কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ১৪ আগস্ট, ২০২০

চিরশ্রী দেবনাথ

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৭


ব্যালকনি
 


শঙ্খবলাকা, এরকমই
  অদ্ভুত নাম, টাইটেল উড়িয়ে দিয়েছে মেয়েটি। অফিসের রেজিস্ট্রারে নাম শঙ্খবলাকা চৌধুরী। কিন্তু এমনিতে শুধুমাত্র শঙ্খবলাকা। বলাকার গায়ের রঙ কালচে। পেশীবহুল মাস্তান টাইপের চেহারা। পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি  লম্বা। ঝকঝকে দাঁত এবং  অবাধ্য চুলরাশি। ছোট চোখ, ভারী চশমা।  গলার স্বর ছেলেদের মতো। ন্যাকামি নেই। সমঝে চলে সবাই। কাজকর্মে সিরিয়াস। অন্যদের থেকে কাজ আদায় করে নিতে পারে। সম্প্রতি শঙ্খবলাকা প্রেমে পড়েছে। প্রেমিকের গ্রোসারি সপ। ব্যবসায়ী লোক। সেই ভদ্রলোকের দোকানের সামনে শঙ্খবলাকার স্ক্রুটি উল্টে গিয়েছিল। পা মচকে গেলো। ভদ্রলোক ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। সেদিনই পরিচয়। একমাস বেডরেস্ট ছিল বলাকার। মাঝে মাঝেই লোকটি আসত। বেশ লম্বাই, রোগা।  ফর্সা, চশমা পরে। দেখলে মনে হয় মফঃস্বলের স্কুলের ইতিহাসের মাস্টারমশাই। জানা গেলো তিনি বিয়ে পাশ করেছিলেন একদা। চাকরির কোন সম্ভাবনা নেই দেখে বাবা দোকান খুলে দিয়েছেন। ওর মা বাবাও এসে একদিন বলাকাকে দেখে গেলেন। লোকটির নাম আনন্দময়। সেই আনন্দের মা, যাবার সময় খুব নাক  সিঁটকে গেলেন। এইধরনের পেশীবহুল মেয়ে তাঁর পছন্দ নয় বুঝিয়ে দিলেন। বলাকা অবশ্য প্রথমে এসব বোঝেনি যে, বিয়ের কথা হচ্ছে। তার বাবা নিরাসক্ত মানুষ, মেয়ে এম বি এ করে মোটামুটি বেতনের একটি চাকরি পেয়ে যাওয়ায় তিনি খুশি। মা ধর্মকর্ম নিয়ে থাকেন, ভাবখানা এমন, মেয়ে স্বয়ম্বরা হবে। কিন্তু তাদের প্রেমটা জাস্ট গড়িয়ে গেলো ঝর্ণার মতো। পা ঠিক হওয়ার পর বলাকা আর আনন্দময় একদিন ঘুরতে বেরিয়েছে। বলাকা বলল, যেখানে চাকরি করছি  সেখানে আমার ম্যানেজার হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই ম্যানেজার হই, তারপর বিয়েটা হোক। আনন্দময় বলল, বিয়ের সঙ্গে ম্যানেজারির কী সম্পর্ক? বলাকা  অবাক হয়ে ভাবল, সত্যিই তো! বলল, কিন্তু তোমার বাড়িতে মত নেই যে!

আনন্দময় বলল, তার সঙ্গে আমাদের বিয়ের কী সম্পর্ক? বলাকা অবাক হয়ে ভাবল, তাই তো! 

ম্যানেজার হওয়ার আগে এবং আনন্দময়ের বাড়ির সম্পূর্ণ অমতে শঙ্খবলাকা এবং আনন্দময় বিয়ে করে ফেলল। আনন্দময় বুঝেছিল, আর কিছু  না হলেও  বিয়ের পর একটা ব্যক্তিগত ঘর এবং সিঁড়ি দরকার, সঙ্গে একটি নিভৃত ব্যালকনি। সেসব সে ব্যবস্থা করে ফেলেছিল নিজের বাড়ির ছাদে। অসন্তোষ হলেও আপত্তি হয়নি। কয়েকদিন পর যারা বিয়েতে আসেননি, সেরকম কিছু  আত্মীয়স্বজন এলেন, প্রচুর মিষ্টি-টিষ্টি খেয়ে যাবার সময় হাসতে হাসতে আনন্দময়ের মাকে বলল, টাকার জন্য এমন বউ আনলেন মামীমা?

ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে রাতের বেলা শঙ্খবলাকা বলল, আমাকে কি টাকার জন্য বিয়ে করেছিলে আনন্দময়? এটার উত্তর দেবার আগেই হঠাৎ আনন্দময়ের কী  যেন হলো, ব্যালকনিতে গ্রীল লাগানো হয়নি তখনো, উপুড় হয়ে চোখের পলকে উল্টে যাচ্ছিল সে নীচের দিকে। শঙ্খবলাকার শরীরে প্রচুর শক্তি। দুটো ক্ষিপ্র   পেশীবহুল হাত জাপটে ধরে তুলে আনল আনন্দময়কে ঘরের ভেতরে। ভয়, বিস্ময় নিয়ে বলাকা জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছিল বলো তো? আনন্দময় হাসতে হাসতে বলল, এজন্যই বিয়েটা করেছিলাম। বুঝলে...     

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন