সমকালীন ছোটগল্প |
গতি
চোখ বুজে গুনতে শুরু করলাম। ১ থেকে
৬০ হয়ে আরো ৬০বার এভাবে টানা ২৪ বার, করতে করতে ৮৬৪০০। আবার ১ থেকে শুরু করব, নাকি ৮৬৪০১ চালিয়ে যাব বুঝতে
না পেরে ভাবলাম ১ থেকে ৪৯৯ গুনতে গুনতে সূর্যে চলে যাই। এখানেও করোনা, ওখানেও।
গায়ে বড়জোর ছ্যাঁকা লাগবে। ওখানে গিয়ে পৃথিবীকে নাক বরাবর রেখে যদি বুধ শুক্র
পৃথিবী মঙ্গল বেস্পতি শনি ইউরেনাস নেপচুন হয়ে প্লুটো অব্দি লাফ মারতে পারি,
তখন রাম দুই তিন চার করতে করতে আমার আবার ১৯৬৮০ গোনা হয়ে যাবে। শুরুও
করলাম। কিন্তু পৃথিবীর টান ফুটো করে ওঠার আগেই আমাকে টেনে হিঁচড়ে নামানো হলো।
চলতে চলতে ওজন বেড়ে যাবে, এই অছিলায় আমার ত্বরণ শূন্য করা হলো। বলা হলো, পুরো থামো। একসাথে সমান্তরাল রেখায় দুজনকে আসতে দেখেছিলাম, দুজনেই ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেল। চুপচাপ দেখলাম। তারপর যতজন কেউনয় আছে, সবাই একসঙ্গে আমাকে ঢেউ গুনতে বলল। আমার পায়ের নিচ থেকে যতদূর অব্দি চোখ যায়, ধরাযাক পুরো চাদর জুড়ে ঢেউ খেলছে। কোয়াসি ইউক্লিড। সেই ঢেউ।
এবার খুব রাগ হল। বললাম, গুনব না। যেভাবে যাচ্ছিলাম, সেভাবেই যাব। সব কেউনয় মুচকি হাসল। বলল, যাও। কিন্তু মনে রেখো তোমার ওজন শূন্য নয়। আমি একটা ডোন্ট কেয়ার শ্রাগ করে আবার লাফ মারলাম।
পৃথিবীর টান কাটিয়ে মহাকাশে উঠে আলোর কাছাকাছি গতি নিয়ে শুরু করব, ত্বরণ চাই না। তাহলে তো আর কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না! নিউটনদাদু বলে গেছে। হেঁইয়ো বলে লাফ মারলাম। এবার গুনতে শুরু করব। এক থেকে। কিন্তু হঠাৎ যেন বেশ কষ্ট হচ্ছে। আমার ওজন এত বাড়ল কী করে? চলতেই পারছি না। এই ঘষাহীন রোধহীন ধাক্কাহীন শূন্যে আমঙ্কী করে এত ওজনদার হয়ে গেলাম? তাহলে কি দাদু ভুল বলেছিল?
কালোর সমুদ্রে দাঁড়িয়ে পড়েছি। আবারো সমস্যা। কদ্দূর এসেছি বুঝতে পারছি না। কাকে জিজ্ঞেস করব, আমার সঙ্গে যে এই অব্দি এসেছে তাকে, নাকি পৃথিবীর ছাদে দাঁড়িয়ে যে এখনো আমায় দেখছে? ঘড়িটাও আনতে ভুলে গেছি। কতটা গুনলাম, মনে পড়ছে না। পৃথিবীর লোকটা কি বলতে পারবে আমি কোন্ সময়ে রয়েছি? আমার মনে প্রশ্নেরা বাড়ছে। ইথারের বাড়তে থাকা জমাট কালোর মত। এদের মত আমিও তাহলে আজ আপেক্ষিক? আমাকে এখন কে এনার্জি দেবে? তখনি মনে পড়ল, আজ সকালের ডাকে পাওয়া দু’লাইন চিঠিটার কথা। ‘রিলেটিভিটি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স মেলাতে পারো? আইনস্টাইন খুড়ো তো পারেনি’। তারপর গুচ্ছের জিভ বের করা হাসিমুখের ইমোজি।
সেই অন্ধকারের মাঝে এবার একে একে ফুটে উঠতে শুরু করল সূর্য গ্রহ তারারা। মনে হচ্ছে, সবার আলোর একটা ফ্রিকোয়েন্সি আছে, একটা গান। ‘বিস্ময় তাই জাগে, জাগে আমার গান’ – মহাবিশ্বে এখন যেন এটাই বারবার শুনতে পাচ্ছি। বুঝতে পারছি, আমার টানে লেন্সিং হবে না। আমি স্পেস-টাইম বাঁকাতে পারব না। কোয়ান্টাম ফিল্ড বাড়িয়ে ছোট ছোট প্যাকেটে আমার শক্তি ইচ্ছেমত বাড়াতে পারব না। কেউনয়-রা অনেক কিছুই জানে।
চোখ খুলে ফিরে এসেছি। আমার শেষ সম্বল - রোজ একটু একটু করে গতি জমাচ্ছি। জানি আমার ওজন বেশি নয়, কিন্তু আমি ওজনশূন্য নই। গ্র্যাভিটন হতেও চাই না। কারণ ও আমাকে আটকাতে পারবে না। সময় গুনছি, টিকটক টিকটক থামিয়ে যেদিন আমি শক্তি হয়ে যাব...
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন