বসন্ত
চেয়ারটির নাম ক্লান্তপাখি
হতে পারে। এটির সঙ্গে রাধার সম্পর্ক বহু বছরের।
চোখ ফোটার পর থেকে।
প্রচুর হর্ষ বিষাদ রোদ বৃষ্টি সন্ধে সকাল জড়িয়ে রয়েছে চেয়ারটিকে ঘিরে। এখন যদিও তা চেয়ারের আকার নিয়েছে, তবে
সূচনায় ছিল বেশ বড় আকারের কাঠের বাক্স।
কিছু পরে চারটে পা লাগিয়ে
ওপরে তক্তা পুঁতে ডেস্ক ও টেবিল দুটোই। এর আগে
একটা সময়ে নাকি
দুষ্টু রাধাকে বেঁধেও রাখা হত। ওপরের তক্তা একসময়ে ভেঙে যাবার পর বইয়ের বদলে পুতুল রাখা হত। পুতুলের সাজগোজ পুরো না হতেই রাধা হয়ে উঠল বাবা মায়ের হাতের পুতুল।
সিদ্ধান্ত হল রাধাকে বিয়ে দেওয়া হবে আর রানীর জন্য ইস্কুল। প্রবাসী বিহারী। বাংলায় থাকতে
থাকতে প্রায় পুরোটাই বাংলার হয়ে গেছে। ছট, ষষ্ঠী দুটোই হয়।
পিঠোপিঠি বোন রানী। দুই
মেয়ে, এই ভেবে রাধার বিয়ে দেওয়া হবে তাড়াতাড়ি। পারিবারিকভাবে স্থির হয়।
মোয়া নাড়ু বড়ি মুড়কি বানানোর ঢল
নামে। বাড়িতে ছুতোর আসে কাঠ নিয়ে। বিয়ের খাট আর রানীর পড়ার চেয়ার টেবিল তৈরি হবে। টুকরো কিছু কাঠ পড়ে থাকে। সেগুলো কাজে লাগিয়ে আর রাধার পুতুলবাক্স দিয়ে দোলনা চেয়ার হল। দিনভর ঠুকঠাক। রাধা শব্দবাহকের কাজ করে।
তখন নবম ক্লাস। রাধা তখন দোলনা। দুই থেকে এক বিনুনী। দুলতে দুলতে অন্য বাড়ি। জগৎ তখন সুখ।
সুখময় রায়। বড় ঘরের ছেলে। ঐ যে কথায় আছে না, ওপরওলা সবদিকে ভাতে মারে না!! হলও তাই। যেন সবটাই অবাস্তব। সুখ ঝরল আজীবন। বারান্দায়
দোলনা চেয়ার দোলে।
হাওয়ায় সুখের ঘ্রাণ। উনচল্লিশ বছরের সংসার। রাধা সুখে দোলে।
গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া
লালাভগুলো গলে পড়ে। চুলের পাকে সুখের রক্তাভ হাত। সুখময় চিমটি কাটে। আহ্লাদে
আটখানা হয়ে সুখের বুকে মুখ চুবিয়ে রাখে।
চেয়ার দোলে আবার। হাওয়ায়
মধু। বসন্ত।
একমাত্র ছেলে রনি দেখে মায়ের সুখ। বাঁচিয়ে রাখা স্বপ্নের সাথে উপভোগও করে জীবন।
এবার মায়ের ওষুধ দরকার। রনি ভাবে। এবার মনে হয় ডাবল ডোজ দিতে হবে ভেবে ডাক্তারশকে ফোন করতে ওঠে।
রাধা জড়িয়ে থাকে দুলতে থাকা চেয়ার। যুগলে দোলে। কাঁপে। ভাসে।
হাসে। অবিরাম। ক্লান্তিহীন। দোলন চিরকালের!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন