কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৬

অনুপম মুখোপাধ্যায়

কাঁচি


সাদা আকন্দর মূল ধারণ করলে শত্রুনাশ হয়। কিন্তু সেটা স্বাতী নক্ষত্র থাকাকালীন মাটির ভেতর থেকে নিতে হবে এবং পরতে হবে সাদা সুতোয় বেঁধে। অনিমেষের এখন শত্রু অনেক। কিন্তু শহরে সাদা আকন্দর সংখ্যা কম। একটা আছে, হাসপাতালের তিন নং গেটের পাশে। একজন চা দোকানি লাগিয়েছেন। কেউ চাইলে তিনি শিকড় নিতে দ্যান, কিন্তু ব্যাজার মুখে।

শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠেই অনিমেষ বাইক নিয়ে বেরোল। বাইকের হুকে একটা ছোট থলি। আর কিছু হাতের কাছে পায়নি, একটা বড় কাঁচি নিয়েছে। সেটা দিয়ে  মাটি খুঁড়বে, একটা ছোট্ট মূল কেটে নেবে। বাড়ি ফিরে স্নান করে অফিস বেরনোর আগে পরে নেবে। প্রতি মাসে বিশেষ তারিখে স্বাতী নক্ষত্রটি এলেই সে এ কাজ করে।

চা দোকানির মুখ প্রতি মাসে আগের মাসের চেয়ে ব্যাজার হয়ে যায়। তিনি অনেক যত্নে গাছটি লাগিয়েছেন। লোকের আবদার লেগেই আছে। বোঝা যায় সাদা আকন্দর গুণ অনেকেই জানে, এবং গাছের খোঁজ পায় না।

আজও কাঁচি দিয়ে অল্প মাটি খুঁড়ল। সামনেই একটি রোগা সুতোর মতো মূল পেল। কেটে নিল। ব্যাগে মূল এবং কাঁচি ভরল। বাইকে ঝোলাল। বাইকে স্টার্ট নিল। শীতের ধারালো বাতাস কেটে একটু এগোতেই একটি বাইক তাকে ওভারটেক করে সামনে স্লো হয়ে গেল।
‘দাদা, আপনার কাঁচিটা যে পড়ে গেল!’ বলেই বাইক বেরিয়ে গেল।
অনিমেষের মন খারাপ হয়ে গেল। কাঁচিটা বেশ দামি। বাড়ি ফিরে বৌয়ের কথা শুনতে হবে। ব্যাগটা পুরনো, কাঁচির ফলাদুটো তলার দিকেই ছিল, ছিঁড়ে পড়ে যাওয়া স্বাভাবিক, এবং দোষটা তারই।

অনিমেষ বাইক ফেরাল। আস্তে আস্তে ফিরে চলল ফেলে আসা রাস্তার দিকে চোখ রেখে। কোথাও কাঁচির কোনো চিহ্ন নেই। শীতের মধ্যে যে লোকগুলো বেরিয়েছে, হেঁটে যাচ্ছে, কারও মুখে একটা বড় কাঁচি দেখতে পাওয়ার বা কুড়িয়ে নেওয়ার দাগ নেই। কাঁচিটা গেল!

হাসপাতালের সেই গেট অবধি গিয়ে আবার বাইক ঘুরিয়ে অনিমেষ বাড়ি ফিরল।

বাইক থেকে নেমে দেখল কাঁচির একটা ফলা ব্যাগটাকে ফুঁড়ে বাইরে ঝুলে আছে। পড়ে যেতে পারত যে কোনো সময়। পড়েনি তো!

2 কমেন্টস্: