কবিগুরুর নোবেল বিজয়ের শতবর্ষে : লহ সালাম
সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ
দুই শ্রেণীর মানুষের সাহচর্যে আমাদের চলতে হয়। এক শ্রেণীর সাহিত্যমনা এবং অন্য শ্রেণীর সাহিত্যবিমুখ মানুষ। সাহিত্যবিমুখ মানুষদের নিয়ে আলোচনার কিছু নেই। সাহিত্যমনা মানুষদের মধ্যেও আবার দুই শ্রেণী আছে। এক শ্রেণী যাঁরা সাহিত্য নিয়ে কাজ করেন, সাহিত্য বোঝেন, সাহিত্যের গভীরে বসবাস করেন। তিনি কবি হোন বা লেখক, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক কিংবা পাঠক অথবা সমালোচক। আর এক শ্রেণী আছে যাঁরা কোনো কিছু না বুঝেই সাহিত্যকে ভালোবেসে যান। যাঁরা সাহিত্য বোঝেন না কিন্তু ভালোবাসেন, তাঁদের নিয়েও কোনো কথা নেই। যাঁরা সাহিত্যের ঘাটে পেতেছেন শয্যা, তাঁদের মধ্যে আবার দুই শ্রেণী আছে। এক শ্রেণী অসম্ভব রবীন্দ্রভক্ত। প্রাত্যহিক জীবনে রবীন্দ্রনাথ ছাড়া তাঁরা কিছুই বোঝেন না। তাঁদের গোটা জীবনটাই রবীন্দ্রময়। আর এক শ্রেণীর মানুষ আছেন, যাঁরা রবীন্দ্রনাথকে পছন্দ করেন না। সব সময় রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধাচারণ করাই তাঁদের একমাত্র কাজ। রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাপ্তির মর্যাদা বা কবিগুরু বাংলা সাহিত্যকে কতটা ওপরে নিয়ে গেছেন, সেটা বোঝার জ্ঞান তাঁদের নেই। তাঁরা মূর্খ, তাঁরা বুরবক, তাঁদের নিয়ে আলোচনা করে কাগজ কালির অপচয় নিছক অর্থহীন। কিন্তু যাঁরা রবীন্দ্রনাথকে হৃদয়ের গভীরে লালন করছেন, তাঁদের মধ্যেও দুই শ্রেণীর রবীন্দ্রপ্রেমী আছেন। এক শ্রেণী রবীন্দ্রনাথকে পড়ে, জেনে, বুঝে রবীন্দ্রভুবনে বসবাস করছেন; আর এক শ্রেণী ঠিক ততটা রবীন্দ্রনাথের গভীরে ঢোকেননি, তবে নিজেকে আঁতেল হিসেবে জাহির করার জন্যে রবীন্দ্রভক্ত সেজেছেন। তাঁরা কথায় কথায় রবীন্দ্রনাথের দু’একটি কবিতার লাইন ঝেড়ে দেন, গুনগুন করে রবীন্দ্রসঙ্গীত গান করেন, বন্ধুমহলে ‘শেষের কবিতা’র অমিত বা লাবণ্যের সংলাপ আওড়ে বাহবা কুড়ান।
২০১৩ সাল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল বিজয়ের শতর্ষ। ঠিক একশো বছর আগে কবিগুরু তাঁর ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। কবিগুরুর সেদিনের নোবেল বিজয়ে বিশ্বের কোটি কোটি বাঙালি, বাংলাভাষাপ্রেমী আনন্দের সাগরে ভেসেছিল। খুশিতে উদ্বেলিত, উদ্ভাসিত হয়েছিল গোটা বাঙালি জাতি। তবু কিছু মানুষ রবীন্দ্রনাথের নোবেল বিজয়ে খুশি হতে পারেনি। তারা নোবেল বিজয়ের গুরুত্ব বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল তাদের জ্ঞানের অভাবের কারণে।
রবীন্দ্রনাথের সেদিনের নোবেল বিজয় ছিল গোটা বাঙালি জাতির নোবেল বিজয়। নোবেল জয়ের মাধ্যমে কবিগুরু বাংলা ভাষা, বাঙালি জাতিকে বিশ্বের দরবারে সম্মানের সাথে তুলে ধরেছিলেন। আজও বিশ্বে রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে আমাদের পরিচিত হতে হয়। পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষ আজও বাংলাদেশের নাম জানে না, পশ্চিম বাংলার নাম জানে না, আসাম বা ত্রিপুরার নামও জানে না। কিন্তু তারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম জানে। আর সেই কারণে জানে বাংলা ভাষার কথাও। আর এই কারণেই সব বাংলাভাষীকে আজীবন রবীন্দ্রনাথের কাছে কৃতজ্ঞ থাকতে হবে; তাঁকে ভালোবেসে হোক বা ভালো না বেসে।
যে রবীন্দ্রসুধা পান করেনি, সে অধম। যখন ক্লান্তি আর অবসাদ জীবনটাকে আচ্ছন্ন করে রাখে, ঠিক তখনই ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন রবীন্দ্রনাথ। কবিগুরুর গান আর কবিতা মুহূর্তের মধ্যে মনটাকে ভালো করে দেয়। কবিতা, গানে কবিগুরুকে বাংলা সাহিত্যের শীর্ষস্থান থেকে সরানোর ক্ষমতা কারও নেই। তুলনামূলকভাবে কম উপন্যাস লিখলেও সেখানেও শীর্ষ সারিতেই তাঁর অবস্থান। চিত্রাঙ্কন বা ইংরেজি লেখাতেও পিছিয়ে ছিলেন না। মোদ্দা কথা, বাংলা সাহিত্য যতদিন থাকবে, ততদিন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেঁচে থাকবেন স্বমহিমায়। আর তার প্রমাণ, তাঁর জন্মের দেড়শো বছর পরেও রবীন্দ্ররচনার প্রতি পাঠকদের আগ্রহ। যত দিন যাচ্ছে, ততই বাড়ছে তাঁর বই বিক্রি। পাঠকেরা আরও বেশি করে ঝুঁকে পড়ছে তাঁর প্রতি। এক সময় গোটা বাংলা সাহিত্যই হয়ে উঠবে রবীন্দ্রময়। নোবেল বিজয়ের শতবর্ষে গুরুদেব তুমি লহ সালাম!
দুই শ্রেণীর মানুষের সাহচর্যে আমাদের চলতে হয়। এক শ্রেণীর সাহিত্যমনা এবং অন্য শ্রেণীর সাহিত্যবিমুখ মানুষ। সাহিত্যবিমুখ মানুষদের নিয়ে আলোচনার কিছু নেই। সাহিত্যমনা মানুষদের মধ্যেও আবার দুই শ্রেণী আছে। এক শ্রেণী যাঁরা সাহিত্য নিয়ে কাজ করেন, সাহিত্য বোঝেন, সাহিত্যের গভীরে বসবাস করেন। তিনি কবি হোন বা লেখক, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক কিংবা পাঠক অথবা সমালোচক। আর এক শ্রেণী আছে যাঁরা কোনো কিছু না বুঝেই সাহিত্যকে ভালোবেসে যান। যাঁরা সাহিত্য বোঝেন না কিন্তু ভালোবাসেন, তাঁদের নিয়েও কোনো কথা নেই। যাঁরা সাহিত্যের ঘাটে পেতেছেন শয্যা, তাঁদের মধ্যে আবার দুই শ্রেণী আছে। এক শ্রেণী অসম্ভব রবীন্দ্রভক্ত। প্রাত্যহিক জীবনে রবীন্দ্রনাথ ছাড়া তাঁরা কিছুই বোঝেন না। তাঁদের গোটা জীবনটাই রবীন্দ্রময়। আর এক শ্রেণীর মানুষ আছেন, যাঁরা রবীন্দ্রনাথকে পছন্দ করেন না। সব সময় রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধাচারণ করাই তাঁদের একমাত্র কাজ। রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাপ্তির মর্যাদা বা কবিগুরু বাংলা সাহিত্যকে কতটা ওপরে নিয়ে গেছেন, সেটা বোঝার জ্ঞান তাঁদের নেই। তাঁরা মূর্খ, তাঁরা বুরবক, তাঁদের নিয়ে আলোচনা করে কাগজ কালির অপচয় নিছক অর্থহীন। কিন্তু যাঁরা রবীন্দ্রনাথকে হৃদয়ের গভীরে লালন করছেন, তাঁদের মধ্যেও দুই শ্রেণীর রবীন্দ্রপ্রেমী আছেন। এক শ্রেণী রবীন্দ্রনাথকে পড়ে, জেনে, বুঝে রবীন্দ্রভুবনে বসবাস করছেন; আর এক শ্রেণী ঠিক ততটা রবীন্দ্রনাথের গভীরে ঢোকেননি, তবে নিজেকে আঁতেল হিসেবে জাহির করার জন্যে রবীন্দ্রভক্ত সেজেছেন। তাঁরা কথায় কথায় রবীন্দ্রনাথের দু’একটি কবিতার লাইন ঝেড়ে দেন, গুনগুন করে রবীন্দ্রসঙ্গীত গান করেন, বন্ধুমহলে ‘শেষের কবিতা’র অমিত বা লাবণ্যের সংলাপ আওড়ে বাহবা কুড়ান।
২০১৩ সাল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল বিজয়ের শতর্ষ। ঠিক একশো বছর আগে কবিগুরু তাঁর ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। কবিগুরুর সেদিনের নোবেল বিজয়ে বিশ্বের কোটি কোটি বাঙালি, বাংলাভাষাপ্রেমী আনন্দের সাগরে ভেসেছিল। খুশিতে উদ্বেলিত, উদ্ভাসিত হয়েছিল গোটা বাঙালি জাতি। তবু কিছু মানুষ রবীন্দ্রনাথের নোবেল বিজয়ে খুশি হতে পারেনি। তারা নোবেল বিজয়ের গুরুত্ব বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল তাদের জ্ঞানের অভাবের কারণে।
রবীন্দ্রনাথের সেদিনের নোবেল বিজয় ছিল গোটা বাঙালি জাতির নোবেল বিজয়। নোবেল জয়ের মাধ্যমে কবিগুরু বাংলা ভাষা, বাঙালি জাতিকে বিশ্বের দরবারে সম্মানের সাথে তুলে ধরেছিলেন। আজও বিশ্বে রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে আমাদের পরিচিত হতে হয়। পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষ আজও বাংলাদেশের নাম জানে না, পশ্চিম বাংলার নাম জানে না, আসাম বা ত্রিপুরার নামও জানে না। কিন্তু তারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম জানে। আর সেই কারণে জানে বাংলা ভাষার কথাও। আর এই কারণেই সব বাংলাভাষীকে আজীবন রবীন্দ্রনাথের কাছে কৃতজ্ঞ থাকতে হবে; তাঁকে ভালোবেসে হোক বা ভালো না বেসে।
যে রবীন্দ্রসুধা পান করেনি, সে অধম। যখন ক্লান্তি আর অবসাদ জীবনটাকে আচ্ছন্ন করে রাখে, ঠিক তখনই ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন রবীন্দ্রনাথ। কবিগুরুর গান আর কবিতা মুহূর্তের মধ্যে মনটাকে ভালো করে দেয়। কবিতা, গানে কবিগুরুকে বাংলা সাহিত্যের শীর্ষস্থান থেকে সরানোর ক্ষমতা কারও নেই। তুলনামূলকভাবে কম উপন্যাস লিখলেও সেখানেও শীর্ষ সারিতেই তাঁর অবস্থান। চিত্রাঙ্কন বা ইংরেজি লেখাতেও পিছিয়ে ছিলেন না। মোদ্দা কথা, বাংলা সাহিত্য যতদিন থাকবে, ততদিন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেঁচে থাকবেন স্বমহিমায়। আর তার প্রমাণ, তাঁর জন্মের দেড়শো বছর পরেও রবীন্দ্ররচনার প্রতি পাঠকদের আগ্রহ। যত দিন যাচ্ছে, ততই বাড়ছে তাঁর বই বিক্রি। পাঠকেরা আরও বেশি করে ঝুঁকে পড়ছে তাঁর প্রতি। এক সময় গোটা বাংলা সাহিত্যই হয়ে উঠবে রবীন্দ্রময়। নোবেল বিজয়ের শতবর্ষে গুরুদেব তুমি লহ সালাম!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন