কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১১ |
বিকল্প
সোমব্রত এখনও যুদ্ধটা চালিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধটা অসম। কতক্ষণ বা কতদিন চালিয়ে যেতে পারবে, কারও জানা নেই। আরও জানা নেই এই কারণে যে, খবর কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না হাসপাতাল থেকে। সেই যে দিন সাতেক আগে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সোমব্রতকে ভর্তি করা হয়েছিল হাসপাতালে, এখনও পর্যন্ত হাসপাতালেই আছে। কারও অনুমতি নেই দেখা করার। একটা সক্ষম, স্বাভাবিক, সাবলীল ছেলে যে এইভাবে অক্ষম হয়ে পড়ে থাকতে পারে, তা অন্যদের পক্ষে মেনে নেওয়া খুব মুশকিল। বাড়ির সবাই দুশ্চিন্তায় প্রায় পাগল। যে পাড়ায় থাকে, সেই পাড়ার বন্ধু-বান্ধবরা প্রচন্ড টেনশনে ভুগছে, সোমব্রত ফিরে আসতে পারবে তো? সল্ট লেকে যে মান্টিন্যাশনাল আই টি কোম্পানিতে কাজ করে, সেখানকার সহকর্মীরাও আন্তরিকভাবে কামনা করছে, সোমব্রত সুস্থ হয়ে আবার কাজে যোগদান যেন করে! আসলে সোমব্রত তার কথাবার্তায়, ব্যবহারে, মেলামেশায়, কাজের ব্যাপারে এতটাই সহজ ও স্বতস্ফূর্ত যে, সবাই তাকে ভালোবাসে। সবাই তার সান্নিধ্যে খুশি হয়।
সোমব্রত ও কনিষ্ক মোটামুটি একই সময়ে কোম্পানিতে কাজে নিয়োজিত হয়েছিল। এমনিতে খুবই বন্ধু, কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে একটা প্রতিযোগিতাও আছে। প্রতিযোগিতাটা ম্যানেজার পোস্ট থেকে সিনিয়ার ম্যানেজার পোস্টে কে আগে উত্তীর্ণ হতে পারে, এই পর্যায়ে। দুজনেই কমপিউটার সায়েন্সে বি টেক করার পর এম বি এ করেছে। কাজের দক্ষতায় দুজনেই সমান। দুজনের অ্যাপ্রিজালও খুবই ভালো। এখন বলা যাচ্ছে না, প্রথমে কার নামে প্রমোশন লেটার ইস্যু হবে। আর ঠিক এখানেই প্রতিযোগিতা গড়িয়ে গেছে সুস্থতা থেকে অসুস্থতায়। হ্যাঁ, একথা ঠিক যে, কারও মৃত্যুকামনা করা অত্যন্ত অনৈতিক, অশোভন এবং অমানবিক। তবু কোথাও যেন একটা লোভের ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার চোরাস্রোত বইতে শুরু করে মনের কোন্ গহীন উপত্যকায়! অবাধ্য মন যুক্তি সাজায়, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিস্তার পাওয়া কি আদৌ সম্ভব? প্রতিদিনই তো সারা বিশ্বে কত কত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে!
সমস্যাটা আরও জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে ঋতাভরীর কাছে। সেই ছোটবেলা থেকে নিজের রূপ ও সৌন্দর্যের প্রশংসা শুনতে শুনতে তার মনে একটা ভাবনা পাকাপাকি বসে গেছে যে, তার রূপ ও সৌন্দর্যের সঙ্গে অন্য কোনো মেয়ের তুলনাই হতে পারে না। সে সবার থেকে সুন্দরী। এবং কথাটা মিথ্যেও নয়। ঋতাভরীকে দেখলে শুধু ছেলে-ছোকরাদেরই নয়, অনেক প্রবীণের বুকের ভেতরেও খুশির ঢাক বাজতে শুরু করে। সে যাইহোক, সুন্দরী হবার জন্য ঝুটঝামেলাও কম নয়। সেই ক্লাস এইট থেকে শুরু করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম এ পাশ করার পর এখনও যে কত প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব পেয়েছে, ঋতাভরী রীতিমতো হিমশিম খেয়ে গেছে। তবে ঋতাভরীরও তো একটা মন আছে, তারও তো কাউকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। তাই শেষপর্যন্ত দুজনকে বেছে নিয়েছে। সোমব্রত ও কনিষ্ক, দুজনকেই সে প্রচন্ড ভালোবাসে। যেমন সোমব্রত ও কনিষ্ক দুজনেই আগ্রহী ঋতাভরীকে বিয়ে করার জন্য। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, বিয়ের জন্য ঋতাভরীকে বেছে নিতে হবে একজনকেই। কী করবে এখন? খবর এলো, সোমব্রত মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে হাসপাতালে।
অনবদ্য
উত্তরমুছুনঅসাধারন…
উত্তরমুছুনএখানে
উত্তরমুছুনবিকল্প = কণিষ্ক