রবীন্দ্রনাথ, আমার, আজকের
আলতাফ হোসেন
সেই কবে শৈশবে একদিন পড়েছিলাম ‘মানুষের মন চায় মানুষেরই মন’, আর বাঁধা পড়ে গেছিলাম রবীন্দ্রনাথে, মনে পড়ে। তারপর থেকেই একে একে তাঁর বইগুলি খুঁজতে এ লাইব্রেরি, সে লাইব্রেরিতে ছুটে বেড়ানোর শুরু। বেশ অল্প বয়সেই এভাবে পড়া হয়ে গেছে তাঁর অধিকাংশ বই। এই তো ভেসে উঠছে সন্ধ্যাসঙ্গীত, প্রভাতসঙ্গীত, রাহুর প্রেম, হেকেটি, কবিমানসী, জগদীশ ভট্টাচার্য, কাদম্বরী সে সময়ের। জীবন খুব ছোট মানুষের। অপঘাত যদি না-ও থামিয়ে দেয় শুরুতে বা মাঝপথে, দেখতে-দেখতে ফুরিয়ে যেতে থাকে। একবার পড়াতে যে হয় না, রুদ্ধশ্বাসে পড়া বই বা তার অংশগুলো আবারও যে পড়তে হয়, তা না হলে মন থেকে মুছে যেতে পারে, তা উপলব্ধি করেও আবারও পড়ার, প্রিয় চিন্তাগুলোয় আবারও ফিরে যাওয়ার সময় আমরা আর পাই না তো! দিনে-দিনে কত বই কত ভাবনা এসে ঘিরে ধরে। স্মৃতি ঝাপসা হতে শুরু করে। তবে অনেক-অনেক বইয়ের মধ্যেও যে দুটি বই সামনে থেকে অপসৃত হয়নি, সে দুটির নাম নিশ্চয়ই গীতবিতান ও ছিন্নপত্রাবলী। একদিকে একান্তভাবে আমার অসঙ্গতিময় বা নিরর্থক এক জগৎ, অন্যদিকে রবি-র গানের, চিঠিপত্রের ভুবন। অনেকদিন ধরেই পড়েছি ও মাঝে-মাঝেই পড়ি ভাইঝি ইন্দিরাকে লেখা রবীন্দ্রনাথের চিঠি, আর গীতবিতান আজ অনেকদিন প্রায় রোজ সকালবেলা খুলে-খুলে জানা, অল্প-জানা সুরের গানগুলো হারমোনিয়াম বাজিয়ে গাওয়ার নেশায় মেতেছি। বলে রাখি, তবু যে আর একটি বইয়ের দিকেও মন ছুটে যায় প্রায়ই। গল্পগুচ্ছ। বাঙালির গল্প পড়তে যখন চাই।
বলি এবার তবে গীতবিতান কেন! গান ছাড়া বাঁচতে পারি না এক কথা। আর গানেই যে রয়েছে, ‘পথ আমারে শুধায় লোকে, পথ কি আমার পড়ে চোখে’, সত্যিই তো পথ কোথাও দেখতে পাই না তো এ জগতে আসা অবধি। ‘চলি যে কোন্ দিকের পানে গানে গানে’। সুর ভালোবাসি, আর গানে-গানেই কোনও একদিকে ছুটে চলি না কেন। এরকম অন্তত শ’খানেক গান তো তিনি রেখে গেছেনই।
অবাক যে, অল্প বয়সে, মাত্র বত্রিশ বছর বয়সেই রবীন্দ্রনাথের ছিল এমন পরিণত ভাবনা, আজকের ভাবনা। ছিন্নপত্র থেকে তুলে দিচ্ছি : ‘যার সঙ্গে দুটো কথা কয়ে প্রাণসঞ্চয় করা যায় এমন মানুষ দশ-বিশ ক্রোশের মধ্যে একটি পাওয়া যায় না। কেউ চিন্তা করে না, অনুভব করে না, কাজ করে না...। ...সমস্ত মানুষগুলো যেন উপচ্ছায়ার মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে, খাচ্ছে-দাচ্ছে, আপিস যাচ্ছে, ঘুমচ্ছে, তামাক টানছে, আর নিতান্ত নির্বোধের মতো বকর বকর করছে। ...যথার্থ মানুষের সংশ্রব পাবার জন্য মানুষের মনে ভারি একটা তৃষ্ণা থাকে। কিন্তু সত্যকার রক্তমাংসের মানুষ তো নেই -- সমস্ত উপচ্ছায়া, পৃথিবীর সঙ্গে অসংলগ্নভাবে বাষ্পের মতো ভাসছে।’
এই রবীন্দ্রনাথকে সঙ্গে সঙ্গে না রেখে পারি না।
সেই কবে শৈশবে একদিন পড়েছিলাম ‘মানুষের মন চায় মানুষেরই মন’, আর বাঁধা পড়ে গেছিলাম রবীন্দ্রনাথে, মনে পড়ে। তারপর থেকেই একে একে তাঁর বইগুলি খুঁজতে এ লাইব্রেরি, সে লাইব্রেরিতে ছুটে বেড়ানোর শুরু। বেশ অল্প বয়সেই এভাবে পড়া হয়ে গেছে তাঁর অধিকাংশ বই। এই তো ভেসে উঠছে সন্ধ্যাসঙ্গীত, প্রভাতসঙ্গীত, রাহুর প্রেম, হেকেটি, কবিমানসী, জগদীশ ভট্টাচার্য, কাদম্বরী সে সময়ের। জীবন খুব ছোট মানুষের। অপঘাত যদি না-ও থামিয়ে দেয় শুরুতে বা মাঝপথে, দেখতে-দেখতে ফুরিয়ে যেতে থাকে। একবার পড়াতে যে হয় না, রুদ্ধশ্বাসে পড়া বই বা তার অংশগুলো আবারও যে পড়তে হয়, তা না হলে মন থেকে মুছে যেতে পারে, তা উপলব্ধি করেও আবারও পড়ার, প্রিয় চিন্তাগুলোয় আবারও ফিরে যাওয়ার সময় আমরা আর পাই না তো! দিনে-দিনে কত বই কত ভাবনা এসে ঘিরে ধরে। স্মৃতি ঝাপসা হতে শুরু করে। তবে অনেক-অনেক বইয়ের মধ্যেও যে দুটি বই সামনে থেকে অপসৃত হয়নি, সে দুটির নাম নিশ্চয়ই গীতবিতান ও ছিন্নপত্রাবলী। একদিকে একান্তভাবে আমার অসঙ্গতিময় বা নিরর্থক এক জগৎ, অন্যদিকে রবি-র গানের, চিঠিপত্রের ভুবন। অনেকদিন ধরেই পড়েছি ও মাঝে-মাঝেই পড়ি ভাইঝি ইন্দিরাকে লেখা রবীন্দ্রনাথের চিঠি, আর গীতবিতান আজ অনেকদিন প্রায় রোজ সকালবেলা খুলে-খুলে জানা, অল্প-জানা সুরের গানগুলো হারমোনিয়াম বাজিয়ে গাওয়ার নেশায় মেতেছি। বলে রাখি, তবু যে আর একটি বইয়ের দিকেও মন ছুটে যায় প্রায়ই। গল্পগুচ্ছ। বাঙালির গল্প পড়তে যখন চাই।
বলি এবার তবে গীতবিতান কেন! গান ছাড়া বাঁচতে পারি না এক কথা। আর গানেই যে রয়েছে, ‘পথ আমারে শুধায় লোকে, পথ কি আমার পড়ে চোখে’, সত্যিই তো পথ কোথাও দেখতে পাই না তো এ জগতে আসা অবধি। ‘চলি যে কোন্ দিকের পানে গানে গানে’। সুর ভালোবাসি, আর গানে-গানেই কোনও একদিকে ছুটে চলি না কেন। এরকম অন্তত শ’খানেক গান তো তিনি রেখে গেছেনই।
অবাক যে, অল্প বয়সে, মাত্র বত্রিশ বছর বয়সেই রবীন্দ্রনাথের ছিল এমন পরিণত ভাবনা, আজকের ভাবনা। ছিন্নপত্র থেকে তুলে দিচ্ছি : ‘যার সঙ্গে দুটো কথা কয়ে প্রাণসঞ্চয় করা যায় এমন মানুষ দশ-বিশ ক্রোশের মধ্যে একটি পাওয়া যায় না। কেউ চিন্তা করে না, অনুভব করে না, কাজ করে না...। ...সমস্ত মানুষগুলো যেন উপচ্ছায়ার মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে, খাচ্ছে-দাচ্ছে, আপিস যাচ্ছে, ঘুমচ্ছে, তামাক টানছে, আর নিতান্ত নির্বোধের মতো বকর বকর করছে। ...যথার্থ মানুষের সংশ্রব পাবার জন্য মানুষের মনে ভারি একটা তৃষ্ণা থাকে। কিন্তু সত্যকার রক্তমাংসের মানুষ তো নেই -- সমস্ত উপচ্ছায়া, পৃথিবীর সঙ্গে অসংলগ্নভাবে বাষ্পের মতো ভাসছে।’
এই রবীন্দ্রনাথকে সঙ্গে সঙ্গে না রেখে পারি না।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন