গ্যাংগ্রীন
দিলীপবাবু চাকরি করেন রাজ্য স্টেট ট্রান্সপোর্টে। সেখানে
এখন প্রতি মাসে মাইনে ঠিক সময় মত দেয় না। ছোট একখানা ঘর ভাড়া করে থাকেন। তার উপর
আবার দুই মেয়ে। এক মেয়েকে পিসির বাড়িতে রেখে এসেছেন। ওখানে সে পড়ে। বড় মেয়ে এবার
টুয়েল্ভ পাশ করলো। আর দিলীপবাবুর স্ত্রী সুজাতা, সে তো দীঘদিন হল বিছানায়। পায়ের একটা ঘা কিছুতেই সারছে না। ডাক্তার বলেছেন, গ্যাংগ্রীন হয়ে গেছে, কেটে বাদ দিতে হবে। কিন্তু টাকা কোথায় এতো? পড়ে পড়ে মরতে হবে আর কি, এটাই ধরে
নিয়েছে বাড়ির সবাই।
দিলীপবাবুর সন্ধের পর দামী মদ লাগবেই। তারপর বউকে গালাগাল, মারধর এটা রোজকার ব্যাপার। সবসময় সুজাতাকে কথা শোনায়, ‘কিছুই তো দিতে পারলে না তুমি...!’
বড় মেয়ে পাড়ার কয়েকটি বাচ্চাকে পড়ায়। তাই দিয়ে মায়ের
ওষুধপত্র আর নিজের হাতখরচ চলে। মায়ের ওপর বাবার এই অত্যাচার আর সহ্য করতে পারে না
রিংকু। মায়ের শরীরও দিনদিন পড়ে যাচ্ছে। কি করবে সে বুঝতে পারে না।
একদিন দিলীপবাবু কাকে যেন ফোনে ফিসফিস ক’রে বলছেন, ‘আজ তিন মাসের
মাইনে একসাথে পেয়েছি। ... টাকার সমস্যা হবে না। একটা ভালো মেয়ে জোগাড় ক’রে দিবি? ... দেখিস, যেন কোন
ঝামেলা না হয়।’
ওপার থেকে উত্তর এলো, ‘ঠিক আছে, হয়ে যাবে। রাতে ফোন করো, দাদা।’
বাবার কাছে গিয়ে রিংকু বললো, ‘টাকাগুলো পেয়েছো যখন, তখন চলো না, মায়ের পা’টা অপারেশন করিয়ে নিই।’
গোপন কথা শুনে ফেলেছে মেয়ে। তাই প্রথমে একটু থতমত খেয়ে
তারপর আবার সামলে নিয়ে দিলীপবাবু রেগে গিয়ে বললেন, ‘তোর মা’তো আমাকে জীবনে কিছুই দিল না।
আমার কি কোন শখ-আহ্লাদ নেই?... আমি পারবো না
তোর মায়ের পা অপারেশন করাতে। ওই হারামজাদী
বাপেরবাড়ি থেকেই অসুখ নিয়ে এসেছে। জন্ম-রুগী।... যা এখন তুই ।’
মেয়ে সহ্য করতে না পেরে বললো, ‘তুমি কি দিয়েছ মা’কে? গালাগাল আর পিটুনি ছাড়া? সেটা ভেবেছ কোনদিন, বাবা?
-‘আমি অনেক
কিছুই দিতে পারতাম। সে নিতে পারে নি।’
--‘যাও যাও। বুদ্ধি হয়েই তো দেখছি মদ আর... ছিঃ বলতেও বাধে ...
যাও এবার সব টাকা উড়িয়ে রেখে এসো জুয়া খেলে।’
--‘না, এবার জুয়া খেলবো না।’
-- যা খুশি করোগে। বাবা হয়ে আমার জন্যই বা তুমি কি করলে গো?
দিলীপবাবু মেয়ের এসব কথায় আর বেশি কান দিলেন না। বেরিয়ে
গেলেন। যাবার সময় ব’লে গেলেন, ‘দরজা বন্ধ ক’রে দে। আর শোন, হারু এলে ওকে
বসতে বলিস কিন্তু।’
একটু রাতের দিকে হারু এলো। কিন্তু দিলীপবাবু তখনও বাড়িতে
ফেরেননি। রিংকু তাকে বসতে ব’লে বললো, ‘হারুদা, বাবা তোমার
কাছে একটা মেয়ের খোঁজ করছিল না?’
হারু চমকে উঠে বললো, ‘সে কি, তুমি এসব কথা জানলে কি ক’রে?’
রিংকু সে কথার উত্তর না দিয়ে বললো, ‘হারুদা, আমি তো আর
পারছি না। মায়ের কষ্ট আমি আর দেখতে পারছি না যে। ডাক্তার বলেছে, এবার যদি পা কেটে বাদ না দেওয়া হয়, তবে এই ঘা সারা শরীরে ছড়িয়ে যাবে। টাকা হলেই অপারেশনটা হয়ে
যাবে। আমাকে সেই মেয়েটা সাজিয়ে তুমি নিয়ে যাও, হারুদা।’
-- তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে, রিংকু। আমি দালালী করি বটে, কিন্তু তাই ব’লে... না না, এটা আমি করতে পারবো না।’
রিংকু আরো অধীর হয়ে বললো, ‘হারুদা, আমাকে বাঁচাও। টাকার
ব্যবস্থা করতেই হবে।’
-- ঠিক আছে, দাঁড়া।
কয়েকদিন বাদে একটা ভালো লোক আসেবে। তোমাকে তার কাছে নিয়ে যাব, যদি কোন একটা কাজ-টাজের ব্যবস্থা করিয়ে দিতে পারি।’
-- হারুদা, জানি মা
বাঁচবে না। তবুও শেষ চেষ্টা। নিরুপায় হয়েই আমি এই কাজ করতে চাইছি। তুমি যেসব কাজের
কথা বলছো,
সেসব এত সহজে পাওয়া যাবে না। তাছাড়া ওতে টাকা জমতেও অনেক
সময় লাগবে। তার চেয়ে... দাদা, তুমি শুধু
ওনাকে বলবে, ঘরে আলো জ্বালানো যাবে না।
... আর সব টাকা, মানে তিরিশ হাজার টাকা
তখনই একসাথে দিতে হবে।
-- দেখি। আর বাকি যা লাগে, আমি দেব, বোন! তুই ভাবিস না...
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন