ধারাবাহিক উপন্যাস 
তাহার নামটি
ঘন্টা খানেক পর  
তাহার নামটি
খুব দ্রুত গলি দিয়ে বের হতে হতেও অঞ্জন থেমে যায় রাজীবদের বাড়ির সামনে।  একবার উপরের দিকে তাকিয়ে নেয় - কুয়াশা।... তারপর
পাঁচিলের কাছে এগিয়ে আসে, প্যান্টের চেন খোলে, ডান হাতে পাঁচিলে ভর রেখে মাথা ঝুঁকিয়ে পেচ্ছাপ করতে থাকে। গলির একমাত্র এই বাড়ির পাঁচিলেই ‘এখানে প্রস্রাব করিবেন না’ লেখা নেই। 
প্রায় শেষ করে এনেছে, তখনই এক রাশ টুথপেস্ট ভরা থুতু উপর থেকে এসে পড়ল অঞ্জনের ডান কাঁধে। 
- “এটা কী হলো!” বলে উপরে তাকাতেই তীক্ষ্ণ গলা ভেসে এ্লো কুয়াশা ভেদ করে, “শালা, শুয়োরের বয়াচ্চা! যাও না, টোমার বাপের পোডে গিয়ে মোটো!” 
দ্রুত চেন টেনে অঞ্জন ছুট দেয় বাস স্ট্যান্ডের দিকে। 
- “শালা, মোতার আর
জায়গা পায় না!” খক করে কলতলায়
পেস্টগুলো ফেলে  দিয়ে  বার কয়েক ধৌতি করে নিয়ে কুলকুচি করতে থাকে
রঞ্জনা। এই কাজটা সে সময় নিয়ে করে থাকে। ভোরবেলা ঠিকমতো কুলকুচি করতে পারলে
সারাদিন মন ভালো থাকে তার। 
- “সক্কাল সক্কাল কাকে
রামায়ণ শোনাচ্চিস জিজি?” পুজোর ফুল হাতে সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসেন কাবেরী।
- “তুমি তোমার ছেলেকে
বলো, তার বন্ধুদের বাড়ির সামনে মুততে বারণ করে দিতে!”
- “আহ্, বলারও তো
একটা ছিরিছাদ আচে নাকি!”
- “হ্যাঁ মা, তুমি তো
চিরকাল দোষ ধরে যাবে আমার, আর কুত্তাগুলো রোজ নু... মানে ইয়ে বের করে মুতে যাবে
বাড়ির সামনে!”
- “জিজি, তুই চুপ
করবি! দাদা যদি শোনে... যা পিমকে বাঁধাকপি পাতাকটা দিয়ে  আয় গে!”
- “কী করবে, হ্যাঁ? শুনুক দাদা!
তুমি, তোমার ‘দাদা’ আর বাড়ির সক্কলে মিলে  তোমার ছেলের কোলে গিয়ে বসে থাকো!” মায়ের হাত
থেকে বাঁধাকপি পাতা ছিনিয়ে  নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে দুদ্দাড় নেমে যায় রঞ্জনা। পিমের খাঁচায় পাতাগুলো গুঁজে সাইকেল ঘরে ঢোকে। অনেক শব্দ সমেত নিজের সাইকেল বের করে। গেট ঠেলে
বের হয়ে  কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে
তাকিয়ে থাকে সদ্য রঙকরা সাদা পাঁচিলটার দিকে। তারপর হঠাৎই সাইকেল স্ট্যান্ড করে
একটা ইঁটের টুকরো হাতে পাঁচিলের কাছে এগিয়ে এসে খরখর  আওয়াজে গোটা গোটা করে লেখে, ‘এইখানে প্রস্রাব
করিবেন, হ্যাঁ ঠিক এইখানেই’।
উপরের ব্যালকনি থেকে
মায়ের চিৎকার শোনা যায়, “চল্লি কোতায়? কিচু খেয়ে যা!”
- “মরুক গে!” প্যাডেলে চাপ দেয়
রঞ্জনা।
- “তুই আজ আবার লেট করলি!”
- “ইয়ে মানে স্যার, সাইকেলে পাম্প ছিল না একদম, তাই বাসে
আসতে হলো, আর বাসটা খুব আস্তে চালাচ্ছিল”। 
- “তোর লজ্জা করে না! সেদিন হোল-ক্লাসের সামনে শাস্তি দিলাম, তারপরেও!” 
- “স্যার, বিশ্বাস করুন, আমি বারবার বলছিলাম জোরে চালাতে!” 
- “যা বেরিয়ে যা! বারান্দায় বসে থাক! যেদিন থেকে টাইমে আসতে পারবি, ক্লাসে  বসবি!” 
অঞ্জন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। আজ আর জুলপি ধরে টানাটানি পড়বে না। এত অল্পে  অনিলবাবুর ক্লাস কাটানো যাবে, সে ভাবতেও পারেনি। ব্যাগ বাঁ কাঁধে ঝুলিয়ে যেই  বেরিয়ে আসবে অঞ্জন, স্যার বাঁ হাতে খামচে ধরলেন পেস্ট মাখানো অঞ্জনের ডান  কাঁধ, আর ডান হাতে টেনে ধরলেন অঞ্জনের বাঁ জুলপি। কয়েক সেকেন্ড ধরে কাতরানোর পর তিনি ছেড়ে দিলেন তাকে। বাঁ কান ব্যথায় লাল। অঞ্জন মাথা নিচু  করে বেরিয়ে আসে স্যারের ক্লাসরুম থেকে। ব্যথাভরা কানেই শুনতে পায় পিছনের   সারি থেকে মেয়েগুলো গুপগুপ করে হাসছে, ‘এমন ক্যালাতে হয় না!’ 
- “অ্যাই মেয়েরা! তোমরা হাসছো কেন? বেশি হাসলে বাবাকে ডেকে পাঠাব কিন্তু!” 
স্যারের বাড়ির বারান্দায় বসে জুলপিতে হাত বোলাতে বোলাতে অঞ্জন বোঝে,  ছেলেদের জুলপিই হলো মেয়েদের বাবা।  
বাঁ হাতে বোর্ডে ডাস্টার ঘষতে শুরু করেন অনিলবাবু। কী মনে হতে হাতটা নাকের  কাছে এনে ধরে পেস্টের গন্ধ শোঁকেন খানিক। “এঃ, কী লাগল আবার!... এই যে, তোমরা বই খোলো, পৃষ্ঠা ১১৯, জননতন্ত্র...”   
যাঃ শালা, আজকেই এই চ্যাপ্টারটা পড়াতে হলো! কত কিছু জানার ছিল অঞ্জনের। বারান্দায় বসে সে আবার মেয়েদের গুপগুপ হাসি শুনতে পায়।
যাঃ শালা, আজকেই এই চ্যাপ্টারটা পড়াতে হলো! কত কিছু জানার ছিল অঞ্জনের। বারান্দায় বসে সে আবার মেয়েদের গুপগুপ হাসি শুনতে পায়।
- “অ্যাই মেয়েরা, হাসির কী আছে! অ্যাঁ? জীবনে জননতন্ত্র শোনোনি নাকি?  খুকুমণি সব!”
চুপ করে যাওয়ার বদলে হাসির মাত্রা আরও বেড়ে গেল স্যারের ক্লাসে। অঞ্জন ভাবে,  সত্যি, মেয়েগুলোর জুলপি নেই বলে হেবি মস্তি, নইলে সব হাসি বেরিয়ে যেত।
পড়া শেষ হলে জননতন্ত্রের ঘাত ঘোঁত জেনে ফেলা পড়ুয়ারা বেরিয়ে আসতে থাকে অনিলবাবুর ক্লাস থেকে। অঞ্জনও নেমে আসে রাস্তায়। 
- “এই জুলপি!”
- “জুলপি!” পিছু ফিরে অঞ্জন দেখে একটা নীল চুড়িদার দাঁড়িয়ে আছে।
- “আমায় বলছিস?”
- “হ্যাঁ, শোন এদিকে...” 
নীল চুড়িদারের কাছে এগিয়ে আসে অঞ্জন। 
- “এই নে, আমার বায়োলজি কপি, স্যারের আজকের নোটগুলোর পেজ ভাঁজ করা  আছে। জেরক্স করে আমায় পরশু শেখর স্যারের ওখানে ফেরত দিবি।” মোটা খাতাটা অঞ্জনের হাতে গুঁজে দেয় নীল চুড়িদার।
- “তুই শেখর স্যারের ওখানে পড়তে যাস না কি?” 
- “না ফুটবল খেলতে যাই! যা বলছি তাই কর, কপিটা আনতে ভুলিস না, সামনের উইকে স্যার টেস্ট নেবে বলে দিয়েছেন।” উত্তরের অপেক্ষা না করে নীল চুড়িদার চলে যায়। 
কিছুটা বমকে গিয়েই অঞ্জন মোটা বায়োলজি খাতা ব্যাগে ঢুকিয়ে নেয়। বাসস্ট্যান্ডে একটা বাস এসে পড়ায় সাথে সাথে তাকে ছুটতে হয় সেদিকে। 
ঘন্টা খানেক পর  
স্কুলে যাওয়ার পথে
হঠাৎই সাইকেলের স্পিড বাড়িয়ে অঞ্জনের পাশাপাশি চলে আসে রাজীব।
- “এই জুলপি, তুই আবার
বাড়ির সামনে পেচ্ছাপ করছিলি?” 
- “হেব্বি পেয়ে গেছিল
রে ভাই!”
- “বাল, তোকে কতদিন
বলেছি দেখেশুনে করবি, দিদি হেবি খিস্তি করছিল সকালে।”
- “হুম, শুনেছি।” 
- “শুনেছো, বাবা
রামদেব! খিস্তি শুনে পাপস্খালন করেছেন!”
- “আরে কুয়াশা ছিল,
দেখতেই পাইনি তোর দিদিকে।”
- “গান্ডু!” স্পিড বাড়িয়ে
স্কুলের দিকে এগিয়ে যায় রাজীব। পিঠের ব্যাগে মোটা  বায়োলজি নোটখাতা আর সাইকেলে হাওয়া কম থাকায়
অঞ্জন আর তাকে ধরতে পারে না।
প্রিয় সাব্বির,
তিনি বললেন, “Give thy thoughts
no tongue.” এ যে কী যন্ত্রণা, যদি বুঝতে তুমি সাব্বির! যখন ঘুমোই বা এক নাগাড়ে আকাশে তাকিয়ে থাকি, অথবা মন দিয়ে পিমের কচকচ ফুলকপি খাওয়া শুনি, মাথার মধ্যে কিলবিল করে ওরা। ওদের নিয়ে কতদূরে যাব সাব্বির? কতটা দূরে গেলে ওরা থামবে, থেমে যাবে, একেবারে? আমার একটা ডাইরি ছিল, তোমায় বলিনি আগে। ক্লাস ইলেভেনে ইতিহাসে ফেল করার পর মা ওটা ছাদে আগুন জ্বেলে পুড়িয়ে দিয়েছিল আমার সামনেই। মরা পোড়ার শব্দ শুনেছো কখনো? হাড় ফাটার শব্দ? ছাদে এলে সে আওয়াজ আমি  এখনও পাই। তোমাকেও হয়তো শোনাবো একদিন।
আজ সকালে মায়ের সাথে
ঝগড়া করেছি আবার। কী কারণে, তা তোমার না  জানলেও চলবে। তবে মায়ের ‘দাদা’, মানে আমার
জ্যেঠু আবার কিছু করতে পারে,  তাই তৈরি হচ্ছি।
ভালো থেকো।
ইতি  
রঞ্জনা
পুনশ্চঃ তিনি এটাও
বললেন, “Hell is empty and
all the devils are here.”
পড়ার পর চিঠিটা
টেবিলে আবার আগের মতোই রেখে দিয়ে পা টিপে টিপে
দিদির বইয়ের আলমারির কাছে আসে
রাজীব। একবার ঘাড় ঘুরিয়ে খাটে শুয়ে থাকা রঞ্জনাকে দেখে। হাত পা ছড়িয়ে ব্যবচ্ছেদ করতে দেওয়া ব্যাঙের মতো ঘুমোচ্ছে সে।  নাইটি
অনেকটা উঠে গিয়ে খয়েরি প্যান্টি বেরিয়ে আছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাজীব আলমারির পাল্লা
খোলে। বিভিন্ন বই
নিঃশব্দে ঘাটাঘাটি করে কোথা থেকে একটা  পাতলা বই বের করে আনে। দ্রুত পাতাগুলো উল্টিয়ে নিশ্চিত হয়ে আবার পা
টিপে  টিপে বেরিয়ে আসে
রঞ্জনার ঘর থেকে।
 


বেশ লাগল। চলুক...
উত্তরমুছুন:)- alokparna
মুছুনআমার কিছু বলার নেই, শুধু দেখার আর পড়ার আছে। এটা যতদূর চলবে, আমিও পিছনে পিছনে চলব
উত্তরমুছুনonek dhonyobad :)
মুছুন- alokparna
babare, er e modhye dekhlam eitar tukligiri suru hoye geche. choluk bhai hey cholte thakuk
উত্তরমুছুন:)
মুছুন- alokparna
আপনার আঁকাগুলো বেশ হয়েছে, আর লেখাটা চাঁদের চরের চেয়ে অনেকটা উন্নত - রফিকুল ইসলাম
উত্তরমুছুনdhonyobad :)
মুছুন- alokparna
বাহ আঁকাগুলো দারুণ হচ্ছে। এটাকেই মেন বইয়ের কভার করিস, বাকিটা আমি করে দেবো। লেখা নিয়ে কি বলবো, অনেকদিন পর একটা দারুণ হাসি হাসছি। এটার জন্যে অপেক্ষায় ছিলাম। এবার তুই প্যারডিটা শুরু কর :v :D খ্যাঁকস ;D - সাঁঝবাতি
উত্তরমুছুনBoi... dekha jak. :D seta hote ekhono du bochhor lagbe... eta to sobe first part- alokparna
মুছুন