গানের ঝর্ণাতলায়
অনেকটা বিশ্বভারতীর আদলে সাহিত্য, সংগীত, নৃত্য, চিত্রকলা প্রভৃতি কলাবিদ্যা চর্চার কেন্দ্র হিসেবে রবীন্দ্রজন্ম শতবর্ষে গড়ে উঠেছিল জামশেদপুর টেগোর সোসাইটি। বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদানের জন্য বহু বিশিষ্ট শিক্ষকরা তো ছিলেনই, সেইসঙ্গে প্রতিমাসে একটি রবিবার কলকাতা থেকে সুবিনয় রায় আসতেন ‘স্পেশালক্লাস’ নিতে। সেই ক্লাসে শিক্ষার্থী আমাদের সঙ্গে উপস্থিত থাকতেন আমাদের শিক্ষকরাও। গান তো শেখাতেনই, তার সঙ্গে চলতো রবীন্দ্রনাথের গানের নানা দিক নিয়ে নানান আলাপ আলোচনা। স্বীকার করতে লজ্জা নেই, অল্প বয়সে সেই সব আলোচনায় যোগ দেওয়া তো দূরস্থান – তার অনেক কথাই বুঝতাম না। কিছুটা হয়তো বুঝেছি উত্তরকালে সঙ্গীত চর্চার মধ্য দিয়ে।
আবার প্রণালীবদ্ধ সংগীত শিক্ষার পাশাপাশি বহু সেমিনার ওয়ার্কশপ প্রভৃতিরও আয়োজন হতো প্রায়ই, যার দৌলতে সাহিত্য, সংগীত তথা শিল্পকলা জগতের অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পাওয়া যেত। মনে পড়ে এই রকমই একটি সভায় প্রথম শুনেছিলাম সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বক্তৃতা। খোদ রবীন্দ্রনাথের পৌত্র অনিন্দ্যকান্তি মানুষটিকে চোখের সামনে দেখতে পাওয়ার শিহরণ আমি আজও ভুলিনি। আর মানুষটি যখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে ঈষৎ ঝুঁকে বক্তৃতা আরম্ভ করলেন, তখন মঞ্চের ওপরে তাঁর দাঁড়ানোর ভঙ্গিমা, শব্দচয়ন, উচ্চারণের বিশিষ্টতা সব কিছুর মধ্য দিয়ে যেন অনুভব করতে পারছিলাম যে সাহিত্য, সংগীত বা অন্যান্য কলাচর্চার মধ্য দিয়ে সুন্দরতা যদি জীবনের সঙ্গে এই ভাবে সম্পৃক্ত না হয়ে ওঠে, অন্তরের গভীরে যদি সৌন্দর্যবোধ জেগে না ওঠে, তবে নাচ গান বাজনা শেখা এবং সাহিত্যচর্চা সবই বৃথা – সবই পন্ডশ্রম।
স্পেশাল ক্লাসে তাত্ত্বিক আলাপ আলোচনার মধ্যে পুরোপুরি ঢুকতে না পারলেও গানটা শ্রবণ মাধ্যমে প্রাণে অবশ্যই ঢুকতো। মনে আছে, প্রথম যেদিন আমি ওই ‘স্পেশালক্লাসে’ যোগ দেবার যোগ্যতা অর্জন করে দুরুদুরু বক্ষে বয়োজ্যেষ্ঠদের মাঝে এক কোণে গিয়ে বসেছিলাম, সেদিন সুবিনয় রায় আমাদের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত গানের তালিকা চেয়ে নিয়ে শেখাতে শুরু করলেন – “আমার না বলা বাণীর ঘন যামিনীর মাঝে, তোমার ভাবনা তারার মত বাজে” গানটি।
বালখিল্য ঔদ্ধত্বে নিজের মনে প্রশ্ন জেগেছিল, গানের তালিকায় থাকা কঠিন কঠিন গানগুলি ছেড়ে সুবিনয় রায় হঠাৎ এই সহজ কীর্তনাঙ্গ সুরের গানটিকেই বেছে নিলেন কেন! এখন মনে হয়, গানটির আপাত সরল সুরের মধ্য দিয়ে গীতিকবিতার সাবলাইম রূপের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই হয়তো তাঁর লক্ষ্য ছিল সেদিন। একালের রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীদের গানে এই বস্তুটির অভাব ভীষণ ভাবে পীড়িত করে আমাকে। শিল্পী সুবিনয় রায়ের কন্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে শুনতে বারেবারে আমার ওই সাবলাইম রূপের কথাই মনে হয়েছে। আমি নিজেও আমার গানের পরিবেশনায় চেষ্টা করি ওই সাবলাইম রূপটিকে স্পর্শ করতে। বেতারে একটি অনুষ্ঠানে তাঁর কন্ঠে শুনেছিলাম – “আমার পরাণ লয়ে কি খেলা খেলাবে ওগো পরাণপ্রিয়”। এ গান আর কারো কন্ঠে অমন করে জাগিয়ে তোলেনি আমার চেতনাকে। ‘বাড়াবাড়ি’ করার অভিযোগে অভিযুক্ত হতে আপত্তি নেই আমার – তবু এ গান আর কারো গলায় শুনতে রাজি নই আমি।
সুবিনয় রায়ের প্রতি মুগ্ধতার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষানবিশী বেলায় একটু সন্ত্রস্ত হয়েও থাকতাম। কারণ গান শেখাতে শেখাতে মাঝে মাঝে ধৈর্যচ্যুতি ঘটত তাঁর। গানের কোথাও সুরটি যথাযোগ্য ওজনে লাগল না বা সুরের সূক্ষ্ম কারুকাজটি পরিপাটি ভাবে সম্পাদিত হলো না – এটা তিনি সহ্য করতে পারতেন না। আর ক্লাসের কনিষ্ঠতম সদস্য হওয়ার অপরাধে রসভঙ্গের যাবতীয় দায় এসে পড়ত আমারই ঘাড়ে। এটাই আমার কাছে একটা বড় পীড়ার কারণ ছিল সেকালে।
মনে পড়ে, একবার এক সুন্দরী ছাত্রী গানের খাতার বদলে তিনখন্ড গীতবিতান নিয়ে ক্লাস করতে এসেছিলেন বলে সুবিনয় রায় কঠিন স্বরে তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন – “কলকাতায় কোনো ছাত্র বা ছাত্রী খাতা না নিয়ে ক্লাসে এলে তাকে বলি, বাইরে বাজার থেকে একটা খাতা কিনে নিয়ে তবে ক্লাসে আসতে। এখানে দোকান বাজার কাছে নেই বলে সে কথাটা বলতে পারছি না। পরের দিন থেকে খাতা না নিয়ে ক্লাসে আসবেন না”। সুকন্ঠী এবং সুন্দরী মেয়েটির অবস্থা সেদিন দেখার মতো হয়েছিল। মেয়েটি সুবিনয় রায়ের বিশেষ অনুরাগী তথা জামশেদপুরের এক প্রখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের আত্মীয়া বলেই বোধহয় অল্পে রক্ষা পেয়েছিলেন সেদিন।
গান ছাড়া সুবিনয় রায়ের আর দুটি বৈশিষ্ট্য আমাকে আকর্ষণ করত, তার প্রথমটি হলো তাঁর বেশভূষা। পাটভাঙা ধুতি-পাঞ্জাবী পরেই তাঁকে বেশির ভাগ সময় দেখতাম। সেই সাজের মধ্য দিয়ে এক ধরনের আভিজাত্য প্রকাশ পেত। আবার পুরোদস্তুর ড্রেসস্যুটেও দেখেছি খুব পরিপাটি ভাবে সাজতেন। এমনি পোশাকসচেতন মানুষ আরও একজনকে দেখেছি আমি, তিনি বিমলভূষণ।
দ্বিতীয় যে বৈশিষ্ট্য আমাকে আকর্ষণ করত, তা হলো তাঁর বাচনভঙ্গি। এই বাচনভঙ্গি সম্ভবত কলকাতার সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্ম পরিবার সূত্রে পাওয়া। সে সময়ে বাজারে ছিল চিনির আকাল। সাধারণ লোকে গুড় দিয়ে চা খাওয়া অভ্যাস করতে বাধ্য হয়েছিল – চিনি দেওয়া চায়ের খোঁজ পড়ত শুধুমাত্র অতিথি অভ্যাগতদের আপ্যায়নের বেলায়। সেই চিনি দেওয়া স্পেশাল চা বরাদ্দ ছিল সুবিনয় রায়ের জন্য। যে লোকটির ওপরে চা দেওয়ার ভার ছিল, সে একবার অন্যমনস্ক হয়ে সবার সঙ্গে সুবিনয় রায়কেও গুড়ের চা-ই দিয়ে গেছে। আমরা দেখলাম, কথার ফাঁকে সুবিনয় রায় চায়ের কাপে একবার চুমুক দিয়ে মুখটা বিকৃত করলেন এবং তারপর আর সেই কাপ হাতে তুললেন না। জনৈক কর্মকর্তার চোখে ব্যাপারটা পড়া মাত্রই গোলমালটি অনুমান করে নিয়ে অপ্রস্তুত কন্ঠে সুবিনয় রায়কে বললেন -- “ইসস্... বোধহয় ভুল করে আপনাকেও গুড়ের চা-ই দিয়ে গেছে! দেখি আর এককাপ আপনার জন্য পাঠিয়ে দিতে বলি”। সুবিনয় রায় তাঁর পরিচিত বাচনভঙ্গিতে বললেন – “আরে না না, ব্যস্ত হবেন না! গুড়ের চা খেতে আমার বেশ ভালোই লাগে”। বলার ধরনের কারণে এই বাক্যটি নিয়ে আমরা হাসাহাসিও করেছি বহুদিন।
অনেকটা বিশ্বভারতীর আদলে সাহিত্য, সংগীত, নৃত্য, চিত্রকলা প্রভৃতি কলাবিদ্যা চর্চার কেন্দ্র হিসেবে রবীন্দ্রজন্ম শতবর্ষে গড়ে উঠেছিল জামশেদপুর টেগোর সোসাইটি। বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদানের জন্য বহু বিশিষ্ট শিক্ষকরা তো ছিলেনই, সেইসঙ্গে প্রতিমাসে একটি রবিবার কলকাতা থেকে সুবিনয় রায় আসতেন ‘স্পেশালক্লাস’ নিতে। সেই ক্লাসে শিক্ষার্থী আমাদের সঙ্গে উপস্থিত থাকতেন আমাদের শিক্ষকরাও। গান তো শেখাতেনই, তার সঙ্গে চলতো রবীন্দ্রনাথের গানের নানা দিক নিয়ে নানান আলাপ আলোচনা। স্বীকার করতে লজ্জা নেই, অল্প বয়সে সেই সব আলোচনায় যোগ দেওয়া তো দূরস্থান – তার অনেক কথাই বুঝতাম না। কিছুটা হয়তো বুঝেছি উত্তরকালে সঙ্গীত চর্চার মধ্য দিয়ে।
আবার প্রণালীবদ্ধ সংগীত শিক্ষার পাশাপাশি বহু সেমিনার ওয়ার্কশপ প্রভৃতিরও আয়োজন হতো প্রায়ই, যার দৌলতে সাহিত্য, সংগীত তথা শিল্পকলা জগতের অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পাওয়া যেত। মনে পড়ে এই রকমই একটি সভায় প্রথম শুনেছিলাম সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বক্তৃতা। খোদ রবীন্দ্রনাথের পৌত্র অনিন্দ্যকান্তি মানুষটিকে চোখের সামনে দেখতে পাওয়ার শিহরণ আমি আজও ভুলিনি। আর মানুষটি যখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে ঈষৎ ঝুঁকে বক্তৃতা আরম্ভ করলেন, তখন মঞ্চের ওপরে তাঁর দাঁড়ানোর ভঙ্গিমা, শব্দচয়ন, উচ্চারণের বিশিষ্টতা সব কিছুর মধ্য দিয়ে যেন অনুভব করতে পারছিলাম যে সাহিত্য, সংগীত বা অন্যান্য কলাচর্চার মধ্য দিয়ে সুন্দরতা যদি জীবনের সঙ্গে এই ভাবে সম্পৃক্ত না হয়ে ওঠে, অন্তরের গভীরে যদি সৌন্দর্যবোধ জেগে না ওঠে, তবে নাচ গান বাজনা শেখা এবং সাহিত্যচর্চা সবই বৃথা – সবই পন্ডশ্রম।
স্পেশাল ক্লাসে তাত্ত্বিক আলাপ আলোচনার মধ্যে পুরোপুরি ঢুকতে না পারলেও গানটা শ্রবণ মাধ্যমে প্রাণে অবশ্যই ঢুকতো। মনে আছে, প্রথম যেদিন আমি ওই ‘স্পেশালক্লাসে’ যোগ দেবার যোগ্যতা অর্জন করে দুরুদুরু বক্ষে বয়োজ্যেষ্ঠদের মাঝে এক কোণে গিয়ে বসেছিলাম, সেদিন সুবিনয় রায় আমাদের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত গানের তালিকা চেয়ে নিয়ে শেখাতে শুরু করলেন – “আমার না বলা বাণীর ঘন যামিনীর মাঝে, তোমার ভাবনা তারার মত বাজে” গানটি।
বালখিল্য ঔদ্ধত্বে নিজের মনে প্রশ্ন জেগেছিল, গানের তালিকায় থাকা কঠিন কঠিন গানগুলি ছেড়ে সুবিনয় রায় হঠাৎ এই সহজ কীর্তনাঙ্গ সুরের গানটিকেই বেছে নিলেন কেন! এখন মনে হয়, গানটির আপাত সরল সুরের মধ্য দিয়ে গীতিকবিতার সাবলাইম রূপের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই হয়তো তাঁর লক্ষ্য ছিল সেদিন। একালের রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীদের গানে এই বস্তুটির অভাব ভীষণ ভাবে পীড়িত করে আমাকে। শিল্পী সুবিনয় রায়ের কন্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে শুনতে বারেবারে আমার ওই সাবলাইম রূপের কথাই মনে হয়েছে। আমি নিজেও আমার গানের পরিবেশনায় চেষ্টা করি ওই সাবলাইম রূপটিকে স্পর্শ করতে। বেতারে একটি অনুষ্ঠানে তাঁর কন্ঠে শুনেছিলাম – “আমার পরাণ লয়ে কি খেলা খেলাবে ওগো পরাণপ্রিয়”। এ গান আর কারো কন্ঠে অমন করে জাগিয়ে তোলেনি আমার চেতনাকে। ‘বাড়াবাড়ি’ করার অভিযোগে অভিযুক্ত হতে আপত্তি নেই আমার – তবু এ গান আর কারো গলায় শুনতে রাজি নই আমি।
সুবিনয় রায়ের প্রতি মুগ্ধতার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষানবিশী বেলায় একটু সন্ত্রস্ত হয়েও থাকতাম। কারণ গান শেখাতে শেখাতে মাঝে মাঝে ধৈর্যচ্যুতি ঘটত তাঁর। গানের কোথাও সুরটি যথাযোগ্য ওজনে লাগল না বা সুরের সূক্ষ্ম কারুকাজটি পরিপাটি ভাবে সম্পাদিত হলো না – এটা তিনি সহ্য করতে পারতেন না। আর ক্লাসের কনিষ্ঠতম সদস্য হওয়ার অপরাধে রসভঙ্গের যাবতীয় দায় এসে পড়ত আমারই ঘাড়ে। এটাই আমার কাছে একটা বড় পীড়ার কারণ ছিল সেকালে।
মনে পড়ে, একবার এক সুন্দরী ছাত্রী গানের খাতার বদলে তিনখন্ড গীতবিতান নিয়ে ক্লাস করতে এসেছিলেন বলে সুবিনয় রায় কঠিন স্বরে তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন – “কলকাতায় কোনো ছাত্র বা ছাত্রী খাতা না নিয়ে ক্লাসে এলে তাকে বলি, বাইরে বাজার থেকে একটা খাতা কিনে নিয়ে তবে ক্লাসে আসতে। এখানে দোকান বাজার কাছে নেই বলে সে কথাটা বলতে পারছি না। পরের দিন থেকে খাতা না নিয়ে ক্লাসে আসবেন না”। সুকন্ঠী এবং সুন্দরী মেয়েটির অবস্থা সেদিন দেখার মতো হয়েছিল। মেয়েটি সুবিনয় রায়ের বিশেষ অনুরাগী তথা জামশেদপুরের এক প্রখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের আত্মীয়া বলেই বোধহয় অল্পে রক্ষা পেয়েছিলেন সেদিন।
গান ছাড়া সুবিনয় রায়ের আর দুটি বৈশিষ্ট্য আমাকে আকর্ষণ করত, তার প্রথমটি হলো তাঁর বেশভূষা। পাটভাঙা ধুতি-পাঞ্জাবী পরেই তাঁকে বেশির ভাগ সময় দেখতাম। সেই সাজের মধ্য দিয়ে এক ধরনের আভিজাত্য প্রকাশ পেত। আবার পুরোদস্তুর ড্রেসস্যুটেও দেখেছি খুব পরিপাটি ভাবে সাজতেন। এমনি পোশাকসচেতন মানুষ আরও একজনকে দেখেছি আমি, তিনি বিমলভূষণ।
দ্বিতীয় যে বৈশিষ্ট্য আমাকে আকর্ষণ করত, তা হলো তাঁর বাচনভঙ্গি। এই বাচনভঙ্গি সম্ভবত কলকাতার সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্ম পরিবার সূত্রে পাওয়া। সে সময়ে বাজারে ছিল চিনির আকাল। সাধারণ লোকে গুড় দিয়ে চা খাওয়া অভ্যাস করতে বাধ্য হয়েছিল – চিনি দেওয়া চায়ের খোঁজ পড়ত শুধুমাত্র অতিথি অভ্যাগতদের আপ্যায়নের বেলায়। সেই চিনি দেওয়া স্পেশাল চা বরাদ্দ ছিল সুবিনয় রায়ের জন্য। যে লোকটির ওপরে চা দেওয়ার ভার ছিল, সে একবার অন্যমনস্ক হয়ে সবার সঙ্গে সুবিনয় রায়কেও গুড়ের চা-ই দিয়ে গেছে। আমরা দেখলাম, কথার ফাঁকে সুবিনয় রায় চায়ের কাপে একবার চুমুক দিয়ে মুখটা বিকৃত করলেন এবং তারপর আর সেই কাপ হাতে তুললেন না। জনৈক কর্মকর্তার চোখে ব্যাপারটা পড়া মাত্রই গোলমালটি অনুমান করে নিয়ে অপ্রস্তুত কন্ঠে সুবিনয় রায়কে বললেন -- “ইসস্... বোধহয় ভুল করে আপনাকেও গুড়ের চা-ই দিয়ে গেছে! দেখি আর এককাপ আপনার জন্য পাঠিয়ে দিতে বলি”। সুবিনয় রায় তাঁর পরিচিত বাচনভঙ্গিতে বললেন – “আরে না না, ব্যস্ত হবেন না! গুড়ের চা খেতে আমার বেশ ভালোই লাগে”। বলার ধরনের কারণে এই বাক্যটি নিয়ে আমরা হাসাহাসিও করেছি বহুদিন।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন