কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩

<<<< সম্পাদকীয় >>>>

 


কালিমাটি অনলাইন / ১১৪ / একাদশ বর্ষ : চতুর্থ সংখ্যা




বিশ্বে দীর্ঘকাল ধরে ঋতুর যে বিন্যাস প্রচলিত আছে, তাতে ভারত এবং তার প্রতিবেশী দেশগুলিতে সারা বছরে ছ’টি ঋতুর কথা উল্লেখ করা হয়ে থাকে। প্রতিটি ঋতুর জন্য দুটি মাস বরাদ্দ করা হয়েছে। এবং যতদিন পর্যন্ত মানুষ প্রকৃতির যাবতীয় নিয়মকে যথাযথ মর্যাদা দিয়েছে, তাকে উত্যক্ত করেনি, ততদিন প্রকৃতিও তার ভারসাম্য বজায় রাখতে পেরেছে। কিন্তু যখন থেকে শিল্প ও প্রযুক্তি ক্রমশ উন্নততর হয়েছে, মানুষের বসবাস ও জীবনধারণ অনেক অনায়াস ও জটিলতামুক্ত হয়েছে, তখন থেকে মানুষের লোভ ও লালসাও ক্রমবর্ধিত হয়েছে। আর সেই লোভ ও লালসার শিকার হয়েছে প্রকৃতি। ইস্কুলে পড়াকালীন ষান্মাসিক ও বার্ষিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রে রচনা লেখার জন্য কিছু নম্বর নির্ধারিত থাকত এবং কয়েকটি বিষয়ের মধ্যে কোনো একটি বিষয়কে বেছে নেবার ‘অপশন’ থাকত। আমরা সবাই জানি, সেই বিষয়গুলির মধ্যে একটি বিষয় থাকত, বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ? বলা বাহুল্য, এই বিষয়টি নিয়ে আমরা পরীক্ষার খাতায় কয়েক পাতা রচনা লিখেছি। তবে এখন এই পরিণত বয়সে পৌঁছে মনে হয়, বিষয়টির গোড়াতেই ভুল ছিল। বিজ্ঞানের আবার আশীর্বাদ বা অভিশাপ হয় নাকি? তার ভালো বা খারাপ কিছু হতে পারে না। বিজ্ঞান তো আর অন্য কিছু নয়, বরং যে প্রকৃতির অন্তর্গত এই বিশ্ব থেকে ব্রম্ভান্ড, সেই প্রকৃতির নিয়ম বা প্রাকৃতিক নিয়মই হচ্ছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞান অর্থে বিশেষ অর্জিত জ্ঞান। এবং বিজ্ঞানচর্চা অর্থে প্রকৃতিচর্চা। সুতরাং বলা যেতে পারে, বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ, এই বিষয়টিকে বর্জন করে প্রশ্ন রাখা যেতে পারে, প্রযুক্তি আশীর্বাদ না অভিশাপ? এর উত্তরে বলা যেতে পারে, একদিকে যেমন প্রযুক্তি মানুষের জীবনে ও ধারণে আশীর্বাদের বন্যা বইয়ে দিয়েছে, অন্যদিকে তা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভয়ংকর অভিশাপ। আর এই দুটি ব্যাপারই ঘটেছে মানুষের ইচ্ছায় অথবা হিংসায়। কেননা, প্রযুক্তি নির্মাণ ও নিয়ন্ত্রণ মানুষেরই হাতে। কল্যাণকামী মানুষের কল্যাণ কামনায় যদি প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে, তবে তা আশীর্বাদ, আর যদি লোভ ও লালসায় উন্মত্ত হয়ে ব্যবহার করে, তবে তা অভিশাপ। এসব কথা আমরা সবাই জানি, উদাহরণ হিসেবে অনেক প্রসঙ্গই আমাদের জানা আছে। এবং প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধতা করলে, প্রকৃতি যে তার শোধ তুলবে, একথাও আমাদের অজানা নয়।

আর তাই, ভারতীয় উপমহাদেশে বছরের ঋতুবিন্যাস যে নিয়ম মেনে করা হয়েছিল, আজ মানুষের প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণে তা বিঘ্নিত হচ্ছে। মূলত তিনটি নির্দিষ্ট সময়কালে নির্দ্ধারিত ঋতুর ওপর দাদাগিরি করছে অপর তিনটি ঋতু। শরত, হেমন্ত ও বসন্ত প্রায় চাপা পড়ে যাচ্ছে গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীতের দাপটে। এরমধ্যে শীত হচ্ছে তুলনামূলকভাবে দুর্বল। এই উপমহাদেশের অধিকাংশ স্থানে তার আয়ুসীমা বড়ই স্বল্প। এসেই যাই যাই তাড়া। সেক্ষেত্রে বর্ষা কিছুটা সবল হলেও তার আসা ও যাওয়া বড়ই অনিশ্চিত, বোহেমিয়ান চরিত্র তার। অনেকসময় তার জন্য বরাদ্দ সময়ে তার দেখা পাওয়া যায় না, আবার অন্যের বরাদ্দ সময়ে তার অনুপ্রবেশ ঘটে। তবে মানতেই হবে, প্রবল ও প্রচন্ড গ্রীষ্ম দাদাগিরিতে প্রথম। শুধু নিজের জন্য নির্দিষ্ট সময়কালেই নয়, বাকী পাঁচটি ঋতুর সময়কালেও সে দাদাগিরি করতে চায় এবং করেও। আর গ্রীষ্মকে এই দাদাগিরির সুযোগ করে দিয়েছে এই বিশ্বের লোভী ও স্বার্থপর কিছু মানুষ। মানুষেরই লালসায় প্রকৃতির ভারসাম্য আজ টালমাটাল। প্রতিটি মুহূর্তে এই পৃথিবীর উষ্ণায়ণ সংঘটিত হচ্ছে। তাপমাত্রা যাচ্ছে বেড়ে। আমরা প্রচন্ড গরমে কাহিল হয়ে পড়ছি। কত প্রাণ অকালে শেষ হয়ে যাচ্ছে এই গরম সহ্য করতে না পেরে। যাদের সাধ্য আছে, সামর্থ আছে, তারা প্রযুক্তির সাহায্যে শৈত্যকে আহ্বান করতে পারছেন; কিন্তু এই বিশ্বে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষেরই সেই সাধ্য ও সামর্থ নেই। তাদের জীবন হয়ে দাঁড়াচ্ছে সব থেকে অসহনীয়। এবং এভাবেই যদি প্রকৃতি যদি ক্রমশই বিমুখ হয়ে উঠতে থাকে, আশঙ্কা হয়, আমরা আমাদের অস্তিত্ব আর কতদিন টিকিয়ে রাখতে পারব!

আমরা জানি, এই দু;সহ গরমে কেউ ভালো নেই। তবু কামনা করি, সবাই ভালো থাকার চেষ্টা করুন, সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন।

 

আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :

kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com

দূরভাষ যোগাযোগ : 9835544675

অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ : Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India.

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন