কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০১৩

১২ অলোকপর্ণা

মণীষার নম্বর
অলোকপর্ণা



“আপনার নম্বরটা পেতে পারি... যদি আপত্তি না থাকে, তবেই”

“ঠিক আছে... এই আমার কার্ড,” সুকান্ত মণীষার হাত থেকে প্রায় লুফে নেয় সাধারণ কার্ডটা, চোখ বুলোতেই থাকে।

“আজ চলি? আমার স্টপেজ এসে গিয়েছে”। মণীষার ছায়া বাস ম্লান করে নেমে যায়। সুকান্তর ফাঁপা মানিব্যাগ ভারী করে কার্ডটা হিপ পকেটে জাঁকিয়ে বসে। বাস বয়ে যায়।

মণীষার আলোয় ধাঁধানো চোখ নিয়ে সুকান্ত যখন বাস থেকে নামে, ততক্ষণে তার মানিব্যাগটি খোয়া গিয়েছে। বেখেয়ালে কিনে ফেলা দামী সিগারেটে আগুন লাগাতেই সুকান্ত তা টের পায়।

“দাদা, আপনাকে দশ টাকা কাল দিয়ে যাব? আজ মানিব্যাগটা কেউ মেরে দিল!”

“ইয়ার্কি হচ্ছে! দশ টাকার সিগারেট কিনে এখন মামদোবাজি!... টাকা না দিয়ে কোত্থাও যাবি না!”

আচমকা তুই তোকারিতে যেসব মানুষ ঘাবড়িয়ে যায়, সুকান্ত তাদেরই একজন।

“আপনি বিশ্বাস করুন দাদা, এই খেয়াল করলাম, মেরে দিয়েছে!”

“তোর মারব আমি! টাকা দে!”

সুকান্তর চোখে জল আসে। পৃথিবীর কাঠিন্যের সামনে দাঁড়িয়ে বেকার সুকান্ত কান্না সামলাতে সামলাতে মাধ্যমিকে পাওয়া ঘড়ির বদলে দশ টাকার দামি ধূসর ধোঁয়া বুকে ভরে হাঁটতে থাকে, যতক্ষণ না তার ছায়া লম্বা হয়ে পাড়ায় ঢোকার আর্দ্র গলিটা ঢেকে দেয়। সুকান্ত মুখ তুলে দেখে, মানিব্যাগ জুড়ে থাকা কার্ডটা ঘুড়ি হয়ে ফোন নম্বরগুলো লেজে জুড়ে নড়বড়ে হাওয়ায় উড়ছে। হঠাৎ গলির পাশের সন্তুদের বাড়ির ছাদ থেকে দম ফাটা ‘ভোঁ কাট্টায়’ চমকায় সে, মাথা তুলে গলির ছেঁড়া আকাশে এক চিলতে ছেঁড়া ঘুড়ির লেজে মণীষার নম্বরদের চলে যেতে দেখে।

লাইট হাউস সিনেমার সামনে দাঁড়িয়ে সুকান্ত আখের রস আকণ্ঠ পান করে নিল। দারুণ তাপে রাস্তাঘাট কেঁপে কেঁপে টলে উঠছে। হঠাৎই বিপরীতে থাকা চামড়ার দোকানের কাচে সুকান্তর চোখ থামে। নিমেষে দোকানে ঢোকে সে। তার খোয়া যাওয়া মানিব্যাগ পলিশড্‌ হয়ে দোকানের শোকেস আলো করে আছে! পথখরচা বাকি রেখে সুকান্ত মানিব্যাগটা কিনে ফেলল। সাধারণত্বের জন্যই হয়তো কার্ডটা ভিতরে টিকে গিয়েছে! সে আর দেরি করে না। মোবাইলে মণীষার দশটা নম্বর নির্ভুল ডায়াল করে ফোনটা কানে চেপে ধরে। ডায়াল টোন আর নিঃশ্বাসের শব্দের অদলবদলের মধ্যেই সুকান্ত দূরের দিকে তাকায়, রাস্তার সব তাপ শুষে নিয়ে মণীষা ঘাড় তুলে হেঁটে আসছে অন্য কোনো মানুষের সঙ্গে, যে হয়তো আচমকা তুই তোকারিতে বাকিদের মতো ঘাবড়ায় না। সুকান্তকে বিমূঢ় করে কান ভরে যায়,-- “কৃপয়া যাঞ্চ করে, আপকি ডায়াল কিয়া নাম্বার গলত্‌ হ্যায়।”-এর সুরে।

সুকান্ত বুক পকেটে ফোন ভরে সামনের দিকে তাকিয়ে মণীষার যাতায়াত দেখে যায়।


1 কমেন্টস্: