কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৯

মৌসুমী মণ্ডল দেবনাথ




আলোয় ফেরা

রাতের ভীষণ কাছে পৌঁছে সে জানায় প্রেম ছিলো না আজ সন্ধ্যের আলোয়।
তখন শীতঘুম জমে ছিলো শরীরের আনাচে কানাচে। 
তুমি এখন রেট্রোস্পেকটিভ সিনেমা বানাচ্ছো রূপোর আলোয়।
তবুও জানি আর কোনও দিন তুমি ভোরের চোখে চোখ রাখতে পারবে না।
হাজার বছর জঙ্গলে ঘুরে বেড়ালেও আর মহুয়ার মধুস্বাদ মনে থাকবে না।
তুমি যতোই ভ্রমণপিপাসু মুখোশ পরে থাকো,
পিঠের রুকস্যাক ব্যাগের ফাঁক থেকে বেরিয়ে পড়েছে শিকারী মুখোশ। 
একদিন আমিও ভুলে যাই তুমি দেখাতে চেয়েছিলে ঈদের আলো,
নক্ষত্র বোনা আকাশ।
নিঃস্ব হতে হতে আমিও এখন জানি চুম্বনের জন্যে লাগে শুধু এক পশলা বৃষ্টি। 
কোনও ঈশ্বরের উপস্থিতির দরকার নেই।


যুদ্ধ নয় শান্তি চাই

আমারও এক পুরুষ চাই। 
আমি একটি দীর্ঘ কবিতার পংক্তি সাজাবো শুধু তারই জন্যে। 
লক্ষ লক্ষ বছর ধরে জমিয়ে রাখা বিদ্রোহী মেঘ
তাকে ছুঁয়ে অঝোর বৃষ্টি হবে।
সে যেন এক মানুষের মতো মানুষ,
স্নিগ্ধ কুয়াশা কিংবা কালবৈশাখী
একই বুকে পুষে রাখে।

কারা যেন শিশুপার্কে যুদ্ধের ট্রেঞ্চ কাটছে,
ফুলের বাহু ভেঙে দিতে উদ্যত। 
নীল সরিয়ে আকাশটাকে বারুদে ধূসর করতে চায়।

আমার পুরুষ একটি দৃপ্ত শান্তির কবিতা সাজাবে।
পাখির বাসায় আন্তনীয় গ্রামসির প্রিজন নোট গুছিয়ে রাখবে।
যুদ্ধ দ্বিপ্রহরকে বৃষ্টিতে ধুয়ে ধুয়ে
লিখবে শিশু প্রহরের কথা।
আরশীতে লুকোবে সবুজ মাঠের ছায়া,
আত্রেয়ীর ঢেউ,
স্কুলপথে ছড়িয়ে দেবে কৃষ্ণচূড়ার আভা।
সে হবে আমার পুরুষ। 
যুদ্ধহীন পৃথিবীর


সবুজপত্র

ছোট সেই শহর, 
কবে হারিয়ে গেছে তার প্রাচীন আতস কাচ।
কখনও তুমি বসন্ত ছিলে।
জলপাই রঙ শাড়িতে পলাশ ছাপ,
শরীর জড়িয়ে তিরতির আমলকি বন।
তোমার গায়ের ভিতরে যে পদ্মের ঘুম, 
সে ঘুমের ঘরে হিমফুলের রেণু ছিলো।
এখন এ শহরের রাস্তারা আর গান চায়না।
একদল মৃত মানুষ
বেলকম পাহাড়ের সবুজ চুরি করেছে।
দুর্গম কুয়াশায় হারিয়ে যাচ্ছে ফুলমনি রিয়াংয়ের বাচ্চাদের পায়ের ছাপ।
চা বাগানের আনাচে কানাচে মানুষখেকো চিতাদের গা হিম করানো অস্ত্র স্কুল। 
বিকেলের রোদের কাছে অ্যালবাট্রস্ জানিয়ে যায়
শুকতারার মৃত্যুর কথা।
তবু ঝড়ের পাশেই রাখা আমার এক টুকরো বসন্ত।
সন্ধ্যের চায়ের
আলো করা আড্ডা 
সোনালী চা'য়ে তুফান ওঠে রাজনীতি, হলিউড, বলিউড, বাজেটের। 
মফঃস্বল সুখ দুঃখের ভাগাভাগি।
ওদের সকলকে পিছনে রেখে কলকল করে এগিয়ে যাচ্ছে দুই তরুণ তরুণী।
সে মেয়ের খোঁপায় মান্দারের ফুল, উড়ছে হলুদ আঁচল। ছেলেটির হাতে মোহনবাঁশি ।
যেন সর্ষে ক্ষেত পার হয়ে এসেছে হলুদ মেখে মেখে। 
চায়ের দোকানের গল্পগুলো মোড় নেয়, আরে! এরা অবনীর মেয়ে আর অরুণার ছেলে না?
নিন্দে মন্দ কথাগুলো গলার কাছেই আটকে রয়।
এখনও ওদের চোখে হলুদ বনের ঘোর! 
বহু বছরের পুরনো এক পশলা বৃষ্টি এলো শতাব্দী পার করে। 
ওরা বলে দিয়ে গেলো, এ শহর এখনও হারায়নি বসন্তের দিন 
কারা যেন বড়দিঘীর রেলিংয়ে হেলান দিয়ে 
পাখির স্বরলিপিতে জীবনের গান বাঁধে।
ইতিহাস খুঁজে পেয়ে যাই
স্তানিশ্লাভস্কির নাট্যশালায় ফেলে আসা সবুজ পত্রের বাক্স।


লোহিত সংকেত

বহু গ্যালাক্সি পেছনে ফেলে উড়ে আসা এক ক্লান্ত চিল। যেন শীতের প্রথম কমলা রোদে
এলিয়েছে রূপোর ডানা। পাশে একগুঁয়ে হলুদ গাঁদার ফুল ফুটে আছে হাজার বছর ভর।
চোখের আয়নায় ভাসমান রণতরীর লক্ষ বলিরেখা। সে দেখে এসেছে শীতমেঘ সমুদ্রের
অনামিকায়। তারপর একদিন থেমেছিলো পৃথিবীর সময় অচেনা স্টেশনের লোহিত
সংকেতে। চিলেকোঠার চিঠি ঠোঁটে করে তুলে নিয়ে উড়ে গেলো সবুজ পাখির দল।
বহুযুগ ধরে যে বৃষ্টি বাসা বেঁধেছিলো পাহাড় চুড়োয়, বয়স গড়িয়েছে তার নোনাজলে ও
পাথরে





0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন