কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩

কাজল সেন

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৯


দ্বিধা

ইন্দ্রনীল চাকলাদার বসেছিলেন দর্শকাসনের একেবারে শেষ সারির একটি চেয়ারে। সভাঘর একটু একটু করে প্রায় ভরে এসেছে। মঞ্চের একেবারে সামনের সারির চেয়ারগুলো আগেই ভরে গেছিল। এবার মাঝের চেয়ারগুলো আস্তে আস্তে ভরে যাচ্ছে। মঞ্চে এখনও কেউ আসন অলঙ্কৃত করে নেই। তবে সময় হয়ে এসেছে। একটু পরেই বাংলাভাষার তিনজন প্রতিষ্ঠিত কবি পৌঁছলেই অনুষ্ঠান শুরু হবে। আজ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে একটি কবিতা পত্রিকার উদ্যোগে কয়েকজন কবিকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য। ইন্দ্রনীল চাকলাদারকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং তাঁকেও সংবর্ধিত করা হবে।

ইন্দ্রনীল কবিতা লিখছেন অনেকদিন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়। এছাড়া স্বরচিত কবিতাপাঠের আসরেও তিনি আমন্ত্রিত কবি রূপে কবিতাপাঠ করেন। কিন্তু এর মধ্যে একটা সমস্যাও আছে, যে সমস্যার মুখোমুখি তাঁকে প্রায়ই হতে হয়। আসলে এই শহরে আরও একজন ইন্দ্রনীল চাকলাদার আছেন, এবং কী আশ্চর্য তিনিও কবিতা লেখেন। কবি রূপে তাঁরও যথেষ্ট খ্যাতি আছে। বিভিন্ন কবিতামঞ্চে তিনিও স্বরচিত কবিতাপাঠ করেন। আর সমস্যাটা এখানেই। শুধু তাঁদেরই নয়, বরং উদ্যোক্তা এবং শ্রোতাদেরও, এমনকি ডাকবিভাগের কর্মচারীদেরও। আসলে দুই ইন্দ্রনীলই বসবাস করেন বঙ্কিম চ্যাটার্জি রোডে, বাড়ির কোনো নম্বর গেটে লেখা নেই। আবার চেহারাতেও অদ্ভুত সাদৃশ্য, দুজনেরই মুখে দাড়ি, পেটে ভুঁড়ি, মাথায় টাক।

এমন কয়েকবারই হয়েছে, কবিতাপাঠের জন্য এক ইন্দ্রনীল চাকলাদারের কাছে পাঠানো আমন্ত্রণপত্র আর এক ইন্দ্রনীল চাকলাদের কাছে পৌঁছে গেছে। মঞ্চে যাঁর কবিতাপাঠের কথা, তিনি উপস্থিত হতে পারেননি আমন্ত্রিত হননি বলে, আর যিনি কবিতাপাঠের জন্য উপস্থিত হয়েছেন, তিনি আদৌ আমন্ত্রিত নন। একই সমস্যা হয় বিভিন্ন পত্রিকায় কবিতা প্রকাশের ক্ষেত্রেও। পত্রিকার জন্য কবিতা পাঠানোর অনুরোধপত্র পাঠানো হয়েছে এক ইন্দ্রনীলের কাছে, কিন্তু তা পৌঁছে গেছে আর এক ইন্দ্রনীলের কাছে। পাঠকরাও হিমশিম খেয়ে যায়, কোন কবিতা কোন ইন্দ্রনীলের লেখা, তা বুঝে উঠতে।

সভাঘর এখন প্রায় পুরোটাই ভরে গেছে। মঞ্চে অতিথিরা এসে আসন গ্রহণ করেছেন। পত্রিকার সম্পাদক সবাইকে স্বাগত জানিয়ে তাঁর ভাষণ শুরু করেছেন। ইন্দ্রনীল চাকলাদার সভাঘরের শেষ সারিতে চেয়ারে বসে সব কিছুই পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি জানেন, সংবর্ধনাপর্ব শুরু হতে এখনও দেরি আছে। সম্পাদকের  বক্তব্য শেষ হলে একে একে তিনজন অতিথি তাঁদের বক্তব্য রাখবেন। বক্তব্য রাখার আগে প্রদীপ জ্বালাবেন, উত্তরীয় পড়বেন, উপহার গ্রহণ করবেন। তারপর শুরু হবে আমন্ত্রিত কবিদের সংবর্ধনাজ্ঞাপন। ইন্দ্রনীল তাই অলসভাবে চেয়ারে গা এলিয়ে বসে আছেন। তাঁর আর চিন্তা কী, তিনি তো আমন্ত্রণপত্র পেয়েই অনুষ্ঠানে এসেছেন!

আর ঠিক এইসময় তিনি চোখ বড় বড় করে দেখলেন, আর এক কবি ইন্দ্রনীল চাকলাদার সভাঘরে প্রবেশ করে, কী আশ্চর্য, প্রথম সারিতে একটা চেয়ার খালি থাকায় বসে পড়লেন। এর মানে কী? তিনি তো জানতেন একজন কবি ইন্দ্রনীলকে সংবর্ধনা জানানো হবে! তাহলে এই কবি ইন্দ্রনীল কোথা থেকে টপকালো? পেছনের সারির কবি ইন্দ্রনীল চাকলাদার বুঝে উঠতে পারলেন না, তিনি কি বসে থাকবেন? নাকি সভাঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাবেন?

 


2 কমেন্টস্: