কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২১

সোনালি বেগম

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৫


করোনাকালে পুষ্করমেলা

জব ব্রহ্ম সরোবর মেহজারোঁ কী সংখ্যা মেহো রহে সামুহিক স্নান সে করোনা কা খতরা নহীবঢ় রহা হ্যায়, তো উঁটোঁ আউর গধোঁ কী বিক্রী সে এহ ক্যায়সে বঢ় জায়েগা?’ পুষ্করমেলা প্রাঙ্গণে এইসব কথোপকথন হিন্দিতে চলছে।

ভারতের নানান যাযাবর জাতির মানুষজন রাজস্থানের বিশ্বপ্রসিদ্ধ পুষ্করমেলার জন্য সারাটা বছর অপেক্ষা করে থাকে। ছত্রিশগড় থেকে দন্ডচগ্গা সম্প্রদায় এসেছে। এরা দড়ির উপর হেঁটে বিভিন্ন কসরত দেখাচ্ছে। শংকর এমনই একজন দক্ষ দড়াবাজ। আর ঐ যে বস্তর থেকে বপোরী সম্প্রদায়, যাদের আমরা বঞ্জার বলি। দুর্গা সেই বঞ্জার মেয়েটি ঘুরে ঘুরে নাচ দেখাচ্ছে। তার পোশাকের চুমকির কিরণ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। গুজরাটের দেবী-পূজক, পশ্চিমবঙ্গের মুসলিধর সম্প্রদায়ের লোকজন ভিড় করেছে। আরতি-র পর-পরই মেলা শুরু হয়ে গেল। উটের দৌড় প্রতিযোগিতা, বেশ হৈ চৈ করে উটের শোভাযাত্রায় চারপাশ রঙিন হয়ে উঠছে। বিভিন্ন যাযাবর সম্প্রদায় নিজের নিজের পশু নিয়ে বরাবরের মতো পৌঁছেছে। রায়কা জনজাতি নিজেদের উট নিয়ে, বঞ্জার নিজেদের গাধা নিয়ে এসেছে। আবার সাঠিয়া সম্প্রদায় গরু এবং বাগরী সম্প্রদায় ছাগল-ভেড়া নিয়ে পশুমেলার শোভা বাড়াচ্ছে।

‘এ বছর আমাদের পশু নিয়ে মেলায় আসা হল না’ শংকর আপশোস করছে

‘যদিও চোখের সামনে গত বছরগুলোর ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে ––– উট, ছাগল,  গরু...’ দুর্গা আশ্বাস দেয়

‘করোনা চলে গেলে আবার হবে’ শংকর নিজেকেই নিজে আশ্বস্ত করে

‘তুই তাহলে রাজি আছিস তো, দুর্গা!’ শংকর উদগ্রীব হয়ে দুর্গার কাছে সরে আসে

‘শংকর, এবার আমাদের আটা-সাটা করে নে’ দুর্গা মত দেয়।

পুষ্করে এদেশের যাযাবর সম্প্রদায়ের পঞ্চায়েত বসে। একে ‘বাহরওয়ালী’ বলে। এখানে ‘আটা-সাটা’-ও হয়। ‘আটা-সাটা’ অর্থাৎ বিভিন্ন যাযাবর মহিলা-পুরুষ এনগেজমেন্ট, বিবাহের প্রস্তাব রাখে।

এই দুহাজার কুড়ি সালে করোনাকালে পুষ্করে পশু-ব্যবসা হল না, মেলা হল না। দুর্গা আর শংকর স্নান সারে। কালবেলিয়া মহিলারা বীন-এর ধুন শুনে নাচছে। দুর্গা আর শংকরও নাচতে থাকে। সূর্যাস্তের মোহিনী আলোয় বহুরূপী আর কাঠপুতুলনাচে স্বতঃস্ফূর্ত পুষ্কর জেগে উঠতে থাকে ক্রমশ।         


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন