কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০১৩

১৮ রুচিস্মিতা ঘোষ

আঁচড়
রুচিস্মিতা ঘোষ


পুষ্যা আমাকে দেখছিল। ওর চোখ দুটো জ্বলছে। পর্দার ফাঁক দিয়ে এক টুকরো রোদ ওর খয়েরি ছোপে একটা আলোর বৃত্ত তৈরি করেছে। ও কখন যে আমার বেডরুমে ঢুকে বিছানার কোণে বসে, টেরই পাইনি।

রোজ রাতে ভরপুর আদর করার পরও মৃদুলের আশ মেটে না। অফিস যাবার আগে হালকা আদর না করলে ওর চলে না। এই তো এইমাত্র আদরের পালা চুকিয়ে ও অফিসে বেরিয়ে গেল। রেশটুকু এখনো আমার গালে, ঠোঁটে, বুকে। ব্লাউজের দুটো হুক এখনো খোলা। পুষ্যা সব দেখে ফেলেছে। আমার লজ্জা করছে। ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম। পুষ্যা হাসলো না। রাগে গরগর করছে। নিজের জায়গা থেকে একফোঁটাও সরলো না। অন্যদিন আমার পায়ে পায়ে ঘোরে। খাবারের জন্য বায়না করে। আমি বিছানা ছেড়ে ওর কাছে এলাম। জানালার পর্দা সরিয়ে দিতেই একঝাঁক রোদ বিছানা ভাসিয়ে দিলো। পুষ্যার সারা গা চকচক করে উঠলো।

ও বসেই আছে। আমি ডাকলাম –- পুষ্যা, পুষ্‌ষা, সোনা আমার, আয় দুধ খাবি। ওমা! তাও নড়ছে না! ফোঁসফোঁস করছে। ওর বাদামি চোখের মণি আমার দিকে নির্নিমেষ। কী হলো ওর! আমি হাত বাড়িয়ে ওকে কোলে নিতে চাইলাম। ও সামনের একটা পা তুলে ফোঁস করলো। অন্যদিনের মতো ছুটে আমার কোলে এলো না। সাইড টেবিল থেকে মৃদুলের এঁটো চায়ের কাপটা নিয়ে আমি এলাম রান্নাঘরে। পুষ্যার জন্য বাটিতে দুধ ঢাললাম।

ওর সামনে বাটিটা রাখতেই এক থাবায় বাটিটা উলটে দিলো। মেঝেতে দুধ গড়াচ্ছে। ভারি রাগ হলো। উপুড় করা বাটিটা হাতে নিয়ে আবার দৌড়ালাম রান্নাঘরে। ন্যাতা ভিজিয়ে মেঝেতে গড়ানো দুধ মুছছি। কী বেয়াদপ! এত হিংসুটে! আমার বরের সঙ্গে একটু সোহাগও করতে পারব না?

পুষ্যা এখনো আমাকে দেখছে। ফোঁসফোঁস করছে। গড়ানো দুধের অবশেষটুকু দেখে জিভ চাটলো একবার। আমি জল-ন্যাতা নিয়ে বেরিয়ে এলাম। জ্যাম মাখানো বিস্কুট পুষ্যার খুব পছন্দ। বিস্কুটে জ্যাম মাখিয়ে ওর কাছে ফিরে এলাম। আমার হাতে বিস্কুট দেখে এবার ও দৌড়ে এলো। হাসলাম। ভবী এবার ভুলেছে তাহলে! পুষ্যা এক লাফ দিয়ে আমার কোলে চড়লো। তারপর এক থাবা মেরে বিস্কুটটা ফেলে দিলো। মুখটা বাড়িয়ে আমার বুকে মুখ গুঁজে দিলো। ওর হুটোপুটিতে আমার ব্লাউজের সব হুকগুলো ছিঁড়ে গেল পটাপট। এক সেকেন্ডও দেরি না করে পুষ্যা ওর তীক্ষ্ণ নখ দিয়ে আঁচড় কেটে দিলো আমার বুকে।

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন