কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৩

১৬ ঝর্না বিশ্বাস


সব ববের গল্প
ঝর্না বিশ্বাস



সূচনাতে ‘হ্যালো -- হাই -- ওয়াটস্‌ আপ’-এর পর একটাই বাকি থাকে নাম... তাহলে সেরেই ফেলি--

আমি বব... ব’তে ব্যাচেলর -- ব’এ বোরিংও।
মানে শুরুরটা ভাঙলে অবস্থায় ও শেষটাতে লাইফখানা আর কী!
এটুকুতেই আমায় নিয়ে পুরো জানা হয়ে যায়, তাও বলি এ নাম আমার একেবারেই অপছন্দের। তাই মাঝে এসে ওটা আবার বদলে দিতেও পারি।

যাইহোক এরূপ বালখিল্যতায় হয়তো অনেকেই আন্দাজ করতে চাইবেন বয়সটা... তবু বলি, বেশি মাথা খাটিয়ে লাভ নেই, একটু পরেই ফাইলের পাঁচালি খুললে দেখবেন সব জ্বলজ্বলে পরিষ্কার। যদিও জানিয়ে রাখি, ডিওবি-তে একটু ঝোল আছে, মানে আমি তার থেকেও পাক্কা ছ মাস কম...। আসলে মাধ্যমিকের ফর্ম ফিলাপের দিন মহা ক্যাঁচাল বাঁধল। সব দেখে শুনে স্কুল অফিসের হেডবাবু বললেন, বয়স বাড়াতেই হব্‌ নইলে হচ্ছে না...। আর বাপিও টপাটপ রাজি...। এদিকে আমি যে তখনও অতটা মাথা ঘামাতে শিখিনি -- নইলে কী আর এ কান্ড করতে দিই!
বাকি শখ হিসেবে গান ও গল্প কিন্তু মিথ্যে আওড়াই না -- আর মাঝে মাঝে ভুল বকলেও শুনেছি ওটা বয়সের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যাবে।

কলেজে প্রথম দিনই এমন ইন্ট্রো শুনে একটাল ভিড় ঠেলে অর্ণবকে বন্ধু হিসেবে পেলাম... আর তার ক’দিন পরই এলো সুমি...
যদিও তৃতীয়টির আগমনে আমাদের বন্ধুত্বের কিছু কমতি হলো না। আমি আর অর্ণব টিফিন শেয়ার করতাম, রোদ বৃষ্টিতে ছাতা শেয়ার করতাম। কিন্তু একটা সময় এলো সুমিকে নিয়ে... এবারে পারলাম না, তাই ওকে অর্ণবকে দিয়ে গুরুবাণীও দিলাম, ‘সুখী হ’! সুমি বুঝলো কি বুঝলো না, তবে ওদের কক্ষপথ থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসার দিন মেয়েটা খুব কেঁদেছিল।

এটুকু পড়ে হয়তো ভাবছেন, বব মানুষটা খুব উদার -- কিন্তু সত্যিই কি তাই! আসলে সব কিছু সহ্য করা যায় কিন্তু কান্নাটা! যদিও দুই বন্ধুর মাঝে সুমিকে পিষে ফেলেছিলাম, তাই ওকে একবারও জিজ্ঞেস করা হয়ন্‌ ও ঠিক কী চায়...
এসব ভাবতে ভাবতেই আবিষ্কার করে ফেললাম যে, বছরের পরও ওই নামের ক্ষতটা ভেতরে দাগ রেখে গেছে...

কিন্তু ভালোবাসাকে মারা তো আর সহজ নয় বস্‌! এ এক পাষাণপিন্ড যেন গ্রাস করতে চাইছে! তাও চেষ্টা চালায় বব -- আর মাঝে মাঝেই সেই বুড়ো মানুষটার কবিতা এলে ফুঁপিয়ে উঠতে চায় ভেতরটা...

বব ব্যস্ত রাখতে চায় নিজেকে – ববের মনে পড়ে ছোটবেলার কথা – একই জামাকাপড়ে দুই ভাইয়ের চোখ থাকলে মা বলত – তোকে আরো ভালো একটা কিনে দেব... এটা ভাইকে দিয়ে দে...
বব জানে সুমি কোনও দামী বস্তুর চাইতে কম নয়। আবার এও মনে হয়, সুমি তো অর্ণবের কাছেই গেছে...

কিন্তু এতক্ষণ যে বব ব্যাক্তির সাথে কথা হচ্ছিল, সে রাতারাতি এত ভাবুক হয়ে যাবে যে, চশমা চোখ জল ভাসিয়ে গেল -- মেনে নেওয়া যায় না। তাই ঠিক করা হলো, ও লেখাতে হাত দেবে...

এ এক আশ্চর্য প্রদীপ যেন... কাউকে কিছু না জানিয়েও বহু কিছু বলা হয়ে যায়...

আর এমনও তো হতে পারে যে, বছর দশ পর কোনও এক বারান্দার ব্যালকনিতে সুমি - আর হাতে সেই পত্রিকা, যেখানে বব নামের কোনো ব্যক্তি তাকে নিয়েই ভালোবাসার ঝুরোগল্প লিখে গেছে!




0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন