কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩

মৌ চক্রবর্তী

 

ফ্ল্যাশব্যাকে থিয়েটার পাঁচালি : টিকিট # গ্রুপ থিয়েটার@১০০ থেকে শুরু

 


প্রতি,

-দাদা, একটা ১০০ দেবেন!

সন্ধ্যা হয় হয়। পরপর ছোট খোপের মধ্যে থেকে দেখতে পাওয়া।

তিনি সরে আসতেই জিজ্ঞেস করলাম। ১০০ টাকার টিকিট তো পেছনের। দেখতে ভালো লাগবে?

-না, কিন্তু ওই। অবসরপ্রাপ্ত থিয়েটারের দর্শকের এর বেশি যে সাধ্য নেই।

হাসলাম তবুও। বললাম, না আপনার তো আবার চোখের অপারেশনও হল সেদিন।

-না, হয়নি। একটু জটিলতা রয়েছে বলে। ওষুধ চলছে।

-তাহলে?

-তাহলে আর…

যাঁর সঙ্গে হওয়া কথোপকথন উল্লেখ করা হল, তিনি নিজে থিয়েটার কর্মী। একটি ৪০ বছর অতিক্রম করা থিয়েটার পত্রিকার সম্পাদক। এবং তিন দশকেরও কিছু বেশি সময় থিয়েটার সংলগ্ন। থিয়েটার নয়, গ্রুপ থিয়েটার সংলগ্ন। গ্রুপ থিয়েটার এক আন্দোলনের নাম। সামাজিক দায় মানে সমস্যাগুলো নিয়ে তার ভূমিকা। সামাজিক সমস্যা যা বৃহত্তর মানবসমাজের। আমাদের এখানে থেটার থেকে থিয়েটার হয়েছে। আর তারপরে থিয়েটার থেকে গ্রুপ থিয়েটার। একই থিয়েটারের তাহলে এত নাম কেন? এত শব্দের দরকার ছিল কেন? ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তরে গ্রুপ থিয়েটার, তার আদর্শের কথাই বলে থাকে। যেমন, ভালো নাটক ভালো করে করা। এক বিশেষ অবাণিজ্যিক আদর্শের কথা উল্লেখ থাকে তার বিশ্লেষণে। এসবই ঘুরে ফিরে আসছিল তাঁর সঙ্গের কথায়।

একদিকে হরির চায়ের দোকানের ভিড়। অন্যদিকে, আলাপ চলছে। এসবের জন্যেই তো গ্রুপ থিয়েটার শিল্পীদের শ্রদ্ধা। এবং তাঁদের আদর্শকে সম্মান। বাজার অর্থনীতির ঠিক বিপরীতে স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে এই মাধ্যম। এদিকে, থিয়েটারের শিল্পীদের নিয়ে পেজ থ্রি-র শিল্পীপাড়ায় বলা হয় যে, শিক্ষিত শিল্পী। বিশেষ একটা আর্ট-এর তথা শিল্পের আকর গন্ধ নিয়েই গ্রুপ থিয়েটারের শিল্পীরা অন্যান্য মাধ্যমেও শ্রদ্ধা আদায় করেছেন।

এখানেই তো শেষ নয়। বরং শুরুয়াত। তাই কঠিন লড়াই করা থিয়েটার কর্মীদের আজও সেই শ্রদ্ধা প্রাপ্তি ছয়লাপ। আসলে, টাকার বিনিময়ে তো নয়, নিজের বোধের জাগরণ থেকেই একপ্রকার সামাজিক দায়িত্ব পালন করে থাকেন শিল্পীরা। তাই মধ্যে মধ্যে দেখা হয়ে যায় তাঁর এবং তাঁদের সঙ্গে। কখনো মিনার্ভায়, কখনো একাডেমিতে, কখনো গিরিশে। এখনো যাঁদের মঞ্চ-থিয়েটারে সংলগ্নতা তাঁদের প্রতি স্যালুট।

স্যালুট তো হল। বললাম, আগামী সপ্তাহে আরেকটা ভালো নাটক আছে। যাবেন তো?

-না, যাওয়ার উপায় নেই।

-কেন?

-মাসের শেষ যে। অবসরের পর থেকে সবই নিয়ন্ত্রিত করতে হয়েছে।

-ভালো শো দেখবেন না?

-না, ভাই, একজন আমি না দেখলে থিয়েটারের কোন ক্ষতি হবে না।

বিশেষত, সেই শো দেখতে দেখতে বারবার মনে পড়ছিল তাঁর কথা। সত্যিই ক্ষতি হবে না? ৩০০ টাকার সিটে বসে সোয়াস্তি হচ্ছে না ঠিক। নাটক শুরুর আগে তাই পেছনের দিকটা দেখা চাই। দেখলাম ১০০দের সংখ্যা এখানেও বেশি। আর মধ্যেটা ফাঁকা। মানে যেখানে ২০০। আবার ৩০০দের খুব গাদাগাদি। এখন তো আর কড়াকড়ি নেই যে, একটা করে সিট ছেড়ে বসতে হবে। তাই, বেশ লাগে। থিয়েটার ভর্তি দর্শকের নিঃশ্বাসের গন্ধ। বিশেষ করে, একা লাগছিল। ওঁর মতন নাট্য-দর্শক খুবই কম। আর কম বলেই, ভাবছিলাম, আরও কমে না যায়। এখনো যাঁদের থিয়েটার দেখতে দেখা যায়, তাঁদের অধিকাংশই প্রবীণতার দিকে। কোন বয়সকে প্রবীণ বলা যাবে, ঠিক বুঝি না। কেশ পক্কতা একদিকে অল্প বয়সেই শুরু। আরেকদিকে, সেটাই ফ্যাশান হয়ে ফিরছে। একুশ শতকে এসে ফ্যাশানের বাড়ন্তপনা শিল্প হয়ে উঠতে চাইছে। আর গ্রুপ থিয়েটার শিল্পীদের অনেকটাই লড়াই করতে হচ্ছে। একদিকে আদর্শ বনাম বাণিজ্যের শিল্পীসত্তার। অন্যদিকে গ্ল্যাম দুনিয়ার চাকচিক্য এবং বাজার সংস্কৃতির প্রাবল্যের টিআরপি। শব্দটা এখন সবারই চেনা। সবাই জানেন এর মানে, বাজার দেখার মাপকাঠি। সত্যিই তো, একদিকে হাতে গোনা দর্শকের সঙ্গে সংশ্লেষ। অন্যদিকে গ্ল্যামার দুনিয়া, ছোট পর্দার মাসকাবারি আয়ের বন্দোবস্ত। বড় পর্দার মুখ, রুপোলি পর্দার শিল্পীদের মধ্যে কাজ করার সুযোগ, শিল্পীমনের চাহিদা, আর্থিক সমস্যার সমাধান …। এক উজ্জ্বল তারকার জীবনের শুরু করতে পারা কত না থিয়েটার-তুতো প্রতিভার উদাহরণ।

সব ছেড়ে এক শিল্পীর লড়াই শুধুই আদর্শ ধরে। আদর্শের জন্যে চড়া দামের বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে, পেটে ভিজে গামছা বেঁধে রাখা। টেলিফোনে আলোচনা হলে এর শেষ হবে না। তারচেয়ে ভালো একটা লেখা লেখো দেখি। এই আলোচনা চলছিল ‘কালিমাটি’ পত্রিকার সম্পাদক কাজল সেন-এর সঙ্গে। গ্রুপ থিয়েটার, নাকি থিয়েটার? থিয়েটার,  নাকি কোম্পানি থিয়েটার? কোম্পানি থিয়েটার, নাকি পেশাদার? না, গ্রুপ থিয়েটার এর সব তত্ত্বের বাইরে যে। এখানে অবাণিজ্যিক ভাবে চলাটাই আদর্শ। অন্তত এরকমই জেনেছি বইপত্রে আর আলোচনায়। কিন্তু দেখিনি। প্রত্যক্ষভাবে থিয়েটার করতে গেলে যে যে বিষয়গুলো উঠে আসে, তারমধ্যে গ্রুপ থিয়েটারের দর্শন বেশ পোক্ত। নইলে এতগুলো বছর চলে?

কত বছর?

কেন ৭৫ বছর। ১৯৪৮ থেকে তো শুরু।

এরচেয়ে বেশি চলেছিল কিনা সাধারণ রঙ্গালয়। সেখানে চ্যালেঞ্জ কিছু কম ছিল না। তখন থিয়েটারের গ্রামারটাই থিয়েটার করতে করতে তৈরি হচ্ছিল।

এসবই মনে রেখে থিয়েটার দেখতে গেলে এখনো টিকিট কেটেই দেখাটাকেই কর্তব্য মনে হয়। টিকিটের দাম সাধারণত ৩০০, ২০০, ১০০ টাকা। আমাদের সিনেমাঘরের টিকিটের প্রায় কাছাকাছি। তা হলেও মন্দ লাগে না এইভেবে যে, টাকাটা তো ঘুরে থিয়েটারের কাজেই যাচ্ছে এবং যাবে। আমরা কে না জানি যে, বাজারের মুদ্রাস্ফীতি তাতে আলু কেনার খরচ থেকে বিদ্যুতের খরচ ক্রমে নাগালের বাইরে। এতেই নাগরিক জীবন মুদ্রায়নের আন্তর্জাতিক বাজারে পরমাণু রূপ হয়ে যাচ্ছে। এভাবেই নিয়মিত থিয়েটারের দর্শকদের একাংশ খাবি খাচ্ছেন… আজকের থিয়েটার দেখবেন কিনা? প্রশ্ন? এঁরা এখন সামনের সারি থেকে সরে পেছনের সারিতে ১০০ টাকায় থিয়েটার দেখছেন। তারপর কতো টাকায় দেখবেন? নাকি দেখবেন না। আবার বলবেন, না, আজকাল আর দেখতেই পারি না। কারণ যা দাম। অনেকটা সিজনের বিশেষ খাবারের মতন। দাম ব্যাপারটায় বাধা কোন নিয়ম নেই। যে যেমন পারে হাঁকে।

তবুও, আরেকদিকে, দুঃখের কিছুই নেই, কারণ হলের টিকিট সবই বুকড। এমন আশার কথা আনন্দের ফুলকির মতন। কিন্তু ৩০০ এর আসনে দ্বিতীয় সারিতে, একটি বিশেষ প্রেক্ষাগৃহে আসন ভেঙেছে। তারই জায়গায় রাখা হয়েছে একটি কালো রঙা ছোট লোহার চেয়ার। যা অনন্ত থিয়েটারের আসন হলেও, ৩০০ টাকার একটি পূর্ণ আসন প্রেক্ষাগৃহের দর্শক হিসেবে মেনে নিতে অসুবিধে হচ্ছিল। হলটির নাম মিনার্ভা।

কিন্তু কীভাবে বুঝলে যে সব টিকিট বুকড? কারণ, অনলাইনে টিকিট কাটছিলাম। এইমাসের যত নামকরা দলের শো…।

এই জেনারেশনের দোষ এটাই, অনলাইনে টিকিট কাটে। এবং, আগেই দেখে নিতে পারে যে, কত আসন তখন সংরক্ষিত নয়। এভাবেই গত কদিন আগে ৩০০ টাকায় ক্লিক করে চটজলদি একটি প্রযোজনার টিকিট কেটে ফেলা। প্রেক্ষাগৃহ মিনার্ভা থিয়েটার। মাসের প্রায়ই শো থাকে সেখানে। এবং থিয়েটার দলের দিক থেকে দেখলে সব আসনই ভর্তি। টিকিট কাটার জন্যে পড়ে থাকে একেবারে কোণার দিকের গুটিকতক আসন। দর্শক তাও কেটে ফেলেন -- কাছ থেকে শিল্পীদের অভিনয় প্রত্যক্ষ করতে। বিশেষ সব নামজাদা শিল্পীদের মঞ্চে জ্যান্ত দেখা। বিস্ময়! তাহলে এরকমভাবেই আরেকটি শোয়ের থিয়েটারের টিকিটের দাম ঘোষণা হয়ে ঝুলছে অনলাইন মাধ্যমে। গিরিশ মঞ্চ। এখন অভ্যেস হয়ে গেছে ৩০০, ২০০, ১০০ টাকার টিকিট দেখার। কিন্তু একটি বিশেষ দলের পূর্ণাঙ্গ নাট্য-প্রযোজনার টিকিটের দাম ৫০০, ৩০০, ২০০, ১০০ টাকা। আবার, এও উল্লেখের যে, এখানে তারকা শিল্পীদের অভিনয় দেখা যাবে। একই প্রেক্ষাগৃহে তারকা শিল্পীদের অভিনয় দেখা আরেকটি পূর্ণাঙ্গ নাট্য-প্রযোজনার টিকিটের দাম  ৩০০, ২৫০, ২০০, ১০০ টাকা।

আবার এও উল্লেখের যে, একাডেমি অফ ফাইন আর্টস - কলকাতায়, বিশেষ দলের পূর্ণাঙ্গ নাট্য-প্রযোজনার টিকিটের দাম  ৫০০, ৩০০, ২০০, ১০০ টাকা। এই প্রযোজনার বৈশিষ্ট্য হল, এদের ১০০ টাকার টিকিট একটিমাত্র রয়েছে। ২০০ টাকার টিকিট ১০ টা। ৩০০ টাকার টিকিট ১৯টা। ৫০০ টাকার টিকিট ১৯ টা। আরেকটি নাটকের টিকিটের দাম আগের মতনই দেখা যাচ্ছে। উক্ত নাটকের টিকিট রয়েছে যথাক্রমে ৭৬, ৭৯, ১৪৬। পাশাপাশি উল্লেখের যে, একই প্রেক্ষাগৃহে আরেকটি নাট্যদল টিকিটের দাম রেখেছে ১৫০, ১০০ টাকা। তাদের  ১৫০ টাকার টিকিট সংখ্যা ১৪, ১০০ টাকার ২০।

আবার, মধুসূদন মঞ্চে একটি নাট্যদলের টিকিটের দাম ৫০০, ৩০০ টাকা। এখানেও থিয়েটারের একজন নামী অভিনেতার অভিনয় দেখা যাবে। এদের অবিক্রিত টিকিট সংখ্যা ৩৫, ২৭। পাশাপাশি ওই একই মঞ্চে আরেকটি বিখ্যাত নাট্যদলের টিকিটের দাম ৩০০, ২০০, ১০০ টাকা। এদের অবিক্রিত টিকিট সংখ্যা যথাক্রমে ১৬, ৯, ১৭। এরসঙ্গে উল্লেখের যে, রবীন্দ্র সদনে প্রযোজনার টিকিটের দাম ২০০, ১০০ টাকা। পূর্ণাঙ্গ নাট্য-প্রযোজনা এটি। টিকিটের দাম উল্লেখ করার কারণ? কারণ, এই যে, একই মঞ্চে বিভিন্ন দল একই আঙ্গিকের নাটকের জন্যে টিকিটের দাম রাখছে ভিন্ন। এতটা পার্থক্যের কারণ? টিকিটের দাম দিয়ে দর্শককে বোঝানোর প্রয়াস যে, দামী টিকিটের নাটক মানে ভালো নাটক।

বা, টিকিটের দাম প্রযোজনার খরচের উপর নির্ভর করে থাকে।

বা, টিকিটের দাম নির্ভর করবে দর্শকের ক্ষমতা, বাজার-অর্থনীতির উপর।

বা, টিকিটের দাম স্টার বা তারকা শিল্পীর অভিনয় দেখার জন্যে।

বা, টিকিটের দাম স্টার বা তারকা শিল্পীর অভিনয় সন্ধ্যার শো-তে দেখার জন্যে।

বা, টিকিটের দাম নামী লেখক তথা নাট্যকারের স্ক্রিপ্টের জন্যে।

কারণ সহ সম্ভাবনা তো অনেক রয়েছে। কিন্তু দর্শকের অভাব হল বাজার অনুপাতে টাকার। এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠবেই, আরে বেশি দামে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পোশাক, বাড়ি এমনকি জীবনের বীমা করাতে পারছেন। অন্যায্য দামের কেনাবেচা তো সেই কবেই শুরু হয়েছিল। বিশ্বযুদ্ধের কালোবাজারে। তাহলে? এখন আর নতুন কোথায়? সাধারণ মানুষ তথা দর্শকদের ক্রয় ক্ষমতা না বাড়ুক, সহ্য ক্ষমতা তো বেড়েছে এদ্দিনে। আর সেই সাধারণ মানুষের মধ্যে যাঁদের থিয়েটার দেখার ইচ্ছে – তাঁদের জন্যে ১০০, ২০০, ২৫০ টাকার টিকিট তো রয়েছেই। তাঁরা সন্ধ্যার থিয়েটার দেখতে টিকিটের দাম বাড়া সইয়েই তো আসছেন বাড়ি থেকে। এই যেমন, রেল টিকিট, পাতাল রেলের টিকিট, বাসের টিকিট ইত্যাদি। এভাবেই তিনি বা তাঁরা থিয়েটারের কাউন্টারে এসে দাঁড়াচ্ছেন। হাত বাড়াচ্ছেন। ১০০, ২০০, ২৫০, ৩০০। কিন্তু ৫০০? টাকা মানে ইউনিট টাকার লিখতে চাওয়া হচ্ছে।

ব্যস… কিনতে পারছেন, আর থিয়েটারের টিকিট কিনতে এত অভাব বোধ বা কার্পণ্য কেন? একথা ঠিকই। অনিয়মিত দর্শকদের ক্ষেত্রে হয়ত হুজুগে দেখার ক্ষেত্রে দাম একবার দিতে গায়ে লাগবে না। কিন্তু নিয়মিত দর্শকের ক্ষেত্রে দাম একটা ফ্যাক্টর তো। ফ্যাক্টর হবার কারণ দর্শকের আর্থিক শ্রেণি। আমরা জানি, দর্শক হতে আসা ইচ্ছুক থিয়েটার-প্রেমীদের সংখ্যা হাতে গোনা। নির্বাচিত কিছু নাম নিয়মিত। অর্থাৎ, অনেক কারণ পাঠক এতক্ষণে বুঝেই গিয়েছেন। প্রথমত, ৫০০ টাকার টিকিটের দর্শকদের সাধুবাদ জানাই। অন্তরালে বন্ধুদলের কাছাকাছি থেকে জেনেছি তাঁদের সংখ্যা। আর, ১০০ টাকার দর্শকদের চিনিয়ে দিতে হয় না। এমনিই চেনা তাঁরা। বহু বছরের থিয়েটারের দর্শক তাঁরা। যাঁদের সামনের সারি থেকে পিছিয়ে যেতে দেখছি পেছনের ১০০তে।

আরও কিছু তর্ক নিশ্চয় জন্মালো? উঠুক তর্ক। আন্দোলিত হোক। আমাদের ৫০০ থেকে তথা সামনের সারি উঠে আসা হাততালির শব্দ মুখর হোক। কিন্তু তাঁদের অনেকেই যে কমপ্লিমেন্টরি…। আসলে, প্রশ্ন তাহলে টিকিটের দাম দিয়ে নিয়মিত দেখা বনাম দর্শকদের সংখ্যা। জানি, একসময় ৬০ টাকার আসনে বসতাম। বসতাম মানে টিকিট না কেটে, দরজায় থাকা দাদাদের জন্যে। কারণ, ওঁরা জেনেছিলেন সেদিনের সেই ফ্রি-তে দেখা মুখগুলো আগামির দর্শক। হ্যাঁ, আমরা এগিয়ে এসেছি ক্রমশ। কিন্তু ৫০০ তে যেতে পারি কই?

এই পরম্পরায় লিখিত কিস্তি নাট্যচর্চাও একুশ শতকীয় টিকিটের দাম নামক এক উপস্থাপনা শুধু নয়। আন্দাজ করা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্যে আমাদের মতন মাসিক আয়ের বন্দোবস্ত ছাড়া বা আয়হীন শুধুমাত্র থিয়েটার দর্শক কতদিন আর?

 


4 কমেন্টস্:

  1. বেশ তথ্য সমৃদ্ধ লেখন। সাথে গ্রুপ থিয়েটার এর আঙ্গিকে সেকাল ও একাল এর সামাজিক প্রেক্ষাপট এর সাবলীল বিশ্লেষণ। রচনাশৈলী বেশ আকর্ষক।

    উত্তরমুছুন
  2. বাহ! তবে আমি তো ঠিক "থেটার"-এর লোক নই। কালভদ্রে "নাটক-ফাটক" ( কেউ কেউ শুনি এখনও এরকম বলে!) দেখতে যাই, কারও পাল্লায় পড়ে বা কখনও হয়তো "কৌলিন্য" বজায় রাখতে। যাই হোক সেই কারণে হয়তো টিকিটের দাম নিয়ে আলাদা করে ভাবিনি। অবশ্য যদি প্রাইভেট বাসের মতো লেখা থাকত "নামিবার সময় টিকিট দেখাইবেন" তাহলে হয়তো শেষের "ট" মুছে দিয়ে হাস্যরসের অবতারণা করার চেষ্টা করতাম। তবে টিকিট এক গভীর রহস্যময় ব্যাপার। আমি তো এই মউবনে ৩০০ ২০০ ১০০ ৫০০-এর মধ্যে ঘুরে বেড়ালাম। টিকিট আর টিকিট হীনতার ফাঁক দিয়ে দেখলাম আর এক গজত! (মানে ওই উলটে গেল আর কি!) দর্শক এখন ইউটিউবের অভিজ্ঞতায় ফ্রি বুঝেছে। সে যাই হোক টিকিট আর শো এই দুয়ের মধ্যে যে অলৌকিক সম্পর্ক আছে সেইনিয়ে মৌদেবী যদি গৌরচন্দ্রিকা করে তাহলে আমার কতো মেধাহীনদের উপকার হয়। তডে সব ভালো যার শেষ ভালোর মতো মৌ টি-কিটের মতো বিষয়কে রসগোল্লার মতো স্বাদু করে পরিবেশন করেছেন এটা গদ্য তালিকায় নিঃসন্দেহে অভিনব। টিটিটিটিটিটিটিটি টি টি টি!

    উত্তরমুছুন
  3. সাধু সাধু। দুর্দান্ত লিখেছেন স্যার...✍️

    উত্তরমুছুন