‘হোয়েন ফাইভ
ইয়ারস্ পাস’ — সময়ের স্থিরচিত্র
ক্লোজশট। পিছনের খানিক গাঢ় শূন্যতা সহ ক্যামেরা দ্রুত নামতে
থাকে একটি কাচের গ্লাসের মধ্যে। অর্ধেক জল। সেই জলে একটি রক্তমাখা বুলেট নেমে আসে।
ডুবে যায়। ক্রমশ রক্ত ছড়িয়ে পড়ে জলে। মৃত্যু। মৃত্যু নেমে আসে
ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকার জীবনে ১৯শে অগাস্ট, ১৯৩৬। সেই মৃত্যুই, এভাবে, স্যুরিয়েল,
ন্যয়ারিশ উপস্থাপনায়, প্রদর্শিত হয় মার্কোস জুরিনাগা’র ‘দ্য ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স অফ
গার্সিয়া লোরকা’ সিনেমার প্রারম্ভিক দৃশ্যে।
১৯শে অগাস্ট, ১৯৩১। লোরকার মৃত্যুর ঠিক পাঁচ বছর আগের দিন।
সেদিন লোরকা তাঁর অন্যতম ‘ইমপসিবল্ প্লে’ ‘হোয়েন ফাইভ ইয়ারস পাস’ লেখা শেষ করেন
যেখানে, হয়তো বা নিছক কাকতালীয় ভাবেই, ঠিক পাঁচ বছর পরে তাঁর ভবিতব্য মৃত্যুর সময়
ও পদ্ধতির আভাস ও বর্ণনা প্রদত্ত হয়। নিছক কল্পনা থেকে এক ভবিষ্যত ঘটনার মাধ্যমে রূঢ় বাস্তবে রূপান্তরের
এই বীভৎসতা পরবর্তীকালে নাটকটির প্রতি আমাদের আবিষ্ট করে এক পরাবস্তবিক মোহে, এবং
এই নাটকটিকে প্রদান করে এক প্রফেটিক আবহ। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হল, কল্পনা থেকে বাস্তবের দিকে গমনশীল
এই ঘটনায় সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে
পাঁচ বছর সময়কাল যা বৃহত্তর অর্থে সময় নামক এক আপাতধ্রুব সত্যের একক। এবং এই সময়
নামক আপাতধ্রুব সত্যই হল ‘হোয়েন ফাইভ ইয়ারস্ পাস’ নাটকের প্রতিপাদ্য বিষয়। নাটকের
প্রোটাগনিস্ট ইয়ংম্যানকে পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে করার
জন্য। কিন্তু পাঁচ বছর পর তাদের আবার সাক্ষাৎ হলে দেখা যায় ইতিমধ্যে তার প্রেয়সী
এক ফুটবল খেলোয়াড়ের প্রেমে পুরোপুরি নিমজ্জিত। এরপর,
ইতিমধ্যেই তার প্রতি আসক্তা প্রেমিকা সেক্রেটারির কাছে ইয়ংম্যান বিয়ের প্রস্তাব
করলে সেই সেক্রেটারিও পাঁচ বছর অপেক্ষার শর্ত আরোপ করে। অপেক্ষার অন্তহীন
প্রক্রিয়ায় পূর্ণতালাভ চিরকালীন মুলতুবী হয়ে যায়। ইয়ংম্যান হয়ে
ওঠে ‘ওয়েটিং ফর গোডো’র ট্র্যাম্পযুগল যার কাছে একমাত্র মূর্ত সত্য হল অপেক্ষা।
সেখানে ক্রমশ মূর্ত থেকে বিমূর্ত হয়ে ওঠে সময়; এবং, অন্তিম পর্যায়ে মূর্ত থেকে
বিমূর্ত হয়ে ওঠে ইয়ংম্যান নিজেও।
‘আ লিজেন্ড অফ টাইম ইন থ্রি অ্যাক্টস অ্যান্ড ফাইভ সিনস্’
উপনামে ভূষিত এই নাটকের অন্যতম বিষয় রূপে উঠে আসে মূর্ত, নির্দিষ্ট, স্থিরীকৃত সত্তার পরিবর্তে সময়ের উপর এক বিমূর্ত, দ্রব সত্তা আরোপণ যা নৈর্ব্যক্তিক অবস্থান
থেকে বিচ্যুতির মাধ্যমে ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা ও বোধে রূপান্তরিত হয়। প্রথম অঙ্ক
সময়ের নিরিখে স্থগিত অবস্থায় শেষ হয় — প্রথম দৃশ্যে ঘড়িতে ছ’টা বাজে। শেষ দৃশ্যে
ইয়ংম্যানের চাকর, জন, ঘোষণা করে তখন ছ’টা বাজে। মনে হয়, গোটা অঙ্কে যে নিষ্ক্রিয়তা
ইয়ংম্যানের জীবন প্রক্রিয়াকে ঘিরে থাকে সেই একই নিষ্ক্রিয়তা আরোপিত হয় সময়ের
উপরেও। সময় নিষ্ক্রিয় হয়ে ওঠে। প্রথম অঙ্ক ও দ্বিতীয় অঙ্ক পাঁচ বছরের সময়-ব্যবধান দ্বারা
বিভাজিত, এবং দ্বিতীয় অঙ্ক ও তৃতীয় অঙ্ক বিভাজিত একটি চন্দ্রগ্রহণের মাধ্যমে।
নাটকের শেষে ঘড়িতে ঘোষিত হয় বারোটা, কিন্তু তখনও জন দৃঢ়ভাবে সময় ঘোষণা করে ছ’টা।
নাটকের সমস্ত ঘটনাবলী সংঘটিত হয় আলো-আঁধারিপূর্ণ সময়কালে — গোধূলি থেকে ঊষাকালের
মধ্যে — যা অপরিজ্ঞেয়তা, অথবা এক বিকল্প ভাষায় ফ্যান্টাসম্যাগোরিয়া সূচিত করে।
এভাবেই বাস্তবকে এক নাছোড় ধৃষ্টতায় নির্দয় প্রশ্নের সম্মুখে দাঁড় করিয়ে দেয় আমাদের
দৃষ্টিপথে ক্রমাগত ভেসে উঠতে থাকা একের পর এক দৃশ্য। প্রথম দুটি দৃশ্য সংঘটিত হয়
যথাক্রমে লাইব্রেরি এবং বেডরুমে। কিন্তু তৃতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্য উপস্থাপিত হয়
বিশালাকার গাছের গুঁড়ি সজ্জিত জঙ্গলে — এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এক সাবলীল ও
স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় থিয়েটার রূপান্তরিত হয় মেটাথিয়েটারে, বাস্তব রূপান্তরিত হয়
পরাবাস্তবে।
মেটাথিয়েটার হিসেবে ‘হোয়েন ফাইভ ইয়ারস পাস’ সময় নামক
আপাতধ্রুব আপাতঅবিচল সত্য, সেই আপাতঅবিচল সত্যের আড়ালকে ছিঁড়ে আরও গভীর এক সত্যের
দিকে নিয়ে যায়। এক
কাব্যময়, এবং ফলস্বরূপ কোমল ভঙ্গিমায় এখানে আরোপিত পূর্ব সত্যকে পেরিয়ে উঠে আসে এক
পরাবাস্তবিক নতুন সত্য — ‘ফ্যামিলিয়ার, কনক্রিট অবজেক্টস্’ অতিক্রম করে
উঠে আসে ‘নিউ কনটেক্সটস’ যেখানে “familiar actions become sinister
and sinister actions become familiar”। বাস্তব ও পরাবাস্তবের মধ্যে ক্রমাগত এই যাতায়াত, নিয়ত এই স্থানবদল, এই
‘ইনভার্টেডইনফারেন্স’, এই অস্থিরতা মঞ্চে ঘটতে থাকা ঘটনাবলীর মাধ্যমে আমাদের মনে
ক্রমশ নির্মিত প্রতিচ্ছবিকে ভেঙে চুরমার করে দিয়ে গঠন করে এক বিকল্প প্রতিচ্ছবি।
ভেসে ওঠে অবিশ্বাস, ভেসে ওঠে প্রশ্ন। যা কিছু ক্রমশ ঘটে চলেছে মঞ্চের উপর তা কি
সত্যিই ঘটছে সেখানে? নাকি অন্য কোথাও, অন্য কোনো এক স্তরে ঘটছে সেই সব ঘটনাবলী?
মঞ্চের চরিত্রদের কোনো অতীত জীবন উপস্থাপিত হয় না। বর্তমানে, মঞ্চে, এরকম কোনো ঘটনাই ঘটছে না যা তাদের
ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে প্রেরণা প্রদান করে। প্রথম অঙ্ক এবং একেবারে অন্তিম দৃশ্য
সংঘটিত হয় একটি বই-বোঝাই ঘরে। অর্থাৎ লাইব্রেরিতে। এই লাইব্রেরি-অবস্থান অনিবার্যভাবেই
সূচিত করে এক ‘ইন্টারটেক্সচুয়াল স্পেস’ যাকে নিরূপণ করা যায় অন্যান্য সাহিত্যের
দৃষ্টান্তের মাধ্যমে, দৃষ্টান্তের সাপেক্ষে। দৃষ্টান্ত রূপে দৃঢ় ভাবে উঠে আসে দুটি
টেক্সট — লেনোমঁ’র ‘টাইম ইজ আ ড্রিম’ এবং লোরকা’র নিজেরই
‘থিয়েটার অফ সোলস্’। এছাড়াও ভেসে ওঠে
আরও কিছু নাম — হোর্হেমানরিকে, জাঁ ককতো এবং লুইজিপিরানদেলো। বইয়ের প্রতি এহেন
আসক্ত ইয়ংম্যান, স্বাভাবিক ভাবেই, নিয়ত নিমজ্জিত থাকে নিজস্ব কল্পনায়, চিন্তায়।
কল্পনায় নিয়ত নিমজ্জিত অস্তিত্বকে কোনো এক গভীর সংকেতবাহী বৈশিষ্ট্য হিসেবে ধরে
নিলে আমাদের সামনে ভেসে ওঠে এক বিকল্প ব্যাখ্যার সম্ভাবনা: ইয়ংম্যানের মনের অতলেই
হয়তো বা সমস্ত ঘটনাবলী সংঘটিত হচ্ছে, বাস্তবে নয়। এই বিকল্প ব্যাখ্যাকে মান্যতা প্রদানের মাধ্যমে আরও
কিছুটা অগ্রসর হলে দেখা যায় বিভিন্ন চরিত্রেরা আসলে তার আপন নির্যাতিত সত্তার
নানান বাহ্যিক রূপ। তার মনের অন্তরে নিয়ত বহমান
বিক্ষিপ্ত, অসংলগ্ন চিন্তা ক্রমাগত মিছিলাকারে অভিক্ষিপ্ত হতে থাকে মঞ্চে, এবং মূর্ত
হয়ে ওঠে বাস্তবে। এখানে পরাবাস্তবিক ঘটনা প্রক্রিয়ার এক বিপরীত, যদিও বিরোধহীন,
প্রক্রিয়া লক্ষ করা যায়: মূর্ত অবস্থা থেকে বিমূর্ত হয়ে ওঠার বদলে বিমূর্ত অবস্থা
থেকে মূর্ত হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া। ভাবনা বিমূর্ত অবস্থা থেকে মূর্ত হয়ে ওঠে;
নিরাবয়ব, নিরাকার চিন্তা সাবয়ব ও সাকার রূপ ধারণ করে। কিন্তু এ এক আত্মধ্বংসরূপ
প্রক্রিয়া। নিরন্তর আহূত অতীত এবং এক অসম্ভাব্য ভবিষ্যতের মিথষ্ক্রিয়ায় ইয়ংম্যান,
যে এই সমগ্র প্রক্রিয়ার স্রষ্টা ও নিয়ামক, নিজেই ক্রমাগত বিজারিত হতে থাকে।
মানসিক স্তরে ক্রিয়াশীল ঘটনাবলীর
অভিক্ষেপণ প্রক্রিয়ায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান হল ওল্ডম্যান চরিত্রটির। ওল্ডম্যান
আসলে দান্তের ভার্জিলের প্রতিরূপ যে ইয়ংম্যানকে চালিত করে তার আপন মনের অভ্যন্তরে।
ওল্ডম্যান নির্মাণ করে এক ধারণা যেখানে বিবৃত হয় আন্তরজীবনের গুরুত্ব যা অনায়াস
ভঙ্গিমায় অতিক্রম করে যায় “anything outside us, that’s exposed to the air and to death”। ‘রিমেম্বার’ শব্দটি বারংবার উচ্চারণের মধ্য দিয়ে
যথার্থভাবে প্রকাশিত হয় তার অস্তিত্বের গঠনগত পরিচয়: তার মূর্ত সত্তা আসলে বিমূর্ত
অতীতকাল দ্বারা নির্মিত। নিষ্ক্রিয়তার অপরিহার্য ফাঁদে বন্দী হয়ে সে ত্রিশঙ্কু
অবস্থাপ্রাপ্ত হয় অতীত ও বর্তমান কালের মধ্যস্থলে: “one should remember with an eye to the future”। অতীতকালের আরোপিত ব্যক্তিরূপ ওল্ডম্যানের বিপরীত
অবস্থানে অধিষ্ঠিত ফার্স্ট ফ্রেন্ড চরিত্রকল্পটি: সে শুধুমাত্র বর্তমানে,
বর্তমানের জন্যে, বর্তমানের সাপেক্ষে জীবনধারণ করে। আবার, প্রত্যক্ষ ভোগবাদী বিলাসযাপনের মাধ্যমে ফার্স্ট
ফ্রেন্ড অনেকাংশেই অবদমিত যাপন প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত সেকেন্ড ফ্রেন্ডের বিপরীতার্থক
অবস্থান গ্রহণ করে। সেকেন্ড ফ্রেন্ড আসলে ইয়ংম্যানের অলটার ইগো: স্বপ্ন ও জাগরণের অন্তঃস্থলে চিরস্থগিত। যুবকের,
অথবা কোনো যুবতীর পোষাকে সজ্জিত সেকেন্ড ফ্রেন্ড অনির্ধারিত লিঙ্গ পরিচিতির
মাধ্যমে ডেড চাইল্ডের সমরূপ হয়ে ওঠে: অনির্ণায়ক সময়সীমায় আবদ্ধ। সাবালকত্বের
মাধ্যমে পূর্ণতাপ্রাপ্তি অলব্ধ থেকে যায় দু’ক্ষেত্রেই। সময়ের আগ্রাসন সূচনাকারী শারীরিক ক্ষয়চিহ্ন সেকেন্ড
ফ্রেন্ডকে ভয়ার্ত করে তোলে।
সেকেন্ড ফ্রেন্ডের আত্মরূপ ইয়ংম্যানকেও
ভয়, এক অন্য রূপে, অন্য মাত্রায়, অন্য বিষয়ে, আচ্ছাদিত করে রাখে: নারীপ্রতিনিধির
প্রতি ভয়। এই ভয় তাকে নারীদের বিষয়ে কল্পনাপ্রবণ করে তোলে যে কল্পনার মাধ্যমে
প্রসবিত নিরাপদ আশ্রয়ে সে আত্মগোপন করে। এই ঝুঁকিহীন নিরাপদ আশ্রয় সন্ধান তাকে রূঢ় বাস্তব থেকে দূরে কল্পনার আপাত মনোরম
আপাত পেলব মখমলি আবরণে ঢেকে দেয়। এই প্রক্রিয়ায় নাটকের সমস্ত নারীচরিত্র, কিছু
পরিমাণে অন্তত, ইয়ংম্যান দ্বারা কল্পিত মায়ারঙে চিত্রিত হয়। কামুক গার্লফ্রেন্ড থেকে সংযমী, লাজুক সেক্রেটারি
সকলেরই অস্তিত্বের উদ্দেশ্য ইয়ংম্যানের নানাবিধ কল্পনাকে চিত্ররূপ প্রদান করা।
পরবর্তীকালে, অন্তিম পর্যায়ে, ম্যানিক্যিন এবং মাস্ক অভিক্ষেপণের মাধ্যমে তুলে ধরে
ইয়ংম্যানের “fossilization
of the women he meets so that he can overcome his fear of them”।
ম্যানিক্যিন ও মাস্ক আত্মপ্রকাশ
করে প্রতীকী চরিত্র রূপে। হার্লেক্যিন ও ক্লাউনও একই উদ্দেশ্যে রূপায়িত। তবে, শেষ দুটি প্রতীকী চরিত্র বহন করে এক অন্য সত্তা
ও পরিচয়: এরা ম্যাকিয়াভেলিয়ান শক্তির প্রতিভূ। এরা ইয়ংম্যানকে কোণঠাসা করে তোলে,
ইয়ং গার্লের মৃত প্রেমের খোঁজ সম্বন্ধে প্রশ্ন তোলে, এবং সেক্রেটারিকে পুতুলমাফিক
চালনা করে। শেষ দৃশ্যে লাইব্রেরিতে উন্মুক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা স্যুটকেস
(মুয়েরতে এন গ্রানাদা - প্রারম্ভিক দৃশ্য)
নাটকের
চরিত্রদের প্রস্থানের ইঙ্গিতবাহী। ইয়ংম্যান ততক্ষণে নিরাশ ও নির্জীব মৃতবৎ চরিত্রে
রূপান্তরিত। এরপর আবির্ভূত হয় ধ্বংসের দূত: তিনজন
কার্ড প্লেয়ার। ইয়ংম্যান তখন প্রেতসদৃশ। দেয়ালে অভিক্ষিপ্ত হরতনের
টেক্কায় তিনজন মৃত্যুদূত দ্বারা পিস্তল থেকে নিক্ষিপ্ত নীরব তীরগুলো গেঁথে যায়: ইয়ংম্যান
মৃত্যু বরণ করে। এই শেষ দৃশ্যটি শুধুমাত্র
ইয়ংম্যানের অনস্তিত্ব সূচিত করে না, বরং সমগ্র বাস্তবতার অনস্তিত্বের ইঙ্গিতবাহী হয়ে ওঠে। আপাত বহমান সময় স্থবিরতাপ্রাপ্ত হয়। বাস্তব স্থবিরতালাভ করে সময়ের নিরিখে।
বাস্তব
স্থবিরতা লাভ করে ফটোগ্রাফেও। কোনো একটি মুহূর্ত ধরা পড়ে ছবিতে। কোনো একটি চরিত্র
অথবা অনেক চরিত্র, যারা ছবির ফ্রেমে বন্দি, যারা অতীতহীন, আন্তরজীবনহীন, ইঙ্গিত
করে নানাবিধ ঘটনাবলী, চিন্তা, দর্শন, জীবনপ্রণালী, কিন্তু সেই ইঙ্গিত নিঃসন্দেহে গভীরতাহীন।
ছবিতে বন্দি চরিত্র অথবা মুহূর্ত শুধুমাত্র বাস্তবের উপরিতলকে তুলে ধরে। রোলাঁ
বার্ত ফটোগ্রাফকে ‘a
kind of primitive theatre’ রূপে চিহ্নিত করেছেন এই গভীরতাহীন উপস্থাপনার কারণে যে উপস্থাপনার অকৃত্রিমতা
পরীক্ষিত নয়। তাঁর মতে ফটোগ্রাফ হল ‘ডেড ইমেজ’ যেখানে চরিত্রেরা নানাবিধ ভঙ্গিমায়
উপস্থিত হয় এবং সেই কৃত্রিম ভঙ্গিমাসহ স্থবিরতা
লাভ করে। ‘হোয়েন ফাইভ ইয়ারস পাস’ নাটকটিকেও এই তত্ত্বের আলোকে বিচার করা যায়
নির্দ্বিধায়। এই নাটকটিও একই রকম ‘ডেড ইমেজ’। কিন্তু এখানেও থেকে যায় এক বিকল্প
ব্যাখ্যার সম্ভাবনা। উঠে আসে এক বিকল্প, অথবা গভীরতর ও বিস্তৃততর বিশ্লেষণ, আরও
বৃহত্তর প্রেক্ষিতের সাপেক্ষে। মনে হয় এখানে কোনো একটি ফটোগ্রাফ সম্প্রসারিত হয়েছে
বিভিন্ন চরিত্রায়নের উদ্দেশ্যে; সেই ফটোগ্রাফে পরিবেশিত বাস্তবের উপরিতল নিপুণরূপে
পরিবর্তিত হয়েছে, নবরূপ প্রদত্ত হয়েছে কোনো একটি নির্দিষ্ট চিন্তা ও বিষয়ের দৃঢ় ও
সুনিশ্চিত উপস্থাপনার উদ্দেশ্যে। সেই চিন্তা ও বিষয়,
অনিবার্যভাবেই, সময়ের স্থবিরতাপ্রাপ্তি, সময়ের বিমূর্তভবন।
উৎস ও ঋণ
1. Anderson, Reed (1984) Federico
García Lorca (Macmillan Modern Dramatists), London: Macmillan.
2.
Barthes, Roland (1982) Camera Lucida: Reflections on Photography,
trans. Richard Howard, London: Vintage.
3. Bonaddio, Federico (Ed.) (2007) A Companion to Federico García Lorca
4. Delgado, Maria M. (2008) Federico
García Lorca, London: Routledge
5. Edwards, Gwynne (1980) Lorca:
The Theatre Beneath the Sand, London: Marion Boyars.
6. Lorca, Federico Garcia (2011): When
Five Years Pass.
7. Morris, C. Brian (1972) Surrealism
and Spain 1920–1936, Cambridge: Cambridge University Press.
8. Stainton, Leslie (1999) Lorca:
A Dream of Life, New York: Farrar, Straus, Giroux.
9. Wright, Sarah (2000) The
Trickster-Function in the Theatre of García Lorca, London: Tamesis
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন