কবিতার কালিমাটি ১২৯ |
জানালার আত্মজীবনী
(১)
ডালের শরীরে
লেখা পাখিনেভার কষ্ট
বিকেল বোবা
হয়ে গেলে
প্রেমিকারা
বেঞ্চি থেকে ওড়নামুখে
ফিরে যায় আর
সূর্যাস্তের খাতায় ঋতুদিন
(২)
পায়ে পায়ে
সন্ধ্যা পরে নিল এই পুকুরপাড়
সমস্ত অভাব
কখন অন্ধকারে জল
তারা মানে অনেক
দূরের গল্প
অসুখের বাড়িতে
তবুও দু একটি রূপকথা
ঘুমকে ডাকছে
খুব নিবিড় স্বভাবে
(৩)
ভোরের ভেতর
উঠে আসে পোয়াতি রূপসী
এই পুকুর পাড়ে
তার শাড়িতে গন্ধ
গল্পরা টের
পায়
পায়ে পায়ে
আসা এই বৈশাখ মাস
গাছের দেয়ালে
লেখে নতুন আসার
বিজ্ঞাপন
গভীরে কোথায়
লুকিয়ে আষাঢ়
কান্না জমায়
জানালার চোখে
এইসব কথাই বাজে
রূপসী জানে
না
(৪)
ঝিলের ওপরে
খেলা করছে বাঁকাচাঁদ
আমরা তরঙ্গ
মাপছি
চাঁদ তরঙ্গ
হঠাৎ অস্ত্র
কেউ আগলে রাখতে
পারছে না
পালকের রক্ত
উজ্জ্বলের ভিতরে
একটা নিবিড় আঁধার
(৫)
একটা ফুলদানি
আর সন্ধ্যার ঘর
কথা না হলেও
ফুটে উঠেছে
সুখ সুখ ভাবের
দিন বাইরে আঁধার সত্ত্বেও
দেয়ালের কাছাকাছি
দুটো টিকটিকি
শঙ্খলাগা সময়ের
অপেক্ষা
(৬)
ফিরে যাওয়ার
সময় একটা বিচ্ছুরণ
পুকুরের জলও
জানে সে কখন সুন্দরী
সমস্ত স্তদ্ধতা
চিরে যখন শাঁখ বাজে
সিঁদুর ছড়িয়ে
যায় আয়নায় আয়নায়
ঈশ্বর হবার
প্রার্থনা ঠৌঁটের নৌকায়
(৭)
রাত্রির রাস্তায়
আগুন আর আগুন ভাবলেই শীত
অনেক গল্পের
জন্ম যেন অপেক্ষায় ছিল
শুকনো হাতের
রেখায় পৌঁছে যাচ্ছে তাপ
এই বইয়ের প্রচ্ছদ
আগেই তৈরি ছিল
শূন্য সময়ের
ঘন্টাধ্বনির প্রতীক্ষায় তারা
(৮)
আয়নার পাশ
দিয়ে প্রতিদিন ফিরবার পর
নতুন গল্পে
মশগুল
সমস্ত গাছগুলি
উৎপাটনের পর
অসম্ভব নীরবতা
বিকেলের কাছে
আকাশের বুক
কেঁপে উঠেছে
জলের ছায়ায়
(৯)
ছাদের ওপর বিশাল
চাঁদের ছায়া
ছন্দের পায়ে
বাইজি ধরেছে
ছদ্মবেশ ছেড়ে
আসবার পর প্রথম মুখোমুখি
গজলের
ছোঁয়ায় আঁধার
হারালে
প্রদীপের খুব
স্বপন পায়
(১০)
সকালের ভূমিকা
চোখকে আরাম
দিলে সে হেঁটে
যায় কালীকল্প তরুমূলে
লেখার টেবিলে
কাগজ যেন পাখি
খিল খুলে দিলেই
হারিয়ে যেতে নেই মানা
নামাবলী খুলে
নীরব কথোপকথন চলে ঈশ্বরের সঙ্গে আর স্বরের ওঠানামায় উচ্চারণ ওম
ম শব্দে মা
পায় আর জল ডুবে যাচ্ছে পান্নালালে আর মন্ডপের মৃন্ময়ী কখন চিন্ময়ী
(১১)
একবার চলে গেলে
ফেরা কঠিন
নজরের ভেতর
জমাট কুয়াশা পারে
রেখা টেনে গেছে
কেউ অযত্নেই সই
ইতি লিখলেই
কান্না গড়িয়ে পড়ে
পড়ন্ত বেলার
এই রোদে যাদুমাখা
খাড়া গাছটি
ডানা আঁকড়ে সুর লাগায়
গায় এত গায়
শিহরণ লাগে গায়ের আদুলে
দুলে ওঠা আত্মায়
না পোড়া
বেদনাঘন
ঘন ঘন দেখা
হবে না জেনেও একটা সুতো যোগ লিখে যাচ্ছে সূক্ষ্ম দেহে
(১২)
রাতের বৈঠকখানায়
তারা বসে আছে
পাগলী জানে
না এ সময় কেউ নিরাপদ নয়
তার আশ্রয় ফুটপাথ
গাছটি
কাদের চোখে
বিষ দিয়েছিল
শূন্যের ভিতর
শুয়ে
তারারা গল্প
বলে
সেই সুযোগে
তার কন্যাসন্তান
নিরুদ্দেশ হয়ে
যায়
গঙ্গার জলের
উপর কত আলো
অন্ধকারকে পবিত্র
করতে পারে না
ভালো কবিতা 🌻❤️
উত্তরমুছুনদারুণ লেখা সবকটি কবিতা।
উত্তরমুছুনঅনেক ভালবাসা
উত্তরমুছুন