কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

চিরশ্রী দেবনাথ

 

সমকালীন ছোটগল্প


নৈঋত


কিছু কথা ছিল।

বলুন।

মানে এখন তো অনেক রাত। বলব কিনা ভাবছি।

ঠিক কত রাত বলুন তো? রাত বারোটা বা আরো বেশি?

কেন আপনি দেখতে পাচ্ছেন না, কত রাত!

চশমা পরা নেই?

আপনি কি করে জানলেন আমি চশমা পরি?

জানি, তাই বললাম। কি করছিলেন এখন?

স্বপ্ন দেখছিলাম। হঠাৎ রিং হলো, জেগে উঠলাম। হাতড়ে হাতড়ে মোবাইল নিলাম হাতে।

বলছিলাম যে আপনাদের বাড়ির সামনের জায়গাটি বিক্রি হবে, শুনেছেন?

না, শুনিনি। এত রাতে আপনি কি জায়গা বিক্রির খবর জানানোর জন্য আমাকে ফোন করেছেন? একজন মহিলাকে! আমি ভাবলাম অন্য কিছু বলতে চাইছেন। হাসি পাচ্ছে। আমি ঘুমোই। কাল সকাল দশটার পর ফোন করবেন। আমি সাড়ে নটায় ঘুম থেকে উঠি। বাই দ্য ওয়ে, আপনার নামটা বলুন।

আমি সায়ক।

আচ্ছা কাল আসুন।

না, আমি এখনি একটু কথা বলতে চাই।

আপনার বয়স?

বয়স দিয়ে কি হবে!

ওটাই তো ম্যাটার। ঠিক কোন বয়সের একজন মানুষ এত রাতে আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইছে, জানতে ইচ্ছে হলো।

আগেই তো বললাম, জায়গা বিক্রির ব্যাপারে কথা বলতে চাই। অন্য কিছু নয়।

আমি এখন ঘুমোব।

সাড়ে নয়টায় ঘুম থেকে উঠলে, আরো একটু বেশি রাত আপনি ইচ্ছে করলেই জাগতে পারবেন। আসলে বিশেষ একটি সমস্যায় পড়েছি বলেই এত রাতে আপনাকে বিরক্ত করছি।

আপনি তো জ্বালাচ্ছেন দেখছি। শুনুন কাউকে এন্টারটেন করার মতো সফ্ট  মানসিকতা আমার আর নেই। রাখছি।

সায়ক নামের লোকটা আর কলব্যাক করল না।

কিন্তু ঘুম এলো না কৃষ্ণকলির। মধ্যবয়সে রাতে একবার ঘুম ভেঙে গেলে অতীতের সমস্ত ঘটনা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তখন নিরাময় বলতে কিছু নেই। পাশের ঘরে নিলু মাসী বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। যারা ক্লান্তিহীন ভাবে ঘুমোয় তাদের প্রতি কৃষ্ণকলির হিংসে হয়। আবার দুঃখও হয়। কেমন স্মৃতিহীন সেইসব মানুষ। দুঃখের বা সুখের কোনো কাহিনীই কি তাদের মনে পড়ে না কখনো? এই  যেমন কৃষ্ণকলি এখন ভাবছে  যুবতীকালের কথা। তার প্রতি অন্যদের মুগ্ধতা। এটা    হলো সুখস্মৃতি। কৃষ্ণকলির জীবনে উপচানো সুখ এবং উপচানো দুঃখ দুটোই এসেছে। ঘড়া ভর্তি করে এসেছে। এখন দুটোই শূন্য। তাই নতুন করে সুখ বা দুঃখ কোনোটার দিকেই হাত বাড়াতে চায় না আর।

আপাতত কৃষ্ণকলি আরামে আছে। যারা যারা জীবনে এসেছিল, সবাইকে সবার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে।

কৃষ্ণকলিও কারো কাছে কিছুই  আশা করে না। এবার  বিশ্রাম। ভাবছে আগামী জীবনটা ঠিক কীভাবে উপভোগ করা যায়। চোখ খুলে গেছে।

দায়িত্ব! তার প্রতি দায়িত্বগুলো কে কে পালন করেছে?

কেনই বা মানুষ দায়িত্ব হতে চায় কারো। দূর বাবা। এসব ভাবলেই শেষ বয়সে  কী হবে এই দুঃশ্চিন্তা চলে আসবে মাথায়।

এককাপ চা খাওয়া যাক। রান্নাঘরে গিয়ে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে এককাপ চা বানাল কৃষ্ণকলি। কাল সায়ক আসবে। লোকটা কি মধ্যবয়সী? না বয়সে ছোট? নাম শুনে মনে হচ্ছে ওর জন্ম নব্বই সালের পর, কারণ সায়ক নামটা একটু অপ্রচলিত নাম। এই নাম এর আগে মানুষের রাখার সম্ভাবনা কম। তখন নিয়ম ছিল অমিতাভ, অনির্বাণ, শেখর, সুভাষ, শিশির ইত্যাদি। যদিও নজরুল  সঙ্গীতে সায়ক শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। সায়ক মানে তীর বা বাণ। লোকটা কী ওকে বাণবিদ্ধ করতে এসেছে?

সায়ক যদি অল্পবয়স্ক বুদ্ধিমান, ব্যবসায়ী গোছের ছেলে হয়, কৃষ্ণকলি একটু খেলে দেখতে পারে।  সহানুভূতিশীল পুরুষ মানুষ দেখলেই কৃষ্ণকলি দূরে সরে যেতে চায়। এইধরনের পুরুষমানুষদের, জীবনের বিগত কয়েকটি বছরের মধ্যে এত ভালোভাবে চিনে গেছে, ঠিক আমের ভেতর বীচির মতো। তার চাইতে কেজো পুরুষ অনেক ভালো। ব্যবসা, টাকাপয়সা নিয়ে কথা বলবে। এই যেমন জায়গা বিক্রির কথা বলল। এজন্যই একটু আগ্রহ পাচ্ছে কৃষ্ণকলি।

বারান্দায় বসে দেখতে পাচ্ছে সামনের জমিটিকে। বেশ বড়ো জলা জায়গা। শহরের ওপর এই জায়গার অনেক দাম। জায়গাটির মূল মালিক লন্ডনে থাকে বলে এতদিন শুনে আসছে। তিনি বিক্রি করতেই পারেন। তাতে কৃষ্ণকলির কিছু এসে যায় না। সে থাকে পেছনের প্লটে নির্মিত ছোট্ট একটি একতলা বাড়িতে, মা বাবা অনেকদিন আগেই গত হয়েছেন। ছোট দু বোন বিবাহসূত্রে অস্ট্রেলিয়া এবং আবুধাবিতে। এখানে এসে তাদের থাকার আর কোনো সম্ভাবনাই নেই। হয়তো ওরা ভুলেই গেছে, কৃষ্ণকলি ওদের দিদি।

ভোরের আলো আস্তে আস্তে ফুটতে শুরু করেছে। কৃষ্ণকলি হঠাৎ অবাক হয়ে দেখল, সামনের জায়গাটির দক্ষিণ পশ্চিম কোণে এক অদ্ভুত দর্শন গাছ বেড়ে উঠেছে। বেশ লম্বা হয়ে গেছে গাছটি। চারদিকে ডালপালা ছড়িয়েছে, পাতাগুলো সোনালি সবুজ রঙের। চারদিকে আগাছা, এর মধ্যে বলিষ্ঠ একটি গাছ, মনে হচ্ছে গাছটির সর্বাঙ্গ থেকে আলো বেরুচ্ছে, নিজেই নিজেকে পোড়াচ্ছে যেন। কৃষ্ণকলির মনে হলো এ যেন এক আলো গাছ, এতদিন তো গাছটি তার চোখে পড়েনি, খুবই সঙ্গোপনে হঠাৎ করে যেন একটি বিশেষ গাছ হঠাৎ যুবক হয়ে উঠেছে।

ভোরের প্রথম আলোয় দেখেও কৃষ্ণকলি কিছুতেই এই গাছটিকে চিনতে পারল না। মোবাইলে কিছু ছবি তুলল। তারপর আরোও অনেক কিছু উল্টোপাল্টা ভাবতে ভাবতে একসময় বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল কৃষ্ণকলি। ঘুম ভাঙল সাড়ে নটাতেই। নীলু মাসী এতক্ষণে সকালের সব কাজ শেষ করে, ওর জন্য দু কাপ চা ফ্লাক্সে ভরে টেবিলে রেখে গেছে ।

ফ্রেশ হয়ে, আয়েশ করে চা খাচ্ছে কৃষ্ণকলি।

ঘর থেকেই দেখতে পেল গেট খুলে একজন ভদ্রলোক ঢুকছেন, ইনিই সায়ক!  সময়জ্ঞান ভালো লোকটির।

কৃষ্ণকলি দরজায় এসে দাঁড়ালো, পরনে প্লাজো ও কুর্তা। চুলে পনিটেল। চোখে তো কালো ফ্রেমের চশমা আছেই, ইচ্ছে করেই বিন্দুমাত্র বাড়তি কোনো সাজগোজ করেনি কৃষ্ণকলি, আজকাল সাজগোজকে নিজের দুর্বলতা মনে হয়।

-আসুন!

মাথায় চুল আছে এবং ভুঁড়ি নেই। এই দুটো জিনিস পুরুষমানুষের বয়স নির্দেশ করে, সায়ক এদিক দিয়ে ছিমছাম। তাই সায়কের বয়স চল্লিশও হতে পারে অথবা পঞ্চাশ।

-বসুন!

সায়ক বলল, এই বাড়িতে আপনি একাই থাকেন?

-কাজের কথা বলুন! একটু অভদ্রের মতো শোনাল কৃষ্ণকলির গলার স্বর। হোক  গে। এত সুভদ্র হওয়ার ওর কি দরকার!

-হু। সায়ক কিন্তু নর্মালভাবেই বলল, জায়গাটা আমি কিনতে চাইছি।

-তাহলে কিনুন। আমি কি আপনাকে বাধা দিচ্ছি? আমার তো জায়গা জমির  দরকার নেই।

-কিন্তু সমস্যা আছে একটি। এই জায়গাটির প্রথম মালিক লন্ডনে থাকতেন।  তিনি জায়গা বিক্রি করলেন। কিনলেন আরো একজন মানুষ। সেই মানুষটি  জায়গাটি দান করেছেন। তারপর মারা গেছেন। আমি ঘটনাচক্রে এসব বিষয় জেনেছি। আমার পরিকল্পনা অন্য। তাই ভাবলাম জায়গাটি আমি কিনব। কিন্তু আপনি হচ্ছেন গিয়ে এই জায়গাটির বর্তমান মালিক। তাই আপনার কাছে এসেছি।

-আমি!

কৃষ্ণকলির বিস্ময় স্বাভাবিক। তাই সায়ক অবাক হলেন না।

-তিনি কে? যিনি আমার মতো একজন মানুষকে জায়গাটি দিয়েছেন।

-তাঁর নাম নৈঋত। চেনেন?

হঠাৎ সারা পৃথিবীটা কৃষ্ণকলির চোখের সামনে দুলতে লাগল। নৈঋত নেই, মারা গেছে। কই কেউ তো তাকে একবারও জানায়নি! ওর থেকে পাঁচবছরের বড়ো  একজন সুঠাম সুন্দর পুরুষ নৈঋত, যাকে দেখেই  প্রেমে পড়ে গিয়েছিল কৃষ্ণকলি। অবিশ্বাস্য রকম আবেগপ্রবণ, আশ্চর্য ভালোবাসায় ভাসাভাসি

তুমুল একটি বছর কেটে গেল স্বপ্নের মতো, তারপর সেই দুঃসময়, নৈঋত বদলাচ্ছে। ওর ভেতরটা অদ্ভুতরকমভাবে  হিংস্র হয়ে উঠতে লাগল। কৃষ্ণকলিকে একা পেলেই নৈঋত জ্বলে উঠত। সবকিছু চাই বারবার, যতবার খুশি। কৃষ্ণকলির প্রথম প্রেমিক নৈঋত। দীর্ঘদিন নৈঋতের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল কৃষ্ণকলি। তখন সবাই জানত ওরা পরস্পরকে বিয়ে করবে। মা বাবাও ছিলেন, বোনেরা  পড়ছে তখনো, নৈঋত বাড়ির সবার আপন হয়ে উঠেছিল, ভীষণ কেয়ারিং দুর্দান্ত  ছেলে। যার জন্য কৃষ্ণকলিকে হিংসে করত ওর বন্ধুরা।

কিন্তু দিনে দিনে নৈঋতের মধ্যে একটি অস্বাভাবিক ব্যাপার দেখতে পেলো কৃষ্ণকলি, ভয়ঙ্কর রাক্ষসের মতো স্বভাব। কৃষ্ণকলির মনে হতে লাগল ও ফাঁদে পড়ে গেছে একজন হিংস্র মানুষের।

এই বীভৎস ব্যাপারটা যেন হঠাৎ করে নৈঋতের মধ্যে জেগে ওঠে, কৃষ্ণকলিকে কাছে পেলেই। অথচ বাইরে থেকে কিছু বোঝা যেত না। কৃষ্ণকলি গোপনে ওদের  দুজনেরই বন্ধু এবং সাইক্রিয়াটিস্ট নন্দাকে দেখিয়েছিল। নৈঋত সবই বুঝতে পারছিল কী হচ্ছে ওর ভেতরে। এভাবে ওদের বিয়েটা পিছিয়ে যেতে থাকে। সবাই প্রশ্ন করতে করতে অতিষ্ঠ করে তোলে কৃষ্ণকলিকে। মা বাবার চোখেও ছিল বিরক্তি। ওর নিচে আরো দুজন বোন রয়েছে, ওদেরকেও তো বিয়ে দিতে হবে!

নৈঋতের নিয়মিত কাউন্সেলিং চলছিল, সবাইকে লুকিয়ে, সঙ্গে এই সত্যটাও বেরিয়ে এসেছিল এটা ওদের পারিবারিক রোগ। কৃষ্ণকলি তখন বুঝতে পারছিল  সম্পর্কটি স্বার্থপরের মতো ছাড়তে হবে, অসুস্থ মানসিকতার কোনো মানুষের সঙ্গে সারাজীবন কাটানো যায় না। দুবছরেরও বেশি সময় ধরে নৈঋতের প্রত্যেকটি কাউন্সেলিং এবং ঔষধের সঙ্গে থেকে, ওকে মানসিকভাবে সুস্থ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছে কৃষ্ণকলি। আস্তে আস্তে নৈঋত বদলাতে শুরু করে,  স্বাভাবিক ও সুস্থ হচ্ছিল সে। কিন্তু কৃষ্ণকলির বন্ধু নন্দা বলল, কলি, তুই নৈঋতের সঙ্গে জড়াস না, ও ভবিষ্যতে আবারও অসুস্থ হবে, সেই চাপ তুই নিতে পারবি? ও এখন মোটামুটি সুস্থ, নিজেকে সরিয়ে নে এবার।

কৃষ্ণকলিও সকলকে লুকিয়ে এই মানসিক চাপ সহ্য করতে পারছিল না। মুখোমুখি বলার মতো বুকের পাটা ছিল না কৃষ্ণকলির, তাই একদিন রাতের দিকে নৈঋতকে ফোন করে বলে সম্পর্কটি যাতে শেষ হয়ে যায়। যে মানুষের ভেতর রাক্ষসের গোপন আস্তানা, সেখানে সে থাকতে পারবে না।

না, নৈঋত তাকে চাপ দেয়নি, প্রতিবাদও করেনি। চুপ করে ছিল শুধু। একটি অফুরন্ত নিস্তব্ধতা।

তারপর কৃষ্ণকলি চেয়েছিল আবার জীবন নতুন সুতোয় বাঁধা হোক। সেই সুযোগও এসেছিল, তবে সে কথা এখন নয়।

-আপনি আমার কাছে জায়গাটি বিক্রি করে দিন, আমি জানি আপনার অনেক  টাকা দরকার বাকি জীবন কাটানোর জন্য।

সায়কের কথায় কৃষ্ণকলির সম্বিৎ ফিরে এলো, অতীত তো শুধুই অতীত। সত্যিই তো কৃষ্ণকলির এখন অনেক টাকার দরকার। একসময় নৈঋতের জন্য অনেক করেছে, হয়তো এজন্যই নৈঋত এটা তাকে দিয়েছে, তারা তো স্বামী স্ত্রী হবে এই ব্যাপারটা প্রায় নিশ্চিত ছিল।

আর কৃষ্ণকলি প্রায় একা একজন মহিলা, এই জায়গা সে রেখেই বা কী করবে!  লোকটা টাকা দিয়ে কিনতে চাইছে, এটা খুবই ভালো। আশাই করা যায় না, কারণ ও তো জানতই না এই জায়গাটি ওর নামে, কেউ যদি জায়গাটি দখল করে নিতো, তাতেও তার কিছু বলার ছিল না।

তবুও কৃষ্ণকলি মনে মনে ভাবল, খুব সহজে রাজি হওয়া উচিত নয়। দাম নিয়ে ঠকে যেতে পারে। আগে  একজন উকিলের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া ভালো। যা দিনকাল বাপরে বাপ!

-ঠিক আছে। আপনার নম্বর সেইভ করে রাখলাম। আমি পরে জানাব। এবার  আসুন!

-সে কী! চা খাওয়াবেন না?

নীলু মাসী কি দরজার পেছনে দাঁড়িয়ে সব শুনছিল, কারণ চায়ের কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই দেখা গেল নীলু মাসী চা নিয়ে ঘরে ঢুকছে। সহজাত  ভদ্রতাবোধ নীলু মাসীর যথেষ্ট আছে, তবে এক্ষেত্রে কৃষ্ণকলির এটা একটু বাড়াবাড়ি মনে হলো।

-আমি কিছু ছাত্র পড়াই, তারা আসবে এখন। কৃষ্ণকলির কথায় সায়ককে চলে  যেতে বলার ইঙ্গিত।

-দিদিভাই, সত্যিই এই জায়গা তোমার?

-সব শুনেছ?

-হু।

-ঘুণাক্ষরে যদি পাড়ায় রাষ্ট্র করো, তোমাকে আর কাজে রাখব না, শুধু একথাটি  মনে রেখো। তাছাড়া কোন কাগজপত্র আমার কাছে নেই। একজন ছাইপাশ

বলে গেলো, আর আমি সেটা বিশ্বাস করবো, এটা ভেবো না।

কৃষ্ণকলি এভাবেই কথাগুলো নীলু মাসীকে বলল।

সায়কের নাম্বার ফোনে সেভ করতে হবে। কী মনে করে ভোরের দিকে তোলা ছবিগুলো দেখতে ফোন গ্যালারিতে ঢুকল কৃষ্ণকলি।

তারপর দৌড়ে এলো বাইরে, দেখা যাচ্ছে গাছটিকে, মনে হচ্ছে আরোও বড়ো হয়ে গেছে, মজবুত শরীর, শুধু আলোর ভাবটা নেই।

কৃষ্ণকলির মনে হলো এই গাছ সাধারণ নয়, একদম অপরিচিত, অন্তত সে কোনোদিন এরকম গাছ দেখেনি।

গেট খুলে সম্মোহিতের মতো কৃষ্ণকলি গাছটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, আগাছায় ভরে আছে জমিটি, বর্ষাকাল, জল জমে আছে কোথাও কোথাও, তবে গাছটি  উঁচু জায়গায়, আর এখানে জল নেই, কৃষ্ণকলি গাছটির কাছে গিয়ে দাঁড়াল। মসৃণ কাণ্ড, হাত রাখল গাছের শরীরে। সবগুলো ডালপালা যেন হাওয়ার শিরশির করে উঠল, মনে হচ্ছে গাছটি নুয়ে আসছে, কৃষ্ণকলির ওপর।

নৈঋত! নৈঋত!

আচ্ছন্নের মতো কৃষ্ণকলি নিজের ঘরে ফিরে এলো। যদি বা জায়গাটি তার হয়, তবে বিক্রি করতেই হবে সায়কের কাছে, সায়ক তাকে বাধ্য করবে। দখল    করতে পারত, করেনি, যদি পরবর্তীতে আইনি জটিলতায় পড়ে, মনে হয় টাকার অভাব নেই, তাই মোটামুটি একটি দাম দেবে, হয়তো জায়গাটিকে নিয়ে তার বিশাল প্রজেক্ট রয়েছে।

গাছটিকে তখন  লোকজন কেটে ফেলবে। কিন্তু এই গাছ সে এখন আর কাটতে দিতে পারে না। তাকে অপেক্ষা করতে হবে পরবর্তী নির্দেশের, আধিভৌতিক কোনো জগৎ থেকে সেই নির্দেশ আসবে।

কৃষ্ণকলি নৈঋতকে ভীষণ ভয় পেতো, খুব ভালোও বেসেছিল, তাই হয়তো নৈঋত তাকে মুক্তি দিল না। বড়ো বড়ো পাতাগুলো সারাক্ষণ তাকে চোখে চোখে  রাখছে, কৃষ্ণকলি শুধু বুঝতে পারল, ভালোবাসার মৃত্যু হয় না, ভালোবাসা প্রতিশোধ নিতে ভালোবাসে...

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন