কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩

অচিন্ত্য দাস

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৯


ঝাল পকোড়া

আমার নাম ভবেশ। আমার একটা গুণ আছে – যাকে আমি একবার দেখি তাকে আমি ভুলি না। সে দশবছর পরে হলেও ঠিক চিনতে পারি। এমনকি সে কী বলেছিল বা করেছিল তাও হুবহু মনে করতে পারি। এ গুণ চট করে দেখা যায় না জানি, কিন্ত এ দিয়ে তো চাকরি পাওয়া যায় না! বি এ পাশ করে বেকার বসেছিলাম।  

পিসতুতো দাদার একটা ধাবা ছিল, হাইওয়ের ওপরে। বলল, “তুই বরং আমার সংগে কাজে লেগে যা, তোর হাত-খরচাটা অন্তত হয়ে যাবে।”

লেগে গেলাম। আমার কাজ ছিল খদ্দের এলে তাদের বসানো আর কী খাবে জিজ্ঞেস করা। সকালের দিকটায় দু-তিন রকমের পকোড়া আর চা বানানো হতো। দুপুরের দিকে ভাত-রুটি-ডাল-তরকারি-চিকেন। পালংপাতা বা পেঁয়াজের পকোড়া হতো, কিন্তু দাদা বলে দিয়েছিল, বলবি ভেজ-পকোড়া। বাইরে এসে পালং ফালং কেউ শুনতে চায় না।”

সে নয় হলো। কিন্তু আমাদের পকোড়ার তিনটে জাত ছিল। ঝাল, মাঝারি-ঝাল আর ঝাল-ছাড়া। এটাও জিজ্ঞেস করতে হতো।

সকাল এগারোটা নাগাদ একদিন হরাস করে একটা মোটর-সাইকেল এসে থামল। আগে নামল পেছনে বসা মেয়েটি। ছেলেটি তাকে মিকি বলে ডাকছিল।

বললাম, “পকোড়া দেবো?”

ছেলেটা বলল, “দাও, একপ্লেট”।

“ঝাল, মাঝারি-ঝাল না ঝাল-ছাড়া...”

ছেলেটা কিছু বলার আগেই মিকি বলল, “ঝাল, খুব ঝাল দিও”, বলে হেসে ছেলেটার গায়ে ঢলে পড়ল। ছেলেটাও মিকির গালে একটা টুসকি মেরে খুব হাসতে লাগল।

বছর পাঁচেক কেটে গেছে। ধাবা যেমন চলছিল তেমনই চলছে। হঠাৎ একদিন দেখলাম মিকি এসেছে – চেহারা একটু ভারী হয়েছে। আজকাল মেয়েরা সিঁদুর বড় একটা দেয় না, তবে এর সিঁথিতে একটা লাল ফুটকি। গাড়িতে এসেছে। সঙ্গের লোকটি সাবধানী ধরনের, চারটে দরজা লক হয়েছে কিনা দেখে তারপর এসে বসল। এ কিন্তু সেই ছেলেটা নয়।

চা আর পকোড়া খাবে। তোতা পাখির মতো বললাম, “ঝাল, মাঝারি না বিনা ঝাল…?”

লোকটি বলল, “ঝালে আমার পেট জ্বালা করে, মিকি, তুমি কী নেবে?”

বাইরে গোটা কয়েক মোটর-বাইক রাখা ছিল। সেদিকে তাকিয়ে মিকি একটু আনমনে বলল, “ঝাল ছাড়াই ভালো”।

লোকটা তাড়া দিচ্ছিল, “এসব রাস্তা ভালো না, সন্ধের আগে ফিরতে হবে”। মিকি তার ভাগের পকোড়া শেষ না করে উঠে পড়ল। “হ্যাঁ, চলো যাই।”

 

***

বছর দুই পরে এলো কোভিড-১৯। ব্যবসার লক্ষ্মী, খদ্দেরের ভীড় সব নিয়ে চলে গেল। এমনকি দাদাকেও নিয়ে  গেল। বাঁচাতে পারলাম না।

 

***

কোভিড কমেছে – ভাঙ্গা ব্যবসার হাল ধরতে সকালের লোক ছাড়িয়ে দিয়ে ক্যাশ আর খাবার দেওয়া নিজেই সামলাচ্ছি। দুপুর থেকে রাত্তির দুটো লোক রেখেছি অবশ্য।

একদিন সকালে দেখি ঝরঝরে একটা মারুতি থেকে মিকি নামল। এদিক ওদিক তাকিয়ে চট করে গিয়ে বসল কোণার দিকের আধো-অন্ধকার টেবিলে। সঙ্গে পুরনো ছেলেটা।

“ঝাল, মাঝারি না …”

দুজনে আরো ঘন হয়ে বসে প্রায় একসঙ্গে হেসে বলল, “ঝাল, খুব ঝাল দিও…”

 

 

 

 

 

 

 


1 কমেন্টস্: