কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / সপ্তম সংখ্যা / ১৩৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / সপ্তম সংখ্যা / ১৩৪

শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

সুকান্ত পাল

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৯


স্পর্শ

ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে গেছিল নীলাঞ্জনা। সে তখন ক্লাস নাইনের ছাত্রী। অনেকদিন পর আলিপুরদুয়ারে মামার বাড়ি এসেছে ছোট মামার মেয়ে বুলাদির বিয়েতে। বাড়িতে প্রচুর লোকজন, হৈ-চৈ। ছোটবেলায় দুবার এসেছিল সে আলিপুরদুয়ারে। বাবা, মা ও মামাদের সঙ্গে আলিপুরদুয়ারের বেশ কিছু ঘোরার জায়গায় তারা গাড়ি ভাড়া করে ঘুরেছিল।

তখন থেকেই আলিপুরদুয়ারের প্রেমে পড়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে বক্সার অরণ্য তাকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করেছিল। জয়ন্তী পাহাড়ের ভ্রমণও তার মনে এক গভীর রেখাপাত করেছিল। এইবার আসার সময় ঠিক করে রেখেছিল, বড়ো মামার ছোটছেলে অভীকের সঙ্গে ঘুরে নেবে বক্সার অরণ্যটা আরেকবার।

অভীক এখন ক্লাস টুয়েলভের ছাত্র। খুব ভালো মোটরসাইকেল ড্রাইভ করে। মামার বাড়ি এসেই নীলাঞ্জনা অভীককে বলেছিল,

--অভীকদা তুই আমাকে একদিন বক্সার জঙ্গলে ঘুরিয়ে আনবি কিন্তু বলে দিলাম!

অভীক বলেছিল, আজকে তো কলকাতা থেকে জার্নি করে এলি। আজকের দিনটা রেস্ট নে। কাল‌ সকালেই বেরিয়ে যাবো। দুপুরের মধ্যে ফিরে আসব।

নীলাঞ্জনা খুশি হয়েছিল।

গভীর অরণ্যে গাছেদের শরীরে একরকম প্রাচীন গন্ধ আছে। তার সঙ্গে পায়ের নিচে মাটি থেকে উঠে আসা সোঁদাগন্ধ মিলেমিশে এক অদ্ভুত শরীর অবশ করা পরিবেশ সৃষ্টি করে।

রাস্তায় আসার সময় অভীক তিন-চারবার জোরে ব্রেক কষতে বাধ্য হয়েছিল। তখন তার অপুষ্ট বুক লেপ্টে গিয়েছিল অভীকের শরীরের সঙ্গে। একটু মৃদু লজ্জা পেলেও বুকের ভিতর তার এক অজানা অদ্ভুত ভালোলাগার রিনরিনে অনুভূতি। অনেকক্ষণ তারা জঙ্গলে পৌঁছে গেছে। পায়ে পায়ে ঘুরে অরণ্যকে অনুভব করছে। তখনও নীলাঞ্জনার কিশোরী স্তন দুটোতে একটা হালকা শিরশিরানি ফল্গু নদীর মতো বয়ে চলেছে। নীলাঞ্জনা অবাক হয়ে একটা বিশাল প্রাচীন গাছের শরীরে শ্যাওলার উপর পরজীবী লতার রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়েছিল। জীবনের সঙ্গে জীবন জড়িয়ে আছে।

ঠিক তখনই হঠাৎ করেই অভীক তাকে জড়িয়ে ধরে বেশ কয়েকটি চুমু খেল। ঘটনার আকস্মিকতায় নীলাঞ্জনা স্তব্ধবাক। প্রতিবাদ তো দূরের কথা কোনোরকম বাধাও সে দিতে পারেনি। কেমন যেন অবশ ও আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। কিছুক্ষণ পর তাকে ছেড়ে দিয়ে অভীক একটু লজ্জিত হয়ে পড়ে।

এই প্রথম কোনো পুরুষ তাকে আলিঙ্গন করল। এই প্রথম কোনো পুরুষের ঠোঁটের স্পর্শে তার শরীর কেঁপে উঠল। তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।

অভীক বেশ কিছুক্ষণ পর স্তব্ধতা ভেঙে বলল, রাগ করিসনি তো নীলু? আমি মানে…

অভীক তোতলাতে লাগলো।

এই প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে নীলাঞ্জনা মাটির দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল শুধু। তার হাসি দেখে অভীক যেন একটু ভয় পেয়ে গেল। সে বলল,

—ভুল হয়ে গেছে। প্লীজ কাউকে বলিস না। জঙ্গলে তোকে দেখে কী যে হয়ে গেল বুঝতে পারিনি।

অনেকক্ষণ পর ধীরে ধীরে নীলাঞ্জনা বলল, আরেকদিন আসবি?


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন