কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

শতাব্দী দাশ

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১১


শূন্যপুর ১৮

 

দু’মাস!

মাত্র দু’মাস!

বড় প্রহরী সামান্য কেঁপে ওঠে।  বাপের চোখে পানি কিনা, বোঝা যায় না।  চিরকুট পাঠায় বড় প্রহরী, ছোট প্রহরীর হাতে৷ চিরকুটে যার নাম, সে মেয়ে এসেছিল মাসখানেক আগে। শিশু নিয়ে নাকানি-চোবানি। শরীরে প্রসবোত্তর ক্লান্তি। ছেলে কাঁখে মেয়েটাকে ছেড়ে দিয়ে এসেছিল বড় প্রহরী নির্দিষ্ট কোটরে। বাচ্চার এই বাপ, সেও এসেছিল। ফটকের কাছে ছাড়াছাড়ি হল খাঁ খাঁ চোখে।  

খবর গেছে উপর মহলে গতকালই। আজ ক্যামেরা আসবে। মাইকও। সবচেয়ে  খুদে যে জন, তার মৃত্যু একটা ঘটনা বৈকী! সবচেয়ে বৃদ্ধ, সবচেয়ে শিশুদের মৃত্যু খানিক বিশেষ। বাকিরা সংখ্যামাত্র। তাহলে এই খোকা, নজরুল ইসলাম,  সবচেয়ে খুদে সেই জন, যে মারা পড়ল বিদেশি-ধরার খাঁচায়। মা তার জানতও না, কাগজ চাওয়া হয়েছিল কবে। শমন যবে পৌঁছল, তার আগেই একতরফা  শুনানি হয়ে গেছে। গরহাজিরায় প্রমাণ হয়েছে তার অ-নাগরিকত্ব। তবে সরকারি যন্ত্র ধীরে চলে। তাই আরও কয়েক বছর নির্বিঘ্নে সংসার যাপন। সাবিনা জানতও না, সামনের চিঠি দেরি করে পৌঁছলে কী হয়? কী বা হয় আদালতে না পৌঁছলে? জানল তখন, যখন পুলিশ এল। দেরি করে পাওয়া চিঠির কথা তখন প্রায় ভুলতে বসেছে ঢাউস পোয়াতি। পুলিস ফিরে গেল। শাসিয়ে গেল, আবার আসবে, সময় মতো। ব্যাটা লাথি মারছিল পেটে, যেন লায়েক হয়েছে! যেন বেরিয়েই দেখে নেবে পুলিশ পেয়াদাকে।

উৎকণ্ঠায় কি জল ভাঙে অকস্মাৎ? না হলে তিন দিনের মাথায় বিনা নোটিসে কেন কাতরানি শুরু হল? চাঁদের টুকরো কোলে এল যখন, কাজী নাম রাখল নজরুল। ও নামে বিখ্যাত লোক আছে। সে লোক গাইত না লিখত না মন্ত্রী-সান্ত্রী  ছিল, তা জানে না মা-বাপ। তবে ও নামের অর্থ নিদর্শন। বলবার মতো, দেখবার  মতো কিছু। নিদর্শনটি দেখতে পুলিসও এল কথামতো। প্রসূতিমৃত্যুর দায় নেবে  না বলে এতদিন অপেক্ষা করা গেছে। এইবার মা-ছেলে দুজনকেই নিয়ে যাওয়া গেল।

ছেলে দেখতে এসেছিল এ কুঠুরি ও কুঠুরি সেই কুঠুরি। অসময়ে জলভাঙা ছেলে। বড় নাজুক। বড় যত্ন চেয়েছিল। শ্বাস উঠত যখন তখন। পশ্চিম কুঠুরির বুড়ি বলল, গরীবের অত নাজুক হলে চলে? জেলে হাসপাতাল পাই কোথা?

যেন সরকারি হাসপাতাল চাইলেই পাওয়া যায় বাইরেও! যেন সরকারি হাসপাতালে ঢুকতে দেয় কাগজ-হারানো মায়ের পো-কে!

হাসপাতাল লাগেনি নজরুলের। আজ সকালে শেষবার শ্বাস উঠেছিল। দু’মাস! মাত্র দু’মাস! বড় প্রহরী দীর্ঘশ্বাস ফ্যালে।

চিরকুট পেয়ে ফটকে এসে দাঁড়ালো যে নারী, তার মুখ ভাবলেশহীন। মাত্র দু’মাস ভবলীলা সহ্য করে বাছা আমার বেঁচে গেল। ডিটেনশন ক্যাম্পের কনিষ্ঠতম মৃত ঘোষিত হয়ে, সে একখানি নিদর্শনও হয়ে গেল অবশেষে।

সাদা কাপড়ে মোড়া ছোট দেহখানি চালান হয়, মায়ের থেকে বাপের হাতে। শূন্যভূমি থেকে জায়েজ স্থানাঙ্কে এ পাচার, প্রহরীরা স্বচক্ষে দ্যাখে নিশ্চুপে।

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন