কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৩

০১ অমিতাভ প্রহরাজ

কিছু ভার্ষাস, একটা ক্রনিকল-



ঈশোপোনিষদ-এর বিগিনিং, বলা যায় একরকম উপনিষদেরই বিগিনিং


ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্নাৎ পূর্ণমুদচ্যতে
পূর্ণস্য পূর্ণমাদায়ঃ পূর্ণমেবাবশিষ্যতে
ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ

অদঃ অর্থাৎ সে, পূর্ণম মানে সর্বব্যাপী, ইদম্‌ অর্থাৎ এই ও পূর্ণম বা অনন্ত, সর্বব্যাপী। এই পূর্ণ থেকে আবার পূর্ণ উদচ্যতে মানে প্রকাশিত হয়েছেন। আবার পূর্ণস্য পূর্ণমাদায়ঃ মানে পূর্ণ থেকে পূর্ণ আদায় অর্থাৎ সরিয়ে দিলে পূর্ণই অবশিষ্যতে অর্থাৎ অবশিষ্ট থাকে।

এবার দ্বৈতবাদী ও অদ্বৈতবাদী দুজনেই করেছেন কি, প্রথম 'সেই'টিকে পরমব্রহ্ম আর দ্বিতীয় 'এই'টিকে জগৎব্রহ্ম ধরে নিয়ে, হাতে গণ্ডা গণ্ডা 'পূর্ণ' পেয়েছেন আর মনের সুখের 'অসীম', 'অনন্ত', 'অবাধ', 'অগাধ', জাতীয় 'অ'এর মোচ্ছব লাগিয়ে দিয়েছেন। আর তারপর যে যার রাস্তায় ঢুকে গেছেন। একদল পরমব্রহ্ম, জগৎব্রহ্ম হাতে নিয়ে "দুই পেয়েছি, দুই পেয়েছি" বলে চিল্লিয়েছেন। আর আরেকদল জগৎকে ব্রহ্মার একটি দৃশ্যমান জামা মাত্র, পরানো আছে, বলে "কে জিতেছে? এক জিতেছে আবার কে?" চিল্লিয়েছেন। (সাধে বলি উপনিষদের থেকে খচড়া বই দুনিয়ায় দুটো নেই)

দুটির কোনো পথেই না গিয়ে কাছাকাছি একটি ল্যাম্পপোস্টে চড়ে যদি উপর থেকে দেখি। ধরেনি এটি কোনো বিষয় বা জ্ঞানেরই মুখড়া। ধরে নিন আপনি বাঁটুলের লাথি খেয়ে সটান জারোয়াদের মধ্যে পড়লেন। আপনি জারোয়া সম্পর্কে কিছুই জানেন না, এমন কি শব্দটিও না। এবার সেই জারোয়াজগত শিখতে গেলে আপনাকে দুটি পয়েন্ট ক্রিয়েট করতেই হবে। একটা ‘এই’ অর্থাৎ জারোয়া, আর একটা ‘সেই’ অর্থাৎ বাঙালি। তবেই আপনার বিষয় শুরু হবে, "সেই বাঙালিরা যে রকম হাত তুলে হরেকৃষ্ণ নাচে, এরা না শুয়োর মারলে শুয়োরকে ঘিরে একইরকম নাচে", সিগনিফায়ার আর সিগনিফায়েড মনে পড়ে? আর বেশি না হেজিয়ে সোজাসুজি বলি, এটি একটি এ্যাপ্রোচ। এবং এই এ্যাপ্রোচটির সঠিক শিক্ষা থাকলে বিভিন্ন বিষয় বা গন্তব্য বিশেষ ব্যাপার নয়।

(অনেকটা এরকম জায়গা থেকেই আমি ‘ব্যাপার’এর কনসেপ্ট আনি। ‘সেইব্যাপার’ আর ‘এইব্যাপার’এর বদলে করি ‘ব্যাপার’ আর ‘অন্যব্যাপার’, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, মুক্তগদ্য, ছবিওয়ালা লেখা, লেখাওয়ালা ছবি, এইসব ক্লাসিফিকেশনগুলি নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে এদের দিকে এ্যাপ্রোচটা খুঁজে বের করা। যে এ্যাপ্রোচ অতীত থেকে চলে আসছে, তা হলো ‘সেইব্যাপার’, আমাকে খুঁজতে হবে আরেকটা এ্যাপ্রোচ, ‘এইব্যাপার’ যা আমার সাধের কলমি ফুলে ‘অন্যব্যাপার’ নাম নিয়ে কলম দোলায়। প্রসঙ্গতঃ ‘এই’ মানে জানা আছে কি? ধ্বনিভিত্তিক বিশ্লেষণে পাই 'এ'+'ই', 'এ'- থাকে/রাখ/করে/ যাহাতে অথবা ক্রিয়ার আধার। 'ই'- ঈশ্বর বা অনন্ত আনন্দের অংশ, খেয়াল করে দেখবেন 'ই' বলার সময় আমাদের মুখের আকৃতি হাসিকবলিত হয়ে ওঠে, হি হি হি মনে করলেই হলো। মোদ্দা কথা দুয়ে মিলে যেটা পাই তা হলো এমন একটি ক্রিয়া/কার্য যা অনন্ত আনন্দ বা ঈশ্বরের আধার। এবারে এই ধ্বনিভিত্তিক ক্রিয়াভিত্তিক বিশ্লেষণের ম্যাজিক ফুটে উঠবে যখন আপনি জানবেন 'এই' এর তৎসম 'ইদম' এর শঙ্করভাষ্য অনুযায়ী ব্যখ্যা -- কার্যরূপে ব্রহ্ম বা ব্রহ্ম যেখানে দৃশ্যমান জগত হয়ে প্রতিফলিত (অদ্বৈত করতে গেলে এই ক্রিয়াটির জুড়ি নেই, প্রতিফলনও), এবার আসুন 'সেই'তে অর্থাৎ সহিত 'এই', কার সহিত? কিসের সহিত, কেন সহিত? এইটিই তো অনন্ত জিজ্ঞাসা যা দৃশ্যমান জগতে প্রকাশের অযোগ্য বা আরো ছুঁচলো করে বলা যায় প্রকাশযোগ্যতা নেই। যাকে পারসিভ করা ছাড়া গতি নেই। এইটিই সেই খোঁজ। পরম ব্রহ্ম বলো, বম ভোল বলো কি র‍্যাম্বো বলো। আটকাচ্ছে কে? হতেও তো পারে ব্রহ্ম একটি র‍্যাম্বো। তখন সিনেমাটিতে থাকবে যে কোনো একটি থ্রি-এক্স-এর অন্তিমতম দৃশ্য থেকে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক মোডে ঢুকে যাওয়া। তারপর দেখা যাবে র‍্যাম্বোর বাবার লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি স্পার্ম দৌড়চ্ছে আর শুধুমাত্র মেডেল পরে দাঁড়িয়ে আছে র‍্যাম্বোর মায়ের ডিম্বাণু। দৌড়চ্ছে দৌড়চ্ছে এবং দৌড়চ্ছে দিয়ে সিনেমা শেষ। র‍্যাম্বো ফার্স্ট ব্লাড পার্ট জিরো। শালা ব্ল্যাকে টিকিট কেটে বিস্তর মারামারি করে, স্ট্যালোনের পোস্টারে চুমু খেয়ে, এই সিনেমাটা দেখলে যা লাগবে না!!! ব্রহ্মোপলব্ধি আর কাকে বলে??!!! আরে সহমরণ বলো, পাগড়ি দেখবো। সহবাস বলো, স্ট্রবেরি-ভ্যানিলা দেখবো। সহচর বলো, শুয়োরের বাচ্চা দেখবো। কিন্তু সহ এই, একি বিটকেল ব্যাপার, দেখা যায় নাকি?? একটা অসমাপ্ত এক্সপ্রেসান যার অনন্ত সম্ভাবনা। এবার ‘সেই’এর তৎসম ‘অদ’-এর প্রতীকী অর্থ অমরকোষ অনুযায়ী বা শঙ্করভাষ্য অনুযায়ী ব্যখ্যা "যাহা বাক্য ও মনের অতীত, অবাঙমানসগোচর", মাঝে মাঝে মনে হয় হরিচরণবাবু একটু প্রথম প্রথম চলে আসতেন যদি তবে বাচ্চা ছেলেটাকে শাস্ত্রবিদ্যের জাহাজ হয়ে উঠতে আর দেশজুড়ে তক্কো করে করে ঝগড়াঝাটি করে করে নিজের টিন এজটা হারাতে হতো না। এই যে হাঁটা শেখাটাই আসল। সোজাসুজি হাঁটলে বাড়ির দরজা থেকে পুকুরের পাড় অবধি হাঁটা যাবে, তারপর আর যাবে না, এইটে জানার জন্য কেউ হাঁটা শেখে না। একেই বলে ব্যাপার)



যাকগে প্রসঙ্গ থেকে তো প্রশান্ত মহাসাগরে চলে এসেছি, শুধু অন্তর নিতে নিতে। হ্যাঁ, ২০১৩ সালে আলোচনা এমনই হওয়া উচিত। আলোচনা যখন প্রথা বা প্রচলকে উগ্রপন্থীর মতো আক্রমণ করে, ব্লটিং পেপারের রেনকোট বানিয়ে নামিয়ে দেয় টু-মাচ-শ্রাবণে, বা এস্কিমোকে বিক্রি করতে যায় রেফ্রিজারেটর, তখন আলোচকের ফিঙ্গারপ্রিন্ট মুছে ফেলার ননস্টপ, আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয় (যদিও তা থেকেই যায়, কিন্তু ক্রাইম এথিকস বলে তো একটা ব্যাপার আছে!!)এই মুছে ফেলার চেষ্টায় বার বার অন্তর নিতে নিতে। যখন সকলেই চোখের সামনে মহা পাখির মহা চোখ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছে না (কোন ব্যাপার?? হাই মেগাপিক্সেল চোখ পারফেক্ট মহাজুম করলেই হলো।),
মায় তালকানা যুধিষ্ঠিরকেও জিজ্ঞেস করলে

দ্রোণ- "কি দেখছো?"

যুধিষ্ঠির- "আজ্ঞে, দেখিতেছি এক নয়নমণি ভুবনজোড়া"
এই অবস্থায় বাইরে কতরকম জিনিসকে তীর মারলে, সেই ডাইভার্সিটি কাউন্ট হবে।

দ্রোণ- "অর্জুন??"
অর্জুন- "আজ্ঞে, মগডালে মেরেছি, সাইডের ডালে মেরেছি, দাঁড়কাকটাকে মেরেছি, তিনটে গুঁড়িতে মেরেছি, পাঁচুর মা’কে মেরেছি, ভুবন ঘোষের জেঠুর বগলে মেরেছি, রেলিং-এ মেরেছি, আর একটা স্যার, আপনি যেমন বলেছিলেন তেমন করে প্যারাবোলাতে বুমেরাং করে নিজেকে মেরেছি।।"
দ্রোণ- "গ্রেট বেটা, দ্যাটস এ ওয়ান্ডারফুল ডিসকোর্স"

ভীম তৎক্ষণাৎ নকুলকে বললে "(ফিসফিস করে) দেখলি নক্‌লে, বুড়ো বেটা কি বললে, ডিসকোর্স না ফিসকোর্স... এ নির্ঘাত সুপুত্তুর অর্জুনটার পাকামি, বুড়ো কোর্সের বাইরের কোনো সাবজেক্ট পড়াচ্ছে। দাঁড়া, বুড়োটাকে স্ট্রেটকাট জিজ্ঞেস করি। (বিকট চিল্লিয়ে) স্যার, ওই ডিসকোর্স থেকে কি কোশ্চেন আসবে কুরুক্ষেত্রে?"

দ্রোণ- "(চমকিয়ে) ওফ্‌!! টোল্ড ইউ সো মেনি টাইমস মিস্টার ভীমসেন যে, ওরকম দুমদাম গরিলার মতো চেঁচিয়ো না... জেনে রাখবে আমরা প্রাচ্য, পাশ্চাত্য নই... প্রাচ্য ক্রিয়াভিত্তিক ভাষায় কথা বলে আর পাশ্চাত্য লোগোসেন্ট্রিক..."

ভীম- "(জনান্তিকে) এই রে আবার সেই ফাটা রেকর্ড চালিয়েছে... (জোরে) জানি স্যার, হরিবাবু ল্যাংগুয়েজ ক্লাসে বলেছেন, বারীনবাবু কবিতার ক্লাসে বলেছেন, কলিমবাবু ডিকশনারি ক্লাসে বলেছেন, আর ওই নতুন ছোকরা, চশমা চোখে সিগারেট খায়, ও তো কথায় কথায় বলে এ জিনিস... সেদিন বললেম, দ্যাখো ভাই তুমিও একটা অখাদ্য জিনিস খাও, পেট ভরে না। আমিও একটা অখাদ্য জিনিস খাই, পেট ভরে না। কিন্তু তোমার খেয়ে খুব আনন্দ হয় আর আমার খেয়ে খুব দুঃখ। তুমি সিগারেট খাও, মেজাজ আসে, আনন্দ হয়। আমি গদা খাই, খুব লাগে, দুঃখ হয়। তাহলে পাটিগণিতের নিয়মে সিগারেট ইকোয়াল টু আনন্দ আর গদা ইকোয়াল টু দুঃখ। তাহলে ধরো তুমি যদি আমার হাতে গদা খাও আর আমি যদি তোমার সিগারেট খাই, তবে কি তোমার আনন্দ আর দুঃখ কাটাকুটি হয়ে যাবে আর আমার দুঃখ আর আনন্দ কাটাকুটি হয়ে যাবে? আমরা কি শান্তিঃ হয়ে যাবো? এ শুনেই তো ছোকরার কি হাসি... বলে বললে, ক্রিয়াভিত্তিক ভাষা বলেই ওই কাটাকুটিটা হবে না, বলে কিনা 'খায়' ক্রিয়াপদ নাকি দেবতার বাবা, ৩৪টি অবতার আছে তার... ওই ভার্বসেন্ট্রিক আর লোগোসেন্ট্রিক শুনতে শুনতে কানে পচা গোবর হয়ে গেল... ওটা জানি"

দ্রোণ- "না জানো না পুরোটা... বিষয়টা শুধুমাত্র ক্রিয়া আর প্রতীক দিয়ে নয়। কগনিটিভ সায়েন্সের চোখ দিয়ে দেখলে কথা বলার সময় একটা প্রেশার ওয়েভ পড়ে মধ্যবর্তী স্পেসটিতে... ফলে একটি তরঙ্গ তৈরি হয় যা মধ্যবর্তী কণিকাগুলিকে দুলিয়ে দেয়, যে দোলন কানে এসে ধাক্কা মারে বা বলা যায় মাথায় ধাক্কা মারে... এবার ক্রিয়াভিত্তিক বলে প্রাচ্যের ভাষা তরঙ্গপ্রধান আর লোগোসেন্ট্রিক বলে পাশ্চাত্যের ভাষা, কণিকা প্রধান... এবার তরঙ্গপ্রধান যে ভাষা সেই ভাষা ফ্রিকোয়েন্সি নির্ভর হবে আর কণিকাপ্রধান যে ভাষা সেই ভাষা ওয়েভ লেন্থ নির্ভর... এবার তুমি ওই যে বিকট চিল্লালে, উচ্চগ্রামে, এর তরঙ্গের অভিঘাত সরাসরি মস্তিষ্কে আঘাত করবে..."

ভীমসেন- (বেজায় অবাক হয়ে) ভাষায় তরঙ্গ আর কণিকা!!!
দ্রোণ- কণিকাপ্রধান ভাষায় বললে সাবজেক্টিভিটি আর অবজেক্টিভিটি
ভীমসেন- আরে দূর মশাই, কুরুক্ষেত্রে কোন সাবজেক্টে কোন পেপারে থাকবে এই ভিরিকিটি?
শোনা মাত্রই আমার মাথায় মিগ-২১ এর মতো ভেঙে পড়লো, আরে কোথায় ছিলাম যেন?? ঠিক সেই দিনটির মতো যেদিন আমি চার বস্তা বই আর এক ট্রলিব্যাগ জামাকাপড়, একটা ল্যাপটপ, একটা ল্যাপটপ কুলার নিয়ে সক্কালবেলা তন্ময়ের সাথে বেরিয়ে গেলাম। (এখন তুমি যদি ইজমিক রাইটিং পাঠে অভ্যস্ত না হয়ে থাকো তাহলে হয় তন্ময়ের পদবী খুঁজবে নয়তো তন্ময়ের চশমার কেমন গন্ধ, এবং সেখানেই হড়কাতে বাধ্য তুমি হে পাঠক। নতুন পথঘাট, একটু চিনিয়ে দি হাত ধরে, শুধু ময় নিয়ে তুমি চলো তুমি পাঠক। জাস্ট একটা ময়। আমার একটি নতুন ময় হয়েছে ধরো), দিয়ে সারাদিন কুদঘাট থেকে ঢাকুরিয়া থেকে বেলঘরিয়া। নেহাৎ আমার সেভেন ফিফ্‌টির পাণ্ডুলিপির সাথে প্রিয় ছাদ-সিরিজটিও হারিয়ে গেছে, নইলে তার জন্য এ্যাত হ্যাঙ্গাম পোয়াতে হয়! রাত্রি দশটায়, ৪ ভবনাথ সেন স্ট্রীটে দোতলায়, মেট্রোর কম্পার্টমেন্টকে মাঝামাঝি চিরে দিলে যেমন হয়, তেমনি সরু একফালি শসার মতো ঘর, তার মাঝে আরো সরু শসার মতো রাখা দুটি তক্তাপোষ পরপর... তার ওপর নুন মরিচের গুঁড়োর মতো ছড়িয়ে আমি, আমার বই, আমার নানারকম ময়, ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘটে গেছি একটি নূতন স্পেসের মধ্যে, আর আমার কিছুতেই মনে পড়ছে না পাঁচ অক্ষরের শব্দটি কি যেন?? কি যেন?? যেখানে আমি ছিলাম এই আজ শুরুর আগে... হঠাৎ!! ঘটনাচক্রে!!!!! মনে পড়ে গেল কোথায় ছিলাম; ঘটনাচক্রে!!!!!!



খুব গুরুগম্ভীর এইসব বলার পর মনে হতেই পারে গুরুগিরি চালাচ্ছে... তাই শেষাবতারে নিজের খোলস নিজেই ছাড়াতে বাধ্য হলাম...

কালী ক্রনিকলস-

কিছু বিতে হয়ে যাওয়া কালের ছবি, অফিস ছবি, আজের ছবি, কালের ছবি......... ছোটবেলায় কত কী মজার ধারণা থাকে, কিছু অন্যের দুষ্টুমিতে তৈরি হয়, তো কিছু নিজের দুষ্টু বোকামিতে... যেমন যার কাছ থেকে প্রথম ‘মারকাটারি’ শব্দটা শুনি, সেই অজানা ভদ্রলোক/ভদ্রমহিলা আমাকে বলেছিলেন শব্দটা হচ্ছে "মারকাটারি মর জানা/ ও ইয়ার জানে জানা"... এই এতবড় শব্দটিকে তো বলা যায় না, তাই ছোট করে ‘মারকাটারি’ বলতে হয়... উনি বলেছিলেন, না স্বরচিত‌, জানি না, এখন ঝাপসা হয়ে গেছে উৎস, কিন্তু মোদ্দা ব্যাপার বহু বড় বয়স অবধি আমি বিশ্বাস করতাম সঠিকভাবে ‘মারকাটারি’ বলতে গেলে "মারকাটারি মর জানা/ ও ইয়ার জানে জানা" বলতে হবে... একইরকম জানতাম যে, পুরো শব্দটা হলো "জয় মা কালী/পাঁঠাবলি"... এখনো প্রথম অংশ উচ্চারণ করতে গেলে মনে মনে বলিপ্রদত্ত ছাগশিশু আপনা থেকে চলে আসে... না না, আমি এমন কোনো উৎকট রকমের কালীভক্ত নই যে, আজ মনে মনে জয় মা কালী বলেছি...


(বস্তুত্ব বলতে গেলে আমি ঘোরতর নাস্তিক... আগে আক্রমণাত্মক নাস্তিক ছিলাম, ছোটবেলা থেকেই আমার হিরো ডিরোজিও... একটু বড় হতে আব্রাহাম কোভুর... আহা, ডিরোজিও!! এখন আর আসে না, কিন্তু সেই সময়ে স্কুলের বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ডিরোজিও ভক্ত ছিলাম... আর সেই আমরা যখন প্রথম উৎপল দত্তের ‘ঝড়’ দেখলাম, রাধাকান্ত দেব -- উৎপল দত্ত, উজ্জ্বল সেনগুপ্ত বললে বুঝবে না আজকের পোলাপান্‌, যীশুর বাবা -- ডিরোজিও, দক্ষিণারঞ্জনের ভূমিকায় অকালপ্রয়াত স্বরূপ... স্বরূপই তো নাম, না? সর্বোত্তম ভিলেনির স্বাক্ষর ‘বাঘবন্দি খেলা’য় যিনি উত্তমকুমারের ছেলে হয়েছিলেন? কোথেকে কোথায় যাচ্ছি!! তা যাই, মাঝরাত্রে এমন একটি আমোদ হলো যে মজলিশি মেজাজের হানা অবশ্যম্ভাবী হয়ে গেল... যাকগে, ডিরোজিও প্রসঙ্গ শেষ করি... তা সেই প্রথমবার ‘ঝড়’ দেখার ফীলিংস একজন কট্টর ইয়ং বেঙ্গলের কাছে যে কি, তা বলে বোঝাবার নয়!!! ভেতরে এমন টগবগের জোর আর জোশ যে, বাইরে থেকে শুনলে পাঁচটা ম্যামথ কথাকলি শিখছে মনে হবে... ‘ঝড়’ আর দ্বিতীয়বার দেখিনি, ওই ফীলিংস নষ্ট হয়ে যাবে ওই ভয়ে... উৎপল দত্ত সিনেমাটিতে একটা যাত্রা এফেক্ট এনেছিলেন, বস্তুত ‘ঝড়’ যাত্রাপালা রূপেই এনেছিলেন উনি প্রথমে, প্রণম্য মানুষ... এখন সেই যাত্রা এফেক্ট চোখে লাগবে জানি... তাই আর দেখিনি... আর আমার প্রিয়তম সিনেমার লিস্টে ‘ঝড়’ পার্মানেন্টলি থেকে গেছে কোনো সিনেমাটিক কারণে নয়, আমার হীরোকে জ্বলজ্যান্ত চোখের সামনে দেখার সুযোগ করে দিয়ে... তাও এমন সময়ে যখন আমার হীরো বিপন্ন...
বিপন্ন মানে, কীভাবে যে এই সাহেব আমার জীবনে ঢুকেছিলেন মনে নেই, সম্ভবতঃ একটি বই যাতে ওনার কবিতাগুলি, কিছু ক্লাস আর জীবনী ছিল, এর জন্য দায়ী... সিলেবাসের বহু আগে জেনে গেছিলাম ইয়ং বেঙ্গলের কথা... ওই সমাজ নিয়ে খিল্লি আমার চুম্বক হয়েছিল... নেহাত দুর্গাপুরে দুমদাম বীফ পাওয়া যায় না তাই, না হলে ক্লাস সিক্সেই অনাসৃষ্টি বাধিয়ে ছাড়তাম... এমন কী কীভাবে খেয়ে হাড়গুলো কোন্‌ কোন্‌ কাকু আর জেঠুদের বাড়িতে ছুঁড়বো, তাও ঠিক করা ছিল... বাক্যটিকে একই রেখে দেব ঠিক করেছিলাম ১৮২৩ সালে যেটা ছিল, "ওই দেখ গোহাড়! গোহাড়!!"... প্রচণ্ড দুঃখ হতো আমার হিরোর জীবনটি মাত্র ২২ বছরের বলে... সেই থেকে যুক্তিবাদ ও প্রশ্নের প্রতি অর্গাজমিক আকর্ষণ, তার থেকে আর মুক্তি মিললো না... গায়ে কাঁটা দিত/দেয় যখন চোখের সামনে দেখতে পেতাম হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও ক্লাসে বলছেন "সবকিছুকে প্রশ্ন করবে... সবকিছুকে..." গর্জে উঠছেন "...এমন কি আমাকেও... ভাববে আমিও ভুল হতে পারি... জেনে রাখবে প্রশ্নের ওপরে কেউ নেই, কিছু নেই"... মুশকিলটা হয়েছিল যে আমার হীরো, যে রাধাকান্ত দেবের মুখের ওপর পদত্যাগ পত্র দিয়ে আসে, বলে আসে "আমি হিন্দু কলেজে না থাকলেও আমার ক্লাস থাকবে না, ভাবছেন কী করে??" সে দুরন্ত দেখতে, দুর্দ্ধর্ষ গাম্ভীর্য তাঁর, তাঁর ব্যক্তিত্ব অসামান্য, না হলে এতগুলো দামড়া ছেলেকে ঘরছাড়া করা যায়?? এদিকে ডিরোজিওর ওপর যা কিছু জিনিসপত্র আমার কাছে আছে তাকে সামান্য মনে হচ্ছে... আরো জানার ইচ্ছে, স্কুলের হিসট্রি টিচার এ বিষয়ে বিশেষ সাহায্য করতে পারলেন না... তখন কলকাতায় এসেছি একবার, দুবার... ঠিক কলকাতা নয়, কাকুর বাড়ি, উত্তরপাড়া... ওটাই কলকাতা আমাদের কাছে... উত্তরপাড়ায় একটা জাঁদরেল লাইব্রেরি আছে রাজার বানানো... যদিও ভদ্রলোক মানে রাজা প্যারীমোহন মুখোপাধ্যায় আমার কাছে ভিলেন... কারণ একটাই, স্বামীজীকে চিঠি লিখেছিলেন, সাহায্য করেছিলেন!!! তখন যুক্তিবাদের সাথে এ্যাটাচড ফাউ হয়ে যে গোঁড়ামি আসে তাকে ছাড়িয়ে ফেলে গ্রহণ করার মানসিক ক্ষমতা জন্মায়নি... আধ্যাত্মিক আ হয়েছে কি হয়নি, রে রে রে রে করে তেড়ে যাওয়াটাই ধর্ম... অগ্রাহ্য করার শক্তি যে বিরোধিতা করার শক্তির চেয়ে অনেক বেশি, বহু পরে বুঝেছি... ফ্রুটলেস তর্ক আমাদের জীবনের মস্ত এক খাবলা তুলে নিয়ে যায় যদি না সাবধান হওয়া যায়... যাকগে, রাজা না হয় কংগ্রেসকে অবজ্ঞা করেছিলেন, দেশীয় রাজ প্রথার সমর্থক ছিলেন, সব বাদ দিলেও যে লাইব্রেরীটি রেখে গেছেন তার জন্যই সকাল বিকেল প্রণাম জানাতে কোনো দ্বিধা নেই... তো সেই উত্তরপাড়া, আমার প্রিয়তম ও চষে ফেলা শহরগুলির মধ্যে একটা... কাকার নিজেরই দর্শন ও সাহিত্যের, বিশেষতঃ বামপন্থী দর্শন ও সাহিত্যের লাইব্রেরীসম কালেকশান... কাকিমা যাদবপুর ইউনিভার্সিটির সংস্কৃতের অধ্যাপিকা, থিসিস পেপার মনুসংহিতার ওপর... কাকিমার সাথে চলে যাই ইউনিভার্সিটি, সংস্কৃত ডিপার্টমেন্টে ক্লাসে টুক করে বসেও যাই (ওসব আরেকটু পরে)... তা এইরকম সোনায় সোহাগা কম্বিনেশান আমার হীরোকে বিপন্ন করে ফেলবে, দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি... লাইব্রেরী থেকে পেলাম ‘রামতনু......’, ‘জ্ঞানপ্রকাশ’, রসিককৃষ্ণ মল্লিকের সম্পাদিত ‘ইয়ং বেঙ্গল মুভমেন্ট- বেঙ্গলি কালচারাল রেনেসাঁ’... ‘নব্যবঙ্গ আন্দোলনের সুফল ও কুফল’... বাড়ির দৌলতে গবেষণার দু একটা জিন উপহার পেয়েছিলাম... আমাদের পরিবারে বাবাকে নিয়ে, কাকুদেরকে, কাকিমাদেরকে নিয়ে সর্বমোট ৫ জন গবেষক... বাবার মামা বিষ্ণুপদ পন্ডা বাংলা ও ওড়িয়া সাহিত্যের রীতিমতো নামকরা গবেষক... পরবর্তীকালে ভুবনচন্দ্রের চৈতন্যমঙ্গল, একটি সম্পূর্ণ নতুন চৈতন্যমঙ্গল আবিষ্কার করেন, তাঁর প্রথম গবেষণা পেপার বিহারীলালের ওপর... যাকগে ওই বইগুলি পড়তে পড়তে আমার হীরোর মধ্যে থেকে বেরিয়ে এলো ড্রোজু সাহেব, যে অমিতব্যয়ী এবং অত্যন্ত হাস্যকর দেখতে... পাঁচ ফুটেরও কম তার উচ্চতা, তা ঢাকার জন্য উঁচু জুতো ও লম্বা টুপি পরতেন... টকটকে লাল ব্রিচেস পরে বিকেলবেলা ড্রোজু সাহেব যখন ঘোড়ায় চড়ে বেরোতেন, তখন "তা দেখিয়া হাস্য সম্বরণ করা দায় হইত, বিশাল আরবি ঘোড়ার ওপর খর্বকায় লাল পোশাকের ড্রোজু সাহেবকে দেখা খুবই আমোদের ব্যাপার ছিল নগরবাসীর কাছে"... পড়ানোর সময় ভয়ঙ্কর লাফ ঝাঁপ ও অঙ্গভঙ্গি করতেন যা এক কৌতুকের জন্ম দিত"......... আমার বুক ভেঙে যাচ্ছে পড়তে পড়তে... জানছি দক্ষিণারঞ্জনের সাথে তাঁর বোনের প্রণয়কাহিনী... জানছি তাঁর মৃত্যুর পর মিছিল বেরিয়েছিল স্বতঃস্ফূর্ত, ঢাক ঢোল নিয়ে, "ড্রোজুর ব্যাটা মরেছে" গান করে... এইরকম সময় দেখলাম ‘ঝড়’... উৎপল দত্তকে ধন্যবাদ, উনি বাস্তবানুগ না হয়ে ডিরোজিওকে নায়কের মতোই দেখিয়েছিলেন... আমার সেই যন্ত্রণা খানিকটা ঠাণ্ডা করে দিয়ে গেল ‘ঝড়’... পরে পুরনো কলকাতার, অষ্টাদশ শতাব্দীর কলকাতা ও ঊনবিংশ শতাব্দীর কলকাতা নিয়ে যখন রিসার্চে মেতে আছি, কেন এই কলকাতা কেন্দ্রিকতা বাংলায় তার রহস্য ভেদ করার প্রবল আকাঙ্ক্ষায়, তখন আমার হীরো সম্বন্ধে আরো অপ্রিয় সত্য কিছু উদ্ধার করি, যেগুলি অজানা... দেনায় আকণ্ঠ ডুবে থেকেও প্রতিদিন রাজকীয় পার্টি দিতেন তাঁর ছাত্রদের নিয়ে, থামাননি... এবং তাঁর টাকা জোগাড় করার জন্য কি কি পন্থা অবলম্বন করেছিলেন, এইসব আবিষ্কার করার সময় আর অত কষ্ট হয়নি... কারণ ততদিনে আমি আমার হীরোর ক্যারিশ্মা ছেড়ে বিশ্বাসে মন দিয়েছিলাম এবং ওরই বলে যাওয়া কথা, মৃত্যুশয্যায় পর্যন্ত, "প্রশ্ন ছেড়ো না, প্রশ্ন থামিও না" মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।

ছিলাম কোথায়, আর এলাম কোথায়!!! তা এতে হয়রাণ হওয়ার কিছু নেই, আগেই বলেছি ২০১৩ সালে লেখা নতুন কোনো দিশার সন্ধানে সময় নষ্ট করবে না... কারণ দিশাগুলি বহুচর্চিত... এখন লেখা দিশেহারা হওয়ার দিকেই এগোবে... তা বলছিলাম মা কালীর কথা... কদিন আগে স্বপ্ন দেখেছি এক্সিপ্লোন সিরাপের ছিপি খুলতেই মা কালী বেরিয়ে এলেন, এসে ঠাসঠাস করে থাপ্পড় মারলেন, তারপর আমাকে বললেন, "আমার জন্য কিছু নিয়ে আয়, যা তোর মনে হয়"... আমি দৌড়ে গিয়ে একটা জিভছোলা নিয়ে এলাম (তখন এক জায়গায় গেছিলাম, ব্রাশ নিয়ে গেছি, ওটি নিয়ে যেতে ভুলে গেছি, সেই সূত্রে মাথায় ছিল)... সেটি পেয়ে খুব খুশি হয়ে আমাকে স্বেচ্ছামৃত্যু বর দিলেন... আমিও স্বেচ্ছামৃত্যু বর শুনে হেব্বি খুশি হয়ে বললাম স্বেচ্ছামৃত্যু, মানে সেই স্বামী বিবেকানন্দের মতো, অমরনাথে নিবেদিতার/মার্গারেটের সঙ্গে যাত্রা করে লিঙ্গ দর্শনের সময় যেমন পেয়েছিলেন, তেমনি?? বলতে আমাকে উদুম ক্যালালেন, "নিজেকে বিবেকানন্দ ভাবছিস, তোর সাহস হয় কী করে ইত্যাদি" বলে আরো কয়েকটা থাপ্পড় মেরে চলে গেলেন...... মাইরি বলছি, সত্যিই এই স্বপ্ন দেখেছিলাম...! এবারে পুজোয় একা, পা ভাঙা, ভালো লাগছে না... সকাল থেকে বসে বসে বারীনদার আত্মজীবনীটা বেশ কয়েকবার পড়লাম... একা থাকলে আলো টালো জ্বালানোর বালাই নেই... মন ফেরাতে সদ্য শিখতে শুরু করা স্প্যানিশ লেসন নিয়ে বসলাম... এই খুটুর খুটুর করছি... হঠাৎ পেছনে খুটুর খুটুর, রাত্রি প্রায় একটা... দেখি আমার বাড়িওয়ালা, বুবুদা... এই বুবুদাকে নিয়ে গোটা বই হতে পারে এমন চরিত্র... অসাধারণ মানুষ, ততোধিক অসাধারণ মন... কিন্তু মুশকিল হচ্ছে ভদ্রলোক আন্তর্জাতিক মানের গবেট... একটাই উদা দি, পরে বিস্তারে গল্প করা যাবে... ওনার ফোন রিচার্জের দোকান আছে... আমার নেট ফুরিয়ে গেছে, ডংগল সিমটার নাম্বার দুটি মনে পড়ছে, যে কোনো একটা ঠিক... ওনাকে দুটি নাম্বার দিয়ে বললাম, দেখুন একটি ঠিক, একটি ভুল... আপনি একটু ফোন করে দেখে নেবেন রিং হচ্ছে কি হচ্ছে না (মানে, যেটায় হবে না সেটাই ডংগল সিম)... ভদ্রলোক অত্যন্ত দায়িত্ব সহকারে ফোন করলেন একটিতে, রিং হচ্ছে দেখলেন, অপেক্ষা করলেন, একজন মহিলা ফোনটি তুললেন... উনি নম্বরটা বলে কনফার্ম করলেন মহিলার সাথে যে, এটা সেই নম্বর কিনা (ফোন যখন তুলেছেন তখন অন্য কী করে হয়!!)... তারপর কনফার্ম করলেন মহিলাটি অমিতাভ প্রহরাজকে চেনেন কিনা... দুর্ভাগ্যজনক ও রহস্যজনকভাবে ভদ্রমহিলা আমায় চেনেন বললেন... উনি নিশ্চিন্ত হয়ে ৩৯৯/- র ডংগল সিম নেট প্যাক মেরে দিলেন ওই ভদ্রমহিলার নম্বরে এবং অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে ফোন করে আমাকে জানালেন যে, উনি প্যাক মেরে দিয়েছেন এবং আমার ডংগলটি যে ভদ্রমহিলা তুলেছিলেন তাঁর সাথে কথা বলে কনফার্ম করে নিয়েছেন উনি আমাকে চেনেন!!!!!!!!!!!
তো সেই বুবুদা, রাত্রি একটার সময়... নড়বড়ন্ত... "আপনার জন্য আমার খুব দুঃখ হলো তাই এলাম"... এই রে এককালে এমন দুঃখ আমার প্রচুর হতো, এর অভিঘাত কী হতে পারে আমি জানি... "পুজোর দিন, আর আপনি ল্যাংড়া হয়ে বসে আছেন... খুব দুঃখ হলো... শুয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু তারপর উঠে চলে এলাম (বিটিডাব্লু ওনার বাড়ি হেঁটে প্রায় মিনিট কুড়ি) জানি আপনি জেগে থাকবেন, একা বসে বসে সেই খটাখট করবেন, আপনি ল্যাংড়া হয়ে গেলেন, আমার খুব দুঃখ হলো"
- "আরে না না, এখন ক্র্যাচ নিয়ে হাঁটতে হচ্ছে, পরে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে" এবার আমার সান্ত্বনা দেওয়ার পালা
- "না না, আপনি ল্যাংড়া হয়ে গেলেন, খুব দুঃখ হলো"
এনাকে এখন ল্যাংড়া, ফজলি পার্থক্য বোঝানোর চেষ্টা বৃথা... হঠাৎ হাতে একটা জবাফুল দিয়ে বললেন "মাথায় ঠেকিয়ে প্রণাম করে জয় মা কালী বলুন জোরে, আপনি আর ল্যাংড়া হবেন না... আমি নিজে পুজো দিয়েছি দক্ষিণা কালীর মন্দিরে আপনার নামে... আর আমার খুব দুঃখ হলো তাই কয়েকটা প্রদীপ আর মিষ্টি আনলাম, আপনারা আর্টিস্ট মানুষ, আপনাদের ঘরে প্রদীপ জ্বলবে না, তা হয়???"
হাল ফ্যাশানের লাল নীল, মোমবাতি প্রদীপ... "নিন খান প্রসাদ"... নিয়ে মুখে পুরলাম, মুখে পুরেই বুঝলাম কি ঘটেছে... বুবুদাও "এ্যা হা হা হা , ছ্যাঃ ছ্যাঃ ছ্যাঃ, থুঃ থুঃ"
কেস কিছুই না, মিষ্টিগুলোও লাল নীল, ফলে জাক্সটাপজিশন হয়ে গেছে... বললাম "তাও ভালো, মিষ্টিগুলো জ্বালতে যাননি ভাগ্যিস প্রথমে, দুটোই যেত"
"কিন্তু আপনি ল্যাংড়া হয়ে গেলেন, আমার খুব দুঃখ হলো" এবার কিঞ্চিত রাগ হতে শুরু করেছে দুঃখের ওপর, কাঁহাতক দেওয়ালীর দিন মাঝরাত্রে ল্যাংড়া ল্যাংড়া শুনতে ভালো লাগে??!! আমাদের না খাওয়া প্রদীপগুলো জ্বাললেন, প্রশান্ত হাসি হেসে বললেন "দেখবেন একটু, বাড়িটাতে যেন আগুন না ধরে যায়" যেন "দেখবেন একটু, বাথরুমের কলগুলো ঠিকঠাক বন্ধ আছে কিনা" এমন ব্যাপার! এই নতুন দায়িত্ব নিয়ে গুডনাইট করতে যাব... বুবুদা আবার ফিরে এলেন "কেন পুজো দিলাম জানেন?? আমার বাপ শেষবয়সে ল্যাংড়া হয়ে গেছিল, গ্যাংগ্রীন হয়ে গেছিল, পা কেটে বাদ দিতে হয়েছিল... ল্যাংড়া হওয়ার কষ্ট আমি জানি, বুঝলেন... (একটু বিরতি)... আপনারা আর্টিস্ট মানুষ, আপনাদের হাতের কাজই আলাদা... (এখন বোঝাতে যাওয়া বৃথা যে আমি কেমন আর্টিস্ট ও হাতের কাজ বলতে আমি কি পারি)... আমিও কিন্তু হাতের কাজ জানি, জানেন... বাবাকে দুটো পা পুরো নিখুঁত, ওই যে নাচ ময়ূরী পা শুনেছেন, এক্কেবারে ওই পা, বানিয়ে দিয়েছিলাম... একটা পরেছিল, আর একটা পরেনি... আপনার যদি পা লাগে তো বলবেন... ওটা আছে, মা কসম, কালী মায়ের কিরা, কেউ পরেনি... আপনার লাগলে বলবেন... আমার খুব দুঃখ হলো আপনি ল্যাংড়া হয়ে গেলেন..." বলতে বলতে বুবুদা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলেন, যেতে যেতে, "বললেন না তো জয় মা কালী! বুকভরা দম নিয়ে বলুন, জয় মা কালী"
আমি বললাম। ব্যাস ওই প্যাকেজ জয় মা কালী বেরোলো মুখ দিয়ে "জয় মা কালী/ পাঁঠাবলি"...
"এ্যাঁ!!!" বুবুদা তাকালেন পেছন দিকে, হ্যা হ্যা হ্যা করে হাসতে বেরিয়ে গেলেন...

তখন রাত্রি আড়াইটে, শ্যামাপুজোর দিন, একজন দুঃখিত মানুষ এসে আমাকে প্রদীপ খাইয়ে, তারপর আমার পা লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করে, শেষে বোধহয় দুঃখ কাটিয়ে হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল......

সাধে আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি কবিতা ঘটে...





0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন