প্রতিবেশী সাহিত্য
সবিতা সিংহ’র কবিতা
(অনুবাদ : মিতা দাশ)
লেখক পরিচিতিঃ জন্ম - ৫ ফেব্রূয়ারি ১৯৬২, আরা, বিহার। শিক্ষা - রাজনীতি শাস্ত্রে এম এ, পি এইচ ডি (মন্ট্রিয়ল কানাডা)। দিল্লীতে অধ্যাপনা্র কাজে নিযুক্ত আছেন। তাঁর রচিত ‘আপনে জাইসা জীবন’ ২০০১ সালে হিন্দি একাডেমি থেকে পুরস্কৃত হয়েছে। এছাড়াও তাঁর লেখা ‘নিন্দ থী ওর রাত’ ২০০৫ সালে রজা সন্মানলাভ করেছে। ‘রোভিং টুগেদার’ (দ্বিভাষিক সংকলন) ২০০৮ সালে জনকবি মুকুট বিহারি সরোজ সন্মানে সম্মানিত হয়েছে।
ঘুমঘোরে কান্না
আমি খুশি
আমার সঙ্গে পথে আমার স্বপ্ন ও চলে
সে আমার খুশিতে খুশি
ও আমার হতাশায়
আমার ক্লান্তিতে অনবরত চিন্তিত
ওরা আমায় বলে দেয় সব নক্ষত্রের
ঘুরন্ত আলোর রহস্য
ওরা বুঝিয়ে দেয় পৃথিবীতে জন্মাবার দায়িত্ব
আমি খুশি
আমি বুঝতেও পারি সব কিছু
আর এও বুঝতে পারি
এ স্বপ্ন আমার
সত্য থেকেও বেশি সুন্দর
সে সর্বক্ষণ নারীদের সঙ্গেই থাকে,
তাই আমি বিশ্বাস করি ও বুঝি
কেন এতো রহস্যময়ী এই পৃথিবী
আর কেন সে নারীদের মত অসহায়
বারবার করতে হয় সমর্পণ বিষাক্ত ক্রূরতা
কেন পারে না থামিয়ে দিতে ওদের রক্তের চলাচল
ও বিশ্বের সব ক্রিয়া প্রক্রিয়া
কেন অন্যের মতন ঘুমেও
ঘুমোয় না নারীরা
ওরা কাঁদে
আর রাতের শেষ প্রহরে
ঘুমের ঘোরে
ঘুমের বদলে ওদের জন্য
বাকি থাকে কান্না।
নারীরা বসে বিলাপ করছে
এক সঙ্গে জটলা বেঁধে
কাঁদছে ওরা
বিলাপ করছে নারীরা
শাপ দিচ্ছে গোটা ইতিহাসকে
সেই ইতিহাসে ওদের জন্য ছিল
অন্ধকার মরুভূমি
ওরা জটলা বেঁধে মনে করছে
নিজেদের সেই মহান পরম্পরা
তখন ওরা ছিল স্বাধীন
ছিল নিজস্ব স্বাভিমান
সম্প্রভূতাও ছিল ছড়ানো ছিটানো
ও আকাশের মত করুণাময় তরলতা
আচ্ছাদিত করে দিল তপ্ত ভুতল
অন্নপূর্ণা ওরা, কোনো মানুষকে উপেক্ষা করতো না
ওরা ডুবে রয়েছে বিস্মৃত স্মৃতিতে
নিজের অন্তঃস্থল নিংড়ে নিজের রক্ত দিয়ে
রাঙায় পৃথিবী
যে পৃথিবীতে গাঁথা আছে এমন
অনেক গল্প
আর ওরাই এখন স্তব্ধ হয়ে
মুখ বুজে শোনে ওদের বিলাপ।
মুক্তি
সময়ের রিক্ত চোখে
সাঁতার কাটছে শতাব্দীরা
আর ওদেরই সঙ্গে সাঁতার কাটছে সে
কর্দমাক্ত ধুলিমলিন ছায়ার মত
সে রোজ রোজ প্রশ্ন করে
কী করে হবে মুক্তি!
মেয়েরা ভালোবাসে
আজও মেয়েরা কত ভালোবাসে বাবাকে
সেই বাবা কিন্ত জীবনের মাঝপথে ওদের
করে দেয় ঘরছাড়া
ঠেলে দেয় নির্ধনতার অন্ধকারে
কত আজব কথা তাই না!
যার সম্মুখে নত থাকত সবচেয়ে বেশি ঘাড়
সেই কিন্ত কেটে নামিয়ে রাখে মাথা।
একটা সত্য কবিতা লিখবো বলে
সে নিজের মাংসের ঝুড়ি
মাথায় তুলে হাঁটছে
আর সেও যে মার খাওয়ার পর
খুলে যায় ওরা অন্ধকারের দিকে
যেন একটি দরজা
আর যেন চুরি করে নিয়ে যায়
আমার সব রাত্রি
আমার সব বিম্বগুলিও
রাত্রির মত ঝরে যায়
জানি না সবাই নিজের নিজের পথ বেছে
কোথায় গিয়ে পৌঁছবে
কোন সীমানায়
কবিতার কোন গলিপথে হারিয়ে যাওয়ার জন্য
বা বেরিয়ে আসার জন্য পথ খুঁজছে মাঠের দিকে
যেদিকে শুধু হাওয়া বইছে আর কোনোদিকে নয়
দেখি আজ বাদে আমি কোথায় গিয়ে থামবো
একটি প্রচন্ড বেগের মত সব ছেড়ে দিয়ে
যন্ত্রণা প্রেম ও ঠাঁই
কোথায় থামবো ঠিক
একটি পতাকার মত
ইতিহাস বলে
নারীরা কক্ষনো লেখেনি
নিজের আত্মার যাত্রার বৃত্তান্ত
ওরা শুধু ভোগ করেছে মহাদুঃখ
তারপর ওরাই পেরেছে
তারাদেরকে স্বপ্নে পরিণত করতে
দিন ও রাতকে ও সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে
উৎসর্গের শিলা হয়ে থাকলো
আমি দেখবো ওদের যারা নিজেরদের ভাগ্যের দুঃখকে
অন্যের দুঃখ মনে করে মার খেয়েছে যেন ওরাই
জানতে পারবে অন্ধকারের রহস্য আর
ওরাই যারা নিয়ে গিয়েছিলো আমার
রাত্রি থেকে এক চিলতে রাত্রি
যেন কবিতা লেখা সম্ভব হোক
ওরা কখন কীভাবে ফিরবে নিজেদের দেহে
সত্যি সত্যি সম্মুখে
নিজেরদের আত্মাকে কী করে করবে ওরা শান্ত
কতদিন ওরা যন্ত্রণা ভোগ করেছে
এখন অব্দি পবিত্র স্বীকারোক্তির জন্য
একটা সত্য কবিতার ইচ্ছে ছাড়াই
কেউ ওদের বিচলিত করতে পারেনি।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন