কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

নভেরা হোসেন

ইতিহাসের শেষ রাত্রিতে

তুমি বর্তমানের
আমি ভবিষ্যতের
তুমি অতীতের
আমি বর্তমানের
আগস্ট মাসের তীব্র গরম
জানালায় মাধবীলতা
সময় আজ উড়ন্তচাকি
শ্যাওলায় ঢাকা আস্তরণ
সব খুলে হয়েছে উন্মন
কত ময়দান লোকে সয়লাব
রক্তের ধারায় ভেসে যাচ্ছে বিছানা বালিশ
সাঁতরে পার হও পুলসিরাত –
মৃত্যু তবু পিছু ধাওয়া করে
অমোঘ নিয়তির মতো
ফাল্গুনের শেষরাতে ঝরে পড়ে বিষফুল
তুমিও একসুরে গেয়ে যাও গান
শত সহস্র লোকের ভিড়ে
কেটে চলো হরোপ্পা মহেঞ্জোদারো সুন্দরবন –
মনে গাঁথা মানবলিপি
চোখে অশ্রুর ঘনঘটা
বর্তমান ঢুকে যাচ্ছে অতীতের গহ্বরে
তুমি আমি সকলে –
এইসব ছুরি কাঁচি বন্দুকের গুলি
একদিন শোভা পাবে যাদুঘরের দেওয়ালে
যা কিছু বিদীর্ণ করল পাঁজরের হাড়
মগজের খুলি ফুটো হয়ে ঝরছে আকাশে
চোখ আজ শুষ্ক
চোখে আগুন বারুদের হাতছানি
তোমাকে নিয়ে যাচ্ছে পাতালের গহ্বরে
তুমিও সবুজ হয়ে মেলেছ আকাশ
ইতিহাসের শেষ রাত্রিতে।



ভাত

বীরেন্দ্রবাবুর ভাতের কথা শুনে খুব খিদে পেয়ে গেল
কতকাল ধরে তোমরা এই ভাতের জন্য লড়াই করছ
তোমার পরদাদা তারও পরদাদা –
টিনের প্লেটে গরম ধোঁয়া ওঠা ভাত
তার সাথে কাঁচালঙ্কা পেঁয়াজ নুন আলু ভর্তা ডাল
তারও আগে মাটির সানকিতে লাল ভাত
মাটির হাড়িতে ভেজানো পান্তাভাত
ভোরের আলো ফুটতেই প্রত্যহ যার সাথে দেখা হতো
জমিতে লাঙল দেওয়ার আগে –
আজ অনেকের প্লেটে ভাতের বদলে
রুটি স্যান্ডউইচ অমলেট নান উইথ ভেজিটেবল
আরও কত কী ব্রেকফাস্টে
দিন যত বদলায়
তোমার প্লেটের খাবার বদলে যায়
বদলায় রুচি ইচ্ছা জিভের স্বাদ
দুবেলা দুমুঠো ভাতের জন্য হাহাকার
এসব এখন তত শোনা যায় না
তবু জয়নুলের মন্বন্তরের স্কেচ
কখনও সখনও জ্বলজ্বল করতে থাকে
ফ্লাইওভারের ঠিক নিচেই
এলোমেলো চুল, শুষ্ক ত্বক
চোখে আশাহীন বেঁচে থাকা
একথালা ভাতের জন্য দীর্ঘক্ষণ বৃষ্টিতে ভেজা
বিরই চালের গন্ধমাখা লাল ভাত

কতকাল পাতে পড়েনি আহা! 

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন