মেয়েখেলা (
পর্ব ৫ )
দিন কাটতে থাকে, স্বপ্নের রাজকুমার আসে না। বিবাহ সংবাদের আকাশে তখন
ধুলির ঝড়। এসো প্রেম দরজায় এসে এসে সরবে, নীরবে বিদায় নেয়। কড়া নাড়ার রেশটুকু ছাড়া তেমন স্মরণীয়
কিছু নেই। শেষ হতে থাকে ইউনিভার্সিটির হষ্টেলের দিন। এবারে একটি হিল্লে না হলেই
নয়! বিয়ে নয় চাকরি।
বিয়ের পরেই দাম্পত্যের পাহাড়
মাথায় ও মনে ভেঙ্গে খা্ন খান হওয়ার ফর্মুলা একদম ধাপে ধাপে মিলে যায়। এখান থেকে শিশু ছাড়া নিজের বলতে কিছুই বাঁচে না। এই নিরপরাধ, আধা অজ্ঞান প্রাণটিকে সামনে
রেখে আবার চলে মা-জননীর সীমানা বেঁধে দেবার খেলা। দাম্ভিক ও সমাজে সব রকমের ছাড়পত্র পাওয়া
পুরুষকে দায়িত্ব অব্যাহতির গেটপাশ দিয়ে দেওয়া হয় কতগুলি নিন্দাসূচক বাক্যবায়ের সাথে সাথে। এক দায়িত্বের অব্যাহতি থেকে
আরেক অব্যাহতির দিকে তার জীবনভোর উত্তরণ ঘটতেই থাকে। বাচ্চা মানুষের দায় মায়ের
মাথায় চাপিয়ে তার অবস্থানকে ‘গ্লোরিফাই’ করে ‘সেন্টিমেন্ট’ গেলানোর সব রকমের প্রচেষ্টা চালাতে সমাজ ও পরিবার পিছু হটে
না।
শিশুর ভবিষত্যের চেয়ে মায়ের
পায়ে বেড়ি দেওয়ার কাজটাই প্রাথমিক হয়ে ওঠে। সেই বেড়িতেই স্বচ্ছন্দ হয়ে ওঠার আরেক নাম ‘মাচিওর্ড’ বা সফল নারী। তার সাফল্য কর্ম বা
প্রতিভায় যতটা, তার চেয়ে অনেক বেশি মানিয়ে নেওয়া বা ত্যাগের মহিমায়। এই মন্ত্র সাদরে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে নিজের পথ কেটে
চলার অভ্যাস গড়ি আমি। আমি স্বভাবতই সেই পচা আম বলে গণ্য হতে থাকি, যার সাহচর্য্য খুব একটা সুখকর হয় না সমাজে। বাকিরা সেই পচা আমের সংস্পর্শ থেকে রেহাই পেতে ছটপট
করে ওঠে।
ভালোবাসার জিওন কাঠির খোঁজে হারায়
আমার সব পার্থিব ও পার্থিব সম্পদ। দেখা মেলে না সাত সমুদ্র পেরিয়ে
তেরো নদীর পারে লুকিয়ে রাখা সেই প্রাণভোমরার। তবু জীবন অনেক উদার, কোথাও না কোথাও মুখ লুকানোর
আশ্রয় মিলেই যায়। জীবন সবচেয়ে প্রতারক হয়ে ওঠে এই সমঝোতার দিনে।
মেয়ের খুব কম বয়সেই আমি
প্রেমে পড়ি আবার, শহরের এক নামী বিবাহিত ব্যক্তির সাথে। আবার প্রতিরোধ তীব্র হয়ে
ওঠে। একদা চাল চলনে লেবেল লাগানো মেয়ে সত্যিকারের ‘খারাপ মহিলা’ হয়ে ওঠে। সঙ্গ দেয় তার প্রাক্তন বন্ধু বা
বর্তমান প্রেমিকের আত্মীয়স্বজন। যদিও সকলে তার দ্বারা উপকৃত হয়েছিল সময়ে সময়ে, সে কথা অনুল্লিখিত বা
অনুচ্চারিত থাকে। গায়ে লাগে এক নতুন ধাব্বা। ‘তসলিমা নাসরিন’।
প্রেম, বিবাহ, সঙ্গম নিয়ে মেয়েরা লিখতে
গেলেই এখনো সে তসলিমার ব্যর্থ প্রয়াস বলে ধিক্কৃত হয়। কিন্তু সেই সমাজে জনপ্রিয় এক ভাবনা সত্যি কি বিশ্বকবি তার বিছানা তার পরামত্মীয়দের কারো
সাথে ‘শেয়ার’ করেছিলেন? এই কৌতূহলের শেষ জানলে বা না জানলেও অনুমান
নিয়ে সন্দেহ নেই, সেখানে শুধু শ্রদ্ধা বা অশ্রদ্ধার মাপজোখ নিয়ে সক্কলে হাজির। যদিও দুটি উদাহরণ ভিন্ন মাত্রার সফর
নির্ধারণ করে, তবু কুৎসার মাপকাঠিও যে পৃথক জেন্ডারের, সেটা বুঝতে সময় লাগে না। এক জায়গায় যেটি বিনয়ী প্রশ্ন, অন্যক্ষেত্রে সেটি
প্রতিষ্ঠিত মোটা দাগের জ্বলজ্বলে লাইন।
দীর্ঘকাল একটি সম্পর্কে সামাজিক বন্ধনের ‘ষ্ট্যাম্প’ ছাড়া টিকে থাকলে সে মহিলাটি পুরুষের ‘মিস্ট্রেস’ হিসেবে পরিচিত ও ধিকৃত হয়, আমি সেই অভিজ্ঞতার মধ্যে
দিয়ে যেতে থাকি। আকাশ খুব খুব কাছে নেমে আসে, তবু অধরা থেকে যায়। কলম ধরি সেই অধরাকে ব্যক্ত
করতে। এক সীমাবদ্ধ জীবন ও পেশার কারণে হাত সেভাবে সঙ্গ দেয় না, তবে লেখার আনন্দ যেন জয় করে নেয় সব ব্যর্থতার কাঙালপনা। সম্পর্ক হারানোর গ্লানি এভাবেই মুছে
যেতে থাকে কলমের টানে।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন