কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২১

দেবলীনা চক্রবর্তী

 

কবিতার কালিমাটি ১০৫


সুসুপ্তি'তে

 

(১)

 

বসন্তের বিকেলগুলো যে ঝরাফুলের মালা গাঁথতে শুরু করে সে মালা গাঁথা শেষ হয় রাত হতে হতে।

তারপর মালা থেকে এক একটা ফুল ঝরে পড়ে এক একটা গল্প হয়ে আর সেই গল্প শুনতে শুনতে রাতের আকাশ ক্রমশ ফর্সা হয়ে ওঠে। এমন সোনা আলোর ফুসমন্তরে গা এলিয়ে ভোরাই সুর পালকে বেঁধে পাখিগুলো উড়ে যায় একঝাঁক উজ্জ্বল স্পর্শ মেখে, ভীষণ মেঘেও তারা অবাধে রামধনু আঁকে।

আর বাকি নীড় ভাঙ্গা পাখিগুলোও বুকে দগদগে ঘা নিয়েও বেঁচে থাকার গান গেয়ে ওঠে আর উড়ে যায় নতুন স্বন্ধানে।

আমি প্রতিদিন ঘুম ভেঙে দেখি কিছু ঝরা ফুল পরে আছে আমার পায়ের কাছে , ওরা টুকরো গল্প শোনাতে এসে হতাশায় ছিঁড়ে যায়, সে মর্মর গল্প  শোনা আজও বাকি আছে।

 

এভাবেই সপ্ত সুরে বাঁধা আরোহ-অবরোহ জীবন পার হতে থাকে, ছেঁড়া ফুল ও পাতার স্তূপ জমা হতে থাকে আর বসন্ত পার হলে সে স্তূপ ভাসিয়ে দিয়ে আসি সেই নদীর জলে - যে নদী আমায় সুশ্রুশার জল দেয় সারা বছর জুড়ে।

 

(২)

 

বহুদিন পর আমি আমার সেই হারানো সুর ফিরে পেলাম, মন বিতানে হাঁটতে- হাঁটতে কাল রাতে চলে গেছিলাম অনেক দূর, মনের বনে সবুজ মেখে চলেছিলাম আপন খেয়ালে।

হঠাৎ দেখি অনাদরে  অবজ্ঞায় পরে আছে ভাঙ্গা সুর আহত হয়ে।

উপশম হয়ে কাছে গিয়ে তুলে নিলাম দুহাতের সোহাগে আদরে, ছলছল অভিমানে সে কুকড়ে গেলো আরো

যেন মনে হলো কাঁপা ঠোঁটে বলতে চাইছে স্পর্শের আরোগ্য তার কামনা নয় তার উপশম একমাত্র স্বরগ্রামে অস্তিত্বে।

তার চাপাকান্না বুকে নিয়ে ফিরে এলাম আমার চেনা জগতে, চোখ মেলে দেখি এখন যে গান উন্মুখ আমার ঠোঁটে সেই আমার হারিয়ে যাওয়া সুর, যে সারা রাত আমার গানে সঙ্গত করেছে জোৎস্নার সেতারে।

 

ছেঁড়াপাতা

 

স্রোত ভেঙে এসো, বাঁধ ভাঙ্গি -

প্রবল উচ্ছ্বাসে গড়ি, ভালোবাসার নগরী।

 

অতঃপর তার ফেরার পালা!

জট পাকানো নিস্তব্ধতা ও কুয়াশা কুয়াশা নির্জনতা নিয়ে ফিরে আসবে বলে সে আগাম বার্তা পাঠিয়েছে দক্ষিণ হওয়ায় আলতো টোকাতেই খুলে যাবে তার প্রবেশদ্বার আর কাঠের দরজার গায়ের নক্সা আঁকা যত কল্কা মরশুমী ফুল হয়ে ফুটে উঠে রং ঝরাবে আবার!

হেমন্ত এখন তার উদার স্বভাবে মুগা চাদর বিছিয়ে দিয়েছে আকাশের শিয়রে, বাদামী রোদ শিউলি আর রঙ্গনের কোলে আদুরে দোল খেয়ে লুকিয়ে পরে  হেলানো বারান্দার পাশ ঘেঁষে। শুখা হাওয়ায় এখনই কেমন কঠোরতা, শরীরের পরতে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমাচ্ছে কিন্তু আড়ালে, অত লুকোচুরি কিসের তা বুঝি না তবু মধ্য দুপুরের ধুলোবালি আর ঝরা পাতার হাত ধরে হ্যাঁচকা টানে কয়েক মাইল ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটিয়ে নিয়ে যাওয়ার লাগাম ছাড়া আবেগ দেখে লোভ হয়! মনে পড়ে সেই ছোটবেলার লুকোচুরি খেলা ধরা না পড়ার কি চতুর কৌশল আর ধরা পড়ার পর নিচু হয়ে দম নিয়ে নেওয়া আর সাথে খুনসুটি মজা!

হেমন্তের এই আলুথালু আবেগ আর দুরন্ত হিমেলপনা গায়ে মেখে আসন্ন শীত ভালোবাসাদের সাজিয়ে রাখবো সযত্নে চিনা মাটির রঙিন পাত্রে যাতে মিহি উষ্ণতা ও আবেশ ছড়িয়ে রোজ আরোও একটু বেশি ভালোবাসতে পারি। এই ভালোবাসার শিকড় যত প্রাণের গভীরে গিয়ে সরস হবে ততই যেন নিবিড় হবো, সজোরে আঁকড়ে ধরবো এ মাটি...

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন