কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৯

স্বপন রায়




উদাসীন মল্ট


(১২)


আটকে থাকা কিসব জাল, মাকড়সার হতে পারে বা বাসি অন্ধকারের। দূরে ওড়া ওড়া একটা গল্প। স্কার্ফ আটকে আছে ঝাউয়ের গায়ে, তাতে সামান্য হিম। র-চা র-চা গন্ধটাও। খুলে মনে হল, আমি খুলতে পারি। বন্ধ করতে পারি। তাতে কী? চাউনি ঢোকে। আলোর টুকরো, স্যাঁতস্যাঁতে হয়, ওই ঢুকেই। খোলা আর বন্ধের ভেতরেই আমার মনে হয় সে ছিল।

সে বা শ্রেণিসংগ্রাম, ছটফট করছিল ‘ইশতেহারা’ মেয়েটি। স্কার্ফটা কী ওরই, ‘রেপড অ্যান্ড ডুমড’ একটা মেয়ে জালের ভেতরে, খালের ভেতরে, মাকড়সাদের তিলককামোদে, একটাই মেয়ে। ডুরে-পাড়, কমনরুমের দেয়ালে আটকানো ‘মেনু’ দেখতে দেখতে যে ভেবেছিল। যে গেয়েছিল। যার প্লেটে বসত সিংগাড়া, ফুটে উঠত ‘কমসিন’ ‘নাদান’ এক খিদে।

সে নেমে আসে। আমার হারিয়ে যাওয়া টেলিগ্রামসিপিয়া আকাশের যদি হয়, রোজানা ‘গজল’ই সে।জগতচোরা আলো ফিনিক দিল, কুর্তিময়। স্টেশন ছিল উপোষি চানাওয়ালার, ‘চানা জোর গরম’ বললেই এখানে সেভাবে জল নেই, সংকট আছে বোঝা যেত। 


(১৩)

ভেতরে ঢোকার আগে পাঁজর সরালো। অত ঝাঁঝরা নয়। ঝাঁঝরিয়া নয়। একটা গান বাসা বেঁধে আছে, হাড়ের রঙ নিয়ে। আমার চেয়ে ছোট, ইন্তু টাইপের। ইন্তুর কভার ড্রাইভ আর পুল। কমনরুম পেয়ে গেল, ক্রিকেট কিট। হাড়ে হাড়ে, মজ্জায়। হ্যান্ড গ্লোভস, প্যাড, অ্যাবডোমেন গার্ড। ‘ইহাতে বিচির সুরক্ষা হয়’, কোচ তখন সুবীরদা। ছক্কা তখন মেরে হামসফর। আমার ভেতরের দিকে যেসব গোলমাল মাংসল ছিল, কমনরুমের দেয়াল হেলান দিল। সেখানে কী আরাম! চাঁদ নামে, কি স্নিগ্ধ মোমছাল, পটাশ। আর বুনছে বুনছে গেরিলারা জঙ্গল শুধুই, চে হ্যাভারস্যাক নামালো আমার মাংসে, দেখল অবাক কমনরুম। রক্ত বেশ গরম তখন, চিন চিনও করছে!

(১৪)

ব্যাখ্যা গেয়ে উঠল, সাগর সঙ্গমে
সারাংশ ঘুমোলে       
যে সমুদ্র
কাল ঘটনাবহুল চাঁদে জড়িয়ে গিয়েছিল
ফিসফিস, এখন
অসুখ আর ডানা ভাঙার শব্দে মিশবে না, ফোন আসছে
ফোন যেন সুখ
ব্যাখ্যা তাকে আঙুল দেয়, সারাংশ এর ফলে স্ট্রিং হতে থাকে, থিওরি হে
মহাকাশে
কাশে
‘শরত এল শরত এল’ ভাব হয়, ট্রলারগুলো ফিরে আসছে
মাছসমুদ্র নিয়ে
কারো নাম নেই আর, সমুদ্র ব্যাখ্যা, ঢেউ সারাংশ
লিখছে ছেলেমেয়েরা
       
(১৫)

ভেতরে এত আঠা, ঘুড়ি বানালেই হয়। ধ্বক ধ্বক ঘুড়ি। শিরাসুতোও আছে। লাল মাঞ্জা। আমার ভেতরে এসে হয়রাণ কমনরুম। ফুসফুস আরেক ঘটনা, পাম্প করার সময় হু হুমনা হু হুমনা করতেই থাকে, বাঁ অলিন্দে ঘোর লাগে। একটাই আওয়াজ সারাজীবন, তবু। কমনরুমের গায়ে যে শ্লোগানগুলো লিখেছিলাম, সে খুঁজে পায়। চলবেনা, চলবেনা টাইপ। সবই এখানে লেপ্টে আছে, মগজের বাইরে, ধূসরতায়। আর চলছে। বেঁচে থাকা এই ধ্বকচিনসাঁইইনগাল্প, ধ্বনি বললে ধ্বনি, নয়তো একটি মেশিনের আত্মকথা...


(১৬)


উপুড় হয়ে আছে। পড়ে নেই। এটা খুন। উপুড় হয়ে আছে। ফিরে না যাওয়া ঢেউ, এই বসন্তে। খুন হতে পারে। তেমন ইচ্ছেও ছিলনা যে ঝাউ থেকে বন আলগা করে প্রিন্ট বসাবে শাড়িতে। শাড়ি যখন, মেয়ে। সমুদ্রের ধারে। মেয়ে যখন, রেপড হয়নি তো?

নোনতা হওয়ায় যে গন্ধটা, সিলেবাসের সামান্য বাইরে। ঢেউসমগ্রে। নৌকো ভাসছে দেখে মনে হল ‘এইতো জীবন’ বয়ে গেল। সূর্য ডুববে এবার। হাঁটুর নিচে নেমে যাবে, আর হাঁটুর উপরে সন্দেহভরা রাতের প্রথম ভাগ। খুলবে একটু। না। একটু? রাত খুললে আরো রাত, যাও খুলে দিলাম। আটটা বাজলো। সমুদ্রের আর কী, ঢেউয়ের বেণী আছড়ে দিয়ে আলোর গায়ে বলবে আরেকটু দেবো? রাত ঘরের ভেতরে ভয় পায়। সিলেবাসের ভয়। আলোকিত প্রশ্ন আর উত্তর, ভয় হয়। ভয়টাই ছড়িয়ে যায় বালুর ভেতরে, কাঁকড়ারা আরো নড়ে, ঢোকে, বালুর ভেতরে। ‘উদাসীন মল্ট’ সে নাম দেয় বইটার...



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন