কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০১৩

০৭ কাজল সেন

সম্পর্ক
কাজল সেন



সম্পর্কটা বোধহয় আর টিকিয়ে রাখা গেল না! ছাড়াছাড়িটা অনিবার্য হয়ে উঠছে ক্রমশ। অনেক চেষ্টা হয়েছে মেরামতের। যত রকম ঠোকাঠুকি ও ঝাড়াঝুড়ি, সব রকমই। বিস্তর কথা চালাচালি ও কথা কাটাকাটি, সব কিছুই। তবু সম্পর্কটা কিছুতেই ধরে রাখা যাচ্ছে না তার পুরনো ট্র্যাকে। লাট খাওয়া ঘুড়ির মতো ক্রমশই তা নেমে যাচ্ছে এক বিপজ্জনক অর্বাচীন মাত্রায়।

শ্বেতা কখনও বিদেশে যায়নি। যাওয়ার তেমন কোনো সুযোগও আসেনি। শ্বেতার সান্ত্বনা, নিজের দেশটাই তো পুরো ঘুরে দেখা হয়নি এখনও! আগে তো স্বদেশ দেখি, তারপর না হয় বিদেশ! অমিতাভকে অবশ্য ইদানীং স্বদেশ থেকে বেশি সময় বিদেশেই কাটাতে হয়। এবং তা কখনই নতুন দেশ দেখার আয়োজনে নয়, বরং কাজের প্রয়োজনেই তাকে ছুটে বেড়াতে হয় বিভিন্ন দেশ।

এবং এটাই যে শ্বেতা ও অমিতাভর সম্পর্ক টিকিয়ে না রাখার একটা জবরদস্ত কারণ, তাও কিন্তু নয়। আসলে শ্বেতার জরায়ুর ভেতর যে প্রাণকণা সম্প্রতি খুব বেশি মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে, তাকে কীভাবে বৈধ করা যায়, তাই নিয়েই বেশি চিন্তিত অমিতাভ। প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় যে কোনো সন্তানের বৈধ বায়োডাটা ঠিকঠাক তৈরি করতে হলে, একজন বৈধ বাবার নাম থাকা খুবই জরুরি। অথচ অমিতাভ ঠিক এই যুক্তিটাকেই এর আগে কখনও আমল দিতে চায়নি। বিবাহ নামের প্রতিষ্ঠানকে সে বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে। আর শ্বেতারও এই ব্যাপারে কোনো দ্বিমত ছিল না। এবং এখনও নেই। অমিতাভ কর্মসূত্রে বিদেশ থেকে স্বদেশে ফিরে আবার বিদেশে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত সে এবং শ্বেতা যথেচ্ছভাবে শরীরী খেলায় বুঁদ হয়ে থেকেছে। আর যাতে অন্য কোনো বিপত্তি না ঘটে, তাই তারা যা কিছু রক্ষাকবচ আছে, মানে কন্ট্রাসেপটিভ পিল, কন্ডোম, গর্ভনিরোধক জেলি, সেফ পিরিওড, উইথড্রয়াল প্রোসেস –- সব কিছুরই সীমান্ত উপযোগিতা কার্যকরী করেছে। অথচ কখন যে তাপ ও রস বিনিময়ের খেলায় নতুন প্রাণের এমন বিস্ফোরণ ঘটল! আর এইখানেই বড় নাড়া খেয়ে গেল অমিতাভ। তার এত দিনের সযত্ন লালিত বিবাহ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত ভাবনা চিন্তাগুলো কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেল। অথচ শ্বেতা এখনও পর্যন্ত নাছোড়। সে প্রসব করতে চায় তার অবৈধ সন্তান।

অনেক ঠোকাঠুকি, ঝাড়াঝুড়ি, কথা কাটাকুটি, কথা চালাচালি –- কত কিছুই না হয়েছে তারপর! সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার জন্য মেরামতের সব রাস্তাই খতিয়ে দেখা হয়েছে। অমিতাভ শেষপর্যন্ত সন্তানের স্বার্থে তার নিজের আদর্শগত স্বার্থ বিঘ্নিত করে বৈধ বাবার ভূমিকায় অবতীর্ণ হবারও প্রস্তুতি নিয়েছে। কিন্তু শ্বেতা অবিচল তার অবৈধ সন্তানের মায়ের ভূমিকায় রূপদান করতে।

আর বোধহয় টিকিয়ে রাখা গেল না সম্পর্কটা। ক্রমশই অনিবার্য হয়ে উঠছে ছাড়াছাড়িটা। শ্বেতা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না, তার কখনও বিদেশে যাওয়ার সুযোগ আদৌ আসবে কিনা!

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন