গ্যাস-লাইটার
সোনালি বেগম
ফ্রেঞ্চ-এ একটা কথা আছে, ‘পার্তির সে তুজুর তাঁ প্য মুরীর’ –- প্রত্যেক বিদায় গ্রহণে এক একটি খন্ডমৃত্যু জড়িয়ে থাকে।
সেদিনটাকে সকলেই ‘শুভ’ বলে। শুভবিবাহ শুভদৃষ্টির বজ্রাঘাত!
জয়নাব ও তৌফিক রহমান-এর সংসার ধীরে ধীরে পুরনো হতে থাকে...
‘বুবুনের পায়ের বয়েলটা বেশ পেকেছে’ -- উদ্বিগ্ন জয়নাব।
‘সাফ করে দিও। যাক গে এখন আমাকে বেরোতে হবে’ –- তৌফিক সাহেব কোনো অনির্দিষ্ট গন্তব্যে চলে গেলেন।
তিন বছরের বুবুন কিছুদিন ধরে বেশ ভুগছে। বৈশালী সেক্টর চার-এ একটি বেসরকারী হাসপাতালে বুবুনকে নিয়ে বসে আছে জয়নাব। সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা বাজে। রোজ এই সময় ড্রেসিং করা হয়। সঙ্গে আন্টিবায়োটিকস্ তো চলছেই।
ডিসেম্বরের উত্তরপ্রদেশে হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় একটি রিক্সা ধরে ওরা। বুবুনকে বেশ ভালো ভাবে গরম কাপড়ে জড়িয়ে কোলের কাছে চেপে ধরে বসে থাকে সে। ছুরির মতো শীত ফালাফালা করে কাটতে থাকে তাদের। বৈশালী সেক্টর চার ছাড়িয়ে রিক্সা পুল ধরে এগিয়ে চলেছে ইন্দিরাপুরম। দূরে স্ট্রিট লাইটের আলোয় স্বপ্নপুরী জেগে উঠছে। জয়নাবের বারবার যিশু খ্রিস্টের বাণী মনে পড়ছে –- ‘দি ফক্সেস্ হ্যাভ হোলস্ অ্যান্ড দি বার্ডস অফ দি এয়ার হ্যাভ নেস্ট; বাট দি সান অফ দি ম্যান হ্যাজ নট হোয়্যার টু লে হিজ হেড’।
বেঁচে থাকার আনন্দ-বিষাদ ঘিরে জয়নাব ক্রমশ উদাসীন হয়ে যাচ্ছে কি! সে অনুভব করে, অন্যের কথা না ভেবে নিজেকেই আগে পালটানো জরুরী। ইদানীং আব্বাজানের কবরের সামনে দাঁড়ালে জীবিত-মৃত ফারাক সে অনুভব করতে পারে না।
বাড়ি পৌঁছোতে রাত সাড়ে আটটা হয়ে গেল। কোলে চড়েই কলিংবেল বাজালো বুবুন –- ‘এসে গেছি পাপা!’
তৌফিক সাহেব দরজা খুলে দিলেন।
‘রাত কটা হলো?’ গলায় বিরক্তির চড়া সুর।
‘এই অড্ টাইমটাই ড্রেসিং করে ওরা’। ধীরে ধীরে বলল জয়নাব।
‘যত্ত সব নখ্রাবাজি!’
বুবুনকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে হিটারটা অন করে দেয় জয়নাব।
‘মম্মি, খেতে দাও, তাড়াতাড়ি!’
‘অল্হম্দুলিল্লা’ মানে ‘খোদাতালাকে অসংখ্য ধন্যবাদ’ দিতে দিতে রান্নাঘরে ঢুকে গ্যাস-লাইটার খুঁজতে থাকে সে।
ফ্রেঞ্চ-এ একটা কথা আছে, ‘পার্তির সে তুজুর তাঁ প্য মুরীর’ –- প্রত্যেক বিদায় গ্রহণে এক একটি খন্ডমৃত্যু জড়িয়ে থাকে।
সেদিনটাকে সকলেই ‘শুভ’ বলে। শুভবিবাহ শুভদৃষ্টির বজ্রাঘাত!
জয়নাব ও তৌফিক রহমান-এর সংসার ধীরে ধীরে পুরনো হতে থাকে...
‘বুবুনের পায়ের বয়েলটা বেশ পেকেছে’ -- উদ্বিগ্ন জয়নাব।
‘সাফ করে দিও। যাক গে এখন আমাকে বেরোতে হবে’ –- তৌফিক সাহেব কোনো অনির্দিষ্ট গন্তব্যে চলে গেলেন।
তিন বছরের বুবুন কিছুদিন ধরে বেশ ভুগছে। বৈশালী সেক্টর চার-এ একটি বেসরকারী হাসপাতালে বুবুনকে নিয়ে বসে আছে জয়নাব। সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা বাজে। রোজ এই সময় ড্রেসিং করা হয়। সঙ্গে আন্টিবায়োটিকস্ তো চলছেই।
ডিসেম্বরের উত্তরপ্রদেশে হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় একটি রিক্সা ধরে ওরা। বুবুনকে বেশ ভালো ভাবে গরম কাপড়ে জড়িয়ে কোলের কাছে চেপে ধরে বসে থাকে সে। ছুরির মতো শীত ফালাফালা করে কাটতে থাকে তাদের। বৈশালী সেক্টর চার ছাড়িয়ে রিক্সা পুল ধরে এগিয়ে চলেছে ইন্দিরাপুরম। দূরে স্ট্রিট লাইটের আলোয় স্বপ্নপুরী জেগে উঠছে। জয়নাবের বারবার যিশু খ্রিস্টের বাণী মনে পড়ছে –- ‘দি ফক্সেস্ হ্যাভ হোলস্ অ্যান্ড দি বার্ডস অফ দি এয়ার হ্যাভ নেস্ট; বাট দি সান অফ দি ম্যান হ্যাজ নট হোয়্যার টু লে হিজ হেড’।
বেঁচে থাকার আনন্দ-বিষাদ ঘিরে জয়নাব ক্রমশ উদাসীন হয়ে যাচ্ছে কি! সে অনুভব করে, অন্যের কথা না ভেবে নিজেকেই আগে পালটানো জরুরী। ইদানীং আব্বাজানের কবরের সামনে দাঁড়ালে জীবিত-মৃত ফারাক সে অনুভব করতে পারে না।
বাড়ি পৌঁছোতে রাত সাড়ে আটটা হয়ে গেল। কোলে চড়েই কলিংবেল বাজালো বুবুন –- ‘এসে গেছি পাপা!’
তৌফিক সাহেব দরজা খুলে দিলেন।
‘রাত কটা হলো?’ গলায় বিরক্তির চড়া সুর।
‘এই অড্ টাইমটাই ড্রেসিং করে ওরা’। ধীরে ধীরে বলল জয়নাব।
‘যত্ত সব নখ্রাবাজি!’
বুবুনকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে হিটারটা অন করে দেয় জয়নাব।
‘মম্মি, খেতে দাও, তাড়াতাড়ি!’
‘অল্হম্দুলিল্লা’ মানে ‘খোদাতালাকে অসংখ্য ধন্যবাদ’ দিতে দিতে রান্নাঘরে ঢুকে গ্যাস-লাইটার খুঁজতে থাকে সে।
ভাল লাগলো।
উত্তরমুছুন