কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০১৭

দেবযানী বসু

হাঁটু কিছুটা ভাঁজ ক'রে


()

মানুষরা মেলা করে মিলনমেলা প্রাঙ্গন হয় আর গাছের মেলা করতে পারে না এটা বড় আফশোস উঠোনে গাছ থাকলে তার অবস্থান ভাগের মা গঙ্গা পায় না

হৃদি খুব মেলায় মেলায় ঘোরে আর ওর প্রধান আকর্ষণ গাছের চারা মফস্বল  অঞ্চলে বাড়ি হবার দরুন নানা রকমের ফুল ও ফলের চারা এমনকি শাকসব্জির চাষও করে অল্পমাত্রায় কিছু দুষ্প্রাপ্য ওষধি লতাগাছ লাগিয়েছে সম্প্রতি

আগে যখন বাড়ির গেটটা বাঁশের ছিল তখন একদিন গরু ঢুকে সদ্য বেড়ে ওঠা লাউশাক মুড়িয়ে দিয়ে গিয়েছিল লাউশাকের দিকে তাকিয়ে হৃদির তো চক্ষু চড়কগাছ গরুর ক্ষুরধার বুদ্ধি আর তার নিজস্ব অপরাধবোধ গোরুটিকে দ্রুত  পালিয়ে যেতে দিয়েছিল -- যদিও হৃদি গরুটাকে কিছুতেই মারত না, শুধু লাঠির খোঁজ করেছিল তাড়াবে ব'লে ভারতীয় ডাকটিকিটে স্থান পাওয়া ঘৃতকুমারি আর  ভুঁই আমলা চাষ করেছে এমনিতে ও বাগানে জন্মইস্তক একটা বড় আমগাছ দেখে  আসছেহৃদির দাদুর মা জমিটা আমগাছসহ কিনেছিল গাছে একবছর অন্তর  আম ফলে ভালো ল্যাংড়াই আম দাদু দুঁদে সরকারি চাকুরে ছিলেন, এখন অবসরপ্রাপ্ত হৃদির বাবা একটু নড়বড়ে ব্যর্থ ইঞ্জিনিয়র মাঝে মাঝে কোম্পানি বদলান হৃদি এবার পঞ্চম শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষা দেবে

গাছ বলতে দত্তদের পাতিলেবু, পেঁপে, নারকেল, সুপুরি, বাতাবিলেবু ইত্যাদি আছেএকজন মালিও আছে দেখভাল করার ঐ সব গাছের ছায়ায় ছায়ায় জবা কাঞ্চন  রক্তকরবী চাঁপাগাছেরা বেড়ে উঠেছে দাদু সেভাবে গাছের রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারেন না হৃদিরই যত আধিখ্যেতা গাছ নিয়ে  

হৃদি সমস্ত পরিকল্পনা ছ'কে রেখেছে, পরীক্ষার পর সেই ঐতিহাসিক গ্রান্ড ট্রান্ক রোড ধরে হাঁটবে... চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সঙ্গে দেখা হবে চাঁদনি রাতে... আশমানি ওড়নার ফাঁকে চাঁদ... সে মেহেরুন্নিসা হবে সেই পথ... নিশ্চিত তার দু’ধারে  শিরীষ, ইউক্যালিপটাস, ঝাউ, দেওদার, মেহগনি হৃদি ভাবে তার সন্তানদের সে নাম রাখবে গাছের নামে 

()

বাবা ভদ্রলোক তাড়া দিচ্ছেন স্কুলে যা কম্পিউটার শেখাচ্ছে শেখাক, বাবারটা ছাড়াও বাড়িতে হৃদির জন্য একটা না কিনলেই নয় কিন্তু টাকা জমানোর  স্কিমগুলো থেকে হাজার সাতেকের মত কম পড়ছে 

হৃদি জানে বাড়ির বড়রা কি আলোচনা করে পরীক্ষার পড়া নিয়ে ব্যস্ত সে ঠাকমা বলে আভাস পায় আমগাছটাকে বিদায় করা হবে তক্তা হিসেবে বিক্রি হলে বেশি টাকা পাওয়া যাবে খুব পাতা পড়ে জঞ্জাল হয় শিকড় মাটির নিচে গিয়ে বাড়িতে ফাটল ধরাচ্ছে (অপ্রমাণিত) অন্ধকার ছায়া ছায়া হয়ে থাকে বাড়ি বারান্দায় রোদ্দুর নেই অনেকখানি ডালপালা রাস্তায়, পাশের বাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে. বর্ষাকালে  বিদ্যুতের তারে লেগে শর্ট সার্কিট হয় প্রতিবেশিরা অভিযোগ জানায় পাঁচিলের ধারে প্রতিবেশি উকিলরা গাড়ি রাখে গাড়ির উপর পক্ষিবিষ্ঠা পড়ে ঝড়ে একবার ডাল পড়ে উইন্ডস্ক্রিনে চিড় ধরেছিল বাচ্চারা ঢিল ছুঁড়ে আম পাড়ে পাঁচিল বেয়ে উঠে পাঁচিল ধসিয়ে দেয় ছোঁড়া ঢিল ঘটের দিকে ধেয়ে আসে তাছাড়া বছর  বছর পতঙ্গ প্রতিরোধক ওষুধ স্প্রে করতে হয় সে সব খর্চা আছে উকিলদের বাড়িতে  প্রচুর আম পাঠালেও ওরা ওদের কাঁঠাল দত্তদের দেয় কৃপণের মতো গাছ বেয়ে সাপ ঘরে ঢোকে হৃদি তখন আরো ছোট আমগাছের ডাল বেয়ে ছাদে সাপ নেমে এসেছিল সে এক হুলুস্থুলু ব্যাপার 

হৃদির পরীক্ষা শেষ হাজারিবাগে মামার বাড়ি যাওয়া হবে অনেকদিন আগে থেকে টিকিট কাটা একদিন হৃদি খেতে বসে দাদুকে লুকিয়ে মা বাবার কাছে তীব্র  প্রতিবাদ জানালো গাছকাটার বিরুদ্ধে সেই থেকে পরিবারে ছায়া ঘনিয়ে এল থমথমে গাছের জবাই সে দেখতে পারবে না কম্পিউটার তার চাই না হৃদি সে ভাবে অপ্রতিষ্ঠিত পিতার সন্তান দাদুর একনায়কতন্ত্রের উপর কিছু বলতে পারে না  সবাই ইশারায় চোখে চোখে কথা বলে. সবাই দ্রুতপায়ে এঘর ওঘর করে. এমনকি খগেনমালিও রহস্যজনকভাবে আসে যায় অসময়ে. সবাই কেমন অর্ধেক কথা বলে থেমে যায় ও কিছু না ও কিছু না শোনে কেবল  

হাজারিবাগে মামার বাড়িতে যাবার দিন বেরোবার সময়ে হৃদি আমগাছের দিকে  তাকাল বিপুল মিলন-বিরহে চোখ ছলছল ফিরে এসে কি সে গভীর এক গর্ত দেখতে পাবে! দাদুকে বিদায় জানিয়ে সে শুধু উচ্চারণ করতে পারল, আমগাছটার দায়িত্ব তোমাকে দিলাম দাদাই ওকে দেখো


দাদুর ভারি চশমায় নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন