রাস্তা
কাজল সেন
রাস্তাটাই কেমন যেন এলোমেলো! যখনই রাস্তায় পা রাখে চন্দ্রকলা, ঠিক মনে থাকে না, সে কোথা থেকে এসেছে, আর কোথায় যাবে। বাঁদিকে অথবা ডানদিকে! সামনে না পেছনে! সব কিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায় চন্দ্রকলার। তা এই তো সেদিন রঞ্জনের কাছে যাবার জন্য বেরিয়ে কখন যে পৌঁছে গেছিল রঞ্জিতের কাছে! রঞ্জিত অবশ্য খুব খুশিই হয়েছিল। --এসো এসো চন্দ্রকলা! কতদিন পরে তুমি এলে! আমার কী মনে হচ্ছে জানো, ‘অনেক দিনের পরে যেন বৃষ্টি এলো’।
চন্দ্রকলাকে দেখে বৃষ্টির উপমা! চন্দ্রকলা অবাকই হয়েছিল। এ তো একান্ত বেরসিকের মতো কথা! কিন্তু চন্দ্রকলা জানে, রঞ্জিত রীতিমতো রসিক। তাহলে! চন্দ্রকলা ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করে, রঞ্জনের কাছে যাবার কথা ভেবেই সে রাস্তায় পা রেখেছিল। তার পা ডানদিকে চলতেও শুরু করেছিল। কিছুটা চলার পর হঠাৎ কখন যে ‘ইউ-টার্ন’ নিয়ে বাঁদিকে চলতে শুরু করেছিল, তা চন্দ্রকলা একেবারেই খেয়াল করেনি। খেয়াল হলো যখন, তখন পৌঁছে গেছে রঞ্জিতের কাছে। অথচ রঞ্জিতের কাছে যাবার কথা ভাবেইনি সে। তাহলে কেন এমন হলো! রঞ্জিতও কি আদৌ ভেবেছিল, চন্দ্রকলা আবার কোনোদিন আসবে তার কাছে!
তা পৌঁছে একপ্রকার ভালোই হয়েছিল। দেখা হয়ে গেছিল সুপর্ণার সঙ্গে। সুপর্ণা তার অনেক দিনের বন্ধু। ইদানীং আর তেমন দেখা সাক্ষাৎ হয় না, আর তাই দুই বন্ধুই কেউ কারও খোঁজখবরও রাখে না। চন্দ্রকলার মনে পড়ে, এই সুপর্ণাই একদিন তাকে নিয়ে গেছিল রঞ্জনের কাছে। সেই প্রথম রঞ্জনের কাছে তার যাওয়া। রঞ্জনকে কি কিছু বলার ছিল চন্দ্রকলার! কিন্তু সেদিন কিছুই বলতে পারেনি সে। তারপরও তো সে কয়েকবার গেছিল রঞ্জনের কাছে। কিন্তু না, কিছুই বলা হয়নি কখনও। রঞ্জন অবশ্য শুনতে চেয়েছিল চন্দ্রকলার কথা। সুপর্ণার কথাও। চন্দ্রকলাকে বলার জন্য বারবার অনুরোধ করেছিল। অনুরোধ করেছিল সুপর্ণাকেও। তারপর নিজের কথা বলতে গিয়ে দুই হাতের তালু মুঠো করেছিল রঞ্জন। যেন তার কিছু ধরে রাখার আছে। যেন কিছু ধরে রাখতে চায়।
না, রঞ্জনের সঙ্গে এখনও পর্যন্ত কোনো সম্পর্কই গড়ে ওঠেনি চন্দ্রকলার। সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি সুপর্ণারও। অথচ তারা দুজনেই চেয়েছিল, কেউ একজন অন্তত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ুক রঞ্জনের সঙ্গে। যে কেউ একজন। আর তারপরই একদিন চন্দ্রকলা সুপর্ণাকে নিয়ে গেছিল রঞ্জিতের কাছে। রঞ্জিত অনেক সহজ, স্বভাবিক, সাধারণ। সুপর্ণাকেও সে সাধারণ ভাবেই আপ্যায়ণ করেছিল। গ্রহণ করেছিল। চন্দ্রকলা খুশিই হয়েছিল সেজন্য। যাক, একজনের তো একটা কিছু সমাধান হলো! সুপর্ণা তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিল। জানিয়েছিল কৃতজ্ঞতাও।
আর তারপর থেকেই রাস্তাটা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেল! চন্দ্রকলা রাস্তায় পা রাখলেই হারিয়ে যায় তার পায়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ। কিছুতেই তাকে নিজের বশে রাখা যায় না। রঞ্জন! রঞ্জনের কাছেই তো যেতে চায় চন্দ্রকলা! রঞ্জনের কাছে যাবার জন্যই সে পা রাখে রাস্তায়। আর প্রতিবারই রঞ্জনের দিশায় কিছুটা এগিয়ে গিয়েও তাকে অগ্রাহ্য করে হাঁটা শুরু করে রঞ্জিতের দিশায়। অনেকটা রাস্তাও অতিক্রম করে যায়। আর তারপর যখন হঠাৎ সম্বিৎ ফিরে পায়, পিছু ফেরে সে।
রঞ্জন একদিন তার দু’হাতের তালু মুঠো ক’রে নিজের কথা কিছু বলেছিল। শুনতে চেয়েছিল চন্দ্রকলার কথা। সুপর্ণারও কথা। কিন্তু তারা কেউ কিছুই বলতে পারেনি সেদিন সেই অসাধারণ পৌরুষের মুখোমুখি হয়ে। রঞ্জন কি তাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল! ছুঁতে গেলে যে বিস্ফোরণ ঘটার সম্ভাবনা ছিল, তার আঁচ সামলানোর ক্ষমতা তাদের ছিল না! সুপর্ণার না হয় সে সাহস ছিল না। কিন্তু চন্দ্রকলারও কি ছিল না! হয়তো ছিল। তাহলে! রঞ্জন সহজ, স্বাভাবিক, সাধারণ। সুপর্ণা রঞ্জিতকেই গ্রহণ করেছিল। চন্দ্রকলা হয়তো এতটা সহজ চায়নি। হয়তো তার মনে হয়েছিল, নমনীয়তা থেকে অনেক বেশি কাম্য কাঠিন্য। জল নয়, তার যে চাই অনল!
কিন্তু রাস্তা কেন এমন বেখেয়ালি হয়! কেন তাকে পৌঁছে দিতে পারে না প্রত্যাশিত গন্তব্যে! রাস্তায় পা রাখলেই কেন সে হারায় তার দিশা! কেন সে সেদিন রঞ্জনের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করেও পৌঁছে গেছিল রঞ্জিতের কাছে! হ্যাঁ, এই সুযোগে সুপর্ণার সঙ্গে দেখা হয়েছিল তার। কতদিন পরে দেখা হলো! কতদিনের বন্ধু! কিন্তু সুপর্ণার সঙ্গে দেখা করার কথা তো একেবারেই ভাবেনি চন্দ্রকলা । তাহলে কি রঞ্জিতের সঙ্গে দেখা করার গোপন আকাঙ্ক্ষাই তাকে টেনে এনেছিল! আর রঞ্জিত! রঞ্জিত কি কখনও ভাবেনি! তার নাম চন্দ্রকলা। অথচ রঞ্জিত তাকে তুলনা করেছিল বৃষ্টির সঙ্গে। কেন! রঞ্জিত কি তাহলে সত্যি সত্যি কোনোদিন চন্দ্রকলার কাছে বৃষ্টিপাত আশা করেছিল! কিন্তু চন্দ্রকলা যে শুধুই কামনা করেছিল অনল। অনলের তাপে সে পুড়ে মরতে চেয়েছিল সারা জীবন। অথচ রাস্তাটাই এমন এলোমেলো, কখনই সে পৌঁছতে পারলো না তার কাম্য ঠিকানায়। রাস্তা কেন এমন এলোমেলো হয়!
রাস্তাটাই কেমন যেন এলোমেলো! যখনই রাস্তায় পা রাখে চন্দ্রকলা, ঠিক মনে থাকে না, সে কোথা থেকে এসেছে, আর কোথায় যাবে। বাঁদিকে অথবা ডানদিকে! সামনে না পেছনে! সব কিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায় চন্দ্রকলার। তা এই তো সেদিন রঞ্জনের কাছে যাবার জন্য বেরিয়ে কখন যে পৌঁছে গেছিল রঞ্জিতের কাছে! রঞ্জিত অবশ্য খুব খুশিই হয়েছিল। --এসো এসো চন্দ্রকলা! কতদিন পরে তুমি এলে! আমার কী মনে হচ্ছে জানো, ‘অনেক দিনের পরে যেন বৃষ্টি এলো’।
চন্দ্রকলাকে দেখে বৃষ্টির উপমা! চন্দ্রকলা অবাকই হয়েছিল। এ তো একান্ত বেরসিকের মতো কথা! কিন্তু চন্দ্রকলা জানে, রঞ্জিত রীতিমতো রসিক। তাহলে! চন্দ্রকলা ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করে, রঞ্জনের কাছে যাবার কথা ভেবেই সে রাস্তায় পা রেখেছিল। তার পা ডানদিকে চলতেও শুরু করেছিল। কিছুটা চলার পর হঠাৎ কখন যে ‘ইউ-টার্ন’ নিয়ে বাঁদিকে চলতে শুরু করেছিল, তা চন্দ্রকলা একেবারেই খেয়াল করেনি। খেয়াল হলো যখন, তখন পৌঁছে গেছে রঞ্জিতের কাছে। অথচ রঞ্জিতের কাছে যাবার কথা ভাবেইনি সে। তাহলে কেন এমন হলো! রঞ্জিতও কি আদৌ ভেবেছিল, চন্দ্রকলা আবার কোনোদিন আসবে তার কাছে!
তা পৌঁছে একপ্রকার ভালোই হয়েছিল। দেখা হয়ে গেছিল সুপর্ণার সঙ্গে। সুপর্ণা তার অনেক দিনের বন্ধু। ইদানীং আর তেমন দেখা সাক্ষাৎ হয় না, আর তাই দুই বন্ধুই কেউ কারও খোঁজখবরও রাখে না। চন্দ্রকলার মনে পড়ে, এই সুপর্ণাই একদিন তাকে নিয়ে গেছিল রঞ্জনের কাছে। সেই প্রথম রঞ্জনের কাছে তার যাওয়া। রঞ্জনকে কি কিছু বলার ছিল চন্দ্রকলার! কিন্তু সেদিন কিছুই বলতে পারেনি সে। তারপরও তো সে কয়েকবার গেছিল রঞ্জনের কাছে। কিন্তু না, কিছুই বলা হয়নি কখনও। রঞ্জন অবশ্য শুনতে চেয়েছিল চন্দ্রকলার কথা। সুপর্ণার কথাও। চন্দ্রকলাকে বলার জন্য বারবার অনুরোধ করেছিল। অনুরোধ করেছিল সুপর্ণাকেও। তারপর নিজের কথা বলতে গিয়ে দুই হাতের তালু মুঠো করেছিল রঞ্জন। যেন তার কিছু ধরে রাখার আছে। যেন কিছু ধরে রাখতে চায়।
না, রঞ্জনের সঙ্গে এখনও পর্যন্ত কোনো সম্পর্কই গড়ে ওঠেনি চন্দ্রকলার। সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি সুপর্ণারও। অথচ তারা দুজনেই চেয়েছিল, কেউ একজন অন্তত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ুক রঞ্জনের সঙ্গে। যে কেউ একজন। আর তারপরই একদিন চন্দ্রকলা সুপর্ণাকে নিয়ে গেছিল রঞ্জিতের কাছে। রঞ্জিত অনেক সহজ, স্বভাবিক, সাধারণ। সুপর্ণাকেও সে সাধারণ ভাবেই আপ্যায়ণ করেছিল। গ্রহণ করেছিল। চন্দ্রকলা খুশিই হয়েছিল সেজন্য। যাক, একজনের তো একটা কিছু সমাধান হলো! সুপর্ণা তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিল। জানিয়েছিল কৃতজ্ঞতাও।
আর তারপর থেকেই রাস্তাটা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেল! চন্দ্রকলা রাস্তায় পা রাখলেই হারিয়ে যায় তার পায়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ। কিছুতেই তাকে নিজের বশে রাখা যায় না। রঞ্জন! রঞ্জনের কাছেই তো যেতে চায় চন্দ্রকলা! রঞ্জনের কাছে যাবার জন্যই সে পা রাখে রাস্তায়। আর প্রতিবারই রঞ্জনের দিশায় কিছুটা এগিয়ে গিয়েও তাকে অগ্রাহ্য করে হাঁটা শুরু করে রঞ্জিতের দিশায়। অনেকটা রাস্তাও অতিক্রম করে যায়। আর তারপর যখন হঠাৎ সম্বিৎ ফিরে পায়, পিছু ফেরে সে।
রঞ্জন একদিন তার দু’হাতের তালু মুঠো ক’রে নিজের কথা কিছু বলেছিল। শুনতে চেয়েছিল চন্দ্রকলার কথা। সুপর্ণারও কথা। কিন্তু তারা কেউ কিছুই বলতে পারেনি সেদিন সেই অসাধারণ পৌরুষের মুখোমুখি হয়ে। রঞ্জন কি তাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল! ছুঁতে গেলে যে বিস্ফোরণ ঘটার সম্ভাবনা ছিল, তার আঁচ সামলানোর ক্ষমতা তাদের ছিল না! সুপর্ণার না হয় সে সাহস ছিল না। কিন্তু চন্দ্রকলারও কি ছিল না! হয়তো ছিল। তাহলে! রঞ্জন সহজ, স্বাভাবিক, সাধারণ। সুপর্ণা রঞ্জিতকেই গ্রহণ করেছিল। চন্দ্রকলা হয়তো এতটা সহজ চায়নি। হয়তো তার মনে হয়েছিল, নমনীয়তা থেকে অনেক বেশি কাম্য কাঠিন্য। জল নয়, তার যে চাই অনল!
কিন্তু রাস্তা কেন এমন বেখেয়ালি হয়! কেন তাকে পৌঁছে দিতে পারে না প্রত্যাশিত গন্তব্যে! রাস্তায় পা রাখলেই কেন সে হারায় তার দিশা! কেন সে সেদিন রঞ্জনের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করেও পৌঁছে গেছিল রঞ্জিতের কাছে! হ্যাঁ, এই সুযোগে সুপর্ণার সঙ্গে দেখা হয়েছিল তার। কতদিন পরে দেখা হলো! কতদিনের বন্ধু! কিন্তু সুপর্ণার সঙ্গে দেখা করার কথা তো একেবারেই ভাবেনি চন্দ্রকলা । তাহলে কি রঞ্জিতের সঙ্গে দেখা করার গোপন আকাঙ্ক্ষাই তাকে টেনে এনেছিল! আর রঞ্জিত! রঞ্জিত কি কখনও ভাবেনি! তার নাম চন্দ্রকলা। অথচ রঞ্জিত তাকে তুলনা করেছিল বৃষ্টির সঙ্গে। কেন! রঞ্জিত কি তাহলে সত্যি সত্যি কোনোদিন চন্দ্রকলার কাছে বৃষ্টিপাত আশা করেছিল! কিন্তু চন্দ্রকলা যে শুধুই কামনা করেছিল অনল। অনলের তাপে সে পুড়ে মরতে চেয়েছিল সারা জীবন। অথচ রাস্তাটাই এমন এলোমেলো, কখনই সে পৌঁছতে পারলো না তার কাম্য ঠিকানায়। রাস্তা কেন এমন এলোমেলো হয়!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন