকাল আকৃষ্ট করে রেখেছিলস্বাদেশিকতার বোধই ছিল তাঁর জীবনবোধের প্রধান প্রবতা।  তিনি বাংলা কাব্যজগতের অহংকার, তাঁর স্থান নক্ষত্রের মতো চিরকাল সমুজ্জ্বল হয়ে থাকবে বাংলা সাহিত্যের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়াকাশে  
  





0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন