প্রতিবেশী সাহিত্য
কমলা দাসের কবিতা
(ভূমিকা ও ভাষান্তর: গৌরাঙ্গ মোহান্ত)
কবি
পরিচিতি : কমলা দাস কেরালার পুণ্যায়ুরকুলামে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি
স্বগৃহে মালয়লাম কবি মা বালামণি আম্মার কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন। ইংরেজি ও মালয়লাম ভাষায়
কবিতা, উপন্যাস এবং আত্মজীবনী ও সাংবাদিকতাধর্মী রচনা প্রকাশ করেন এবং মাতামহী মাধবীকুট্টির
নামে তাঁর মালয়লাম সৃষ্টি পাঠককুলকে উপহার দেন। তাঁর প্রথম পর্যায়ের ইংরেজি কবিতা
Summer in Calcutta (1965), The Descendants (1967) এবং The Old Playhouse and
Other Poems (1973) গ্রন্থে সংকলিত হয়। তাঁর আত্মজীবনী My Story 1975 সালে প্রকাশিত
হয় এবং তাঁর একমাত্র মালয়লাম উপন্যাস মানসী ১৯৭৮ সালে Alphabet of Lust নামে ভাষান্তরিত
হয়। তিনি ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে ম্যানিলায় পি.ই.এন. এশীয় কবিতা পুরস্কার, ছোট গল্পের জন্য
১৯৬৯ খৃষ্টাব্দে কেরালা রাজ্য সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার এবং ১৯৭১ ও ১৯৮৬ খৃস্টাব্দে
সাংবাদিকতার জন্য চিমনলাল পুরস্কারে ভূষিত হন। 'সৃষ্টিছাড়া' (The Freaks), 'আমার দিদিমার
বাড়ি' (My Grandmother's House) Summer in Calcutta কাব্য থেকে এবং 'কাচ' (Glass) কবিতাটি
The Old Playhouse and Other Poems কাব্য থেকে সংগৃহীত।
সৃষ্টিছাড়া
সে কথা বলে, আমার দিকে সূর্য-রঞ্জিত
কপোল ফিরিয়ে, তার মুখ, অন্ধকার গিরিগহ্বর, যেখানে
অসম দন্তের চুনদণ্ড দীপ্তি ছড়ায়, আমার হাঁটুর ওপর তার ডান হাত, আমাদের মন প্রেমের প্রতি
ধেয়ে চলতে সংকল্পবদ্ধ; কিন্তু তারা কেবল বাসনার বদলে গর্তে অলসভাবে হোঁচট খেয়ে ঘুরে
বেড়ায়...। এ মানুষটি কি
তার চপল আঙুলের ডগা দিয়ে ত্বকের অলস ক্ষুধার চেয়ে
অধিক জীবন্ত
কিছু পারে না মুক্ত করতে? কে এমন আমাদের সাহায্যে
আসে যে বেঁচেছে দীর্ঘকাল
আর হেরে গেছে ভালোবাসায়? হৃদয়, একটি শূন্য জলাধার,
দীর্ঘ প্রহর অপেক্ষা করে, নিজেকে পূর্ণ করে নীরবতার কুণ্ডলিত নাগকুল দিয়ে...।
আমি এক সৃষ্টিছাড়া। কেবল
আমার মুখ রক্ষায়, কখনো,
আমি জাহির করি মনোহর, বর্ণোজ্জ্বল কামনা।
আমার দিদিমার বাড়ি
এখন অনেক দূরে রয়েছে একটি বাড়ি যেখানে একবার
আমি ভালোবাসা পেয়েছিলাম… সেই মহিলার মৃত্যু ঘটেছে,
বাড়িটি নীরবতায় নিমজ্জিত হলো, সাপ এগিয়ে গেল
বইয়ের ভেতর, আমি তখন খুব ছোট ছিলাম বলে
পড়তে পারিনি, আর আমার রক্ত চাঁদের মতো শীতল হয়ে
যায়।
কতবার ভাবি সেখানে যাব
জানালার অন্ধ চোখ দিয়ে খুঁটিয়ে দেখব অথবা
শুধু হিমায়িত বাতাসের কথা শুনব,
অথবা প্রবল হতাশায়, তুলে নেব হাতভর্তি
অন্ধকার যা আমার শোবার ঘরের
দরজার পেছনে বিষণ্ণ কুকুরের মতো
শুয়ে থাকবে... তুমি বিশ্বাস করতে পারবে না, প্রিয়তমা,
বিশ্বাস করবে কীএমন একটা বাড়িতে থাকতাম এবং
গর্বিত ও স্নেহসিক্ত ছিলাম... আমি পথহারা
এখন অচেনা দরজায় গিয়ে ভিক্ষা করি
ভালোবাসার জন্য, অন্তত সামান্য কয়েনের বিনিময়ে?
কাচ
আধা ঘণ্টার জন্য আমি তার কাছে গিয়েছিলাম
নির্মল নারী, নির্মল দুর্গতি রূপে
ভঙ্গুর কাচ, ভেঙে গেল
চূর্ণবিচূর্ণ হলো...
ঘরটা তাপে নিস্তব্ধ ছিল
শুধু পুরনো কড়িকাঠগুলো ক্যাঁচক্যাঁচ করে উঠল
সে আমাকে টেনে নিল
অশিষ্ট ভঙ্গিতে
প্রেমিকের ব্যস্ততায়, আঘাতের উদ্দেশ্যে হাতভর্তি
কাচের কুচি এবং
ব্যথায় গর্ভবতী। কেন
তখন আমি
কেঁদে উঠিনি, ভাঙা কাচ, সাবধান?
কেন আমি তখন তাকে বলিনি
আমি পরোয়া করি না
কাকে আমি
আঘাত করি ভালোবাসায়, এবং প্রায়শ ভালোবাসাহীনতায়?
সস্তা খেলনার নির্লিপ্ততা নিয়ে
আমি প্রবেশ করি অন্যের
জীবনে, এবং
লালসার প্রতিটি ফাঁদকে রূপায়িত করি
অস্থায়ী গৃহে। আমার শরীরে
তাদের বাদনরত আঙুল হয়তো
জাগায়
অতীতের মায়াময় সুর
নারী-কণ্ঠ
ও
নারী-গন্ধে
আমি তাদের স্বপ্নকে মুড়িয়ে রাখি।
আমি বলতে দ্বিধা করি না: আমি কোথাও বাবাকে হারিয়েছি
এবং সবখানে তাকে খুঁজি।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন