নাম বদল
লোকটা অনেকদিন লিখতে পারছিল না।
দেওয়ালে আঁকিবুঁকি কাটত। দেওয়াল ভর্তি লেখাজোকা। তাও অনেকদিন
লিখতে পারছিল না। না লিখে লিখে বড্ড একা হয়ে যাচ্ছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠে রোজ দেখত সবার নাম বদলে
গেছে। সবার নাম বদলে বদলে কোথায় যেন চলে যেত অথচ তার নাম এক-ই রয়ে যেত। সকালে উঠে সন্ধ্যাকে ডাকলে সে একদিন বলত, আমি অপর্ণা; আরেকদিন বলত, আমি দিবানিশা। রঘুকে ডাক দিলে একদিন বলত, আমি রাজু; আরেকদিন, আমি নিতাই। এভাবেই কাটছিল
লোকটার বেনাম বেজন্মা দিনকাল। সবার নাম বদলে যায় খালি তারটাই বদলায় না - একটাই নামে তার নিয়ত আত্মহনন। তবুও অনেকদিন কিছু লিখে উঠতে
পারছিল না।
লিখতে গেলে কি পড়তে হয়? অনেকদিন ধরে সে সেরকম কিছু পড়েও উঠতে পারছিল না। লেখাপড়া না
হওয়ায় লোকটা খুব একা হয়ে যাচ্ছিল। দেওয়াল ভর্তি করে সবার পিছু হটতে থাকা নামগুলো লিখে রাখত। দেওয়াল ভরছিল বটে, কিন্তু লেখা এগোচ্ছিল না। এমন সময় লোকটা একটা বই পেলো আর ওর
আবার অক্ষরগুলোর ভেতর গড়িয়ে যেতে ইচ্ছে করল। ভাবল, পড়লে হয়তো
লেখাও হবে। পড়তে শুরু করল।
একটা কাহিনী। একটা জগৎ। কত নাম, কত লোকজন! পড়তে পড়তে
লোকটা পাতার মধ্যে সেঁধিয়ে যেতে লাগল। সকাল হলো। তারপর সন্ধ্যা। সন্ধ্যার অনেক নতুন নামে তার ঘরের
দেওয়াল ভরে উঠল। বইটা তার বাসা হয়ে গেল। লোকটা কাহিনীর এমন
এক মুহূর্তে পৌঁছল যেখানে নায়িকা এক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের হয়ে কাজ করছে। সে চায় মানুষ কেবল ধর্ম হয়ে উঠুক আর বদলাতে বদলাতে তাদের সবার নাম এক হয়ে যাক। নায়িকা তাই একটি বিশেষ ভক্ষণালয়ে আক্রমণ চালায়।
মানুষের উদযাপন তার অপ্রিয়। উদযাপনগুলোকে শাসন করতে চায় বলে আক্রমণ চালায়। লোকটাও
নায়িকার সাথে আক্রমণ হানলো। পাতার মধ্যে ছড়িয়ে গিয়ে ভক্ষণালয়ে রক্তের উৎস্রোত
ঘনিয়ে আনল।
কাঁচা রক্তের ওপর এসে বসে যে পাখি, তার গান
কেমন হয়? তুমি কি শুনেছ তার গান? তার নাম কি তা কি তুমি জানো? ভক্ষণালয়ে কালো রক্তের নিকষ অন্ধকার নেমে এলে পঠন-পাঠন সম্পর্কে তোমার কি মনে হয় পাঠক?
লোকটা বই থেকে চোখ তুলে নেয়।
নায়িকা মারা গেছে পুলিশের গুলিতে। ভক্ষণালয়ের বাইরে অতন্দ্র প্রহরা। লোকটারও গুলি
লেগেছে। সাদা পাতায় কালো অক্ষরে জমাট রক্তের ছাপ। লোকটা বই বন্ধ করে পেট চেপে ধরে
চেয়ার থেকে পড়ে গড়িয়ে যায়
নিচের দিকে। সারা শরীরে তার শব্দের লাল-কালো রক্ত।
সন্ধ্যা, যে কিনা এখন দেবারতি হয়ে গেছে, সে লোকটাকে ডাকে। কিন্তু নামটা ও চিনতে পারে না।
শ্রবণযন্ত্র বলে দেয়, অবশেষে লোকটার নামও বদলে গেছে। দেওয়ালের লেখাগুলো অন্যরকম দেখাচ্ছে। লোকটা
দেখতে পাচ্ছে দেওয়াল জুড়ে ছড়িয়ে গিয়ে লোকটা নিজেই একটা গল্প হয়ে গেছে। ধর্ম হতে পারেনি বলে গল্প হয়ে গেছে।
লোকটা আজকাল বড় একলা হয়ে গেছে।
ধর্ম হতে পারেনি বলে গল্প হয়ে গেছে।
উত্তরমুছুনঅসাধারণ একটি গল্প। এইভাবেই নাম বদলে যায় অনেকের।
aha aro antorik lekha... kintu lokta kintu akla noye...etai moja ebong mojadar...
উত্তরমুছুন