কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৭ |
পাজল্ বক্স
ছোটবেলায় যেখানে সাদা প্লাস্টার অব প্যারিসের ঘুলঘুলি ছিলো এখন ঠিক মাঝ উঠোন রোদ এসে পৌঁছোলে সেখানে ডার্ক উইন্ডোতে ঠোকরায় সরু ঠোঁটের সাদাকালো পাখি। ভারি চিকন আর মধুমাখা ওর কিচমিচ। একাই আসে ভোরে। প্রতিবিম্ব সাথীর সঙ্গে সকালের সাদর সম্ভাষণ চলতে থাকে ঠক ঠক আওয়াজ তুলে। বলতে গেলে নাম না জানা ওই পাখির ঠকঠকানিতেই ঘুম ভাঙে। ওই পাখিটার মতো সায়ন্তনীও আসবে, ঠিক আসবে, আগেও যেমন এসেছে।
গত ছ’মাসে সায়ন্তনীর জন্য অপেক্ষা আর প্রত্যাশা আগের চেয়ে বেড়ে গেছে বহুগুণ। গত ছ’মাসের আগের ছ’মাসের মধ্যে তিনবার দেখা, কথা, রমণ সবই হয়েছে বিগত আড়াই বছর ধরে যে অভ্যাস তৈরি হয়ে উঠেছে ক্রমশ। অনেকটা আলিয়া ভাটের মতো দেখতে। বরং ওর চেয়েও বেশি চনমনে, আরো গভীর পাহাড়ি ঝোরা। এই কয়েকটা মাসের মধ্যে কী হয়েছে ওর? কোনো ঝগড়া তর্ক অসহমত কিছুই না! কিন্তু তেমন করে আগের মতো গত এই ছ’মাসে সায়ন্তনীর চনমনে ভাবটা নিস্তেজ হয়ে এসেছে। কথাবার্তায় আর আগের সেই উচ্ছ্বাসটাও নেই।
কেন কী কারণে এতটা ডিপ্রেসড্ হল যে এয়ারপোর্ট থেকে একেবারে এসকর্ট করে সায়ন্তনীকে নিয়ে গেল ওর শ্বশুরবাড়িতে! গত ছ’মাসের আগের ছ’মাসের মধ্যে অবধি তিনবার বাবি মামের কাছে তিন চারদিন থেকে তারপর শ্বশুরবাড়ি পৌঁছে যাবে বলে ওর বরকে জানিয়েছে। গত ছ’মাসের আগের ছ’মাসের মধ্যে তিনবারই সায়ন্তনী শর্ট ট্যুর করে ফিরে গেছে। গত ছ’মাসের আগে পর্যন্ত এই পাখি ওড়ার অন্যথা হয়নি। ভুল নাম্বারে ফোন করে সায়ন্তনী, তারপর সরি জানাতে গিয়ে সেই যে জড়িয়ে গেলো আষ্টেপৃষ্ঠে, ব্যাস।
এরোপ্লেনের শব্দ শুনলেই বাইরে চলে আসি আর ভাবি, যদি এই প্লেনে সায়ন্তনী আসে তাহলে হয়তো প্লেন থেকে নেমেই ফোন করবে, হাজার সাতেক অভিযোগ, দেখা হলে একগাদা লোকের সামনে গাঢ় চুমু... সমস্ত মুখ বুক ভরে ওঠে সায়ন্তনী স্বাদে। সব কি ভুলে গেছে সায়ন্তনী এই ছ’মাসের মধ্যে! পারা যায় এত দ্রুত! গত এই ছ’মাসের মধ্যে জীবনে প্রথম দেখলাম একটা প্লেনেরও আকাশে ওড়া নিষেধ।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন