কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৩

০৫ রমিত দে

কামিল ক্লদেল
“কিছু শস্য আঁকড়ে থাকে মাটি… উড়ে যায় কিছু স্বপ্ন স্থাপত্যপ্রবণ”


“I am free! I am free! I am free!
No more life in the prison for me!
I am free as a bird! I am free!”

ইবসেনের বিখ্যাত নাটক “হোয়েন উই ডেড অ্যাওকেনের’ কথা মনে পড়ছে! ভাস্কর স্বামী আর্নল্ড রুবেককে তার প্রাক্তন প্রেমিকা ইরিনের হাতে ছেড়ে আসতে আসতে এমনই ছিল মাইয়া রুবেকের খোলা কন্ঠস্বর। শূন্যতাময় বাতাবরণের থেকে বাতাসের শিস তুলে তুলে সে যেন বাসাবদলের গন্ধ। তবে এখানেই ইবসেনের নাটকের হাইপাররিয়ালিটি নয়, সূচনাবিন্দু অথবা উপসংহার নয়, বরং জীবন, অন্ধকার আর মৃত্যু নিয়ে তাঁর নাটক এগিয়েছে রুবেক ও ইরিনের জড়াজড়ি মৃত্যুদৃশ্য অবধি, গড়িয়ে আসা হিমবাহের মাঝে হিমরঙের দুটি সত্ত্বার পিছলে যাওয়া অবধি। ইবসেনের নাটক নাকি ভাস্কর রঁদ্যা আর তাঁর গোপন প্রেম কামিল ক্লদেলের অলিখিত গল্প, যে গল্পে আসলে সমগ্রতার কোনো বিন্যাস নেই, কেবল অনতিক্রম্য জেগে থাকা, স্থান ও কালখন্ডের মাঝে জাগিয়ে রাখা এক নারীর তীব্র শ্লেষ, প্রকৃত বাঁচার অধিকার দিতে অক্ষম এক পুরুষের প্রতারণার আঁশটে গন্ধ। কেবল ভাবা ভাবা আর বিপজ্জনক ভাবা অনিভিজাত পৃথিবীর গল্প নিয়ে। না, ইবসেন হয়তো এত কিছু বলেননি। চরিত্রের বাইরের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রক্তমাখা চিৎকারগুলোকেও দাঁড়িয়ে থাকতে বলেননি আঘাত ও অস্তি সমেত। আবহমান শিল্পমিশ্রণে পৃথিবীর রুপোলি মার্কশিটে কেবল রেখে গেছেন মিলিয়ে দেওয়ার খেলা, কিন্তু সেই চেতনার দাগ সেই একদম নিচে থেকে উঠে আসা আড়ষ্ট গভীর সে কি কোথাও জীবনমুখী শব্দের ভলিইউম কমিয়ে রেখে আজও কোথাও জেগে থাকে নৈঃশব্দের মাতম দেখবে বলে? প্রেমিকের প্রত্যাখান আর ভালোবাসার পতনের শব্দ শুনতে শুনতে আজও কি জমা জলের ওপর দোলনের গণিত লেখে ভাসমান পিপাসাগুলো? না আমরা জানি না, ঠিক যেমন জানি না ১৯শে অক্টোবর, ১৯৪৩ মন্টফ্যাবেটের উন্মাদ আশ্রমে তিরিশ বছর কাটাবার পর মৃত্যুর আগে, পৃথিবীর ভারসাম্য ছাড়ার আগে কুয়াশায় গচ্ছিত পরদাগুলো সরিয়ে কামিলও গেয়েছিলেন কিনা ‘আই এম ফ্রি, ফ্রি এজ এ বার্ড’! এমনই কী ছিল নীরব বিচ্ছিন্ন শিল্পী কামিল ক্লদেলের তারিখশূন্য কথাবার্তা? অতল মাংসের নিচের এক অসহায় মানুষ কি এভাবেই পাখি হয়ে যেতে চেয়েছিল! নাকি নির্মোহ একা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আসলে কিছুতেই দরজাটা খুলতে পারে না এই ঘন পাতার মানুষগুলো, পরিত্যাগের মানুষগুলো, খুলতে পারে না হলুদ মৃতদেহগুলো। কেবল আগুনে পুড়তে চায় অথচ ছাই থেকে উঠে আসে মর্গের শীতলতা। নিঃস্ব পরিত্যক্ততাকে জরিপ করতে করতে পৃথিবীর ধূসর অতল ফিরে ফিরে আসে বড় বড় পায়ের আওয়াজে, গ্যাসের বাতি নিভিয়ে শান্ত জীবন নিভিয়ে থলথলে এক তীব্র নগ্নতা উঠে আসে নির্জন বিশ্রামে! হ্যাঁ, কেবল একটি মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে, কেবল একজন শিল্পী সূর্যাস্তের কথা বলতে বলতে ডানার পথ ধরে ফিরে যায়, কিন্তু জীবন আর মৃত্যুর দেশে পড়ে থাকে ভালোবাসার প্রশ্ন, বিস্মৃতির প্রশ্ন, প্রতিভার প্রশ্ন, যন্ত্রণার প্রশ্ন, পড়ে থাকে তরঙ্গ বিক্ষুব্ধ সম্পর্কের মাঝের সেই নিরুদ্দেশ জলধ্বনি…

কী চেয়েছিলেন কামিল? সৃষ্টির সমস্ত কিছুর মাঝে সজীব কন্ঠস্বর হতে! প্রতিথযশা ভাস্কর হতে! নাকি ইবসেনের নাটকের ইরিনের মতো চড়া দামে ভালোবাসার, বঞ্চনার প্রতিটি লবণসুর প্রতিটি বন্ধুনী সুতো চড়িয়ে বারবার ফিরে ফিরে আসতে রঁদ্যার মতো প্রেমিকের কাছে! রঁদ্যার সাথে কামিলের পরিচয় হয় ১৮৮২তে রঁদ্যারই ওয়ার্কশপে শিক্ষানবীশ হিসেবে, কারণ সে সময় একোল দে বোর্জাটের মতো প্রতিষ্ঠিত আকাদেমিগুলোতে নারীদের অনুপ্রবেশের অধিকার ছিল না। অথচ শিল্পী ভাস্কর কামিলের প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে শিল্পী ব্যুশে পরিচয় করিয়ে দেন রঁদ্যার সাথে, নিয়ে আসেন অগুস্তের স্টুডিওতে ১৮৮৩ সালে। কামিলের মাটি আর কাদার প্রতি চিরন্তন প্রেমে সায় ছিল তার বাবা আর ভাই পল ক্লদেলেরও। শুরু হয় রঁদ্যার শিক্ষানবীশ থেকে মডেল থেকে গোপন প্রেমিকা থেকে এক মস্তিষ্কশূণ্যতার নির্জিত পরাজিত কাহিনী। আলো চেয়েছিলেন কামিল। আর পর্যবসিত হয়েছিলেন অন্ধকারের অতীন্দ্রিয় ছায়ানৌকোয়। সে সময়ের তরুণী কামিল ছিলেন প্রতিশ্রুতিময়ী শিল্পী, ষোলো বছরের প্রেমে এক আশ্চর্য রঁদ্যাকে আবিষ্কার করেন কামিল আর আবিষ্কার করতে করতে বেদনার খন্ডপৃষ্ঠার মতো হারিয়ে যান নিজেরই অন্ধকারে। তাঁকে মূল্যায়ন করতে পারেননি রঁদ্যা অথবা তাকে ব্যবহার করেছেন নিজেরই স্বার্থে, প্রকৃত মানুষের অ্যানাটমির বাইরের হাড় পঞ্জর আর মাংসপেশীর মাঝে শিল্পীর নিজস্ব অ্যানাটমিটুকু খুঁজতে। এ এক অস্থিরচিত্ত ডুবোপাহাড়ের গল্প যার গভীর কোটরে ধরে রাখা গ্রহের এক আশ্চর্য গ্রন্থনা। ফুলের বোঁটার মতো কামিলকে রসসিঞ্চনের শেষে পাতার ঝিলিমিলি থেকে আলাদা করে দেন রঁদ্যা; গর্ভপাত করতে বাধ্য করেন তাঁরই ঔরসের সন্তানকে; বিয়ে করতে অস্বীকৃত হন দীর্ঘ বয়সের ব্যবধান হেতু এবং মেরী রোজ ব্যুরের সাথে দীর্ঘকালীন সম্পর্কের খাতিরে। প্যারানোইয়া রোগে আক্রান্ত হন কামিল, শিরাগুলির স্পন্দন অব্দি পৌঁছে যায় তার ব্যক্তিগত রক্তক্ষরণ। সংরক্ষণশীল গোঁড়া ক্যাথলিক মা ও ভাইও তাকে ত্যজ্য করে ধর্মের দোহাই দিয়ে গর্ভপাতের অজুহাতে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের যুক্তিতে আর নিজেরই হাতে দিয়ে আসে মন্টফ্যাবেটের উন্মাদ আশ্রমে। আশ্চর্যের বিষয় আশ্রমের সুপারিন্ডেন্টের যে কটা চিঠি উদ্ধার হয় তার কোনোটাই প্রমাণ করে না কামিল উন্মাদ ছিলেন। একজন উদীয়মান শিল্পী এক বিশ্বশ্রুত ভাস্কর্যের ধ্রুপদী অসুস্থতায় শেকলবন্দী হয়ে গেলেন, সমাজের আদিম নৈতিকতায় কঠোর নীতিবোধের কাছে অ্যালিয়েনেট হয়ে গেলেন। প্রশ্ন উঠল না শিল্পীর মানসিক দ্বৈততা নিয়ে। মহাযাত্রিক ভালোবাসার মেঘমার্গ নিয়ে। দ্বিখন্ডিত সৃজনের নায়িকা কামিল, নন্দনতত্ত্বের আলোর তলাতেই রয়ে গেল যার অধরা রোমান্টিসিজম।

প্রশ্ন উঠতেই পারে, কে এই কামিল ক্লদেল? যার মৃত্যু স্মরণীয় হয়ে উঠল হঠাৎ; যার জীবন মরীয়া হয়ে উঠল ভালোবাসার বিশুদ্ধ রক্ত চিনতে অথবা প্রত্যাখানের অতন্দ্র বার্তা আঁকতে! কম মডেলের সংস্পর্শে তো আসেননি রঁদ্যা, বৃদ্ধা বারাঙ্গনা থেকে শুরু করে মোহিনী হ্লাদিনি -- কে ছিল না! আর সেটাই স্বাভাবিক, ফেমি ন্যুডের পৃথিবী শাসন করা এক শিল্পীর পক্ষে সেটাই স্বাভাবিক। যাঁর হাতে গড়া মূর্তির নায়ক নায়িকাকে দেখেই মনে হয়ে পরমুহূর্তেই নড়ে উঠবে যার প্রতিটা স্থিতিশীল খোদাইয়ে গতির ব্যঞ্জনা, সেখানে কে এ ইস্থাবর কামিল! আসলে কামিল ক্লদেলকে কেবল রঁদ্যার শিক্ষানবিশ বা প্রেমিকা বা বঞ্চিত মহিলা হিসেবে চিহ্নিত করা এক চরম ভুল; কামিল ছিলেন স্পষ্টবাদী এক শিল্পী এবং প্রতিভাবান; তার সময়ের চেয়েও অনেক এগিয়ে ছিল শিল্পসর্ম্পকিত তার পর্যবেক্ষণ আর অভিনিবেশ। ঠিক যে কারণে পারীর প্রথাবিরুদ্ধ ভাস্কর লেখক বারবার মতবিরোধ হওয়া স্বত্ত্বেও রঁদ্যাকে তাঁর প্রিয় ছাত্রের জায়গা দিয়েছিলেন, ঠিক সে কারণেই কোথাও কামিলের প্রতি ছিল রঁদ্যার সার্থক গুরুশিষ্যের সমীকর্ণ। কামিলের সাবলম্বী সত্ত্বাই কোথাও রঁদ্যাকে আকর্ষণ করেছিল সর্বোপরি। পরস্পরকে অসূয়া না করে উভয়ের উচ্চারণকে আলাদা না করে যা হয়ে উঠেছিল সৃষ্টির সমগ্রতা। কামিলের সাথে পরিচয়ের প্রথম পাঁচ বছরেই রঁদ্যা যে নারীমূর্তিগুলি গড়েছিলেন, তার বেশির ভাগই কামিলের গোপন আত্মপ্রতিকৃতি। শিক্ষানবীশ কামিলকে সেখানে মডেল বানিয়েছিলেন রঁদ্যা। ‘Danaide(দানেদ)’, ‘EternalSpring(চিরবসন্ত)’, ‘Andromeda(এ্যন্ড্রোমেডা)’, ‘Dawn(প্রভাত)’এর মতো ভাস্কর্যগুলিতে কামিলকে মডেল করেই মূর্তি গড়েছিলেন রঁদ্যা। ছেনি হাতুড়ি দিয়ে দানেদ বানিয়েছেন রঁদ্যা, গড়ে তুলেছেন দেহবিবর্জিত এক নারীর যন্ত্রণা, যে দানবকন্যা দানেদকে গ্রহণ করেননি রাজপুত্র লিনসিয়ুস, যে দানবকন্যা দানেদকে গ্রহণ করেননি তার রাজ্যের বাসিন্দারাও, সে রাজকন্যা পতিত হয়েছেন নরকপ্রান্তে। সেই দানেককে ফুটিয়ে তুলেছেন রঁদ্যা কামিলের মধ্যে। হ্যাঁ, নগ্ন কামিলের দেহ নিয়ে গড়া তাঁর প্রাথমিক ভাস্কর্য সেই কথাই বলে, কিন্তু রসোত্তীর্ণ শিল্পের শিখরে থাকা শিল্পীও তো কামনা বাসনার ঊর্ধ্বে নন, দেহাতীত প্রেমের সপক্ষে নন, তা তাঁদের ষোলো

বছরের পরবর্তী জীবনই প্রমাণ দিয়ে যায়। যদিও সামাজিকভাবে স্ত্রীর স্বীকৃতি তখনও দেননি রঁদ্যা, তবু তাঁর বিগত কুড়ি বছরের প্রেমিকা ও সন্তানের মা মেরি রোজকে লুকিয়ে চলতে থাকে রঁদ্যা-কামিল প্রেমপর্ব। বাস্তবতার এক অন্য উদ্ভাস খুঁজছিলেন রঁদ্যা, ছুঁয়ে দেখতে চাইছিলেন পার্থিবের মাঝের অতীন্দ্রিয়লোকের অসীমতা আর ভুলে চলছিলেন আসলে এক তরুণী এক যুবতী তার শরীরভর্তি প্রত্যাশাগুলির পাঠোদ্ধার করে চলেছে গোপনে। ডুবে গিয়ে ভেসে ওঠার তাড়নায় মরিয়াভাবে আঁকড়ে ধরতে চাইছেন মননশীল এক প্রৌঢ খড়। কিন্তু রঁদ্যা তো মূর্তি গড়ছেন, মানুষের প্রাণকে দিচ্ছেন পাথরের সচলতা, পাথরের স্মৃতিকে দিচ্ছেন মৃতের সম্ভাবনা। একদিকে মেরি রোজের মতো শিল্গজ্ঞানহীন মডেলের সাথে তাঁর দীর্ঘকালীন সম্পর্ক, যে কিনা রঁদ্যার সুখদুঃখের কান্ডার্‌ আবার অন্যদিকে অষ্টাদশী তরুণীর ঠোঁটে খুঁজে ফেরা অনুকূল মূর্তির ঠাঁট। নারায়াণ সান্যাল একেই বলেছেন – ‘ঘরের কোণে ভরা পাত্র’ আর ‘ঝরনাতলার উছলপাত্র’ দুটোই দরকার শিল্পী অগুস্ত-এর। গঙ্গা প্রাণদায়িনী, গঙ্গা জীবন সঞ্চারিনী; কিন্তু প্রেম যমুনার নবঘননীলাঞ্জছায়াও যে শিল্পীর প্রয়োজন। Venus Coelestes আর Venus Naturalis! কেউ কারও কম নয়। দু নৌকোয় পা রেখে চলেছেন অগুস্ত রঁদ্যা”। ১৮৪৩এ রঁদ্যার বয়স তখন তেতাল্লিস আর কামিলের উনিশ। প্রথিতযশা শিল্পী তখন রঁদ্যা আর শিক্ষানবীশ কামিল নিজের পায়ে দাঁড়াতে আসা এক স্বনির্ভর যুবতী। অ্যানে হিগনেট তাঁর ‘মিথ অফ ক্রিয়েশন’ এই অসম প্রেমের স্বপক্ষে লিখছেন -- “He represented not only the success she desired, but also the success of desire. She wanted to be a sculptor in her own right, and every young artist then took the interest of an eminent senior artist as a good sign that one day he or she too would be famous….. Nor does anyone wonder why Rodin was drawn to Claudel, although for different reasons. She was a beautiful young woman who was willing to have an affair withut demanding the usual bourgeois feminine rewards of marriage, a household, children and social status.She freely gave herself as the object of his desire…..Rodin was also seduced by Claudel’s artistic gifts, and his mind as well as his emotions engated onver the years by an intellectual dialogue with her and the potential to become a sculptor in her own right”. --অ্যানে হিগনেটের বক্তব্য অনেকাংশে সত্য মেনে নিলেও বেশ কয়েবার গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং জন্মদানের পর নিজের সন্তানকে দান করে দেওয়ার ঘটনা কোথাও আধুনিকা কামিলকেও শেকড়ের দিকে টেনে ধরেছিল, স্বাধীন সাবলম্বী নারীও রক্তপাত আর আঘাতগুলোকে লুকোতে অবলম্বন খুঁজছিল দাম্পত্য জীবনের সামাজিক স্বীকৃতির। কিন্তু রঁদ্যা তো বিয়ে করবেন না, তাঁর মানসকমলে তো বাঁধা বলে কিছু নেই; মানুষটিকে, ত্বক ও চামড়ার কারিকুরিটিকে ছুঁতে ছুঁতে তাঁর চিরন্তন রস যে অবিচিত্র নির্জীব। ‘দু হাতের দশটা আঙুলে মডেলের কন্ট্যুর, তরঙ্গভঙ্গ’ অনুভব করে দর্শনেন্দ্রিয়কে আটকে স্পর্শনেন্দ্রিয়ের সর্বস্বতাতেই রঁদ্যা খুঁজে নিতেন তাঁর সৃষ্টিকে। তিনি চাইতেন মডেল অস্থির হয়ে উঠুক, বিচ্ছিন্ন না থেকে আদানপ্রদানের হয়ে উঠুক, কেবল মুখাকৃতি বা দৈহিক অবয়বের মধ্যে নয়, রঁদ্যা তাঁর শৈল্পিক স্বরূপে পৌঁছতে শিল্পী ও কারুকর্মীর মাঝের সেই প্রেরণা নামের রূপকথাগুলোকে গুলিয়ে দিতে চাইতেন। অবনীন্দ্রনাথ তাঁর ‘শিল্প ও দেহতত্ত্ব’ প্রবন্ধে বলছেন -- “ঐতিহাসিকের মাপকাঠি ঘটনামূলক, ডাক্তারের মাপকাঠি কায়ামূলক আর রচয়িতা যারা তাদের মাপকাঠি অঘটন-ঘটন-পটীয়সী মায়ামূলক। ঐতিহাসিকের রচনা করতে হয় না, তাই তার মাপকাঠি ঘটনাকে চুল চিরে ভাগ করে দেখিয়ে দেয়, ডাক্তারকেও জীবন্ত মানুষ রচনা করতে হয় না, কাজেই জীবন্মৃত ও মৃত মানুষের শবচ্ছেদ করার কাজের জন্য চলে তার মাপকাঠি, আর রচয়িতাকে অনেক সময় অবস্তুকে বস্তুজগতে, স্বপ্নকে জাগরণের মধ্যে টেনে আনতে হয়, রূপকে রসে, রসকে রূপে পরিণত করতে হয়, কাজেই তার হাতের মাপকাঠি সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের, রূপকথার সোনার ও রূপোর কাঠির মতো অদ্ভুত শক্তিমান। ঘটনা যাকে কুড়িয়ে ও খুঁড়ে তুলতে হয়, ঠিক ঠিক খোন্তা হলো তার পক্ষে মহাস্ত্র, মানুষের ভৌতিক শরীরটার কারখানা নিয়ে যখন কারবার, ঠিক ঠিক মাংসপেশী অস্থিপঞ্জর ইত্যাদির ব্যবচ্ছেদ করার শূল ও শলাকা ইত্যাদি হলো তখন মৃত্যুবাণ, কিন্তু রচনা প্রকাশ হবার আগেই এমন একটি জায়গার সৃষ্টি হয়ে বসে যে সেখানে কোদাল, কুড়ুল, শূল, শাল কিছু চলে না, রচয়িতার সেই মনোজগত বা পটকাশ, যেখানে ছবি ঘনিয়ে আসে মেঘের মতো, রস ফেনিয়ে ওঠে, রং ছাপিয়ে পড়ে আপনা আপনি”। -- এ যেন রঁদ্যারও চিরন্তন দ্বৈতবাদ, যেখানে আত্মআবর্তিত জাগরণের বাইরেও এক খন্ডিত উপস্থিতি এক শূন্যতার কেন্দ্র। সে অবধি পৌঁছতে স্নেহমোহবন্ধনী মানুষের চলে শেকড় ওপড়ানোর খেলা, আসক্তির শেষেও যে অস্বীকার যে ক্ষীণ ছায়া যে অন্বিত উদার উদাস সেখানেই কোথাও লুকিয়ে থাকে অলিখিত যাপনের গন্ধ। রঁদ্যার সার্বিক শিল্পের মাঝে অন্যতম আলোচিত মূর্তি ‘দ্য কিস’ বা ‘চুম্বন’(১৮৮৮)যার মডেল ছিলেন কামিল, যে মিথুন ভাস্কর্যকে নিয়ে আজও আমরা সন্ন্যাসী রঁদ্যার আলোচনা করি, মরীয়াভাবে খুঁজে মরি দ্রষ্টা রঁদ্যার কল্পনামিতি, তারও গভীরে কি এজাতীয় কুয়াশানির্মিত কোনো বিবর্ণ সূদূর নেই! নেই কোনো মৃত্যুর পরিমার্জনা? এক অসমাপ্ত চুম্বনের মাঝে লেগে আছে এক নারীর আত্মকথন, রুগ্ন অসুখী একাকীত্বের এক অলিখিত ব্রহ্মান্ড। মুখের সামনে মুখ এনে যেখানে খুঁজে বেড়াচ্ছে কেবল এক মুখ, কেবল এক আত্মনিবেদনের আবেগিত খেদ! এই অনবদ্য মিথুন ভাস্কর্যের উপজীব্য আসলে দান্তের ইনফার্নোর দুই চরিত্র পাওলো আর ফ্রাঁসেসকা, যারা সম্পর্কে দেওর ও বৌদি। জিওভান্নি ম্যালাটেস্টার ভাই পাওলোর প্রেমে পড়েন ফ্রাঁসেসকা, যার প্রতিদান দিতে হয় স্বামীর হাতে তার মৃত্যু দিয়ে। ল্যান্সালট আর জিওনিভেরের গল্প পড়তে পড়তে তাদের প্রণয়পর্বের শুরু আর তাই রঁদ্যার মূর্তিতেও পাওলোর হাতে রয়ে গেছে সে বইয়ের কিছু অংশ। তাদের প্রণয় আদিযুগের অবৈধ, রঁদ্যাও এ মূর্তি পরিকল্পনা করেছিলেন ‘নরকের দ্বার’এ সংস্থাপনের উদ্দেশ্যে। কামিল ছিলেন নারী মডেলটি এবং পুরুষ ও নারী মডেলটিকে পৃথক পৃথক বসিয়ে রঁদ্যা ভাস্কর্যটিকে গড়েন। ১৯৮৯এ প্রথম প্রদর্শনীতে কামিলের ভাই পল ক্লদেল উক্তি -- “the man is so to speak attablé [sitting down to dine] at the woman. He is sitting down in order to make the most of his opportunity. He uses both his hands, and she does her best”। এমনকি পরবর্তীকালের শিল্পসমালোচক ও সংগ্রাহকের চোখেও এ এক অতীন্দ্রিয় আবেগঘন চুম্বনের দৃশ্য হিসেবেই বারবার সমালোচিত হয়েছে। কিন্তু যেখানে গিয়ে আমাদের স্থির হয়ে যেতে হয়, ভাবতে হয় ভাস্কর্যের প্রদর্শিত চেহারার সেই চেতনারঞ্জিত শূণ্যতার কাছে তা হলো মিলনআবেগঘন চুম্বনতিয়াসী নারী ও পুরুষের মাঝের চুম্বনটি কই? হ্যাঁ, একটা ইন্টারাপটেড ইমোশন যেখান থেকে পাওলো আর ফ্রাঁসেসকার পরিণতি হয়, নরকে ঠিক সেখান থেকেই কি কামিল রঁদ্যার পরিণ তি এক অতৃপ্ত মিলনে? এই একটিমাত্র স্বতঃস্ফূর্ত ও সম্পূর্ণ চুম্বনই কি আক্ষেপ করে গেছেন কামিল তাঁর ষোলো বছরের রঁদ্যাপ্রণয়ে! একটিমাত্র চুম্বনই কি গর্ভস্তব্ধ ভাষ্য হয়ে উঠেছে তার শেয তিরিশ বছরের উন্মাদ আশ্রমে! মাঝে মাঝে জানতে ইচ্ছে হয়, রঁদ্যা কি এই মূর্তি বানাতেও কামিলকে ছুঁয়েছেন তাঁর চিরাচরিত দর্শনেন্দ্রিয়কে অতিক্রম করে স্পর্শনেন্দ্রিয়ের মাদকতায়? ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখেছিলেন অধর ওষ্ঠ আর ফুল ফোটার সেই শব্দহীন মুহূর্ত! গান বাঁধার সলাজ সত্য! রঁদ্যার আশ্রয় কি সে মুহূর্তে কেবলই ছিল পাথরের অতিপ্রাকৃত অকালটে নাকি শরীরের নিচের শতাব্দীর আত্মসমপর্ণে! কামিলকে কী ভেবেছিলেন রঁদ্যা? স্কাল্পচারের পাথর ছেনি হাতুড়ি নাকি স্রেফ এক মডেল, নাকি ফ্রাঁসেসকা? কীই বা ভেবেছিলেন কামিল? স্ত্রী–প্রণয়ী, নাকি এক অবহেলিত পরিত্যক্ত অভাগা মডেল, মূর্তির শেষে যার মূল্যায়ন কেবল এক বিশ্ববন্দিত আর্টিস্টের অ্যানাটমিতে! ‘দ্য কিস’ বা ‘চুম্বন’ সম্ভবত মডেল কামিলাকে নিয়ে রঁদ্যার প্রতিষ্ঠিত সর্বোত্তম মূর্তি। ঘাড় বেঁকিয়ে আসক্ত আগ্রাসী নারী তুলনায় দ্বিধাজড়িত পুরুষকে চুম্বনে আগ্রাসী, অথচ চুম্বনের অপরাধ নিয়ে অপারগ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক দীর্ঘ অপেক্ষা। এক নিষ্প্রাণ হৃদয়কে আঁকড়ে ধরে, বাস্তবকে ঠেলে দিয়ে পার্থিব ধূলোর পথে, স্রোতে ও আবর্তের প্রলাপ প্রহেলিকার পথে কামিল যেন একাই পুড়ে চলেছে শতাব্দীর চিৎকারে, ডুবে চলেছে জাহাজডুবির শব্দে, একাঙ্ক নাটকের ফুলের গাছ রঁদ্যাকে ঘিরে কেবল মূল কান্ড শাখা ও পত্র যে কোনো রূপেই ইন্দ্রিয়গোচর হতে রাজী হতে চেয়েছেন কামিল, স্বীকৃতি চেয়েছেন রঁদ্যার। স্বীকৃতি চেয়েছেন সমাজের। আবহমানে গলে মিশে যাওয়া এক যুবতী জড়িয়ে ধরতে চেয়েছেন একটিমাত্র অস্তিত্বকে, একটিমাত্র বিশ্বাসকে। পাথরের পরিতৃপ্ততা পেরিয়ে যে যেতে পারেনি নারীর অন্তঃপুরে, তার কাছেই ভিক্ষা করেছেন তামস পথনির্দেশিকা-আকাঙ্ক্ষা ও অনিকেত অচলতার মাঝে দাঁড়িয়ে কোনো পরিচিত মুখ যেন বারবার গেয়ে গেছে, তার বাসনার জগত গেয়ে গেছে-
“হৃদয়ের বনে বনে সূর্যমূখি শত শত।
ওই মুখ পানে চেয়ে ফুটিয়া উঠেছে যত।
বেঁচে থাকে বেঁচে থাক শুকায়ে শুকায়ে যাক,
ওই মুখ পানে তারা চাহিয়া থাকিতে চায়,
বেলা অবসান হবে, মুদিয়া আসিবে যবে
ওই মুখ পানে নীরবে ঝরিয়া যায়!”

রাইনার মারিয়া রিলকে যিনি কিনা দিনের পর দিন রঁদ্যার ভাস্কর্যগুলির প্রত্যক্ষদর্শী, তিনি ‘দ্য কিস’ এর মতো আবেগঘন নারী পুরুষের মূর্তিগুলির উদ্দেশ্যে বলেন-“One does not dare to give it one meaning. It has thousands. Thought glide over it like shadows, new meaning arise like riddles and unfold into clear significance. A heaven is near that has not yet been reached, a hell is near that has not yet been forgotten. Here, too, all splendour flashes from the contact of the two bodies and from the contact of the woman with herself.” রঁদ্যার এই শৈল্পিক উচ্চতা এক শৈল্পিক ওজস্বিতা থেকে দেখা রিলকের, তাই হয়তো মূর্তির মাঝে বসে থাকা মডেলের পাঁজের পরম শূন্যতা অনুভাবিত হয় না। অনুভাবিত হয় না অতল ঝিনুকের মতো তলিয়ে যাওয়া সবুজগুলো। শিল্পী সে বরাবরই আত্মকেন্দ্রিক, আকৃতি থেকে সে রস সৃজন করে বিশ্ব প্রতিকৃতির আর ভিক্ষাপাত্রে মাধুকরীর মতো পড়ে থাকে ক্যানভাসের বাইরের প্যালেটের বাইরের বুনিয়াদী মুখগুলো, বুকের বোতাম খোলা মনগুলো।

রঁদ্যার ভাস্কর্যের এক বিশেষ শৈলী হলো ভাস্কর্যের অংশবিশেষ অসমাপ্ত রেখে যাওয়া যার সমাপ্তির দায়িত্ব দর্শকের। মূর্তির মাঝের এই মধ্যাহ্ন তন্দ্রাই যেন ভিতরকার দ্বন্ধকে অমূর্তকে ক্রম উন্মোচিত করতে থাকে, ভেতরের নিরুদ্দেশ যাত্রাগুলোকে নীরবতার কথাগুলোকে আশ্চর্য লোকাভরণগুলোতে সজীব হয়ে ওঠে অমুদ্রিত ইতিহাস, তাঁর অন্বেষণের সীমান্তে এসে পরম সম্পূর্ণতা কোথাও যেন এই অসম্পূর্ণতাগুলোতে সূদূরগুলোতেই মহাকালের ডিঙা ভাসিয়ে রেখেছে। রঁদ্যার কাজগুলো কামিলের সংস্পর্শে এসেও বিস্তর প্রসারিত হয়েছিল, কামিলের নিজস্বতা থেকে রঁদ্যা শিখেছিলেন মূর্তির মাঝের সেই না মিলিয়ে দেওয়ার পদ্ধতিটা, গম্ভীর মহিমাময় এবং বহুবর্ণময় স্থাপত্যগুলি থেকে বেরিয়ে এসে কামিলের প্রভাবে রঁদ্যার কাজগুলো হয়ে উঠেছিল আরও বেশি বাস্তবমুখী যেখানে গোলার্ধের কথা আছে, বিরতীহীন যোগাযোগের কথা আছে, নারী পুরষের ভাস্কর্যগুলিতে নীরবে হাত ধরাধরি করার মাঝে চুম্ববনের মাঝেও সেখানে লেগে আছে এক চরম আস্তিক্যবোধ, শরীরের অন্য ঢাল বেয়ে নেমে আসা এক অনুভবী শরীর, পাথর থেকে বেরিয়ে এসে যে দীর্ঘদিন ধরে চিনতে চাইছে নিজেকে, সৃজন থেকে বেরিয়ে এসে চিনতে চাইছে অবরুদ্ধ স্ব-কে। কামিলের সাথে পরিচিত হবার আগে ও পরের কাজগুলোকে তুলনা করলেই খুব স্পষ্টভাবে এই পরিবর্তন রঁদ্যার সামগ্রিক কাজে লক্ষ্য করা যায়। একদিকে কামিল করে গেছেন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার সব রকমের প্রচেষ্টা। আর অন্যদিকে মেরী রোজ, কামিল ক্লদেল, মডেল লিজা বা ডাচেস অফ সোয়াজেলের মতো একাধিক নারী ও মডেলের সাথে তাঁর প্রণয় কোথাও যেন সর্মপণের থেকে সান্নিধ্যের থেকেও স্ব-কে প্রতিষ্ঠা করায় শিল্পীসত্ত্বার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করায় ছিল বিশ্বাসী। আসলে প্রাণের থেকেও পাথরের প্রতিই যেন তাঁর চিরকালীন আলিঙ্গন। নুড়িপাথর কাদা আর মাটিই যেন তাঁকে নিয়ে গেছে সেই একাকী প্রার্থনার কাছাকাছি, নিয়ে গেছে মূর্তির চেয়ে বিমূর্তির কাছাকাছি। মানুষের চাইতে বড় হয়ে উঠেছে তাঁর শিল্পী সাজের কথা, নিরীশ্বর প্রতীতির কথা। চামড়া মাংস আর নগ্ন দেহের পরিচ্ছদের আঁধার খন্ডে খুঁজে বেড়ানো কেবল এক পাথরের মূর্তি, যেখানে হৃদয়ের শব্দ নেই, বিসর্পিল সুঠাম তনু আর নারী শরীরের ঘ্রাণের নিচে কোনো বিরল নির্ভরতা নেই সেখানে; শিল্পী স্রষ্টা মাত্রই কি এমন! নীরন্ধ্র পূর্ণ প্রেম বলতে যেখানে কিছু নেই, যা আছে তা কেবল চিরাচরিত প্রশস্তিতে হারিয়ে যাওয়ার আশংকা! কেবল প্রতিবিম্ব আর প্রতিবিম্বের দ্বারাই বধির ও অবিভাজ্য মানুষটি থেকে ক্রমাগত হারিয়ে যাওয়া আরেকটি প্রেম আরেকটি আলুথালু কবন্ধ লাল টুকরো আর একটি অধৈর্য উত্তেজনার দিকে। আরে এখানেই স্রষ্টা কোথাও মেতেছেন তাঁর আত্মানুসন্ধানের বিশ্লেষণে, সামনে ফেলে রেখেছেন ঘষা কাচ, যেখান থেকে দেখা সম্ভব নয় কীভাবে ছেনি ও হাতুড়ির ঘায়ে কেটে চলেছে কোনো যুবতী শরীরের সাদা হাড়, রক্ত ক্লেদে মাখামাখি হয়ে উঠছে নগ্ন নারী, যন্ত্রণায় মুচড়ে উঠছে ভালোবাসা আর নির্ভরতার প্রাকৃতিক পুষ্টি। জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে সম্পর্কের প্রিয় গন্ধ। ‘Large Clenched Hand With Suppliant Figure’ বা ‘আগ্রাসী হাত ও বন্দিনী’ ভাস্কর্যে রঁদ্যা যখন একটি নারীকে একটি প্রকান্ড হাতের সাথে মিশিয়ে দেন, অক্ষম করে তোলেন, আড়ষ্ট করে তোলে্‌ অনড় ও শূণ্য করে তোলেন নারীর রক্তবাহীশিরাগুলিকে একটি পুরুষ হাতের কাছে এসে। বিশ্লেষকদের কাছে তা হয়ে ওঠে ঊনবিংশ শতকের অবক্ষয়ী প্যারী নগরের পুরুষ দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাখা, কোনো একটা মুখ সেখানে ছোট হতে হতে মিলিয়ে যায়। কিন্তু জীবনকে তো আরও একভাবে দেখা যায়! আর আমরা যদি তা পাথরের বাইরে এসে প্রবঞ্চনার নিরিখে দেখি, যদি ভালোবাসার নিরবিচ্ছিন্ন যাত্রায় আপসের স্বেচ্ছানির্বাসনে দেখি, তবে কি কামিল ক্লদেলও রঁদ্যার কাছে হারতে আসেননি তাঁর চেতনযুদ্ধে! তাঁর অনুগত অনুভূত নিরীহ আবিষ্ট অবস্থা নিয়ে লাল চুলের কোনো এক বিশ্ববন্দিত পুরষের কাছে সস্তা সঙ্গম কিংবা দামী পাথরের কাছে অবাঞ্ছিত অতিথি হতে আসেননি! আলতো জড়ানো এক পালকের শরীরকে এভাবেই কি কব্জির প্রশংসাই খাঁচার পাখি বানাতে চাননি রঁদ্যাও? যে তাঁর কাছে কেবল মূর্তি কেবল মায়ামৈথুন সেখানে মাংস ডাকের নিচে অদ্ভুত চিৎকার নিয়ে দৌড়ে যাওয়া কোনো মেরুদণ্ডের খোঁজ রঁদ্যা পান না, শুনতে পান না কুঁড়েঘর সাজাবার মতো আঞ্চলিক পাখির কোনো অভিসার, কেবল নরকের দ্বারে বসিয়ে আসেন প্রেমের ক্ষতমুখগুলোকে, নির্দোষ বালিকার বিস্মৃত যন্ত্রণাগুলোকে। প্রেমিক ও তৎকালীন পারীর সরকারী আর্ট কলেজ ব্যো-আর্তের ছাত্র বার্নুভ্যাঁর কাছ হতে পরিত্যক্ত হয়ে রঁদ্যার প্রিয় ছোড়দি এবং তাঁর শিল্পী জীবনের প্রথম ও শেষ প্রেরণা মেরী সন্ন্যাসিনী হতে চলে গিয়েছিলেন কনভেন্টে। আর মাত্র ছমাস সন্ন্যাসিনীর জীবন অতিবাহিত করে কঠিন পেরিটোনাইটিস রোগে মারা যান। কামিল ক্লদেলও তাঁর থেকে চব্বিশ বছরের এক প্রাক্তনীর প্রেমে প্রবঞ্চিত হয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়ে অস্বীকৃত হয়ে জীবনের অন্তিম তিরিশ বছর কাটিয়ে গেলেন উন্মাদ আশ্রমে। একে আমরা কী বলব? এক নারীর ভালোবাসা! নাকি এক পুরুষের ব্যর্থতা!

ক্লাসিকাল শৈলীকে অস্বীকার করতেই, নাকি গ্রীক শৈলী থেকেই ইম্প্রেশনিস্ট উত্তরাধিকার লাভ করেন রঁদ্যা! রেঁনেসা শৈলীতে দাভিদ যে ভাস্কর্য গড়েছিলেন তাকেও তিনি ভাঙতে চেয়েছেন নৈতিক শৃঙ্খলার বাইরে সমাজের অশ্লীলতার বাইরে গিয়ে। সাধনার দ্বারা অনূদিত আধ্যাত্মিক ও নৈতিক দিক থেকে বেরিয়ে এসে কল্লোলগোষ্ঠীর শিল্পজাহ্নবীকে রঁদ্যা বহাতে চেয়েছিলেন মানুষের শাশ্বত অস্তিত্বের প্রেক্ষিতে। পৌঁছতে চেয়েছিলেন পোশাকের ভেতর আলোছায়ার ভেতর, মানুষের সমস্ত সম্ভাবনা ও সুরার ভেতরের শূন্যতা অবধি। আয়নার ভেতর দিয়ে দেখতে চেয়েছেন সনাতনী অস্তিত্বগুলোকে, আর তাই নগ্নতা বা ন্যুডিটি তাঁর কাছে হয়ে ওঠে একমাত্র কম্পোজিশন।



পূর্ণ নির্মোহে পৌঁছতে চেয়েছেন রঁদ্যা, প্রত্যক্ষের অপরে পৌঁছতে চেয়েছেন। পৌঁছতে চেয়েছেন রক্তশূন্য অতৃপ্ত তৃষ্ণা অবধি। রঁদ্যার বৈপ্লবিক চিন্তাধারার বীজ যিনি উপ্ত করেছিলেন, তাঁর শিক্ষক ওরাস লেকক দ্য বোয়াবোদ্রান, যিনি সেই শৈশবেই শিখিয়েছিলেন চোখে দেখে হাত দিয়ে আঁকে ড্রাফটসম্যান নকশানবিশ; কিন্তু শিল্পী দেখে হৃদয় দিয়ে আঁকে। মস্তিষ্ক দিয়ে সেই ধারাকেই তাঁর শিল্পমুক্তি তাঁর চিত্তবিপ্লবের অপরিহার্য অঙ্গ করেছিলেন রঁদ্যা। কিন্তু লাল মাংসের ভেতরকার আদিম কুয়াশা খুঁজে পেতে গিয়ে কোথাও কি তিনি হারিয়ে ফেলেছিলেন কুমারীর তরল কুসুমিকা! আকাঙ্ক্ষা ও কামনার কাছে নিবেদন করেছিলেন শ্বাসচাপা মানুষগুলোকে! শরীরকে মুক্ত করতে গিয়ে স্মৃতিকে কি আটকে ফেলছিলেন বড়ো আকারের শূন্যের মধ্যে! পাথর ঘষে ঘষে কি ভোঁতা হয়ে যাচ্ছিল মানুষের শরীর! ন্যাংটো স্কেচের মাঝে যেভাবে নিবিড় বেজে ওঠে শিল্পীর নৈঃশব্দতা, ঠিক সেভাবেই কি হ্রস্ব হয়ে ওঠে না তাঁর ব্যক্তিগত নৈতিকতা! যে রঁদ্যা ন্যুডিটির মাধ্যমে হেজে মজ়ে যাওয়া পৃথিবীর বাষ্প দেখাতে চাইলেন, সেই রঁদ্যাই লুকিয়ে রাখতে চাইলেন ১৯৮২ থেকে ১৯৯৮ ষোলো বছরের কামিল রঁদ্যার প্রণয়পর্ব, সেই রঁদ্যাই কামিলকে নির্দেশ দিলেন একাধিকবার গর্ভপাতের, সেই রঁদ্যাই একই সাথে রোজ ও কামিলের সাথে গোপন সম্পর্কের মান্যতা খুঁজে পেতে চাইলেন। কিন্তু কেন? এসব প্রশ্নই রহস্য ও বিষাদের দিকে যায়, মৃতের সামনে খুলে দেয় জীবিতের বিবর্ণ ঘুলঘুলিটা, আর জীবিতের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় মৃতের মিথ্যা যাপনকে। শরীর থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন নগ্নতাকে কিন্তু সত্যিই কি তিনি পেরেছিলেন নিজের শরীর থেকে পোশাক-আশাকে ঢাকা সংঘের সমাজের নীরব অনুমোদনকে? পেরেছিলেন কি বরফের বাক্স সরিয়ে আঁকড়ে ধরতে সেই শায়িত নারীকে, যে কিনা সামান্য এক জীবন চেয়েছিল, চেয়েছিল ডানা ঝাপটানোর সহজ বারান্দা। নারায়ণ সান্যাল তাঁর ‘রঁদ্যা’ গ্রন্থে ‘রঁদ্যার হাত ও পুতুল’ মূর্তিটিকে বিশ্লেষণ করে বলেছেন, মূর্তিটির ভেতর দিয়ে অবক্ষয়ী পারীতে নারীর মূল্য নতুন করে নির্ধারণ করতে
চেয়েছেন রঁদ্যা; পুরষের সাথে অসমপাংক্তেয়ে টিকে থাকা ‘নারী পুতুল’কেই শিল্পী যেন তুলে আনতে চেয়েছেন নতুনভাবে। হাত পা নেই কেবল কবন্ধবিশিষ্ট এক নারী, আর পুরুষের হাতটি বাস্তবের মানুষের হাতের চেয়েও স্পষ্ট বাস্তব, নিজের হাতের ছাঁচই নাকি তুলেছিলেন রঁদ্যা এই মূর্তি বানাবার প্রয়োজনে। নারায়ণ সান্যালের মতে পুরুষের হাতে ধরে থাকা নারীর পুতুল অস্তিত্বই কেবল নয়, কোথাও যেন মেরী রোজ বা কামিলের মতো একাধিক নারীর প্রতি ব্যবহারের অনুশোচনাও অদ্ভুত ধূসর হয়ে জড়িয়ে আছে মাটি নিয়ে পাথর নিয়ে পরীক্ষিত হাতময়, জড়িয়ে আছে আত্মধিক্কার, নিজেকে নিঁখুত ভাবে চেনার পর ভয়াবহ অমোঘ সে অপরাধবোধই কোথাও এ জাতীয় মূর্তিতে পূর্ণতা খুঁজছে। কেবল একটি মূর্তির বিশ্লেষণে নারায়্ণ সান্যালের যুক্তির অকাট্যতা যেমন প্রশ্নহীন নয়, তেমনি রঁদ্যার মানসিক ভাষাকে বোঝার আকারে প্রকারে বড় একটা ইতর বিশেষ ঘটে না। কিন্তু দীর্ঘ ভারী ছায়ার মতো প্রশ্ন থেকেই যায়, একজন ভাস্কর একজন শিল্পী একজন দ্রষ্টার আত্মনির্মিত জগতের বাইরে উদ্বাস্তু প্রেমিক হওয়ার বিষয়টির প্রতি। প্রেম সেখানে কেবল এক উদ্দেশ্যহীন উদগতিমাত্র অথবা বলা যেতে পারে প্রেম সেখানে পাথরে যাওয়ার এক ছিদ্র, এক কৌশল, হৃদয়ের কোষ থেকে মস্তিষ্কের কোলাজে এক একক যাত্রা।

১৮৯৯ থেকে ১৯১৩ অবধি কামিল কাই বোরঁতে তাঁর নিজের স্টুডিওতে কিছু কাজ করেন স্বাধীনভাবে। কিন্তু পারিবারিক দিক থেকে তাঁর মা এবং ভাইয়ের অসহযোগিতা বারবার হতাশ করে কামিলকে। যদিও বাবা লুই প্রঁসপার সহযোগিতা করে গেছেন আজীবন, কিন্তু গোঁড়া ক্যাথলিক মা আর ভাই তাঁর বিবাহবর্হিভূত সম্পর্ক ও গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। পাশাপাশি ১৯০৫এ একক প্রদর্শনী করেন কামিল, আর খুব স্বাভাবিক ভাবেই যুগের থেকে অনেক এগিয়ে থাকা তাঁর শিল্প তাঁর ভাস্কর্য মেনে নিতে পারেনি রক্ষণশীল সমালোচকরা। ভেঙে পড়েন কামিল। পুড়িয়ে দেন, ভেঙে দেন তাঁর অধিকাংশ ভাস্কর্য। বড় জোর নব্বইটির মতো তাঁর আনক্যাটলগড কালেকশন র‌য়ে গেছে শিল্পপ্রেমীদের জন্য। মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে, ধরা পরে প্যারানইয়া। বিষাদগ্রস্থতায় আর ভালোবাসার যন্ত্রণায় দগ্ধ হতে হতে রঁদ্যা তাঁর পরিকল্পনা চুরি করেছেন বলেও অভিযোগ করেন কামিল। আসলে যন্ত্রণা ক্লান্তি দুর্বলতা তাঁকে ভেতর থেকে শূন্য করে ফেলেছিল, এক রক্তস্রাবী উন্মাদের জগত ঘিরে ধরছিল তাঁকে। নিজেরই ভেতর এক অক্ষম আত্মজীবনী হয়ে পড়ছিলেন কামিল। ১৯১৩এর মার্চ-এ মারা গেলেন কামিলের বাবা, আর তিন দিন বাদে ১৯১৩ সালেই প্রথমে ভিল এভরার্ড ও পরে মন্টফ্যাবেটের উন্মাদ আশ্রমে কামিলকে ভর্তি করে দেন কামিলের মা ও ভাই, আর ১৯৪৩এ মৃত্যুর আগের শেষ তিরিশ বছর তাঁকে দেখতেও যাননি তাঁর পরিবারের কেউ। সমাজ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিল কামিলকে। একটি নিষ্পাপ শিল্পী হৃদয়কে, একটি অসাধারণ প্রতিভাকে ভরিয়ে রাখা হয়েছিল ভারী অবহেলা আর করুণা দিয়ে। উন্মাদ আশ্রম থেকে ছাড়া পাওয়ার আর্জি জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন কামিল, যার উত্তরে তাঁর মা কামিলের চিকিৎসককে লেখেন -“She has all the vices. I don’t want to see her again.” এমনকি কামিলের মৃত্যুর পরও তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি এবং তাঁর মৃতদেহও উন্মাদ আশ্রমের গণকবরে সমাধিস্থ করা হয়। ১৯০২এ তাঁর শেষ কিছু মূর্তির মাঝেই কামিল তৈরি করেন গ্রীক ডেমি গড পার্সিউসের মেডুসা বধের মূর্তি, আর নিজের মুখের আদলে বানান মেডুসার মুখ। ভয়ংকর মেডুসা যার চোখের দৃষ্টিতে যে কেউ পাথরে পরিণত হতে পারত, তাতেই তিনি বসিয়ে দিলেন স্নিগ্ধ এক নারীমুখ। প্রণয়ে প্রতারিত হয়ে পরিত্যক্ত হয়ে একি তাঁর নিজের শিল্পের প্রতিই বীতশ্রদ্ধতা? একি তাঁর ইন্টারনাল সাফারিংস, ইন্টেরিওর সলিটিউড! যার উত্তর কোনো নারী দিয়ে গেল না, বরং এক ডুমড রোমান্সের শেষে কোনো এক পুরুষের ডান হাতে সে কেবল রেখে গেল এতসব প্রশ্ন!

মহাকালের কী অদ্ভুত পরিহাস! যে মানুষটাকে জীবিত অবস্থায় সমাজ ফেলে দিল বাতিলের খাতায়, বেঁকে চুরে দুমড়ে মুচড়ে ফেললো, ছিবড়ে করে মাড়িয়ে চলে গেল, তাকে নিয়েই ১৯৮৯ আর ২০১৩তে দু’দুটো চলচ্চিত্র হয়ে গেল পরিচালক ব্রুনো নুইটেন আর ব্রুনো ডুমন্টের পরিচালনায়। নমিনেশন পেল দু’দুটো অ্যাকাডেমি পুরস্কারের; ১৯৯৮এ কমপোজার জেরেমি বেক পরিচালনা করলেন অপেরা সলিলিক ‘ডেথ অফ এ লিটিল গার্ল উইথ ডোভস’। মেরী রোজ ব্যুরেকেই অগুস্ত রঁদ্যার জীবনের সে অর্থে প্রথম ও শেষ বান্ধবী বলা যেতে পারে। যিনি তাঁর দীর্ঘদিনের মডেল হয়েছিলেন। মডেল লিজাকে বাদ দিলে তাঁর প্রথম অনাবৃতা নারীমূর্তিটিও মেরী রোজের, যার নাম দিয়েছিলেন ‘Bacchante’, যাকে বাংলায় বলা যেতে পারে প্রেমের দেবতা ‘রতি’। ‘ফেমি হেড’ মূর্তি থেকে শুরু করে একাধিক নগ্ন অবয়বের স্বাক্ষর মেরী রোজ এবং চব্বিশ বছরের রঁদ্যার সাথে সতেরো বছরের মেরী রোজের সাক্ষাৎ পরবর্তী যে তথ্যটি সবচেয়ে চমকপ্রদ, তা হলো রোজ তাঁর সন্তানের মা হওয়া স্বত্তেও সহধর্মিনী হতে তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল তিপান্ন বছর। হ্যাঁ বিবাহ রাত্রে রোজ ব্যুরের বয়স ছিল সত্তর আর রঁদ্যার সাতাত্তর। মাত্র উনিশ দিনের স্বীকৃত বৈবাহিক জীবনযাপনের পর মেরী রোজের মৃত্যু হয়। বিবাহের প্রতি রঁদ্যার চিরকালীন অনিচ্ছা এবং সহশিল্পীর সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কের গোপনীয়তায় সমর্থন যে তাঁর ছিল, তাঁর পারস্পরিক সম্পর্কগুলি থেকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এমনকি তাঁর চৌষট্টি বছর বয়সে ডাচেস অফ সোয়াজেল নামের মধ্যবয়সী নারীর প্রতিও তিনি আকৃষ্ট হন। আর কামিল তো সেখানে অষ্টাদশী তরণী! রোজের বাইরে প্রায় প্রতিটা সম্পর্কই রঁদ্যার কাছে হয়ে উঠেছিল শরীর, কয়েকটা আইসোলেশ্‌ যা থেকে উঠে আসত পাথরের আকুতি। সুঠাম নারীর সাদা ঐশ্বর্য খুঁজেছেন রঁদ্যা, কিন্তু ছেনি হাতুড়ির শব্দে হারিয়ে যাওয়া সেই হলুদ ঝাঁঝালো গন্ধ! আলোর নিচের সেই অক্ষয় অন্ধকার! রঁদ্যাকে তো দান্তের ডিভাইন কমেডি পড়তে শিখিয়েছিলেন ফাদার এইমার্ড, শিখিয়েছিলেন নরকের প্রবেশদ্বারের মুখোমুখি হতে, ঠিক যেভাবে লেকক শিখিয়েছিলেন পবিত্র নরকদ্বারের ধারণা, যা কেবল অন্ধকার নয়, যেখানে অন্ধকারের শেষে রয়েছে আলোর অনুমান। কিন্তু কামিলকে কে শেখাবে, কে জানাবে, কেবল নরকের প্রবেশদ্বারে নয়, ভালোবাসা নামের প্রেম নামের এই সহজ শব্দের শুরুতেও কোথাও যেন অন্য রঙে লেখা আছে -“Abandon all hope, ye who enter here”। সবটুকু রোদ গিলে কেবলই এক পৌরাণিক বধির আঁধার।

ইবসেনের নাটকের শেষ দৃশ্যে গড়িয়ে আসা নিঃশব্দ হিমবাহে ডুবে যেতে থাকা হারিয়ে যেতে থাকা ইরিন আর রুবেককে দেখে যেভাবে মাইয়া আপন মনে বলে উঠেছিলেন, Pax Vobiscum! Pax Vobiscum! (Peace be with you), কামিলের অসমাপ্ত যাপনের দিকে, যন্ত্রণাদীর্ণ এক নারীর চিরস্থায়ী শূণ্যতার দিকেও কি আমাদের রয়ে গেল এই একটিইমাত্র উচ্চারণ -

Pax Vobiscum!

Pax Vobiscum!






3 কমেন্টস্:

  1. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  2. রঁদ্যার ওপ র অনেক লেখা রয়েছে... বাংলা ভাষাতেও লেখা হয়েছে... কিছু খুব ভালো কাজও রয়েছে... এই লেখাটিও নিজগুনে সেখানে আবশ্যই যুক্ত হবে... এবং শুধু রঁদ্যার জন্য নয় কামিল ক্লদেল এর অবদানকে, এমন ভঙ্গিমায় তুলে ধরার জন্যও। ভালো থাকবেন। শুভ কামনা।

    উত্তরমুছুন
  3. তোমiর এই লেখiটির বিশেষণ দিলে কিছু কম বলi হবে I বিশলেষণ এর ছুঁয়ে যi ওযiর এমন উদদiমতi এককথiয় সুনদর I

    উত্তরমুছুন