চর
লিপিকা ঘোষ
এখানকার মানুষের ধরন যেন পদ্মার পানি। ঢেউ চাইলে ঢেউ, চর চাইলে চর।
‘কুঠে গেইলছিলি এত রাতে?’
‘চর থিকে এনু’
‘খবর কি?’
‘ক্যাম্প জবর, ধর পাকড় চইলছে, এখুন চুপ থাকো বড় আব্বু, সময় বুঝে বুইলব, এখুন ঘর দিক যাই’
‘যা যা, নতুন বিহা’
খল খল করে হাসল রব্বান মিঞা, সেলিমের আব্বুর বড়দাদা। এখানে বাবার ঠাকুরদাদাকেও বড় আব্বু বলে। পদ্মার পানি যেমন –- কথার ধরতাই ধরাও তাই। ভাঙ্গন চাও তো ভাঙ্গন, আবাদ চাও তো আবাদ।
সেলিমের নতুন ‘বহু’কে দিন দশেক বাপের ঘর পাঠিয়েছিল সেলিমের মা’য়।
‘যাক, বাপ মা’র কাছের থিকে ঘুইরে আসুক বহুডা, বাছার কাঁদন থামে না গো’। বড় বহিনের জন্য খালি কাঁদে রেহেনা। রোকেয়া ওর বড় বহিন। ছেলে কোলে ক’রে বিধবা হলো। চর-এ গেছিল রেহেনার দুলাভাই। আর ফেরেনি। তখন বি এস এফ এত জোরদার ছিল না। গোরু আসত যেত, পোস্ত এলাচের বস্তা এপার ওপার। ভাগ-বখরা নিয়ে বিবাদ। লাশ ভেসে গেছিল ওপার চর-এ...
রেহেনা কাঁদে। সেলিমের বাপের রমরমা জুতোর দোকান, আবাদি জমি দেখে ছোট মেয়ের বিয়ে দিয়েছিল রেহেনার আব্বু। সেলিমও চরে যায়। চরের টান বড়। পদ্মার পানির টান –- কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে ফেলবে কে জানে!
দিদিটা সারা দিনমান বসে থাকে পদ্মার পাড়ে। পানিতে ঢেউ উঠলে দিদির উথাল শাড়ির আঁচল ওড়ে। ডর লাগে রেহেনার।
‘ঘরে চলো বুবু’
‘তুই যা, পদ্মার পানির বাতাস লাগাস না গা’য়’
‘তুমি চলো’
রোকেয়া ওঠে না।
ঘরে ঢোকে সেলিম, ঘর আন্ধার। বারান্দা থেকে আবছা আলো ঢুকছে। গোঁজ হয়ে বসে আছে রেহেনা। দিন কুড়ি হলো নিকাহ-পড়া করে ঘরে এনেছে, নতুন ‘বহু’।
‘মুখে আন্ধার দ্যাখো, কি হইলছে?’
‘চরে গেইলছিলেন’
‘ওহ, আজ গেনু। কাজ ছিল’
কী কাজ রেহেনা জানে। বুক কাঁপে ওর। দরজায় ছিটকিনি তোলার শব্দ শোনে রেহেনা। বাইরে কি বাতাস উঠল? পদ্মার পানিতে ঘূর্ণি উঠবে। রেহেনার মাথার ওড়না মাটিতে লোটায়।
হঠাৎ দুমদাম লাথি দরজায়। বাইরে তুমুল কোলাহল। সেলিমের মা’র চীৎকার –-‘সেলিমকে তুমরা তুইলে নিয়ে যেইও না গো...’ মড়মড় করে দরজা ভাঙে। হিঁচড়ে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে সেলিমকে পুলিস ভ্যানে তোলে। গ্রামের বড় রাস্তায় দাঁড়িয়ে সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর আরেকটা ভ্যান।
রেহেনার থম চোখে পলক পড়ে না। লোনা পানির উথাল। চর চাও তো চর, ভাঙ্গন চাও তো ভাঙ্গন। জোর বাতাস উঠল। আন্ধার উড়ছে, যেন রোকেয়া বুবু’র আঁচল –-
রোকেয়া বুবু কি একটু ঘুমোল? রেহেনা জাগুক। রাত জাগতে জাগতে সকাল হয়। সকালে রেহেনা গিয়ে দাঁড়াবে পদ্মার পাড়ে...
এখানকার মানুষের ধরন যেন পদ্মার পানি। ঢেউ চাইলে ঢেউ, চর চাইলে চর।
‘কুঠে গেইলছিলি এত রাতে?’
‘চর থিকে এনু’
‘খবর কি?’
‘ক্যাম্প জবর, ধর পাকড় চইলছে, এখুন চুপ থাকো বড় আব্বু, সময় বুঝে বুইলব, এখুন ঘর দিক যাই’
‘যা যা, নতুন বিহা’
খল খল করে হাসল রব্বান মিঞা, সেলিমের আব্বুর বড়দাদা। এখানে বাবার ঠাকুরদাদাকেও বড় আব্বু বলে। পদ্মার পানি যেমন –- কথার ধরতাই ধরাও তাই। ভাঙ্গন চাও তো ভাঙ্গন, আবাদ চাও তো আবাদ।
সেলিমের নতুন ‘বহু’কে দিন দশেক বাপের ঘর পাঠিয়েছিল সেলিমের মা’য়।
‘যাক, বাপ মা’র কাছের থিকে ঘুইরে আসুক বহুডা, বাছার কাঁদন থামে না গো’। বড় বহিনের জন্য খালি কাঁদে রেহেনা। রোকেয়া ওর বড় বহিন। ছেলে কোলে ক’রে বিধবা হলো। চর-এ গেছিল রেহেনার দুলাভাই। আর ফেরেনি। তখন বি এস এফ এত জোরদার ছিল না। গোরু আসত যেত, পোস্ত এলাচের বস্তা এপার ওপার। ভাগ-বখরা নিয়ে বিবাদ। লাশ ভেসে গেছিল ওপার চর-এ...
রেহেনা কাঁদে। সেলিমের বাপের রমরমা জুতোর দোকান, আবাদি জমি দেখে ছোট মেয়ের বিয়ে দিয়েছিল রেহেনার আব্বু। সেলিমও চরে যায়। চরের টান বড়। পদ্মার পানির টান –- কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে ফেলবে কে জানে!
দিদিটা সারা দিনমান বসে থাকে পদ্মার পাড়ে। পানিতে ঢেউ উঠলে দিদির উথাল শাড়ির আঁচল ওড়ে। ডর লাগে রেহেনার।
‘ঘরে চলো বুবু’
‘তুই যা, পদ্মার পানির বাতাস লাগাস না গা’য়’
‘তুমি চলো’
রোকেয়া ওঠে না।
ঘরে ঢোকে সেলিম, ঘর আন্ধার। বারান্দা থেকে আবছা আলো ঢুকছে। গোঁজ হয়ে বসে আছে রেহেনা। দিন কুড়ি হলো নিকাহ-পড়া করে ঘরে এনেছে, নতুন ‘বহু’।
‘মুখে আন্ধার দ্যাখো, কি হইলছে?’
‘চরে গেইলছিলেন’
‘ওহ, আজ গেনু। কাজ ছিল’
কী কাজ রেহেনা জানে। বুক কাঁপে ওর। দরজায় ছিটকিনি তোলার শব্দ শোনে রেহেনা। বাইরে কি বাতাস উঠল? পদ্মার পানিতে ঘূর্ণি উঠবে। রেহেনার মাথার ওড়না মাটিতে লোটায়।
হঠাৎ দুমদাম লাথি দরজায়। বাইরে তুমুল কোলাহল। সেলিমের মা’র চীৎকার –-‘সেলিমকে তুমরা তুইলে নিয়ে যেইও না গো...’ মড়মড় করে দরজা ভাঙে। হিঁচড়ে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে সেলিমকে পুলিস ভ্যানে তোলে। গ্রামের বড় রাস্তায় দাঁড়িয়ে সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর আরেকটা ভ্যান।
রেহেনার থম চোখে পলক পড়ে না। লোনা পানির উথাল। চর চাও তো চর, ভাঙ্গন চাও তো ভাঙ্গন। জোর বাতাস উঠল। আন্ধার উড়ছে, যেন রোকেয়া বুবু’র আঁচল –-
রোকেয়া বুবু কি একটু ঘুমোল? রেহেনা জাগুক। রাত জাগতে জাগতে সকাল হয়। সকালে রেহেনা গিয়ে দাঁড়াবে পদ্মার পাড়ে...
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন