আমার গল্প
মনোজদা মেগা-সিরিয়ালের বস্। সে গল্প হোক, নায়ক-নায়িকার অভিনয় বা ঘরের কার্পটের রংই হোক, মনোজদার
কথাই শেষ কথা। খাতাটা খুলতেই মনোজদা বলল – অত পড়তে হবে না, সংক্ষেপে গল্পের ধাঁচটা বল। আজ বেশি সময় নেই।
নারভাস হয়ে পড়লাম। যদি ভাল করে বলতে না পারি তাহলে এক কথায় বাতিল করে দেবে। যাইহোক শুরু করলাম –
প্রথম দৃশ্যে দেখা যাবে ২৭/২৮ বছরের একটি ছেলে পাহাড়ের মাথায় উঠেছে। সামনে ফুট পাঁচেকের রেলিং, ব্যাস তারপর অনেক অনেক নিচুতে সমুদ্র
সফেন। বহু আত্মহত্যা হয় এখান থেকে। ছেলেটা সেইজন্যই এসেছে। গত শনিবার তার প্রেমিকার বিয়ে হয়ে গেছে। বেঁচে থেকে আর কী লাভ! এমন সময় কার পায়ের শব্দ। একটি মেয়ে, সুন্দরী
বলা যায়, ক্লান্ত পায়ে উঠছে। দু-একটা কথা হল
– মেয়েটিও জীবনদান করতে এসেছে। ব্যক-গ্রাউণ্ডে পুরিয়া ধানেশ্রীর
আলাপ…।
পুরিয়া ধানেশ্রী না সুরদাসের ভজন, সে আমি ঠিক করব – তুই গল্প বলে যা।
হ্যাঁ, কথায় কথায় দুজনে দেখল জীবনের শেষ বিন্দু
থেকেও জীবন শুরু করা যেতে পারে। কিন্তু মেয়েটি একটি খবর দিল – তার পাঁচ মাস চলছে। বাচ্চা সে নষ্ট করবে না,
তাকে গ্রহণ করতে হবে।
মনোজদা হো হো করে হেসে উঠল। বাঃ, ভাল প্যাঁচ এনেছিস। জমে যাবে। বউএর সঙ্গে বাচ্চা ফ্রী… দারুণ প্যাকেজ… হা হা…
তারপর তাদের বিয়ে হল। বিয়ের পর মেয়েটির আগের প্রেমিক মানে বাচ্চাটির বাবার আগমন। সেই হতে চলেছে গল্পের খলনায়ক।
-একদম চলবে না। খলনায়কদের যুগ শেষ। খলনায়িকা নিয়ে আসতে হবে। নানান বয়সের। ননদ থেকে শুরু কর,
তারপর গোটা দুয়েক শাশুড়ি টাইপের মহিলা।
-আচ্ছা দেখব। তারপর শোনো –
বাচ্চাটা একটি মেয়ে, ফুটফুটে। ইস্কুলে ভর্তি হবে।
-কোন ইস্কুলে?
- এই কলকাতারই কোনো একটা…
- চলবে না। বালুরঘাট, দার্জিলিং
এসব জায়গায় যা। সাদা ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি ফাদার আর নীল পাড় সাদা শাড়ি গানের টীচার
থাকতে হবে।
- সে ত সেই কবেকার বাংলা সিনেমা!
-
হ্যাঁ, একটু পুরনো কাসুন্দি রাখতে হয়। ভেবে দেখেছিস, সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা আটটায় যারা কাজকর্ম ছেড়ে সিরিয়াল দেখতে
নিয়মিত বসে তাদের বয়স কত? সব ষাটের ওপর। এদে র স্মৃতি উসকে দিতে হবে।
-
আচ্ছা দেখব খন। তারপর শোনো…
-
যা আজকে আর সময় নেই। গল্পটা নতুন করে লেখ। যা যা বললাম সেই মত, বুঝলি?
ফিরছি। বাস খালি, জানালার ধারে বসেছি। কেমন যেন কান্না কান্না পাচ্ছে। আমার তো কিছুই নেই। আজ অবধি শুধু দুটো কবিতা
ছাপার অক্ষরে বেরিয়েছে। গল্প-উপন্যাস যা লিখেছি সব ফেরৎ এসেছে। কোনোরকমে মনোজদার
সহকারিকে ধরে গল্প লেখার কাজটা পেয়েছি। মনোজদা, তোমার তো অনেক
প্রতিপত্তি, অনেক টাকা। তবু আমার গল্পটার ভেতর আমার
জায়গাটুকুও তুমি নিয়ে নিলে। ঈস্, এত অভাব আমার! আমার মন থেকে জন্ম নেওয়া গল্প, সে
যতই সাধারণ হোক না কেন, সে আমার সন্তানের মত। সেও আমার থাকল না…
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন