কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১১ |
উত্তর পরের সংখ্যায়
নবারুণ ছোটবেলায় কৌশিকদের বাড়ি খুব যেত। কৌশিক অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলে, ওর আলাদা ঘর ছিল। নানারকম খেলার উপকরণে ভর্তি। একটা ছোটদের মাসিক পত্রিকা ওরা নিত, তাতে ‘মজার আসর’ বলে একটা পাতায় অঙ্কের খেলা, জিলিপির মতো পেঁচানো রাস্তা দিয়ে কেমন করে ঘোড়া ঘাস খাবে – এইসব থাকত। সঙ্গে দু-তিনটে ধাঁধা। যেমন কোন প্রাণী সকালে চার, দুপুরে দুই আর সন্ধেবেলা তিন পায়ে চলে, এই ধরনের কিছু। উত্তর থাকত পরের সংখ্যায়। একবার একটা ধাঁধা দিয়েছিল সেটা অনেক চেষ্টা করে একে তাকে জিজ্ঞেস করেও সমাধান হলো না। পরের সংখ্যার সময় হলো কিন্তু শোনা গেল পত্রিকাটি কোনো কারণে তার পরের মাসে বেরোবে। এর মধ্যে কৌশিকের বাবা বদলি হয়ে গেলেন, ওরা অন্য জায়গায় চলে গেল। উত্তরটা আর জানা হয়ে ওঠেনি।
নবারুণের এখন তেতাল্লিশ। ছাব্বিশ-সাতাশে সে প্রেমে পড়েছিল। গভীর প্রেম। লতিকার সঙ্গে। তবে সেই পুরনো কাহিনী – নবারুণের অস্থায়ী নড়বড়ে চাকরি। লতিকার দুম করে বিয়ে হয়ে গেল অনেক দূরে। তিন-চার বছরে চাকরি পাকা হতে মা-বাবার চাপাচাপিতে নবারুণের বিয়ে হলো রানীর সঙ্গে। রানী যে এত সন্দেহ-বাতিক কে জানতো? লতিকার খবর সে বার করে ফেলতেই সংসারে নামল ভয়ানক অশান্তি। বছর দুইএর ভেতর তারা আলাদা হয়ে গেল। আদালতে অবশ্য বিচ্ছেদ হয়নি আর কেন কে জানে নবারুণের মন লতিকাকে ছেড়ে রানীকেই চাইত যেন। ভাবতো রানী তাকে এত বেশি ভালোবাসত যে তার লতিকাকে সহ্য হতো না। নবারুণদের কোম্পানী হঠাৎ একটা বিরাট বড় অর্ডার পেল এবং রাতারাতি নবারুণের আশাতীত উন্নতি হলো চাকরিতে। মাঝেসাঝেই বিদেশে থাকতে হয়। বিদেশে থাকতেই খবর পেলো বাবার শরীর খুব খারাপ। তড়িঘড়ি গিয়েও শেষ দেখা হলো না। তবে হোয়াটসঅ্যাপে রানীকে দেখা গেল। বাবা মারা যাওয়ার খবরে রানী খুব দুঃখ পেয়েছে, নবারুণের সঙ্গে দেখা করতে চায়। নবারুণের মন একটু দুলে উঠেছিল, সংসার কি জোড়া লাগবে! নাঃ, তা নয়। রানী বিয়ে করবে, তাই নিঃশর্ত ডিভোর্স চায়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে একটা খবরে নবারুণের মনটা নরম হয়ে পড়ল। লতিকার স্বামী অসুস্থ ছিলেন, মারা গেছেন। লতিকার দুই মেয়ে। প্রছন্ন ইঙ্গিত – নবারুণ চাইলে তারা তাদের ভালোবাসার ঘর আবার বাঁধতে পারে। নবারুণের মনে নানা প্রশ্ন – তা কি আর হয়! সাহস করে এগিয়ে যাবে? লতিকা তাহলে এখনো তাকে ভালবাসে? প্রতিদানে যদি সে মাইনে থেকে বাঁচিয়ে মাসে হাজার কুড়ি লতিকাকে পাঠায়? পুরনো বাড়িতে ভাইয়ের দেখাশোনায় মা ভালই ছিলেন। আজই ভাই লিখল মাসে অন্তত হাজার পঁচিশ না পাঠালে মাকে রাখতে পারবে না। জিনিসপত্রের যা দাম!
দূরদেশের সমুদ্রতীরে সন্ধেবেলায় নবারুণ একা বসে জীবনের আজব চলচ্চিত্রের কথা ভাবছিল। এর মধ্যে কোনো কার্য-কারণ আছে, না বিনাকারণেই সব ঘটে যাচ্ছে? এই ধাঁধার উত্তর হয়তো পরের সংখ্যায়। কিন্তু পরের সংখ্যা কবে পাওয়া যাবে? না কি পরের সে সংখ্যা কোনোদিনই আর বের হয় না!
ভাল লাগল - বিশেষ করে suspense এর কাঠামো ।
উত্তরমুছুন