কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০১৩

০৫ অরূপরতন ঘোষ

অমরত্বের আশা প্রত্যাশা
অরূপরতন ঘোষ



শীতের রাত্রি। অনেক ঘন হয়ে এসেছে।

অবশ্য কলকাতা শহরের দক্ষিণপ্রান্তের ১১ তলার এই ঘরে কী-ই বা শীত, কী-ই বা রাত! মিসেস গগৈ আমাকে যখন হিসহিসে গলায় বললেন যে, তাঁর ভয় লাগছে, তখন আমি ঘড়ি দেখি। দেখি, রাত ১১-৪৫ বেজে গেছে।



মিসেস গগৈ –- আপনার ভয় লাগছে না?

আমি –- না, না। আপনিও ভয় পাবেন না।

মিসেস গগৈ –- কিন্তু এরা যে সবাই বেশ মাতাল হয়ে পড়েছে!

আমি –-



এইবার আমি বিমলের পাশে গিয়ে বসি। বিমলকে বলি –- বিমল, তুমি তোমার কবিতার বই চিকাগোয় পাঠিয়ে দাও। অনেক নাম কিনবে।

বিমল –- একথা আপনাকে কে বললো?

আমি –- শোনো, ইংরেজিতে অনুবাদ না করে তোমার বাংলায় লেখা কবিতার বইটিই পাঠাবে। ওখানে বাংলা ডিপার্টমেন্ট আছে। তাদেরকেই পাঠাবে। বিনয় মজুমদার তাঁর একটি লেখায় চিকাগোর ঠিকানা দিয়েছেন। একটা কাগজ বের করো...

বিমল –- এই তো! আমার সঙ্গেই কাগজ আছে।

আমি –- তবে লেখো। The Director of Orient Studies (Department of Bengali), University of Chicago, Chicago City, U.S.A

বিমল ঠিকানাটা জলদি টুকে নেয়। আমি বলি –- তোমার খুবই নাম হবে বিমল। শিগগির পাঠিয়ে দাও। ওরা তোমার বই ১০০০ বছর রেখে দেবে। অর্থাৎ তুমি অমর হয়ে যাবে।



লাইট্‌স্‌ অফ। মুহূর্তের মধ্যে বাজনা বেজে ওঠে। রুবি তার নাচ শুরু করে। কেউ কেউ তাকে গোলাপও ছোঁড়ে। রুবি উড়ন্ত গোলাপের মধ্যে নাচতে থাকে। অনেকেই তার সঙ্গে নাচে।

এরা নাচের সঙ্গে গোলাপও খেলবে জানলে আমি এতক্ষণ অপেক্ষাই করতাম না! গোলাপ দূর থেকে দেখতেই ভালো, এই বিশ্বাস নিয়ে ছুটে বেরিয়ে যাই রুবির পাশ ঘেঁষে। মাতাল নৃত্যরতদের সঙ্গে ধাক্কাও লাগে দু’একবার।



বেরোতে বেরোতে দেখি, মিসেস গগৈ একটি গোলাপ ফুল তুলে নাকে শুঁকছেন। মিউজিকে তাঁর কোমর দুলছে অল্প বিস্তর।



পরের দিন সকালে নকুড়ের চায়ের দোকানে একাই বসেছিলাম। লোকজন নেই। ফলে কাগজটি টেনে নিয়ে দেখি। দেখি প্রথম পাতাতেই বিমলের একটি ছোট ও চৌকোণো ছবি সমেত বক্তব্য ছাপানো হয়েছে। বিমল সম্প্রতি রাজ্যে উদ্ভুত একটি বিশেষ রাজনৈতিক বিষয়ে কবি হিসেবে তার মন্তব্য জানিয়েছে। অর্থাৎ বিমল অমরত্বের দিকেই এগোলো। বিমলের পাশাপাশি আরো দু’তিনজন ছবি সহ বক্তব্য রেখেছেন ঐ একই বিষয়ে। তাঁরা প্রত্যেকেই প্রখর সমাজ সচেতনতার পরিচয় রেখেছেন তাঁদের বক্তব্যে।

দেখেই মাথায় বিদ্যুৎ খেলে যায়। উত্তেজিত হয়ে উঠি। নকুড়কে বলি –- নকুড় তুমি অমর হবে?

নকুড় –- হ্যাঁ হ্যাঁ, অবশ্যই! কিন্তু কী উপায়ে?

আমি –- উপায় আমার হাতেই আছে। শোনো, কলকাতার বড় বড় ও অমর মানুষদের মধ্যে কয়েকজনকে আমি খুব ভালো ভাবেই চিনি। তাদেরই মধ্যে একজনের ছবি তুমি আজকের খবরের কাগজেও পাবে। তুমি যদি বলো, আমি তাকে তোমার দোকানে এনে চা খাওয়াতে পারি। তুমি তখন তোমার দোকানে তার চা-পান-রত একটি ফটোগ্রাফ তুলে রাখবে। তারপর বড় বড় করে তার সেই ছবি সমেত দোকানের ওপরে দোকানের একটা নাম দিয়ে বিজ্ঞাপন করবে। পিছনে আলোর ব্যবস্থা করতে পারলে আরো ভালো হয়। তোমার দোকানে কত বড় বড় লোক এসে চা খেয়ে যান তা ঝলমল করে দেখা যাবে সন্ধের পরেও। এতে তোমার দোকানের বিক্রি বহুগুণে বাড়বে। অর্থাৎ কিনা বছরে এখন যা লাভ করছো তার ৫০ শতাংশ বেশি লাভ করতে পারবে। তার পরের বছর সেই অতিরিক্ত টাকার একাংশ ব্যবহার করে তুমি আরো বিজ্ঞাপন দেবে আশে পাশে। তাতে তোমার আয়, ধরা যাক, আরো ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ফলে তখন তোমার কাছে আরো বিনিয়োগের সুযোগ। এইভাবে হিসেব করলে দেখা যাবে, তুমি আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এই পানিহাটি অঞ্চলে আরো ২/৩টি চায়ের দোকান খুলে ফেলতে পারবে। তোমার সন্তান সন্ততিরা তার সুফল পাবে। দোকানের সংখ্যা আরো বাড়বে ‘নকুড় এন্ড সন্স’এর। এইভাবে মৃত্যুর পরেও তোমার কদর থাকবে। অর্থাৎ তুমি অমর হয়ে যাবে।

নকুড় বলল –- আমি অমর হতে চাই। আপনি কিছু একটা করুন!

আমি –- আমি অবশ্যই যত শীঘ্র সম্ভব এক প্রয়োজনীয় ও উৎকৃষ্ট ব্যবস্থা নেবো।



এই বলে নকুড়কে ১ কাপ চায়ের দাম ৩ টাকা দিয়ে আমি উঠে পড়ি। বিমল অমর হয়েই গেছে। বিমলের সূত্রে নকুড়ও অমর হয়ে যাবে। এর পেছনে মূল মাথা হিসেবে কাজ করব আমি। ফলে জনজীবনে বিমল ও নকুড়ের যৌথ প্রভাবে আমিও অনেকাংশেই অমর হয়ে যাব, এই প্রত্যাশা করে বটতলা বাজারের ভিড় যথাসম্ভব এড়িয়ে আমি আমাদের প্রফুল্ল পল্লীর বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করি।






0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন