কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০১৭

শুভ্র মৈত্র

শান্তি   

  
দোষটা তো আমারই ছিল। মা বলেছিল, সবাই বলেছিল। ইস্কুল যাওয়ার পথে ওদের নোংরা কথাগুলোর জবাব দেবার কি দরকার ছিল? সাবিনা তো কিছু বলত না! কি সুন্দর মাথা নিচু করে ওই শব্দগুলো হজম করতো। আমাদের হাঁটা নিয়ে, আমাদের চুল নিয়ে, এমনকি আমাদের বুক নিয়ে করা মন্তব্যগুলিও নীরবে হজম করত সাবিনা। আমি কিছু বলতে গেলে আমাকেই চুপ করাত।
ওদের মুখগুলো চিনে ফেলেছিলাম। যাতায়াতের পথে রোজ দেখতাম কিনা! নাম জানতাম না, জানতে চাইওনি কোনোদিন।
শুধু সেদিন যখন রাস্তায় উঠে এসে সাবিনার হাত ধরে টানল, চিৎকার করে উঠেছিলাম, সমস্ত ঘেন্নাকে জড়ো করে চড় মেরেছিলাম ছেলেটাকে। তারপর একছুটে দুজনেই ইস্কুল। হাঁফাচ্ছিলাম গেটের ভিতরে ঢুকেও। সাবিনা কাঁদছিল, অথচ তখনও কাউকে বলতে দিচ্ছিল না কিছু। আমি যখন তবুও বলে ফেললাম, হেডস্যার ওর বাবাকেই ডেকে পাঠালো। কেন কে জানে!

ওর বাবা তো টাওয়ারে গেছে, মা-ই আসবে জানতাম, আমার মাকে নিয়ে এলো। মাস্টাররা ঘরে নিয়ে গিয়ে কি বলল জানি না, দুজনেই দেখি কাঁদছে। আর তারপর আমাদের দুজনকেই বাড়ি নিয়ে চলে গেল। না, ফেরার পথে ছেলেগুলোকে আর দেখিনি। পরদিন থেকেই আমি বাড়িতে, সাবিনাও। ইস্কুল যাওয়া বন্ধ হলো, বন্ধ হলো খিচুরি খাওয়া, টিফিনের সময় লুকোচুরি, পারমিতার বাড়ি থেকে আনা তেঁতুলের আচার খাওয়া। মা সেদিন বাবার সাথে ফোনে কথা বলছিল, শুনলাম ছেলে দেখছে আমার জন্য, বাইরে কাজ করতে যায়, উপার্জন ভালই...আচ্ছা, আমাদের ইস্কুল যাওয়ার রাস্তায় ঐ ছেলেগুলোর মধ্যেই কেউ নয় তো!

আমি এখন সারাদিন বাড়িতেই, সাবিনার সাথেও খুব একটা দেখা হয় না। মা-ই বারণ করেছে, কি সব দাগ-টাগের কথা বলে, আমি তো কোন দাগ দেখিনি। কি  জানি! ইস্কুলের মাস্টার নাকি বলেছিল আসতে হবে না, শুধু পরীক্ষা দিলেই হবে। ধুর, পরীক্ষা কে দেবে! আমি বই ছুঁইই না, তার চেয়ে বরং ঘরে টিভি দেখি। গতবছর টাওয়ার থেকে ফিরে বাবা নিয়ে এসেছিল।

টিভিতেই দেখি অক্ষয়কুমার, সালমান খান... আজ টিভিতেই দেখলাম নির্ভয়া। ঠিক করেছে, ফাঁসি হওয়াই উচিত! ইস, কি করেছিল ওরা মেয়েটার সাথে! ও তো   বাঁচলই না! টিভিতে মুখগুলো দেখেই রাগে গা জ্বলে যাচ্ছিল। ভালো হয়েছে!

আচ্ছা ভয় পাবে গ্রামের ঐ ছেলেগুলো? আমাদের গ্রাম তো দিল্লী থেকে অনেক দূর। এত দূরে এসে পৌঁছাবে ঐ বড় বড় মানুষগুলি? এখানকার বড় মানুষগুলি যে এসে মা-কে বলেছিল, মেয়েকে সামলে রাখতে, ওই মেয়েটার মাকে কেউ বলে নি?

মা-তো ঐ জন্যেই বলে মেয়েমানুষের শান্ত থাকতে হয়, মানিয়ে নিতে হয়...হ্যাঁ, আমি শিখে গেছি, দোষটা আমারই ছিল...  

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন