কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩

মৌসুমী মুখোপাধ্যায়

 

ধর্ষক নারী ও ধর্ষিত পুরুষ : এক বিরল প্রাকৃতিক সত্য

 


জীববিজ্ঞানের মধ্যে অনেক রোমাঞ্চকর ও কৌতুহলোদ্দীপক ব্যাপার স্যাপার লুকিয়ে আছে যেগুলো বাস্তবের যে  কোনও রোমাঞ্চ কাহিনীকে হার মানাবার পক্ষে যথেষ্ট যেমন ধরাযাক মথ ও প্রজাপতির মত প্রাণীদের ক্ষেত্রে পুরুষরা হল নারী আর নারীরা হল পুরুষ আবারক্রেপিডুলা ফার্ণিকাটাসামুদ্রিক শামুকদের বাচ্চারা সবাই  পুরুষ আবার বড় হলে তারাই হয়ে যায় নারী আবারইকুইসিটামনামক উদ্ভিদেরা অনুকূল পরিবেশে স্ত্রী, আবার প্রতিকূল পরিবেশে তারাই হয়ে ওঠে পুরুষ এইরকম আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায় কিন্তু সে যাই হোক উদাহরণের বহর বাড়িয়ে আর লাভ নেই তার চেয়ে বরং আসল কথায় আসা যাক

আমরা যারা জানি যে ধর্ষক মাত্রেই পুরুষ আর নারীরাই কেবল ধর্ষিত, তারা আদ্যপ্রান্ত বিষয়টা ভুল জানি ধর্ষণ যে সবসময় পুরুষরাই করে থাকে, ব্যাপারটা আসলে তা নয় কখনও কখনও নারীরাও ধর্ষণ করে বৈকি! আবার ঊল্টোদিকে ধর্ষণ করা হয় যে সবসময় নারীদের ওপরেইএকথাটাও ঠিক নয় পুরুষরাও ধর্ষিত হতে পারে এবং হয় কথাটা যে খুব একটা নতুন কিছু, তা কিন্তু একেবারেই নয় বরং এটা বলা যেতে পারে যে ইদানিং কালে এই নিয়ে চর্চাটা আগের তুলনায় একটু বেশিই হচ্ছে আসুন আমরা এবার একটু চট করে দেখে নিই পূর্বোল্লেখিত সমস্যার বাস্তব চিত্রটা ঠিক কিরকম

১৯৯০ সালে ইংরেজি ভাষায় প্রথম এমন কিছু বক্তব্য পাওয়া যায় যেটার পরিস্কার এবং স্পষ্ট মানে দাঁড়ায়পুরুষ ধর্ষণ ২০০২ সালে সাভি (সেক্সুয়াল অ্যাবিউস এন্ড ভায়োলেন্স ইন আয়ারল্যান্ড)এর রিপোর্ট অনুসারে ১৭ বছর তার বেশি বয়সী আইরিস পুরুষদের ৯.% অনুপ্রবেশ মূলক যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে তাদের অভি্যোগ নথিভুক্ত করেছিলেন সেইসঙ্গে ২.% আইরিশ পুরুষ অবাঞ্ছিত স্পর্শহীন যৌন হয়রানির শিকার  হয়েছেন বলে তাদের অভিযোগ নথিভুক্ত করেছিলেন এখানেই শেষ নয়, ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের কাছে ৪১০০জন পুরুষ গার্হস্থ্য ও যৌনহিংসার শিকার হয়েছেন বলে তাদের বক্তব্য নথিভুক্ত করায় এদের মধ্যে ১৫ বছর বয়সীদের মধ্যে ৫৫% নারী অপরাধীদের কথা জানিয়েছে সাংবাদিক মার্টিন দুবনের মতে পুরুষরা মহিলাদের দ্বারা হিংসার শিকার হলেও অপেক্ষাকৃত কম অভিযোগ নথিভুক্ত করায় পুরুষালি প্রত্যাশাজনিত  সংস্কৃতি অর্থাৎ পিতৃতান্ত্রিক সংস্কৃতির কারণে যুক্তরাজ্যে পুরুষদের মধ্যে মাত্র ১০% তাদের নারীদের দ্বারা নির্যাতনকে অভিযোগ আকারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানায় মুলত ট্যাবু, ভুল বোঝাবুঝির ভয়ে, অবিশ্বাসের ভয়ে, এমনকি কর্তৃপক্ষের দ্বারা তিরস্কৃত হবার ভয়েও বলা বাহুল্য, এটাও পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতির একটা অঙ্গ যেমন  ধরুন ক্রাইম সারভে ফর ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসের সমীক্ষা অনুযায়ী ২০১৭ সালে ১৬ থেকে ৫৯ বছর বয়েসে ১.৭ মিলিয়ন জনগণের মধ্যে ৭১৩০০০ সংখ্যক পুরুষ গার্হস্থ্য হিংসার শিকার একটা কানাডিয়ান সমীক্ষা  থেকে জানা যায় মেয়েদের তুলনায় ২২% এর বেশি ছেলেরা অভিযোগ নথিভুক্ত করেছে এই মর্মে যে তারা তাদের বর্তমান সম্পর্কের মধ্যে হিংসার শিকার গবেষক স্টেম্পল এবং মেয়ের বলেছেন যে ছেলেদের বিরুদ্ধে মেয়েদের যৌন সহিংসতার কথা প্রায়শই কম জানা ও কম চিনহিত করা হয় যৌন সহিংসতা যে কোনও সময় যে কোনও কারুর সঙ্গেই ঘটতে পারে সেখানে সামাজিক লিঙ্গ পরিচয়, জৈব লিঙ্গ বা বয়েস কোনওটাই কোনও বিশেষ ভুমিকা আদৌ পালন করে না মহিলাদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার খবর যতটা পাওয়া যায় পুরুষদের বিরুদ্ধে ততটা পাওয়া না গেলেও বেশ কিছু সংখ্যক পুরুষই আছে যারা নারীদের দ্বারা যৌন সহিংসতায় আক্রান্ত তাহলে এখন প্রশ্ন, কেন এমনটা ঘটে? কী তার সত্যিকারের কারণ?

সত্যি কথা বলতে কি, আসলে পুরুষ শব্দটা লিঙ্গ পক্ষপাতযুক্ত, যেটা চিহ্নিত করে ক্ষমতাকে পুরুষ মানেই এমন  একজন যার ব্যবহার ও আচার আচরণ হতে হবে পৌরুষসূচক এবং যে কিনা তার সমস্ত আবেগগুলো (সাধারণত এটা মনে করা হয় যে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের আবেগ কম, যদিও এর কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই) নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এমনকি এটাও মনে করা হয় যে আমাদের সমাজ ও সভ্যতায় পুরুষ ও নারীর মধ্যে তফাৎ হল তাদের অনুভূতির প্রকাশে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে ছেলেরা তাদের কষ্ট প্রকাশ করছে, সেটা অত্যন্ত লজ্জার বিষয় কেননা সেটামেয়েলি আচরণবলে মনে করা হয় আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য দেখলাম,  এমনকি ইংল্যান্ডের ঘটনা ও তথ্য জানলাম আমরা তাহলে কি ভারতে কোনও পুরুষ ধর্ষণ বা যৌন সহিংসতার ঘটনা ঘটে না একেবারেই?

ইন্ডিয়া টুডে-তে একবার একটা ঘটনা বেরিয়েছিল, আমি পরিস্কার করে বোঝার সুবিধের জন্য ইংরেজি হেডিংটা তুলে দিচ্ছি – ‘Teacher among four booked for sodomy in Muzaffarnagar’. মুজফরনগরে যৌন নির্যাতনে চারজনের মধ্যে একজন শিক্ষক হ্যাঁ, এমনটাই জানাচ্ছে ইন্ডিয়া টুডের রিপোর্টার বলা বাহুল্য অনেকগুলো অদ্ভুত ঘটনার মধ্যে এটা একটা যেটা কিনা সাধারণত ভারতীয় সমাজজীবনে দেখা যায় না খুব একটা কেননা  ভারতীয় সমাজে দৃঢমুল একটা ধারণা পোষণ করা হয়  যে ছেলেরা পায়ুকামী যৌনতার অংশ হতে পারে, কিন্তু কোনও ভাবেই ধর্ষিত হতে পারে নাহ্যাঁ আপনি ঠিকই জেনেছেন এমনটাই বিশ্বাস করা হয় হ্যাঁ বিশ্বাস! জাস্ট মনগড়া একটা কল্পনা বা ধারণাকে পরম মমতা ও তার চাইতেও বেশি চরম অযৌক্তিকতার সঙ্গে চোখ  কান বুঁজে বিশ্বাস করা হয় এই মূর্খামিটাই ভন্ড মানব সভ্যতার একটা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, বিশ্বাস করুন এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মূর্খামি শব্দটা এখানে কেন ব্যবহার করলাম? তাহলে সভ্যতা শব্দটার মধ্যেই মূর্খামি লুকিয়ে আছে?

একদম ঠিক ধরেছেন পাঠকরা সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানবজীবন যাপন করাটা যত সহজ হয়ে গেছে, ততই মানুষের সজাগ স্বত্বাটা একটু একটু করে যেন এলিয়ে পড়েছে কিছু কিছু কনসেপ্ট মানুষ এভাবেই যুক্তি বুদ্ধি প্রয়োগ না করেই ধরে নিয়ে থাকেএটা মানুষের অভ্যাসসে সবসময় চরম কোনও অস্তিত্ব সংকটে না পড়লে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মাথাটা ঘামাতে চায় নাসভ্যতা মানুষকে ক্রমশ আরামপ্রিয় অলস করে তুলেছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেইকিন্তু সত্যি যদি সে মাথাটা ঘামাত, তাহলে দেখতে পেত যে এই প্রকৃতির মধ্যেই এক অদ্ভূত ডিফেন্স মেকানিজম কাজ করে প্রায় সব এককোষী থেকে বহুকোষী জীবের মধ্যেসেখানে প্রকৃতি সব প্রাণী উদ্ভিদের মধ্যেই তাদের কিছু কিছু দূর্বল সবল দিক রেখে দিয়েছেকেউই একেবারে সর্বশক্তিমান, অনির্ণেয় ক্ষমতার অধিকারী নয়সবচেয়ে বড় কথা সমস্ত জীবেরই প্রাইভেট পার্টস বা ইনটিমেট অর্গানগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের জনন অঙ্গগুলো বা সেই এড়িয়াটা সংবেদনশীল বা দূর্বল হয়  আর এটা প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে বলেই সেগুলোকে বিশেষ রক্ষাকবচ দিয়ে সংগুপ্তভাবে আড়াল করে দেহের মধ্যে রাখার একটা ব্যবস্থা আপনাআপনিই গড়ে ওঠে বলা বাহুল্য এইসব অর্গানগুলো অল্প আঘাতে সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেহের অন্যান্য অঙ্গগুলোর তুলনায় মানুষও কিন্তু এই সারণীর বাইরে নয় সে নারীই হোক বা পুরুষসবাই তাই একজন নারীকে যেমন ধর্ষণ বা গণধর্ষণের পর সে সাংঘাতিকভাবে  বিপর্যস্ত ও বিদ্ধস্ত হয়ে পড়ে এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত হয়, ঠিক সেই একইরকম ভাবে কোনও পুরুষকেও তার ইন্টিমেট এড়িয়ায় সর্বোচ্চ আঘাতের দরুন তার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে আবার অন্যদিকে পুরুষের মধ্যেও যেমন অপরাধপ্রবণ মানসিকতা থাকে, ঠিক সেই রকমই এমন অনেক নারীরা গোটা বিশ্ব জুড়ে রয়েছে যারা কল্পনাতীতভাবে  অপরাধপ্রবণ মানসিকতার অধিকারী আর এইসব নারীরাই উপরেল্লিখিত পুরুষ ধর্ষণের কাজগুলো করে থাকে নিছকই কিছু চলতি ধারণার বশবর্তী হয়ে চোখ বেঁধে ঘুরে বেড়ালেই যেমন উন্নত ও আদর্শ জীব গোত্রভূক্ত হওয়া যায় না, ঠিক সেইরকমই সত্যের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে রেখে এই পৃথিবী ও বিশ্বব্রম্ভান্ডের  কোন সার্বিক সমস্যার সমাধান করাটাও অসম্ভব

ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের  ৩৭৫ নং ধারায়  বলা আছে, ধর্ষণ হচ্ছে এমন একটা ব্যপার যেটা শুধু ছেলেরা মেয়েদের ওপর করতে পারে এই আইনে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের কোনও জায়গা নেই, যেমন জায়গা নেই নারী অপরাধীদেরও! বলা বাহুল্য এটা জেনে শুনে পাপ করার মতই একটা ব্যাপার যাকে আমরা বলে থাকি  জ্ঞানপাপী! সঠিক শিক্ষা ও বিজ্ঞানচর্চার অভাবই এতে পরিলক্ষিত হচ্ছে আমাদের ভারতীয় শাসনব্যবস্থায় যেটা অবিলম্বে সংশোধন করা বা নতুন কোনও আইন প্রণয়ন করা  ভারত রাষ্ট্রের অবশ্য কর্তব্যের মধ্যে পড়ে বলে আমি বিশ্বাস করি যদিও ২০১২ সালের যৌন অপরাধ বিষয়ক শিশুসুরক্ষা বিষয়ক ধর্ষণজনিত আইনে পুরুষ ভিকটিমদের একটা বড় অংশকে বাদ দেওয়া হয় শুধুমাত্র তারা কলংকের ভয়ে এগিয়ে আসতে পারে না এবং আইনের অভাবের জন্য তাহলে উপায়?

২০১২ সালের নির্ভয়া গণধর্ষণের পর ধর্ষণ সংক্রান্ত আইন ও আলাপ আলোচনার ক্ষেত্রেও যেসব পরিবর্তন এসেছে সেটা যথেষ্ট সম্ভাবনাময় কেননা এই সময়ের পরে পরেই পুরুষ ধর্ষিতরাও আগের চাইতে অনেক বেশি করে এগিয়ে এসেছে এবং সরব হচ্ছে শুধু নয়, চেন্নাইয়ের একজন এইরকম ধর্ষিত ব্যক্তির ব্লগ খুব দ্রুতই সর্বত্র ছড়িয়েও পড়েছিল এবং বলা বাহুল্য একটা আলোড়নও তৈরী করেছিল সেই সময় ২০১৩ সালের কেন্দ্রীয় সরকার অন্তর্বর্তীকালীন ফৌজদারী আইনের অর্ডিন্যান্স জারি করে, সেখানেধর্ষণশব্দটার বদলেযৌনসহিংসতাশব্দটা ব্যবহার করে এই ধরনের অপরাধগুলোকে লিঙ্গ নিরপেক্ষতা দেয় উভয় ক্ষেত্রেই পুরুষ শিকার ও নারী অপরাধী চিহ্নিতকরণ যখন সমাধা হয়ে গেল, তখন আর ধর্ষণ শব্দটা ব্যবহার করাটা উচিত নয়  আইনে ফৌজদারী আইন প্রণয়নের সময় এই নিয়ে দুটো বিপরীতমুখি দলের  সোচ্চার মত দেখা গিয়েছিল এদের বক্তব্য হচ্ছে যে ধর্ষণ একটা পিতৃতান্ত্রিক অপরাধ যার মূলটা সরাসরি পুরুষের ক্ষমতা ও সুবিধের একটা অদ্ভুত অপব্যবহারের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে এইভাবেই ভারতের জনসমাজ এখনও মনে করে যে এই ধরনের ক্ষেত্রগুলোতে অপরাধী সব সময়েই ছেলেরা এবং শিকার সব ক্ষেত্রেই মেয়েরা এই নিয়মের ব্যতিক্রম হল লিঙ্গ নিরপেক্ষ ভাষা বজায় রাখা গণধর্ষণের অপরাধীদের ক্ষেত্রে

আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে মানবতা আর পেছনে যতদূর চোখ যায় পড়ে আছে ধূ ধূ মরুপ্রান্তর, নির্জন উপত্যকা ও মাঠ চোখ মেলে দেখতে পাচ্ছি, সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন থ্যালেস যাঁকে মানবসভ্যতার সম্ভাব্য প্রথম দার্শনিক বলে মনে করা হয় দাঁড়িয়ে আছেন আরও অনেক দার্শনিকরা রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত, ভূলুন্ঠিত হয়ে পড়ে আছেন অপমানিত ও মৃত হাইপেশিয়া যিনি প্রাচীন যুগের সম্ভাব্য প্রথম পশ্চিমী মহিলা দার্শনিক দাঁড়িয়ে আছেন আরিস্তেতেলেস থেকে আর্কিমিদিস ও বীর অ্যালেকজান্ডার! সেই আরিস্তেতেলেস যিনি বলেছিলেন নারীর শরীরে পুরুষের তুলনায় নিম্নশ্রেণীর রক্ত প্রবাহিত হয় এবং আছেন তাঁর উত্তরসূরীরা অতি অল্প কয়েকজনকে বাদ দিলে যাঁদের প্রায় প্রত্যেকেই নারীকে কমবেশি দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বা জীব বলে পদবাচ্য করেছেন

না, না আমি বা আমরা আজ এই একবিংশ শতকের মধ্যে পা রেখে দাঁড়িয়ে, জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় শিক্ষিত হয়ে, বিজ্ঞান চর্চায় ব্রতী হয়ে আরিস্তেতেলেসের সেই বাণীর জন্য তাঁকে অপরাধী ভাবছি না আমি, আমরা ক্ষমা করে দিচ্ছি ওঁকে হ্যাঁ, সত্যি সত্যিই। মন থেকে। বিশ্বাস করুন কেননা আমরা জেনে ফেলেছি ইতিমধ্যেই আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞানের সূত্র ধরে যে ক্ষমা আর কৃতজ্ঞতা আমাদেরকে অর্থাৎ গোটা মানবজাতিকেই অন্য এক মহৎ অস্তিত্বে উন্নীত করে সেই সঙ্গে ক্ষমা করে দিচ্ছি আমাদের পূর্বনারীদের তরফ থেকে আলেকজান্ডার থেকে এরনান কোর্তেস সহ আরও বহু ঐতিহাসিক মানবচরিত্রকে, যাঁরা তাঁদের ক্ষমতালিপ্সা ও লালসাকে চরিতার্থ করার জন্য যুদ্ধ বা অন্যান্য নানারকম সামাজিক অস্থিরতার মধ্যে নারীকে ভোগ করার লোভ থেকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি।

পরিশেষে একটা কথা বলি, পাঠকমহাদয়গণ! সত্য, মানবতা, অপরাধ – এগুলোর কোনও ভেদাভেদ যেমন করা  উচিত নয় লিঙ্গের নিরিখে, ঠিক সেইরকমভাবেই কোনও তত্ত্বের বা তন্ত্রের দোহাই দিয়ে সামাজিক লিঙ্গ নির্ণয় করে তার ভিত্তিতে মানুষে মানুষে বিভাজন করে শোষণ করাটা আসলে কিন্তু আগুন নিয়ে খেলা করার মত একটা ব্যপার। অত্যাচার ও অপরাধ সহ্যের সাধ্যাতীতভাবে বেড়ে গেলে মানবসভ্যতায়, যদি কোনওদিন অত্যাচারীরা ঘুরে দাঁড়ায়, তুলে নেয় তাদের হাতে অস্ত্র, তাহলে সেই আসন্ন ভয়ঙ্কর দিনগুলো হতে পারে মানবতার পক্ষে চরম বিপদজনক। তাই যা ঘটছে তাতে গা ভাসিয়ে না দিয়ে পৃথিবীর সমস্ত রাষ্ট্রসমূহ ও রাষ্ট্রসংঘের দায়িত্ব ও কর্তব্য হবে পিতৃতন্ত্রের হাত ও পায়ের নখগুলোকে ঊপড়ে ফেলে দিয়ে তাকে চিরকালের মত নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য সঙ্ঘবদ্ভাবে কাজ করা, এটুকুই বলতে পারি।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন